Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

স্মৃতিচারণ (২৫) অমৃত মাইতি

স্মৃতিচারণ (২৫) অমৃত মাইতি#কক্সবাজারে কবিতার ক্লাস#পৃথিবীর দীর্ঘতম অখন্ডিত সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। দৈর্ঘ্য ১২০ কিলোমিটার। পর্যটকদের কাছে একটি আকর্ষণীয় সমুদ্র সৈকত। সমুদ্রের সৌন্দর্যে বিভোর হয়ে হাজার হাজার পর্যটক তাকিয়ে থাকে। ব…

 


স্মৃতিচারণ (২৫) অমৃত মাইতি

#কক্সবাজারে কবিতার ক্লাস#

পৃথিবীর দীর্ঘতম অখন্ডিত সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। দৈর্ঘ্য ১২০ কিলোমিটার। পর্যটকদের কাছে একটি আকর্ষণীয় সমুদ্র সৈকত। সমুদ্রের সৌন্দর্যে বিভোর হয়ে হাজার হাজার পর্যটক তাকিয়ে থাকে। বর্তমান বাংলাদেশের বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নুরুল হুদার বাড়ি কক্সবাজার। নুরুল হুদা কক্সবাজারে বহুবার সাহিত্য বাসর থেকে শুরু করে নানান ধরনের উৎসব অনুষ্ঠান করেছেন। সমুদ্র সৈকতে তার নিজের নামে "হুদা কবিতা মঞ্চ" তৈরি করেছেন। কবিতাপ্রেমী মানুষটির সঙ্গে আমার ২০০৩ সালে যখন প্রথম বাংলাদেশ গিয়েছিলাম সেদিন থেকে আলাপ ও ঘনিষ্ঠতা। বাংলা একাডেমির তিনি একজন বিশিষ্ট কর্ণধার ছিলেন। প্রথম আলাপ হলো একটি মধ্যাহ্ন ভোজনের আয়োজনে। সেখানে ছিলেন নির্মলেন্দু গুণ সমুদ্রগুপ্ত নুরুল হুদা ও অন্যান্যরা ।খুব জমিয়ে আমাদের আড্ডা হল। সেদিনই বিকেলে নিউজ ব্যাংক হলে এটি সম্বর্ধনা সভা। তারপরে কতবার হুদার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে ,গল্প হয়েছে। হুদা আমাকে নিয়ে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন। তাঁর প্রবন্ধের বইতে সেই লেখাটি স্থান পেয়েছে। আমি কৃতজ্ঞ তাঁর কাছে। বারবার হুদাকে কৃতজ্ঞতা জানাই। একবার বাংলাদেশের "দি ইন্ডিপেন্ডেন্স" ইংরেজি দৈনিক পত্রিকার বাৎসরিক অনুষ্ঠানে হুদা আমাকে আহ্বান জানিয়েছিল অংশগ্রহণের জন্য। সেদিন আমি নিজেকে সম্মানিত বোধ করেছিলাম বাংলাদেশের প্রথম সারির কবি সাহিত্যিকগণ উপস্থিত ছিলেন। পরের দিন কাগজে আমার বক্তৃতা ও ছবি গুরুত্ব সহকারে ছাপা হয়েছিল। সেদিনই হুদা বললে,

অমৃতদা নতুন কিছু লেখা আছে নাকি? আমি বললাম একটি দীর্ঘ কবিতা আছে ১১১১ লাইনের"হৃদয় যেন এক পথিক"। আমাকে দেন । তুমি পড়ে দেখতে পারো। পরের দিন ২০১১সালের ১ ফেব্রুয়ারি জাতীয় কবিতা পরিষদের অনুষ্ঠানের প্রথম দিন। আমাদের দেখা হল। কাল অনেক রাতে বাড়ি ফিরেছি আজকে তোমার কবিতাটা পড়বো। তখন রাত্রি প্রায় এগারোটা। আমি উত্তরাতে সৈয়দ আজিজের বাড়িতে। হুদার টেলিফোন, তুমি কবে বাড়ি ফিরছো? তিন তারিখে বিকেলের ফ্লাইটে তো? আমি তোমার এই দীর্ঘ কবিতার বইটি প্রথম প্রকাশ করতে চাই। এত বড় কবিতা আমি হাতছাড়া করতে পারবো না। ৩ তারিখ সকালে আমি কবিতার বইটি নিয়ে আজিজের বাড়িতে পৌঁছে যাব। দু তারিখে আমি চলে গিয়েছিলাম টাঙ্গাইল। আমার দ্বিতীয়বার টাঙ্গাইল সফর। মাহমুদ কামালের পীড়াপীড়ি ছিল। টাঙ্গাইল গিয়েছি আমি আটবার। নদী চর খাল বিল গজারির বন/ টাঙ্গাইল শাড়ি তার গর্বের ধন"। রাত্রিতে ফিরছি হুদার টেলিফোন ,তুমি কোথায়? তোমার বই আমার হাতে পৌঁছে গেছে। সকালে যাচ্ছি বই নিয়ে। কি মহা আনন্দ। আমার জীবনের প্রথম দীর্ঘ কবিতা আর সেটি যত্ন সহকারে বিদেশে ছাপা হলো। সময় লাগলো মাত্র চব্বিশ ঘন্টা। আমাদের দেশে কখনোই এমনটা কেউ আশা করবে না। এইটুকু একটা কাজ করতে হাজার প্রশ্ন আমাদের দেশে।আসলে ব্যবসার জন্য প্রকাশনা। ভাষাকে ভালবেসে নয়। একবার সুস্নাত জানা আমার সঙ্গে গিয়েছিল। তার ইচ্ছা হলো একটি বই বাংলাদেশ থেকে বের করার। দুদিনের মধ্যে একটি চার ফর্মার বই "ধানমন্ডির মেয়ে" হুদা সুন্দর ঝকঝকে একটি পুস্তক আমাদের হাতে তুলে দিয়েছিল। বইটি সুস্নাত আমাকে এবং নুরুল হুদাকে উৎসর্গ করেছে।নুরুল হুদার সঙ্গে সংক্ষেপে আমার সম্পর্কের কথা বললাম।

এবারে আসি কবিতার ক্লাসে। টেলিফোন পেলাম ফরিদ আহমেদ দুলালের। দাদা তোমাকে আসতে হবে কক্সবাজারে "কবিতা বাংলার "কবিতা উৎসবে। তোমাকে আমরা সম্বর্ধনা দেব। হুদা বললে এর আগের বার তুমি আসোনি, তোমার স্মারক আমি পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। এবার কিন্তু দাদা আসতেই হবে। খুব মনে আছে একটি রাস্তার ধারে চায়ের দোকানে আমি ফরিদ আহমেদ দুলাল এবং আসলাম সানী আড্ডা দিয়েছিলাম দীর্ঘ সময়। এসব মনে হয় আর মন খারাপ করে। স্মৃতিচারণে খানিকটা আনন্দ পাই। অনুষ্ঠানের পরের দিন হুদা সকালে বললে, তোমাকে আজ কবিতার ক্লাস নিতে হবে কলেজের ছেলেমেয়েদের। তোমাকে দিয়েই উদ্বোধন করব। গেলাম "হুদা কবিতা মঞ্চে"। দেখা যাক আপাতত গল্প করে কাটিয়ে দেবো এটাই ভাবছিলাম। আমি তো ২৪ ঘন্টা রাজনীতি করার মানুষ। লেখালেখি কিছু করেছি বলেই লোকে আমাকে তাদের অভ্যাস বশত বা ভদ্রতার কারণে ডাকে। শুরু করলাম কিছু প্রারম্ভিক কথা দিয়ে। একটু পরিবেশ তৈরি করলাম। ছেলেমেয়েরা ততক্ষণে কবিতার অনুভবে অনেকখানি মগ্ন। বললাম কবিতা কখনো শেখানো যায় না। এটা নির্মাণ শিল্প নয়। তোমরা একটা পিরামিড তৈরি করতে পারো। কিন্তু কবিতা হল সৃষ্টি। কিছু শব্দ যোগ করলেই কবিতা হয় না। কবিতা লিখব বলে কলম নিয়ে বসে মাথার চুল ছিঁড়ে ফেললেও একটিও কবিতার জন্ম হবে না। ধরো তুমি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছ। রাস্তা দুই দিকে সোনালী ফসল। ফসলের ভারে নুইয়ে পড়েছে মাথা। পাকা ধানের ভরে উঠেছে মাঠের সোনালী ফসল। তোমার তো মনে হতেই পারে এত ফসল তবু আমাদের ঘরে খাদ্যের অভাব। এই ফসল ফলিয়েছে কৃষক, গরিব ক্ষেতমজুর। এই গরিব মানুষগুলো তো আমাদের অন্নদাতা। তাহলে এই ফসল গরিবের সম্পদ নয় কেন? মনে কি প্রশ্ন আসতে পারে? ছেলেমেয়েরা বলল ,একদম ঠিক এটাই তো মনে হবে। এই ফসল উৎপাদন , উৎপাদক আর জমির মালিক,বিষয়গুলি তোমার মনকে নাড়া দিতে পারে। গভীরভাবে উপলব্ধি করলে তোমার সুক্ষ কোমল মনের অভিব্যক্তি যদি এমন হয়,"মাঠময় ফসল/ক্ষুধা তৃষ্ণাহীন মানুষের /শ্মশান সম্বল"। এই উচ্চারণ থেকে মানুষের মধ্যে যে বিভাজন আছে ,একশ্রেণীর হাতে আছে আর এক শ্রেনীর হাতে নাই এটা অন্তত বোঝা যাচ্ছে। কয়েকটি শব্দ কি কবিতার জন্ম দিল না?

এই উচ্চারণের মধ্য দিয়ে মানুষের জন্য কষ্ট আছে বেদনা আছে অভাবের কারণ লুকিয়ে আছে অর্থাৎ খেটে খাওয়া মানুষের জন্য তোমার প্রাণের ব্যাকুলতার প্রকাশ এখানে পেয়েছি। ধরা যাক তোমরা সবাই পড়াশোনা করছো ,কিন্তু পড়াশোনার জন্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা পরিবেশ খাদ্য বস্ত্র সব দিকেতেই নাই নাই একটা ভাব বিরাজ করছে। অর্থাৎ তুমি একজন অভাবী ছাত্র। তোমার অভিভাবকেরও সেই সামর্থ্য নেই তোমাকে উপযুক্ত ভাবে শিক্ষিত করে গড়ে তোলার। তুমি যেন সেই মাঠে পড়ে থাকা বীজ। যদি উপযুক্ত সময় পরিমাণ মতো জল না পায় বীজ কি অঙ্কুরিত হবে? একটি বীজ মাটিতে পড়ে থাকলেই অঙ্কুরিত হয় না, গাছ হয় না। কিন্তু বীজের কোনো অপরাধ নেই।"মাটিতে পড়ে আছে বীজ অপরাধীর মতো"। তোমরা সকলে বীজ। শুধু অপেক্ষা মহীরুহ হওয়ার। অথবা যদি বলি,"একটি কুড়ি যদি কোন ঘাসফড়িং কেটে দেয় কুঁড়ির কি দোষ/একটি কুঁড়ি যদি কোন অর্বাচীন ছিঁড়ে দেয় /তাহলে কুঁড়ির কি দোষ?/একটি কুঁড়ি যদি বিকশিত হয়/যদি সে মালা হতে না পারে /তাহলে ফুলেরই আফশোস"।

এইসব কথাগুলো তখনই কবিতা হয়ে ওঠে যখন আমাদের মন গ্রহণ করতে পারে সানন্দে। এভাবে কিছু কথা লেখা যায়। মনের আবেগ থেকে ,দৃশ্যমান জগৎকে অনুভব করে ,উপলব্ধি করে ।তারপর লেখার পরে বারবার পড়তে পড়তে লেখাগুলোর গভীরতা তৈরি করা যায় বিভিন্ন শব্দ চয়নের মধ্য দিয়ে,সৌন্দর্যমন্ডিত করে তোলা যায় অর্থাৎ বারবার মাজা ঘষা করলে সুন্দর কবিতার জন্ম হয়। সেই কবিতা যদি মানুষের কথা বলে, তাহলে সেই কবিতা মানুষ মনে রাখবে। যাইহোক সেদিন এইসব চর্চা করে নিজেকে অজ্ঞতার হাত থেকে বাঁচালাম। কোনরকম প্রস্তুতি ছিল না। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত বঙ্গোপসাগরের ঢেউ আর ঝাউয়ের শন শন শব্দে

কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে গেলাম। চট্টগ্রাম থেকে আমাকে যে নিয়ে গিয়েছিল সে তখন দূরে দাঁড়িয়ে গাড়িতে হর্ন বাজাচ্ছে। মঞ্চে নুরুল হুদা আসলাম সানী ফরিদ আহমেদ দুলাল।ফিরে এলাম কক্সবাজার থেকে। আমি ফিরলাম আমার মনটা থেকে গেল সেখানে। আজও ভেসে বেড়ায় সমুদ্রের ঢেউ আর কক্সবাজার।

(চলবে)


স্মৃতিচারণ (২৬ )অমৃত মাইতি

#খেলার মাঠ#

অলৌকিকতায় বিশ্বাসী জড় মানুষদের বিবেকানন্দ বলতেন যাও খেলার মাঠে যাও। খেলার মাঠে সমস্ত রকমের জড়তা কেটে যায়। শরীর ভালো থাকে।মানসিক নিরানন্দ ভাব দুশ্চিন্তা টেনশন কোন কিছুই থাকেনা। মাঠে নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু ভুলে যাই। তখন এটি বল। সেটাই একমাত্র লক্ষ্য। বলটা কি করে পাওয়া যাবে তারপরে দৌড় ।প্রতিপক্ষকে পরাজিত করার নিজের সমস্ত রকমের দক্ষতা পারদর্শিতা প্রদর্শন করার এক বিরাট সুযোগ।

কে না চায় সকলের মধ্যে নিজেকে একটু এগিয়ে রাখার যদি সুযোগ পাওয়া যায় তা গ্রহণ করতে।

খেলার মাঠে একক কৌশল প্রয়োজন থাকলেও টিম স্পিরিট সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ। একসাথে চলার শিক্ষা কিন্তু খেলার মাঠ আমাদেরকে তৈরি করে দেয়। দশে মিলি করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ। খেলার মাঠে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকলেই খেলোয়াড় সুলভ মনোভাব নিয়ে মাঠে কাজ করে। খেলার মাঠে জাত পাত থাকে না সম্প্রদায় থাকে না কোন ধর্মের কচকচানি থাকে না। একজন খেলোয়াড় সর্বোপরি সে একজন মানুষ প্রতিযোগিতার আসরে সে তার নিজের দক্ষতা প্রদর্শন করার জন্য মরিয়া হয়ে থাকে। আমি ছোটবেলা থেকেই হাডুডু এবং ফুটবল খেলায় ভীষণ আগ্রহী ছিলাম। পড়ার চেয়ে খেলায় সময় দিতাম বেশি। আমার কাছে পড়াটা খুব কঠিন কাজ ।খেলাটা খুব সহজ। আমি তখন স্কুলে ক্লাস এইটে পড়ি। আন্ত: জেলা ফুটবল প্রতিযোগিতা স্কুলের ছাত্রদের। খেলতে গেলাম ধান্যশ্রী হাই স্কুলের মাঠে। ২-০ গোলে আমরা জিতলাম। অনুশীলন করতাম স্কুল ছুটির পরে। ফুটবল খেলা আমাকে কোনদিন ছেড়ে যায়নি এই বৃদ্ধ বয়সেও। আমি খেলেছি দিঘার মাঠে দুবার। মেচেদার শান্তি সংঘের মাঠে একবার। তমলুক কলেজ গ্রাউন্ডে একবার। কাঁথি অরবিন্দ স্টেডিয়ামে একবার। এখানে আমি হয়েছিলাম ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ।

সুটাহাটার মাঠে একবার। দুর্গাচক স্টেডিয়ামে রাত্রিতে একবার। প্রত্যেকটি ছিল কম্পিটিশন। আয়োজক ছিল পূর্ব মেদিনীপুর জেলা রিপোর্টার্স ফোরাম। একদিন সকালে ঢাকা এয়ারপোর্ট এর কাছে উত্তরাতে মর্নিংওয়াকের সময় দেখলাম ছেলেরা প্র্যাকটিস করছে। ইচ্ছা হল একটু নেমে পড়ি। নেমে দুটি বল মেরে উঠে এসেছি ।কিন্তু আজিজের সেই চিৎকার আরে আপনি কি বিপদে ফেলবেন নাকি আমাকে।


এইতো কদিন আগে হেঁড়িয়া স্কুলে একটি সাহিত্য বাসর সেরে বেরিয়ে এসে দেখলাম মাঠে বাচ্চা বাচ্চা ছেলেরা খেলছে। বললাম দাদু বলটা একটু দে তো। ফুটবল খেলা কেউ ভুলে যায় না। বলটা একপায়ে তুললাম আর এক পায়ে শর্ট মারলাম। বাচ্চাগুলো খুব অবাক। তবে একটা শিক্ষা খেলোয়াড়দের কাছ থেকে পাওয়া যায় ,বহু ক্ষেত্রে খেলোয়াড়সুলভ মনোভাব নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দেখা উচিত। হারজিত নিয়ে মাথা খারাপ হয় না। জীবনের সব ক্ষেত্রে এই মনোভাবটা জিইয়ে রাখতে পারলে সাফল্য লাভ হয়।

খেলোয়াড়দের মধ্যে হীনমন্যতা থাকে না। আসুন সবাই খেলোয়াড়সুলভ মনোভাব নিয়ে কাজ করি।

(চলবে)


স্মৃতিচারণা (২৭ )অমৃত মাইতি

#ছাত্র অবস্থায় দুষ্টুমি করেছি সীমাহীন এবং গ্রহণযোগ্যতাও অর্জন করেছিলাম।#

আমি মেধাবী ছাত্র ছিলাম না। মাজা ঘষা করে চালিয়ে নিয়েছি। আমার স্কুলের হেড মাস্টারমশাই

মনিভূষণ সাঁতরা। তাঁর সঙ্গে বাবার প্রায় দেখা হতো।

বাবা বলতেন আমাকে, মনিবাবুর সঙ্গে দেখা হয়েছিল। উনি বলেছেন অমৃত ভীষণ অমনোযোগী।

আমি ক্লাস সিক্স থেকে সিগারেট খাওয়া শুরু করেছিলাম। কয়েকজন বখাটে বন্ধু শিখিয়েছিল । হেডমাস্টারমশাই জানতে পেরে একদিন আমাকে খুব মেরেছিলেন। উনি আবার পরবর্তীকালে আমার খুব প্রশংসা করেছেন। কারণ আমি তখন ছাত্র যুব আন্দোলন করতে করতে এলাকায় খুবই প্রতিষ্ঠিত হয়েছি। একদিন তিনি বিশেষ কাজে আমার কাছে এসেছিলেন পার্টি অফিসে। আমি চেয়ার ছেড়ে দাঁড়ালাম।স্যার আসুন। তিনি বললেন না না এই চেয়ারটা তোমার এখানে আমি বসতে পারি না। চেয়ারে বসার যোগ্য হয়েছি আপনার আশীর্বাদে।

আমাকে নিয়ে স্কুলের ছেলেদের কাছে তিনি খুব প্রশংসা করেন। আমি অন্যান্য মাস্টারমশাইদের কাছ থেকে শুনেছিলাম।তাঁর প্রয়ানের পরে এক্স- স্টুডেন্টরা স্কুলের সামনে একটি মূর্তি বসিয়েছিলেন।

এক্স- স্টুডেন্টরা অনেকেই উচ্চশিক্ষিত এবং পদাধিকারী। তারা সকলে সিদ্ধান্ত করলো মূর্তির আবরণ উন্মোচন করবে অমৃত মাইতি। নির্ধারিত দিনে আমি সেখানে গিয়ে মূর্তির আবরণ উন্মোচন করলাম। নিজেকে গর্বিত মনে করেছি সেদিন।

কয়েক বছর পরে স্কুলের ৭৫ বছর পূর্তি উৎসব। আমার সৌভাগ্য হলো জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং উৎসব উদ্বোধন করা। আমার শিক্ষক মহাশয়েরা তারা সেই উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মঞ্চের নিচে চেয়ারে বসে আছেন। আমার নাম ঘোষনার পরে আমি মাস্টারমশাইদের কাছে গেলাম প্রণাম করলাম। বললাম এই সিদ্ধান্তটা ঠিক হয়নি। আপনার নিচে বসে থাকবেন আর আমি মঞ্চের উপরে বসবো, এই বিষয়টা আমাকে বড় পীড়া দিচ্ছে। স্যার আপনারও চলুন মঞ্চে বসবেন। তাঁরা রাজি হলেন না ।বললেন না তুমি আমাদের একজন যোগ্য ছাত্র ।তুমি রাজনীতি সাহিত্য জগতে যথেষ্ট প্রতিষ্ঠিত। আমরা অনুমতি দিচ্ছি তুমি যাও মঞ্চে উদ্বোধন করো অনুষ্ঠানটি। বহু নতুন নতুন ছেলে আমাকে চেনেনা ,কিন্তু সঞ্চালক পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিল। আমি যে সেদিন কি পেলাম সারা পৃথিবীর ভ্রমণ করেও পাওয়া যাবে না। আমি তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি, একটি চেয়ার ভেঙে দিয়েছিলাম।

সেদিনও মার খেয়েছি। টেস্ট পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোলো যেদিন, সেদিন এক কান্ড যা কোনদিন ভোলার নয়। পাঠক বন্ধুরাও অবাক হয়ে যাবেন।

বিকেলে গেলাম স্কুলে। স্কুলের পিওন প্রফুল্লদা বললে এখন রেজাল্ট দিবে না। সন্ধ্যার পরে বোর্ডে মাড়িয়ে দেওয়া হবে। আমি চলে গেলাম সিনেমা দেখতে উত্তম সুচিত্রার বই। তখন রিয়াপাড়াতে তাঁবু খাটানো সিনেমা হল। সিনেমা শেষ করে অন্ধকার রাতে স্কুলে গেলাম। বোঝা যাচ্ছে বোর্ডে একটা নতুন সাদা কাগজ মাড়ানো আছে। পকেটে হাত দিয়ে দেখলাম দেশলাই নাই। অনুমান করা যাচ্ছে বাইরের নক্ষত্রের আলোতে সাদা কাগজটা। ভাবলাম সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করা সম্ভব নয়। গাম দেওয়া ছিল ধারের দিকে। বাকিটা সহজেই তুলে নেওয়া যায়। তাই করলাম। বাড়িতে এসে দেখলাম আমার নামটা প্রথমে আছে। কিন্তু সকাল সকাল স্কুলে চলে গেলাম। মাস্টার মশাইরা তখন বোর্ডিংএ। দেখে বললেন আজ ফর্ম ফিলাপ হবে বাড়ি চলে যাও ।বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে এসো। বললাম স্যার রেজাল্টটা কি দেখতে পাওয়া যাবে না? দেখে এসো বোর্ডে মাড়ানো আছে। আমি তো জানি কিছুই নাই । আমিও কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করে বোর্ডিং এ ফিরে এলাম। অবনীভূষণ সিংহ স্যার বললেন, যারা 

আনসাকসেসফুল তারা ওটা ছিঁড়ে দিয়েছে। এমন কত যে ধূর্তামি আমি করেছি! আমি কলা বিভাগের ছাত্র। তখন ফার্স্ট ডিভিশন খুব একটা ছিল না। আমি কলা বিভাগে একাই সেকেন্ড ডিভিশন পাশ করলাম। একবার কলেজে আমার চেয়ে কম নাম্বার পাওয়া ছাত্রদের প্রমোশন দিয়েছেন প্রিন্সিপাল। কিন্তু আমাকে দেননি। আমার উপর তাঁর একটু রাগ ছিল। আমি একটু তীব্রভাবে তাঁর উপর অসন্তোষ প্রকাশ করি। পরের দিন তিনি ক্লাসের খাতায় আমার নাম তুলে দিয়েছেন অর্থাৎ প্রমোশন করিয়ে দিয়েছিলেন। আরেকদিন নোটিশ বোর্ডে আমার বিরুদ্ধে একটি অ্যাকশন নিয়ে জানিয়ে দিলেন। আমি তখন কলেজে ক্লাস করার সময় পেতাম না। সারাদিন তো রাজনীতি রাজনীতি আর রাজনীতি।

সেদিন রাত্রে নোটিশ বোর্ডটি তুলে নয়নজুলিতে ফেলে দিয়েছিলাম আমরা। বেশ কিছু প্রফেসর আমাকে মদত দিতেন। আমার সঙ্গে প্রিন্সিপালের প্রায় গোলমাল হত। তবে পরবর্তীকালে তিনি আমাকে কাছে টেনে নিয়েছিলেন আমিও শ্রদ্ধায় তাঁকে প্রণাম করেছি। সাদা মাঠা সহজ সরল ছাত্র আমি ছিলাম না। আবার। যুক্তফ্রন্ট ভেঙ্গে দেওয়ার চক্রান্তের প্রতিবাদী চক্রান্তের প্রতিবাদে১৯৬৭ তে ২৮ জন ছাত্র নিয়ে চলে গেলাম মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেলে, জেল খাটতে।

ছাত্র জীবন হলো নানান রঙ্গের সমাহার। এক রোমান্টিক জীবন। তাই আমি স্বীকার করি যে আমি দুষ্টুমি করেছি। পাশাপাশি ছাত্র রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছি। নেতৃত্ব দিতে পেরেছি। আমার দোষ গুন যাই থাক না কেন ,আমি আবেগের দ্বারা পরিচালিত হতাম বেশি।

এভাবে কত কিছুই আমার স্মৃতির ঝাঁপি ভরে আছে।

(চলবে)...