Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

মেডিকার লাইফ সেভিং টিমের সাথে যোগদান করল অ্যাডেনো ভাইরাসকে হারিয়ে আসা তিন জন

দেবাঞ্জন দাস,কলকাতা, ১৩ই এপ্রিল : যখন সারা কলকাতা শহর এক অদ্ভুত পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল অ্যাডেনো ভাইরাসের জন্য একের পর এক শিশুর মৃত্যুতে, তখন মেডিকা খুবই খুশির সাথে জানালো যে তারা সুস্থতার সাথে অসুস্থ অবস্থায় ভর্তি হওয়া শি…



 দেবাঞ্জন দাস,কলকাতা, ১৩ই এপ্রিল : যখন সারা কলকাতা শহর এক অদ্ভুত পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল অ্যাডেনো ভাইরাসের জন্য একের পর এক শিশুর মৃত্যুতে, তখন মেডিকা খুবই খুশির সাথে জানালো যে তারা সুস্থতার সাথে অসুস্থ অবস্থায় ভর্তি হওয়া শিশুদের বাড়ি পাঠাতে পেরেছে ইকমো সাপোর্টের সৌজন্যে।  ২০১৪ সালে মেডিকাতে ইকমো সাপোর্টের অত্যাধুনিক চিকিৎসা হওয়া শুরু হয়। এই ইসলো (ESLO) সার্টিফায়েড সেন্টারে সবচেয়ে বেশি ইকমো মেশিন রয়েছে, যা পূর্ব ভারতে সর্ব্বোচ এবং ২৪ ঘন্টা ইকমো স্পেশালিস্ট ডাক্তারেরা রয়েছেন। অভিজ্ঞ স্পেশালিস্টরা বিভিন্ন কেস সফলভাবে দেখেছেন এবং এরকম ঘটনা হয়েছে যেখানে অন্য রাজ্য থেকেও এসে ভর্তি হয়েছে ইকমো সাপোর্টের সুবিধার জন্য। ইক মো সাপোর্টের সাহায্যে কোভিড চিকিৎসা করার ক্ষেত্রে অগ্রণী হয়েছে মেডিকা এবং এখনও পর্যন্ত ৩০০র বেশি ইকমো সাপোর্টের কেস এখানে হয়েছে, যার মধ্যে সাফল্যের হার ৫০% এর বেশি। এটি ইতিমধ্যেই প্রমাণিত যে কমবয়সী অ্যাডেনো ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে মেডিকায় অত্যাধুনিক ইকমো সাপোর্ট থাকার দরুন অনেককে বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। 


গত ১২ই এপ্রিল, একটি প্যানেল আলোচনার আয়োজন করা হয় যেখানে আলোচনায় নেতৃত্ব দেন ডা.  দীপাঞ্জন চ্যাটার্জি, ইকমো ফিজিশিয়ান এবং বিভাগীয় প্রধান, কার্ডিও-পালমোনারি ক্রিটিক্যাল কেয়ার, মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল, কলকাতা। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন ডা. কুনাল সরকার, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান, মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল, ডঃ হীরক শুভ্র মজুমদার, কনসালটেন্ট, কার্ডিও-পালমোনারি ক্রিটিক্যাল কেয়ার, কার্ডিয়াক অ্যানস্থেসিওলজি এবং ইকমো ফিজিশিয়ান এবং ডা. ঋতুপর্ণা দাস, কনসালটেন্ট, কার্ডিও-পালমোনারি ক্রিটিক্যাল কেয়ার, কার্ডিয়াক অ্যানস্থেসিওলজি এবং ইকমো ফিজিশিয়ান। এই আলোচনায় সেই সব মানুষদের কথা বলা হয় যারা ইকমো সাপোর্টের সাহায্যে অ্যাডেনো ভাইরাসের বিরুদ্ধে জয়যুক্ত হয়েছেন। মেডিকা তিনজন ইকমো সাপোর্টের সাহায্যে সেরে ওঠা রোগীর কথা জানায় এবং তাদের সেরে ওঠার পর্ব তুলে ধরে। 


পাঁচ বছর বয়সী আরভ সুমন এক সপ্তাহ ধরে খুব সর্দি জ্বরে ভুগছিল। এরপর গত ১৯শে জানুয়ারি শ্বাসকষ্টের সমস্যা হতে থাকে। তড়িঘড়ি কোন ঝুঁকি না নিয়ে তাকে মেডিকায় ভর্তি করা হয় এবং পেডিয়াট্রিক ইকমো সাপোর্টে রাখা হয়। এর আগে বিভিন্ন হসপিটালে পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার সাপোর্টে তাকে ওষুধ, অক্সিজেন সাপোর্ট, ভেন্টিলেশন দিয়ে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এরপর পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ধরা পড়ে যে তার অ্যাডেনো ভাইরাস এবং রাইনো ভাইরাসের সংক্রমণ ছাড়াও স্ট্রেপটোককাস নিউমোনিয়া হয়েছে, যার জন্য পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে। তাকে দেরি না করে ভিভি ইকমো (ভেনো ভেনাস ইকমো) তে রেখে পর্যবেক্ষণ করা হয়। শুরুতে পরিস্থিতি একটু সামাল দেওয়া গেলে ট্রাকিওস্টমি (গলায় একটি ফুটো করা যেখানে একটা টিউব ঢোকানো যায় ট্রাকিয়াতে নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের সুবিধার জন্য) করা হয়। ১৮ দিনের যমে মানুষে টানাটানির পর তাকে ইকমো সাপোর্ট থেকে সরিয়ে আনা হয়। এর সাত দিন পর অক্সিজেন সাপোর্ট খুলে নেয়া হয় যখন স্যাটুরেশন স্তরে উন্নতি দেখা যায়। গত ২ই মার্চ ২০২৩, প্রায় এক মাস পর শিশুটিকে হসপিটাল থেকে রিলিজ করা হয় এবং বাড়িতে সেজনের সাথে ফিরে যায় পরীক্ষা নিরীক্ষায় ইতিবাচক ফলের পর। বর্তমানে পুরো সেরে উঠে এবং জীবন উপভোগ করছে সে। 


১৫ বছর বয়সী সুদেষ্ণা বসু গত ১৯শে জানুয়ারি থেকে খুব জ্বরে ভুগছিল। তাকে বাগুইহাটির একটি হসপিটালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ার জন্য তাকে অন্য একটি প্রাইভেট হসপিটালে স্থানান্তরিত করা হয়। যেহেতু তার হার্ট এবং ফুসফুস দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছিল, শ্বাসকষ্টের সমস্যা হতে শুরু করে। শেষমেশ ২৬শে জানুয়ারি তাকে মেডিকাতে ভর্তি করা হয় এবং ইকমো সাপোর্টে রাখা হয়। ভর্তি হওয়ার কয়েকদিন পর ভেন্টিলেশন চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রিকিউটেনিয়াস ট্রাকিওষ্টমি করা হয়। সুদেষ্ণা সব মিলিয়ে মোট ৪৭ দিন ই ক মো সাপোর্টে ছিল এবং তারপর আরো ১২ দিন ভেন্টিলেশনে ছিল, যতক্ষণ না তার ফুসফুস পুরো সেরে উঠছে। গত পয়লা এপ্রিল শেষমেশ হসপিটালে ভর্তি হওয়ার ৬৬ দিন পর তাকে হসপিটাল থেকে ছাড়া হয়। বর্তমানে সুদেষ্ণা সম্পূর্ণ সেরে উঠেছে এবং সুস্থ রয়েছে।

চার বছর বয়সী বিক্রমজিত মুখার্জি কয়েকদিন ধরে সর্দি জ্বরে ভুগছিল। প্রথমে তাকে বর্ধমানের একটি হসপিটালে ভর্তি করা হয় আর তারপর ট্রান্সফার করা হয় নিউ টাউনের একটি প্রাইভেট হসপিটালে। সেখানে প্রায় ২৫ দিন ধরে কখনো ভেন্টিলেশনের মধ্যে ও বাইরে রাখা হচ্ছিল। অ্যাডেনো ভাইরাস সংক্রমণের সাথে তার একাধিক সংক্রমণ হয়েছিল। নিউমোনিয়ার জন্য তার ডান ফুসফুসে ক্যাভিটারি লেসন হয়েছিল, যার ফলে ব্রনকো প্লিউরাল ফিসচুলা হয়েছিল। হাইপক্সিয়ার সাথে এআরডিএস (ARDS) অর্থাৎ রক্তে অক্সিজেন কমার সাথে এবং হাইপারকর্বিয়া (রক্তে কার্বন ডাই অক্সাইড বেড়ে গেলে) হওয়ায় তাকে ৩ই মার্চ মেডিকাতে ভর্তি করা হয় এবং ইকমো সাপোর্টে রাখা হয়। 


আট দিন ধরে ইকমো সাপোর্টে রাখা হয় তাকে এবং এরপর ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনে রাখা হয় আরো দুই দিন। এরপর তাকে নন ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। এরপর যখন তার ব্রনকো প্লিউরাল ফিসচুলা থেকে এয়ার লিক কমে যায়, তখন ৩১শে মার্চ তাকে রিলিজ করা হয় মেডিকা থেকে। 


অ্যাডেনো ভাইরাসে আক্রান্ত শিশুদের যাদের ইকমো সাপোর্ট প্রয়োজন হয়েছিল, এদের সম্পর্কে বলতে গিয়ে ডা. দীপাঞ্জন চ্যাটার্জি মন্তব্য করেন,"কলকাতায় মেডিকা একমাত্র হসপিটাল যেখানে সবচেয়ে অত্যাধুনিক পেডিয়াট্রিক ইকমো ব্যবস্থা রয়েছে। এই ব্যবস্থা অনেক শিশুর প্রাণ বাঁচাতে পারে যারা অ্যাডেনো ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এই শহর দুর্ভাগ্যজনক ভাবে ইতিমধ্যেই কিছু শিশুর মৃত্যু দেখেছে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে। তবে এর সাথে আমরা খুশি যে তিনটি শিশু সম্পূর্ণ হয়েছে যাদের মেডিকাতে রেফার করা হয়েছিল এবং ইক মো সাপোর্টের সাহায্যে তাদের অ্যাডেনো ভাইরাল নিউমোনিয়া থেকে পুরোপুরি সুস্থ করা সম্ভবপর হয়েছে। আমরা ধন্যবাদ দিতে চাই শিশুদের বাড়ির লোকদের এবং যেভাবে পুরো পদ্ধতিতে সহযোগিতা করেছেন আরোগ্যের পথে।"


ডা.  কুনাল সরকার, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান, মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল, বলেন," এটি দেখে খুবই ভালো লাগছে যে অনেক বাচ্চা এই অ্যাডেনো ভাইরাস সংক্রান্ত রোগ থেকে সেরে উঠছে। মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটালের ইকমো এবং ক্রিটিক্যাল কেয়ার সার্ভিস এই চ্যালেঞ্জগুলোর সাথে সফলভাবে মোকাবিলা করছে। আমাদের স্বাস্থ্য পরিষেবাকারী টিমের সকলের কঠোর পরিশ্রম এবং টিম ওয়ার্ক এই সাফল্য অর্জন করার ক্ষেত্রে ভূমিকা নিয়েছে।'

আর উদয়ন লাহিড়ী, ডিরেক্টর, মেডিকা সিনারজি প্রাইভেট লিমিটেড, বলেন,"স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারী হিসেবে আমরা একটি কঠিন পরিস্থিতি দেখেছি যেখানে ডাক্তাররা এবং শিশুরা উভয়েই অ্যাডেনো ভাইরাস সংক্রান্ত কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন, যেখানে দৈনন্দিন অনেক শিশু আক্রান্ত হচ্ছে। আমরা নিজেদের খুব ভাগ্যবান মনে করছি কারণ আমরা মানুষকে মেডিক্যাল ইমারজেন্সিতে সাহায্য করতে পারছি এবং পাশে দাঁড়াতে পারছি। আমরা আপ্লুত যে শিশুদের স্বাভাবিক জীবনে, হাসি খুশি ও সুস্থ অবস্থায় ফেরাতে পারছি, যাতে তারা শীঘ্রই স্কুলে নিয়মিত যেতে পারবে। বাবা মায়েদের মুখে হাসি আমাদের কঠিন পরিস্থিতিতে লড়াই করার সাহস জোগায়। আমরা শিশুদের সুন্দর ও সুস্থ জীবনে কামনা করি।"


মেডিকা সব সময়েই বিশ্বাস করে এসেছে বিশ্ব মানের ক্রিটিক্যাল কেয়ার এবং ইকমোর মত ওর্গ্যান সাপোর্ট ট্রিটমেন্ট  বা হার্ট/ ফুসফুস ট্রান্সপ্লান্ট করার পরিষেবা দেওয়ার। বলাই বাহুল্য, অচিরেই এই পরিষেবা গুলো পূর্ব ভারতের স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্রে বিপ্লব এনে দিয়েছে।