Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

পূর্ব ভারতের প্রথম গৃহ ভিত্তিক পেলিয়েটিভ ক্যান্সার কেয়ার পরিষেবা শুরু করল মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল

কলকাতা, ৬ই নভেম্বর : মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটালের অনকোলজি বিভাগ জাতীয় ক্যান্সার সচেতনতা দিবস উদযাপন করল একটি প্যানেল আলোচনার মাধ্যমে। মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটালের অনকোলজি বিভাগ ঘোষণা করল তাদের ক্যান্সার চিকিৎসায় তাদে…


 কলকাতা, ৬ই নভেম্বর : মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটালের অনকোলজি বিভাগ জাতীয় ক্যান্সার সচেতনতা দিবস উদযাপন করল একটি প্যানেল আলোচনার মাধ্যমে। মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটালের অনকোলজি বিভাগ ঘোষণা করল তাদের ক্যান্সার চিকিৎসায় তাদের নতুন পরিষেবা - গৃহ ভিত্তিক পেলিয়েটিভ ক্যান্সার কেয়ার পরিষেবা। বলাই বাহুল্য, পূর্ব ভারতে এইরকম পরিষেবা প্রদানের দ্বিতীয় কোন নজর নেই। এই পরিষেবার উদ্বোধন এবং পেলিয়েটিভ কেয়ার নিয়ে প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বিভিন্ন খ্যাতনামা ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা, যায় মধ্যে ছিলেন ডঃ সৌরভ দত্ত, ডিরেক্টর মেডিকা ক্যান্সার প্রজেক্ট, ডঃ সুদীপ দাস, কনসালটেন্ট অনকোলজিস্ট, ডঃ সায়ন দাস, প্রধান রেডিয়েশন অনকোলজিস্ট এবং শ্রীমতী অরুণিমা দত্ত, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট। এছাড়া ছিলেন অনুপ মুখার্জি, ফাইট ক্যান্সার এনজিওর প্রতিনিধি, নিলেন্দু সাহা, ক্ষুদিরাম পাঠাগার বহরামপুর এনজিও এবং লেখক সাদিক হোসেন। এছাড়াও ছিলেন সেই সমস্ত লড়াকু মানুষেরা এবং তাদের পরিবারের মানুষজন যারা ক্যান্সারকে হারিয়েছেন সমস্ত প্রতিকূলতার মধ্যে, যার মধ্যে সামাজিক, অর্থনীতিক সমস্ত সমস্যা বোঝায়, এবং সব কিছুর মধ্যেও লড়াই করে ফিরেছেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ডঃ সুবীর গাঙ্গুলি সিনিয়র কনসালটেন্ট, রেডিয়েশন অনকোলজি, মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল। 


অনুষ্ঠানের প্রারম্ভে ডঃ সৌরভ দত্ত, ডিরেক্টর মেডিকা ক্যান্সার প্রজেক্ট, অনকোলজি বিভাগ, মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল, বলেন, আমরা মেডিকাতে আপনাদের সকলকে স্বাগত জানাচ্ছি এই গৃহ ভিত্তিক পেলিয়েটিভ ক্যান্সার কেয়ার পরিষেবার উদ্বোধনে। প্রতি বছরের মতো এই বছরেও কাল সারা ভারত পালন করবে জাতীয় ক্যান্সার সচেতনতা দিবস এবং ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই জারি রাখবে।ক্যান্সার সত্যি একটি ভয়ানক রোগ। আমরা মেডিকাতে দায়বদ্ধ মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলার যেখানে শুরুতে রোগের ধরা পড়া এবং কিছু জীবনযাপনের মাধ্যম এড়িয়ে যাওয়া যা সাধারণত ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে। মানুষের মধ্যে আশাভরসা ও বিশ্বাস তৈরি করা আমাদের সকলের মধ্যে আমাদের মধ্যে রয়েছেন বাস্তব জীবনের অনেক হিরো এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা যারা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন ও জয় যুক্ত হয়েছেন সমস্ত বাধার সম্মুখীন হয়ে এবং আশা হারাননি। এছাড়া আমাদের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ রয়েছে এবং বিভিন্ন এনজিওর প্রতিনিধি রয়েছে যারা দিন রাত ক্যান্সার রোগীদের দিন রাত দেখে থাকে, তারা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে নিজেদের অভিজ্ঞতা সবার সাথে ভাগ করে নিতে পারবে। আমাদের সবাইকে হাতে হাত মিলিয়ে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।" 


'পেলিয়েটিভ কেয়ার' এর অর্থ হল বিশেষ স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান যা বিশেষ ভাবে ট্রেনিং পাওয়া ডাক্তার, নার্স, সাইকোলজিস্ট এবং অন্যান্য মেডিক্যাল স্টাফ সদস্য যারা বিভিন্ন উপসর্গ ও স্ট্রেস থেকে স্বস্তি দিতে পারে, যা ক্যান্সারের মত রোগের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। এই স্বাস্থ্য পরিষেবা সেই সমস্ত রোগীদের ক্ষেত্রে প্রদান করা হয়ে থাকে যারা রোগভোগে অনেকদিন ভুগেছেন এবং বেশিদিন বাঁচার সম্ভাবনা নেই এবং রোগী কষ্টের থেকে নিরাময় খুঁজছেন। 


এই অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ডঃ সুবীর গাঙ্গুলি, সিনিয়র কনসালটেন্ট রেডিয়েশন অনকোলজি, মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল, বলেন এই বছর মেডিকা অনকোলজি বিভাগ পেলিয়েটিভ কেয়ারের দিকটি জাতীয় ক্যান্সার সচেতনতা দিবসের থিম হিসেবে বেছে নিয়েছে। ভারতে সব মিলিয়ে ২.২৫ মিলিয়ন ক্যান্সার আক্রান্ত রয়েছেন। এর মধ্যে ১ মিলিয়ন কেস প্রতি বছর বাড়তেই থাকে আর 0.88 মিলিয়ন মানুষ বার্ষিক ভাবে মারা যাচ্ছে। দেখা গিয়েছে যে ভারতের প্রায় ৭ মিলিয়ন ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষের পেলিয়েটিভ কেয়ার' এর প্রয়োজন রয়েছে। তবে মাত্র ৪% এর কম মানুষের কাছে এর মধ্যে ভালো রয়েছে। পেলিয়েটিভ কেয়ারের সুযোগ না পাওয়ার জন্য অনেকের ক্ষেত্রেই উপসর্গগুলো জটিল আকার ধারণ করছে, জীবন যাত্রার মান নেমে যাচ্ছে, জীবনের শেষে এসে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়া এবং অর্থনৈতিক বোঝা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়া। অনেক সময়েই দেখা যায় যে টার্মিনাল ক্যান্সারে যারা ভুগছেন তারা পেলিয়েটিভ কেয়ারের জন্য স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যেতে পারছেন না কারণ যাতায়াতের অনেক ভাড়া এবং চলাফেরার ক্ষেত্রে তাদের সমস্যা রয়েছে। মেডিকা হসপিটাল এক্ষেত্রে দায়বদ্ধ একটি মেডিক্যাল এক্সপার্ট টিম নিয়ে, যারা রোগীর বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা করবে।"

এছাড়া তিনি জানান,"আমরা খুব খুশি যে এরকম পরিষেবা প্রথমবার শুরু হল পূর্ব ভারতে। গৃহ ভিত্তিক পেলিয়ে টিভ কেয়ার যে বিভিন্ন স্তর থেকে উঠে আসা ক্যান্সার রোগীদের সাহায্য করবে এমন নয়, এর সাথে বিনা পয়সায় চিকিৎসার দিকটিও দেখবে পিছিয়ে পড়া মানুষদের মধ্যে।" 


সারা দিন ব্যাপী অনুষ্ঠান শুরু হয় সকালে ওয়াকাথনের মাধ্যমে। এরপর একটি আলোচনামূলক সেশন হয় যেখানে দর্শকেরা বিভিন্ন ক্লিনিক্যাল বিষয় নিয়ে জানতে পারেন। সেখানে ক্যান্সার রোগীর পেলিয়েটিভ কেয়ার এর গুরুত্ব যেমন ছিল, ঠিক সেরকমই ক্যান্সারজয়ী এবং কেয়ারগিভারদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। প্রশ্ন উত্তর পর্বের সময় এনজিওর প্রতিনিধিরা বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য তুলে ধরেন এবং রোগীদের সাথে তাদের কাজ করার অভিজ্ঞতার দিকটি বলেন। এছাড়া উপস্থিত ক্যান্সারজয়ী এবং তাদের পরিবারের মানুষেরা তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং নিজের নিজের স্ট্র্যাটেজির কথা বলেন যা স্ট্রেস কমিয়ে ইতিবাচক থাকতে সাহায্য করেছেন এবং ক্যান্সার চিকিৎসা চলাকালীন মনে সাহস এনে দিয়েছে। 


সোদপুর নিবাসী শ্রীমতী কেয়া দে, ক্যান্সারকে হেলায় হারিয়েছেন, জানান যে তার উপসর্গ ছিল। বায়োপসির পর ডাক্তারেরা জানান তার আশঙ্কাই ঠিক। তিনি স্বভাবতই ভেঙে পড়েছিলেন এবং সুস্থ জীবনযাপন কাটানোর থেকে অনেকটাই সরে এসেছিলেন। তবে তিনি ক্যান্সারকে হারিয়েছেন, ডাক্তারদের থেকে সাহায্য নিয়ে। বর্তমানে তিনি ক্যান্সার ফ্রি এবং জীবন উপভোগ করছেন। 


লেখক এবং ফটোগ্রাফার অয়ন চৌধুরী, যার মা মারা গিয়েছেন, তিনি কেয়ারগিভার হিসেবে উন্নতি করেছেন। তিনি জানান যে তার জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময় ছিল যখন তিনি তার মাকে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে দেখেন। তার মা এই লড়াইয়ে হেরে যান দেরিতে ক্যান্সার ধরা পড়া এবং বয়সের কারণে। চোখের জলের মধ্যে দিয়ে তার বর্ণনা বুঝিয়ে দেয় মাকে কতটা ভালোবাসতেন আর শ্রদ্ধা করতেন তিনি। তার মা যখন জীবনের শেষের দিনগুলোয় দিন গুনতেন, তিনি নিজেকে মায়ের খেয়াল রাখার মধ্যে নিয়োজিত করেছিলেন। 


এই প্যানেল আলোচনার সাথে সাথে, ডঃ সুদীপ দাস, কনসালটেন্ট মেডিক্যাল অনকোলজিস্ট, মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল, যিনি 'কখন চিকিৎসা করতে হবে না ক্যান্সার রোগীর' শীর্ষক আলোচনায় বক্তব্য রাখলেন, জানান, " এই মুহূর্তে ভীষণ প্রয়োজন আরো বেশি রিসোর্স তৈরি করা যা সহমর্মিতার সাথে সেবার করার দিকটি আলোকপাত করতে পারবে। এখানে বিবেচ্য নয় রোগীর রোগ নিরাময় কেন্দ্রিক চিকিৎসা হচ্ছে কিনা। সেই সমস্ত ক্ষেত্রে যেখানে রোগী জীবনের শেষ অংশে এসে পৌঁছেছেন, তাদের ক্ষেত্রে পেলিয়েটিভ চিকিৎসা রোগীর উপর অনেকটাই জোর দেয়, স্রেফ রোগ নিরাময়ের উপর নয়।" 


এরই সাথে শ্রীমতী অরুণিমা দত্ত, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট, মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল, কেয়ারগিভারদের উপর স্বাস্থ্য ব্যতীত অন্য কারণবশতঃ ট্রমা এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক আলোচনায় বলেন, "মারণ রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে, বিশেষ করে ক্যান্সারের মত রোগের ক্ষেত্রে, যারা সেবা শুশ্রূষার মধ্যে নিয়োজিত থাকেন, বিশেষ করে যারা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ নন, তাদের মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রীক ট্রমা অনেক সময়েই খেয়াল পড়ে না। এই মুহূর্তে খুব প্রয়োজন বিশেষ উপায় বা পদ্ধতি অবলম্বন করা যায় যা এই কাজের মধ্যে স্ট্রেসকে, যা সেবার সময় তৈরি হয় তা নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং বাড়তি প্রফেসনাল সাহায্য বন্দোবস্ত করে পারলে তা বেশ সময়োপযোগী হবে।" 


ডঃ অলোক রায়, চেয়ারম্যান, মেডিকা গ্রুপ অফ হসপিটাল, বাকি প্যানলিস্টদের কথা এগিয়ে নিয়ে বলেন, "মেডিকার দায়বদ্ধতা রয়েছে সবসময়ই ধারাবাহিকভাবে রোগীদের জন্য উচ্চমানের পরিষেবা তুলে ধরার। এর মধ্যে শুধু যে কার্যকরী সচেতনতামূলক প্রচার তা নয়, এর সাথে উপযোগী স্বাস্থ্য পরিষেবা কেন্দ্রিক পরিকাঠামো তৈরির দিকেও নজর দেওয়া হয়েছে, সেই সমস্ত রোগীদের জন্য যারা জীবনের জন্য লড়ছেন। এই মাস থেকেই মেডিকার অনকোলজি বিভাগ রেডিওথেরাপি এবং বাড়ি ভিত্তিক পেলিয়েটিভ কেয়ার পরিষেবা শুরু করবে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের জন্য। আমরা আশাবাদী যে সামনের দিনে আরো বেশি সংখ্যক মানুষকে এই পরিষেবা প্রদান করতে পারব।"