Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

সৃষ্টি সাহিত্য যাপনগল্প - বেলাশেষেগল্পকার - শিলাবৃষ্টি তারিখ ২০/০৪/২৩
সোহিনী আর শুভম দুই ভাই বোন। বাবা ডাক্তার, মা হাউস ওয়াইফ। সুখের সংসারে একদম অপ্রত্যাশিত ভাবে যে ঘটনাটা ঘটে গেল,  তার জন্য বাকি তিনজন একেবারেই প্রস্তুত ছিলনা। সোহ…

 


সৃষ্টি সাহিত্য যাপন

গল্প - বেলাশেষে

গল্পকার - শিলাবৃষ্টি 

তারিখ ২০/০৪/২৩


সোহিনী আর শুভম দুই ভাই বোন। বাবা ডাক্তার, মা হাউস ওয়াইফ। সুখের সংসারে একদম অপ্রত্যাশিত ভাবে যে ঘটনাটা ঘটে গেল,  তার জন্য বাকি তিনজন একেবারেই প্রস্তুত ছিলনা। সোহিনী মাকে নিয়েই বেশি চিন্তা করছে।  এ কী করলো বাবা!  এই বয়েসে আবার ভালোবাসা! একী মেনে নেওয়া যায়। বাবাকে দেখে তো কোনদিন মনে হয়নি সোহিনীর,  বাবা পরিবারে অসুখী!! 

মা কি তবে বাবাকে ভালোবাসা দিতে অক্ষম?

কাল থেকে মা বেশী কথা কারো সাথেই বলেনি, তবে কান্নায় ভেঙেও পড়েনি।

স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছে। 


মাসে ২/৩ দিন বাবার বাড়িতে ফিরতে বেশ দেরি হয়। গতকালও হয়েছে। ডিনার করতে রাত এগারোটা বেজে গেছে। খাওয়া শেষে মা আমাদের ওয়েট করতে বলে।  তারপর সরাসরি বাবাকে প্রশ্ন করে

" তুমি এত দেরি করে এলে কেন?  কোথাও গিয়েছিলে? " বাবা মানে অখিলেশ গাঙ্গুলি চুপ করে থাকলে মা শিবানী আবার বলে " কিছু বলো"

বাবা আমাদের টেবিল থেকে উঠে যেতে বললে মা আবার বারণ করে।

" আজকাল মাঝে মাঝেই তুমি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারোনা অখিলেশ, আজ দিয়ে যাবে।" সবাই বাবার দিকে তাকিয়েছিলাম। খানিক চুপ থেকে বাবা বলে " শুনতে চাইছ কেন? শুনলে ভালো লাগবেনা তোমাদের।"

"তবু শুনতে চাই আমি,  না শুধু আমি নই।  তোমার ছেলেমেয়েও বসে আছে! "

বাবা একটু ভেবে বলে " দেখো শিবানী মিথ্যে আমি খুব একটা বলিনা। মিথ্যের সাথে আপোষ করিনা। শুনতে যখন চাইছো সত্যিটাই শোনো। আমার এক বন্ধুর সাথে একটু বেরিয়েছিলাম। হ্যাঁ তুমি যা ভাবছো তাই। বান্ধবী। আমরা মাঝে মাঝে এখান ওখান বেরিয়ে পড়ি। ভালো লাগে ওকে।  ভালো লাগে ওর সাথে সময় কাটাতে। "

" নাম কি তার?  ভালোবাসো তাকে? "

" প্রথম প্রশ্নের উত্তর দেবনা,  সরি। দ্বিতীয় 

প্রশ্নের উত্তরে বলবো হয়তো ভালোলাগা থেকে ভালোবাসা এসে গেছে অজান্তে কবে!"

আমরা অবাক হয়ে বাবার দিকে সবাই  তাকিয়ে আছি। মাকে তেমন বিচলিত লাগছেনা।  ভাই মোবাইলটা নিয়ে বাঁহাতে

অন্যমনস্ক থাকার ভান করছে।  

মায়ের গম্ভীর গলাটা কানে অস্বস্তি এনে দিল " আমাকে আর ভালোবাসো না? " 

বাবার উত্তর " কেন বাসবো না! দেখেছ কি আমার ভালোবাসার কমতি? " 

" তাহলে অভিনয় কার সাথে করে চলেছ অখিলেশ?" 

" কারো সাথেই নয়" বলে বাবা একটু থামে৷ তারপর আবার বলে - " ও আমার খুব ভালো বন্ধু। আর বন্ধুত্বের মাঝে কখন যেন ভালোবেসে ফেলেছি আমরা। দেখো শিবানী আমাদের দুজনেরই বাড়ি ঘর সন্তান সব আছে।  আমরা জানি কোনো সীমা অতিক্রম করবোনা কখনোই। বহু বছরের দাম্পত্য জীবনে কেমন যেন একঘেয়েমি এসে যায়। তুমিই বলো প্রয়োজনের বাইরে আমরা কটা কথা বলি? অভ্যেসমাফিক এই জীবনে হাঁপিয়ে

 উঠি আমরা দায়িত্ব কর্তব্য কাজ জীবীকা আর জীবন নিয়ে। কিন্তু  আমাদের মনের একটা আকাঙ্খা কিছু প্রত্যাশা করে। আর 

সেই প্রত্যাশা যদি পূর্ণ হয়,  বাঁচতে ইচ্ছে করে আরো অনেকগুলো দিন। 

সংসারের প্রতি আমার কিছুই নষ্ট হয়নি।

যেমন তোমাকে ভালোবাসি,  আমার দুই সন্তানকে ভালোবাসি,  ঠিক তেমনি ওকেও ভালোবাসি। মনের কথা সেয়ার করি, হয়তো পথে এলোমেলো কিছু সময় ঘুরে বেড়াই।  আর আজ যেমন শহরের বাইরে গিয়ে মাটির ভাঁড়ে চা খেয়ে এলাম!

আবার ফিরে পেলাম আমার হারিয়ে যাওয়া সময়কে।" বলেই বাবা উঠে গেল বেসিনের দিকে। ভাইও উঠে গেল। আমি মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকলাম,  মায়ের মুখের রেখাগুলো পড়তে চেষ্টা করলাম। 

মা স্বাভাবিক হতে চেষ্টা করছে বুঝতে দেরি হলোনা এই একুশ বছর বয়েসে।

বাবার উপর কি আমার রাগ হচ্ছে?  কই নাতো। এরকম তো হতেই পারে। হচ্ছেও।  তবে কেউ প্রকাশ করেনা।  মিথ্যে বলে চলে অবিরাম। বাবা সত্যি বলে সবটাই স্বীকার করলো।

ওই ২/১ দিন দেরী করে বাড়ি ফেরা ছাড়া বাবার মধ্যে কোনদিন কোনো পরিবর্তন দেখিনি।