Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

স্মৃতিচারণ (১৯) অমৃত মাইতি

স্মৃতিচারণ (১৯) অমৃত মাইতি#দিনাজপুরে একুশে ফেব্রুয়ারি#বাংলাদেশের দিনাজপুর। একটা সম্পর্ক ও ভাষাকে ভালোবাসা, আমাকে কিভাবে টেনে নিয়ে গেল এত পথ সেই কাহিনী এবার স্মৃতিচারণ করব। বাড়ি থেকে শিয়ালদা স্টেশন ১২০ কিলোমিটার। তারপর সারারাত…

 


স্মৃতিচারণ (১৯) অমৃত মাইতি

#দিনাজপুরে একুশে ফেব্রুয়ারি#

বাংলাদেশের দিনাজপুর। একটা সম্পর্ক ও ভাষাকে ভালোবাসা, আমাকে কিভাবে টেনে নিয়ে গেল এত পথ সেই কাহিনী এবার স্মৃতিচারণ করব। বাড়ি থেকে শিয়ালদা স্টেশন ১২০ কিলোমিটার। তারপর সারারাত ট্রেনে বালুরঘাট। পরের দিন ভোরে বেরিয়ে হিলি। বড়ার পেরিয়ে বাংলাদেশ। কাঁটাতার পেরিয়ে নো ম্যানস ল্যান্ড কি মহা আনন্দ । কারণ আমি তখন ভারতের নই বাংলাদেশেরও নই। চিরকালই কাঁটাতার পেরিয়ে বাংলাদেশে পা রাখার সাথে সাথে অক্সিজেনের ভান্ডার। হ্যাঁ বাংলাদেশের দিনাজপুরে আমার কে আছে সেটাই বলি পাঠকদের। দিনাজপুরে আছে আমার বোন জিনাত রহমান এবং জামাইবাবু মতিউর রহমান। বাংলাদেশের একটি বহুবছরের প্রতিষ্ঠিত একটি দৈনিক কাগজ দিনাজপুর থেকে প্রকাশিত হয়। "দৈনিক উত্তরবাংলা'।সম্পাদক মতিউর রহমান। ওরা স্বামী-স্ত্রী আমাকে উত্তরবাংলা পদক দিয়েছিল ২০০৮ সালে মেদিনীপুরে এসে। সেই থেকে জিনাত আমাকে দাদা বলেই ডাকে। এভাবেই তো সবাই ডাকে আমাকে দাদা বলে। না পরে বুঝলাম জিনাতের মধ্যে কোন ফাঁকি ছিল না। ভাই ফোঁটার দিন টেলিফোন করে বলবে, তুমি তো আসবে না কোনদিন বোনের বাড়ি, তাই দেওয়ালের ফোঁটা দিলাম তোমার নাম করে। আমার অন্তরাত্মা বুঝেছিল জিনাতকে এবং মতিউর রহমানকে ।তারা আমাকে কিভাবে আপন করে নিয়েছে। অনেকটা পথ অতিক্রম করে যেতে হতো ,তাই ইচ্ছা থাকলেও যেতে পারিনি। একদিন ভাবলাম এবার একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের দিনাজপুরেই থাকবো। খবর পাওয়ার সাথে সাথে আনন্দে আত্মহারা দুজন ।আমি সত্যিই দিনাজপুর যাচ্ছি তাদের বাড়িতে এবং তাদের শহরে। ওরা শহরে এবং দিনাজপুরে খুবই প্রতিষ্ঠিত। জিনাত টেলিফোনে বললে, দাদা তুমি আসছো কি পরিমান আমাদের আনন্দ হচ্ছে, তোমাকে বোঝাতে পারবো না। জিনাত সব সময় আমাকে দাদা তুমি এই সম্বোধন করে । হ্যাঁ হিলি বর্ডার পেরিয়ে গেলাম। বর্ডারে এপার ওপারের টেলিফোন কাজ করে। দূরে চলে গেলে আর কাজ করে না। বড়ার পেরোচ্ছি ,আমাকে চিনতে পারল একজন সাংবাদিক। পরিচয় দিল মতিউর রহমান তাকে পাঠিয়েছে। ইমিগ্রেশন এবং সিকিউরিটি চেকিং এইসব সেরে আমাকে একটি গাড়িতে তুলে দিল সাংবাদিক ছেলেটি। একটি সিম চেঞ্জ করে নিলাম। তারপর যোগাযোগ শুরু হলো জিনাদের সঙ্গে। জিনাতের এতক্ষণে বিশ্বাস হল আমি তার বাড়ি যাচ্ছি। আমি চিরকাল একা থাকতে পছন্দ করি ।যে কোন একটি মাঝারি মানের হোটেল পেলেই হল। জিনাত বললে তোমার জন্য হোটেল ঠিক করা আছে। আমার বাড়ির ঘর তোমার পছন্দ যদি হয়, তারপর তোমার ডিসিশন। একসঙ্গে থাকব তিনজন। একার মত একটি সুন্দর ঘর ।আর সমস্যা কিছুই নাই ।সারাদিন মন খুলে গল্প করো খাও-দাও থাকো। একুশে ফেব্রুয়ারি আগের দিন পৌঁছেছি। বিকেলে আমাকে নিয়ে এক মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান। সম্বর্ধনা দেওয়া হল 'দৈনিক উত্তরবাংলা"কাগজের পক্ষ থেকে। শহরের গুণীজনদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলতে থাকলো অনেক রাত্রি পর্যন্ত। জিনাত বললে তোমার কি কি প্রয়োজন ক'টার সময় ঘুম থেকে উঠবে ।চা কটায় খাবে আর কি কি লাগবে আমাকে বলে দাও। বৌদি যেন বলতে না পারে আমি তোমার যত্ন করিনি। ভোরে ঘুম থেকে উঠলাম। চলে এলো একটি ট্রেতে তুলসী পাতার রস কাঁচা হলুদ এবং গ্রিন টি। এমনিতেই আমি খুব স্বচ্ছন্দ অনুভব করছিলাম জিনাতের বাড়িতে। তারপর ভোরে এইসব পেয়ে যাব যা বাড়ির চাইতেও অনেক বেশি। জল খাওয়ার দুপুরে ও রাত্রির খাওয়া সবই এত সুন্দর হালকা রান্না সেই তৃপ্তি আর সেই স্বাদ আর অন্তরঙ্গতা ভুলবো না কোনদিন। যেমনটি আমি পাই ঢাকাতে ফিরদাউসি কুইনের বাড়িতে আর সৈয়দ আজিজের বাড়িতে। যেন সর্বত্র আমার ঘর সর্বত্র অন্তরের ষ্পর্শ। আমি সব ভুলে যাই আদর যত্ন ভালোবাসা পেলে। আমার মধ্যে এসবের একটু কাঙালিপনা বেশি। ঢাকায় কুইন ও মুকুল দুজনেই আমাকে বারবার সতর্ক করে দিয়েছে আমি যেন কোন গেস্ট হাউসে না থাকি। তার বাড়িতেই আমাকে থাকতে হবে কারণ আমার বয়স হয়েছে তারা অন্য কোথাও আমি থাকি ভরসা করতে পারে না। তাদের এই আবদার আমি গ্রহণ করেছি। তারপর থেকে কোনদিন আমি কুইনের বাড়ি ছাড়া অন্য কোথাও থাকি নি। ওদের বাড়িতে থাকা খাওয়া এবং ঢাকা শহরের সমস্ত বন্ধুদের আমি থাকাকালীন আড্ডা গাড়ি-ঘোড়া সবটাই যথেষ্ট পরিমাণ আমার জন্য।


অনেকেই জানেন একুশে ফেব্রুয়ারি মধ্যরাত থেকে গোটা বাংলাদেশ জুড়ে ভাষাপ্রেমীদের মিছিল মিছিল আর জনস্রোত। কে আগে শহীদের স্মৃতির বেদি মূলে মালা দিতে পারে। দৌড়াচ্ছে মানুষ ।ঘাম ঝরিয়ে দৌড়াচ্ছে। জিনাত আমাকে বললে ,এত রাতে তুমি পারবে না ।তোমাকে আমরা নিয়ে যাব ভোরবেলা।

তারপর জনস্রোতে মিশে গেলাম ।আমাকে হাত ধরাধরি করে কয়েকজন নিয়ে গেল সেই আবেগের ভালোবাসার দিনাজপুরের শহীদ স্মৃতি বেদীতে । আমার পরিচয় পেয়ে স্থানীয় বেশ কিছু যুবক এগিয়ে এলো। হাজার হাজার মানুষ গোটা মাঠে ঘুরে বেড়াচ্ছে। একই সাথে দোকানপাট কেনাকাটা চলছে।

তারপর বিকেল থেকে রাত্রি পর্যন্ত বেশ কয়েকটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করলাম। সঙ্গে সাংবাদিক এবং সম্পাদক মতিউর রহমান । প্রতিটি অনুষ্ঠানে সেই একই কথা, আবার আসবেন, যে কোন সময় আসবেন। অত দূর থেকে আপনি এসেছেন মালা দিতে আমাদের কাছে সত্যিই আনন্দের বিষয়।ভাষা প্রেমীদের এত অন্তরঙ্গ কথাবার্তা এবং আহ্বান যা আমাকে আপ্লুত করে।

আরো একদিন কাটিয়ে দিলাম দিনাজপুর শহরে। বিশিষ্ট মানুষজনের আহবানে বাড়িতে যাওয়া তাদের সঙ্গ দেওয়া যেন আমারই প্রয়োজন ছিল। জিনাতের বাড়ি থেকে ফিরতে হলো আমাকে ,উপায় ছিল না।

পা উঠছিল না কিছুতেই। এতো ভালোবাসা অন্তরঙ্গতা পিছনে পড়ে থাকবে, এগিয়ে যাই কি করে !ভীষণ ভীষণ মন খারাপ। কাঁটাতার পেরোলাম ।তাকালাম বাংলাদেশের দিকে। মনে মনে স্যালুট করলাম একুশের বীর যোদ্ধাদের প্রতি। "ও আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।"

(চলবে)...


স্মৃতিচারণ (২০) অমৃত মাইতি

#কমরেড ক্ষিতি গোস্বামী ও আমি#

সারা জীবন স্মৃতির ঝুড়ি বোঝাই করেছি। শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি কম নয়। ক্ষিতি গোস্বামীকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গেলে একটি বড় বই লেখা হতে পারে। ১৯৮২ সাল থেকে তাঁর সঙ্গে আমার প্রত্যক্ষ সম্পর্ক এবং প্রায় দৈনন্দিন কর্মসূচির মধ্যে আমাদের যোগাযোগ থাকত তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত।

কাউকে আঘাত না দিয়েই বলবো, তাঁর মতো করে আর এস পি দলে আমাকে চেনার লোক খুব কম জনই আছে। ১৯৬৬ সালে সিপিআইএমের পার্টি সভ্য পদ পেয়েছিলাম। আশির দশকের শুরু থেকে সিপিআইএমের সঙ্গে আমার দলীয় সম্পর্ক ছিন্ন হলেও নেতাকর্মীদের সঙ্গে অদ্যাবধি, অন্তরঙ্গ সম্পর্ক বজায় আছে। তাঁদের প্রতি আমার ভীষণ দুর্বলতা।

যাইহোক অবিভক্ত মেদিনীপুরের আরএসপির জেলা সম্পাদক আমি হলাম ।আমাদের জেলা দেখভালের দায়িত্ব প্রথমের দিকে ক্ষিতি গোস্বামীর ছিল। আমি বসে থাকার লোক নয়। ভীষণ পরিশ্রমী ঘাম ঝরানো লোক। জেলায় আমার কোন দাদা ছিল না বলেই কষ্টটা বেশি হয়েছে আমার। অর্থ শ্রম সবই দলকে দিয়েছি। বহুবার আর্থিক কারণে পদ ছেড়ে দেয়ার কথা বলেছি। কারণ যে দলের কোন ফান্ড ছিলনা সেই দল পরিচালনা করা কি ভীষণ কঠিন ব্যাপার। নন্দীগ্রাম থেকে এত বড় বিস্তীর্ণ এলাকায় ঘুরে বেড়ানো শুধু মনের জোরে সম্ভব হয়েছে। ছাড়তে চাইলেও নেতারা বারবার আমাকে আটকে দিয়েছেন। দলের লাভ হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে আমার ব্যক্তি জীবনে,নিজের।পরিবারকে বঞ্চিত করেছি। ক্ষিতি বাবু এবং অন্যান্যরা বিষয়টি বুঝতেন ।উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। আমার কষ্টের কথা সবসময় এড়িয়ে গেছেন। ক্ষিতি দা সব সময় শুধু উৎসাহ আর আগ্রহ তৈরি করে আমাকে সামনের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। আমি কিছুতেই পিছিয়ে যেতে পারছিনা। যাইহোক পার্টির সম্মতি ছাড়া আমি তো কিছু করতে পারবো না। আমাকে নিয়ে তিনি খুব পরিকল্পনা করতেন। তিনি কোন কমরেডকে কিভাবে কি কাজ দিতে হবে, কাজটা কি করে তুলে আনতে হবে সেই সাংগঠনিক জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। আমার বাড়িতে তিনি যেমন খুব আসতেন তেমনি তাঁর বাড়িতেও আমি যেতাম। একদিন বললেন অমৃতবাবু আপনাকে সরস্বতী কলমটা দিয়েছে কিন্তু আমাকে গলাটা দিয়ে গেছে। দীর্ঘ সময় বলতে পারি।আমি খুব মনে রাখতে পারি। একদিন হঠাৎ ফোন করলেন, আপনাকে কলকাতায় মৌলালি যুব কেন্দ্রের সভাগৃহে অগাস্ট বিপ্লবের উপর বক্তৃতা দিতে হবে। আপনি প্রধান বক্তা আর আমি সভাপতি। আমি বললাম এইটা কি সবাই মেনে নেবে। না মানার কি আছে আপনার বাবা স্বাধীনতা সংগ্রামী, ৪২ এর বিপ্লবের সৈনিক ছিলেন । ভূপাল পান্ডা সুশীল ধাড়ার ঘনিষ্ঠ মানুষ ছিলেন আপনার বাবা।আপনারই তো এইসব কথা বলার অধিকার আছে। তেভাগা আন্দোলনের মাটিতে আপনার জন্ম। তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার সম্পর্কে আপনার অনেক কিছুই জানা ।সেই জেলার মানুষ আপনি। ক্ষিতি দা তখন পার্টির রাজ্য সম্পাদক।তাঁর নির্দেশ আমি অমান্য করতে পারিনা। হ্যাঁ আমি তাঁর নির্দেশে মৌলালি যুব কেন্দ্রের পরিপূর্ণ সভা গৃহে বক্তৃতা দিয়েছিলাম। তিনি খুব খুশি হয়েছিলেন।

বামফ্রন্ট সরকার চলে যাওয়ার পরে জেলাগুলোর সাংগঠনিক অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে পড়ে। সারা রাজ্য জুড়ে ভয়ংকর সন্ত্রাস। পূর্ব মেদিনীপুরে আরও বেশি। যখন কোন জেলা গণসংগঠনের সম্মেলন করতে পারছে না তখন তিনি বারবার আমাকেই দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি ভার বইতে পারছি না, কিন্তু আমার ওই যে আবেগ আর জেদ কিছুতেই পিছোতে দেয় না। ছাত্র,যুব, কৃষক ,মাধ্যমিক শিক্ষক প্রভৃতি গনসংগঠন গুলোর রাজ্য সম্মেলন কোন জেলা যখন করতে পারছে না, আমি পাঁচটি রাজ্য সম্মেলন করেছি সাফল্যের সঙ্গে। সবসময় মনে করেছি পার্টির দাবি আছে আমার উপর। পার্টি তো কর্মী ও ক্যাডার নির্ভর। তাই সব সময় এটাই অগ্রাধিকার দিয়েছি, পাটির অধিকার আমার উপর আছে । আমার কোন দাবি নেই পার্টির কাছে। তাই কোনদিন কোন দাবি করিনি পার্টির কাছে। বিশ্রামের জন্য ছুটি চাইনি কোনদিন।সবশেষে মেচেদাতে মাধ্যমিক শিক্ষকদের রাজ্য সম্মেলন সাফল্য লাভ করেছে। ক্ষিতিদা ভীষণ অসুস্থ ।গলা থেকে কথা বেরোচ্ছে না। সেই সম্মেলনে তাঁর আসার কথা নয়। সকালে বললাম এই সময়ে এত বড় সম্মেলনের ঝুঁকি নিলাম ।আপনি যদি একবার দেখতে পারতেন। তিনি বললেন আপনি কাউকে বলবেন না, বাড়িতেও ছাড়ছেনা। আপনি শুরু করে দিবেন ।আমি বাড়িতে খেয়ে বেরিয়ে যাচ্ছি। তিনি এলেন মেচেদা। কনফারেন্স হলে সিঁড়ি দিয়ে অনেক কষ্টে তিনি উঠলেন। আমি ধরে নিয়ে গিয়ে বসালাম। আমি আর ক্ষিতিদা পাশাপাশি চেয়ারে। খুব ফিসফিস করে বললেন অমৃতবাবু একটু জল খাব। তিনি হাত বাড়িয়েছেন আমি বোতলটা তার হাতে দিতে যাচ্ছি সেই মুহূর্তে কেউ ছবিটি তুলে রেখেছিলেন ,যে ছবি আমি কোনদিন ভুলতে পারিনি। সেটাই তার সঙ্গে আমার পাশাপাশি শেষ বসা। একমাত্র তিনিই আমাকে বারবার বলতেন মেদিনীপুরে দলের এবং উড়িষ্যায় দলের কাজ করে আপনি ইতিহাস গড়েছেন। আপনি দলটা ছাড়বেন না। বহু দায়িত্ব আমাকে দিয়েছিলেন। পার্টির কলকাতা জেলা কমিটির পার্টির সভ্যপদ স্ক্রুটিনি,দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় পার্টির সভ্যপদ স্ক্রুটিনি। হাওড়া জেলারও অন্যান্য জেলার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তাঁর স্মৃতি আমি কিছুতেই ভুলতে পারিনা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তী গোসাবা ঘুরেছি আমি তার সাথে। তখন সেই এলাকার লড়াকু জননেতা সুভাষ নস্কর সঙ্গে ছিলেন। আমি পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হয়েছিলাম তাঁর প্রস্তাবক্রমে।

দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে আমি তাঁর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে মিশে ছিলাম। তাঁর মত করে এত পরিশ্রম করা নেতার এখন খুবই অভাব। যখন মানসিক কষ্ট পেতাম তখন তিনি বলতেন, পিছনে কে কি বলল আপনি কেয়ার করবেন না। আমি তো ওদেরকে পাত্তাই দিই না।একথা আপনাকে বুঝিয়ে বলার আমার প্রয়োজন নাই। কারণ আপনি যথেষ্ট অভিজ্ঞ এবং পোড় খাওয়া মানুষ। তাঁকে নিয়ে স্মৃতিচারণা শেষ করা যাবে না লিখে। তিনি ওপরে ওপরে কাজ করতেন না ।মাটিতে দাঁড়িয়ে কাজ করতেন। ক্ষিতিদা, দলের জন্য আপনার আরো কিছুদিন বেঁচে থাকা দরকার ছিল।লাল সেলাম ক্ষিতি দা।

(চলবে)..


স্মৃতিচারণ (২১) অমৃত মাইতি

#ঢাকার পাঠক সমাবেশ#

কবি সাহিত্যিকদের কাছে একটি আকর্ষণীয় পুস্তক বিক্রয় কেন্দ্র পাঠক সমাবেশ। এখানে ঠিক সন্ধ্যার সময় গেলেই ,বহু প্রথিতযশা কবি সাহিত্যিকদের সঙ্গে দেখা হয়। অনুষ্ঠান ছাড়াই এই সুযোগটি বাড়তি পাওয়া। ঢাকায় অবস্থানকালে পাঠক সমাবেশে না গেলে মনে হয় অপূর্ণ থেকে গেল ঢাকায় আসা।

একদিন ঢাকা পৌঁছতে আমার দেরি হয়ে গিয়েছিল। ফেরদৌসী কুইনের বাড়িতে লগেজটা রেখে দ্রুত একটি রিকশা ধরে পৌঁছে গেলাম পাঠক সমাবেশে। তখন নটা বাজতে মাত্র ১৫ মিনিট বাকি আছে। নটায় দরজা বন্ধ হয়ে যায় পাঠক সমাবেশের। হঠাৎ দেখলাম জাহিদুল হক বসে আছে। আমাকে দেখেই একরকম লাফিয়ে উঠে বললে, আরে মিছিলে হাঁটা কবি অমৃত মাইতি। অদ্ভুত এক আবেশ। আমি মিটিং মিছিলে তো হাঁটি সকলেই জানেন। কিন্তু কেউ কখনও বলেনি আমাকে মিছিলে হাঁটা করি। আমি জাহিদুলকে বললাম বাহ খুব ভালো লাগলো তোমার এই সম্বোধন। জাহিদুল বললে আরে অমৃত দা তোমাকে তো সারাক্ষণ মিছিলে হাঁটতেই দেখি। তাই বললাম। হঠাৎই মনে হলো। ভেবেচিন্তে বলিনি। একেবারে স্বাভাবিকভাবেই তোমাকে যেমন দেখি সেটাই আমার অভিব্যক্তি।

যাই হোক পাঠক সমাবেশে আমাদের বহু কবি সাহিত্যিকদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়াটা এবং প্রাণ খুলে গল্প করা ,ছবি তোলা একটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। পাঠক সমাবেশের দুই কর্মী শামিম ও আফ্রিনা। আমার সঙ্গে তাদের বেশ খাতির। পাঠক সমাবেশে তেল মাখানো মুড়ি আর চিনি ছাড়া লাল চা সাথে সাথে বইয়ের গন্ধ শুঁকা এক ভিন্ন আকর্ষণ।

পাঠক সমাবেশে অনেক অনুষ্ঠান করেছি। জন্মদিন অনুষ্ঠান হয়েছে আমার। একদিন হঠাৎ করে আমাকে ফোন করল আসলাম সানী ও অসীম সাহা। তোমাকে আসতে হবে ঢাকায়। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি পাঠক সমাবেশে তোমাকে একটা সম্বর্ধনা দেব। তুমি মন্ট্রিয়লে

একুশের পদক পেয়েছো। এটি আমাদের অহংকার। তাই ঠিক করেছি পাঠক সমাবেশে একটি অনুষ্ঠান করব মন্ট্রিয়লে সম্মাননা প্রাপ্তিতে একজন বাংলা ভাষার কবিকে সম্বর্ধনা জানাবো। তুমি চলে এসো।

এমন একটি প্রাপ্তি হতে পারে কখনো ভাবতে পারিনি।

একটি দেশের সম্মাননা পেয়েছি তাই আরেকটি দেশে সেই উপলক্ষে সম্বর্ধনা এটি এক পরম প্রাপ্তি। কি নিবিড় ভালোবাসা যারা অনুষ্ঠানটা করলেন।তাঁরা তারা নাও করতে পারতেন। কিন্তু আমার প্রতি তাদের ভালোবাসা, তাদেরকে এই কাজটি করতে উৎসাহ জুগিয়েছে। সেদিনের এই মিলন যে কোন সময় আমি স্মৃতিচারণ করে আনন্দ পাই তৃপ্তি পাই। ২০১৯ এর ২২ মার্চ। যেহেতু মার্চ মাস আমার জন্মমাস তাই একটু বাড়তি পাওয়া তো আমার থাকেই। একজন লেখক হিসেবে এটুকু সামান্যতম স্বীকৃতি। পাঠক সমাবেশে যাদেরকে প্রায়ই পেয়ে থাকি তাঁরা হলেন, নির্মলেন্দু গুণ অসীম সাহা নুরুল হুদা আসলাম সানী রেজাউদ্দিন স্টালিন অঞ্জনা সাহা বিমল গুহ ফারুক মাহমুদ আলম তালুকদার (প্রয়াত) তপন বাগচী প্রমূখ।

পাঠক সমাবেশের অদ্ভুত এক মহিমা সেখানে না গেলে বোঝা যায় না। আগে থেকে যদি খবর দেওয়া থাকে আমি পাঠক সমাবেশে যাচ্ছি দেখা হবে সন্ধ্যায়।

 তখন লেখক বন্ধুরা একে একে সন্ধ্যায় চলে আসে

আনন্দ আর উষ্ণ আলিঙ্গনের আশায়। যেকোনো নির্ধারিত অনুষ্ঠানকে ছাপিয়ে যায় পাঠক সমাবেশে বন্ধুদের উপস্থিতি। খুব খুব মনে পড়ে পাঠক সমাবেশের স্মৃতি রোমন্থন করতে।

(চলবে )..