দেবাঞ্জন দাস, ১৯ অক্টোবর: ভারতের অগ্রগণ্য কনজিউমার ডেটা ইন্টেলিজেন্স কোম্পানি অ্যাক্সিস মাই ইন্ডিয়া বৃহস্পতিবার ইন্ডিয়া ইনভেস্টমেন্ট বিহেভিয়ার স্টাডি প্রকাশ করল। নানা ধরনের লগ্নি সম্পর্কে লগ্নিকারীদের আচরণ উল্লেখ করে এই সমীক্ষা জ…
দেবাঞ্জন দাস, ১৯ অক্টোবর: ভারতের অগ্রগণ্য কনজিউমার ডেটা ইন্টেলিজেন্স কোম্পানি অ্যাক্সিস মাই ইন্ডিয়া বৃহস্পতিবার ইন্ডিয়া ইনভেস্টমেন্ট বিহেভিয়ার স্টাডি প্রকাশ করল। নানা ধরনের লগ্নি সম্পর্কে লগ্নিকারীদের আচরণ উল্লেখ করে এই সমীক্ষা জোর দিয়েছে ডিজিটাল সোনার লগ্নির উপায় হিসাবে ব্যবহারের উপরে। তা করতে গিয়ে সমীক্ষাটি ভারতের মেট্রো শহর ও মেট্রো নয় এমন শহরগুলোতে লগ্নির ধরন, আর্থিক সচেতনতা, প্রধান বাধাগুলো এবং লগ্নির চালিকাশক্তি গভীরে পৌঁছেছে।
উপর্যুক্ত এই বিষয়গুলো নিয়ে মেট্রো শহরের জনগোষ্ঠীর মধ্যে করা সমীক্ষা থেকে যে প্রধান তথ্যটি উঠে এসেছে তা হল ভারতীয়দের মধ্যে লগ্নি করার বিরাট প্রবণতা এবং পর্যাপ্ত মানুষের সচেতনতা। ভারতীয়দের মধ্যে ৬৫% তাঁদের আয়ের একটা অংশ কোনো না কোনো উপায়ে লগ্নি করেন এবং সোনা লগ্নির এক জনপ্রিয় পথ। ৫৩% লগ্নির উপায় হিসাবে সোনা পছন্দ করেন, ৩৫% ডিজিটাল সোনা সম্পর্কে সচেতন এবং ১০% মানুষ বলেছেন তাঁরা ইতিমধ্যেই ডিজিটাল সোনায় লগ্নি করেছেন।
লগ্নির এই উপায়টির যুবসমাজের মধ্যে ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা দেখা গেছে। ১৮-২৪ বছরের মধ্যে যাদের বয়স তাদের ১৫% ডিজিটাল সোনায় লগ্নি করার জোরালো ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। ডিজিটাল সোনায় যাঁরা লগ্নি করেন তাঁদের – ৫৫% পুরুষ এবং ৪৫% মহিলা, ৪৮%-এর বয়স ২৫-৩৪ বছর, ৫৬% বিবাহিত এবং সন্তান আছে। পপ স্ট্র্যাটা অনুযায়ী মেট্রো শহরগুলোর ১১%, টিয়ার-১ শহরগুলোর ১১% এবং টিয়ার-২ শহরগুলোর ৮% ইতিমধ্যেই ডিজিটাল সোনায় লগ্নি করেছেন, যা পপ স্ট্র্যাটা জুড়ে ডিজিটাল সোনার ক্রমবর্ধমান প্রভাবের প্রমাণ।
বিশ্বাস একটি প্রধান বিষয় হিসাবে উঠে এসেছে। কারণ দেখা গেছে সোনায় লগ্নি করতে যাওয়ার সময়ে জনসংখ্যার ৭৬% সোনা কিনেছেন কোনো বিশ্বস্ত ব্র্যান্ডের কাছ থেকে আর ৫৪% বলেছেন যদি ভারত সরকারের সমর্থন প্রাপ্ত কোনো কোম্পানি থাকে যারা ডিজিটাল সোনায় লগ্নি সহজতর করে দিতে পারে, তাহলে তাঁরা ডিজিটাল সোনায় লগ্নি করার চেষ্টা করবেন।
সমীক্ষার একটি কৌতূহলোদ্দীপক পর্যবেক্ষণ হল, ডিজিটাল উপায়ে লগ্নির ক্রমবর্ধমান প্রভাব। কারণ দেখা গেছে ২৪% মানুষ কোনো না কোনো ধরনের ডিজিটাল লগ্নি পরখ করে দেখেছেন। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে লগ্নির প্রবণতার বৃদ্ধি লক্ষ করা গেছে। ২৫-৩৪ বছর বয়সের মানুষের ৬৭% লগ্নি করেন, অথচ ৩৫-৪৪ বছর বয়সের ৭৬% মানুষ লগ্নি করেন। ডিজিটাল উপায়ে যে ২৪% লগ্নি করেন তাঁদের ২৮% পুরুষ এবং ১৯% মহিলা। নিরাপত্তা ও সুরক্ষা লগ্নি করার প্রধান কারণ বলে জানা গেছে। তারপরেই আছে কর বাঁচানো এবং লাভ।
প্রদীপ গুপ্ত, চেয়ারম্যান অ্যান্ড এম ডি, অ্যাক্সিস মাই ইন্ডিয়া বললেন “দ্রুত ডিজিটালাইজেশন ভারতের প্রধান শহরগুলোয় ছেয়ে গেছে এবং তার প্রভাব মানুষের লগ্নির প্যাটার্নে দেখা যাচ্ছে। ডিজিটাল উপায়ে লগ্নি ক্রমশ বাড়ছে। ডিজিটাল সাক্ষরতা এবং নিরাপত্তা নিয়ে ভাবনাগুলো সামলানোর মত সহায়ক পরিকাঠামো নিশ্চিত করা দরকার। এটাই আগামীদিনের বড় বিপ্লব হতে যাচ্ছে কারণ এতে মানুষের দৈনন্দিন কার্যকলাপের উপর প্রভাব পড়ছে। আমাদের সমীক্ষার মূল লক্ষ্য ছিল কীভাবে বদলাতে থাকা জনগোষ্ঠী এবং যুগের সঙ্গে লগ্নিও বদলাচ্ছে তা খেয়াল করা এবং লোকের মনোভাবের উপর ভিত্তি করে কী কী প্রবণতা অনুমান করা যায় তা দেখা। সোনার সঙ্গে মানুষের বরাবর এক সাংস্কৃতিক নৈকট্য ছিল আর এই সমীক্ষা আবার দেখিয়ে দিল যে সোনা স্মরণাতীতকাল থেকে আমাদের আর্থিক যাত্রার প্রধান অংশ। ডিজিটাল উপায়ে লগ্নি মেট্রো শহরগুলোতে বাড়ছে এবং যথেষ্ট বেশি পরিমাণ মানুষ কোনো না কোনোভাবে লগ্নি করছেন। যদিও সন্তানদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করাই মূল চালিকাশক্তি, তাহলেও অন্যান্য প্রবণতা, যেমন মহিলাদের বিপদ আপদের কথা ভেবে সোনা রেখে দেওয়ার মত প্রবণতাও এই সমীক্ষায় উঠে এসেছে।”
নির্দিষ্টভাবে বললে মেট্রো শহরগুলোতে সোনা (৬৫%) হল লগ্নির জন্য সর্বাধিক জনপ্রিয় বিকল্প, তারপরেই আছে ফিক্সড ডিপোজিট (৪৪%), মিউচুয়াল ফান্ড (৩৭%) ও অন্যান্য উপায়। সোনাকে লগ্নির উপায় হিসাবে নেওয়ার প্রবণতা পুরুষদের চেয়ে (৪১%) মহিলাদের মধ্যে বেশি (৬৫%), যা করে সোনার উপর বিশ্বাস রাখার প্রথাগত আবেগকেই আবার প্রমাণ করল। এই সমীক্ষা সোনায় লগ্নি করার ভবিষ্যৎ উদ্দেশ্যও তুলে এনেছে, কারণ মেট্রো শহরগুলোর মানুষ (৫৮%) সোনায় লগ্নি করার আগ্রহ দেখিয়েছেন। সোনার পরেই লগ্নির পছন্দের উপায় হল মিউচুয়াল ফান্ড (৩৫%) ও স্টকস (২৩%)।