ঘটনাটি যোগীরাজ উত্তর প্রদেশের। নেট দুনিয়াতে এখবর ভাইরাল হতে সময় লাগেনি।নিন্দার ঝড় বহে গেছে দেশময়।প্রতিবাদের তুফানে উওর প্রদেশের শিক্ষা দপ্তরের ও ঘুম ভেঙেছে।তারা ঘোষনা করেছেন শিক্ষিকার দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির বিধান। চাপে পড়লে বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খায় ।
কিন্ত ছাত্র টির বাবার বক্তব্য আরো শিক্ষনীয়।গরীব চাষী ছাত্রের বাবা জানান তিনি চান ঘটনাটি এখানেই শেষ হোক।সোরগোল হলে দুই ধর্মের মানুষের মধ্যেই অশান্তির বাতাস বইবে।তাতে করে জাতিগত দাঙ্গা বাঁধবার মতো পরিস্থিতির তৈরি হতে পারে।একজন শিক্ষিকার জন্য নিরপরাধ মানুষ কেন নিজেদের মধ্যে অশান্তির আগুন জ্বালাবেন।আর তাতে পুড়ে মরবেন দুই সম্প্রদায়ের মানুষেরা।তার থেকে এই পরিস্থিতি কে ধামাচাপা দেওয়ার মধ্যেই জয়ের আনন্দ।
এই ঘটনা নতুন নয়।বিভিন্ন সম্প্রদায় উঁচু জাত নিচু জাতের যাঁতাকলে প্রতিদিন ই নানা খবর উঠে আসে আমাদের কানে। দুর্বল কে সবলের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার মধ্যেই মধ্য যুগীয় বর্বরতার ছবি ভাসে।প্রশ্ন ওঠে এসব কি সত্যিই ঘটছে।এক মানুষের মধ্যেই কি লুকিয়ে থাকে অপর মানুষ কে হেয় করার এই অপচেষ্টা।
ভারতের মতো ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রতি বিশ্বের মানুষের শ্রদ্ধা অপরিসীম। অনেক রাষ্ট্র ই ভারতের এই নিরপেক্ষ পথ চলাকে ঈর্ষা করেন।তবুও মাঝে মধ্যেই এই সব অপ্রত্যাশিত ঘটনা দেশের বুকে কলঙ্কের কালিমা লেপে দেয়।সেই দাগ মুছে ফেলা যায় না।জাত ধর্মের জিগির তোলা মানুষেরা মানবতার ধর্মের কথা একেবারেই ভুলে যান।
একজন শিক্ষক বা শিক্ষিকার কাজ হলো ছাত্র নাম অধ্যয়ন তপঃ।আর তিনিই যদি ধর্মের আফিং সেবন করে ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যেই ধর্মের বেড়াজাল তুলে দেন তাহলে তো সমূহ বিপদ।
শিক্ষাদানের মহান ব্রত যাঁদের কাঁধে তারা কেন ধর্ম গুরুদের মতো আচরণ করবেন।শিক্ষাগুরু কেন নিজেকে ধর্মের ক্ষুদ্র গন্ডিতে আবদ্ধ রাখবেন।
বেদ উপনিষদ কোরান বাইবেল কোথাও তো এই উপদেশ নেই। বরং অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতেই বলা হয়েছে।
ধর্ম মানুষের অন্তরের আধার। যে কোন মানুষের অধিকার আছে নিজ ধর্ম পালন করার। আর তা অন্য ধর্ম কে খাটো করে নয়।ধর্ম যে যার উৎসব সবার।
শিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষার গুরুত্ব সবার উপরে।সেখানে জাত ধর্মের বিচার নেই। উঁচু নিঁচুর ফারাক নেই। বরং মেধার ফারাক থাকতেই পারে।মেধা তো আকাশ থেকে আসে না।মেধা কষ্টের ফসল।একজন ছাত্র বা ছাত্রী মেধার জোরেই নিজের জীবন গড়েন। সেখানে একজন ছাত্র কে ধর্মের জালে আটকে রেখে প্রকৃত মেধার সন্ধান করা যায় না। একজন ছাত্র কে অপমানিত করার অর্থ হলো সমগ্র ছাত্র সমাজ কে অপমানিত করা।
শুরু করেছিলাম উত্তর প্রদেশের এক ঘটনার কথা লিখে।শুধুমাত্র উত্তর প্রদেশ কেন সমগ্র দেশ জুড়েই চলছে অবাঞ্ছিত এই সব ঘটনা।
রাজনৈতিক ফায়দা লুঠতে রাজনৈতিক দলগুলি এই সব ঘটনা কে নানা চোখে দেখেন।কোথাও কোথাও সমর্থন ও করে বসেন।ব্যালট বাক্স ভরান এই সব ধর্মের সুড়সুড়িতে।ভোট সর্বস্ব রাজনৈতিক কারবারীদের এছাড়া যে ভোট বৈতরনী পারাপারের আর যে রাস্তা নেই।
সত্যিই কি নেই। অবশ্যই আছে।আর সেটি উন্নয়ন। কিন্ত সে পথে সময় লাগে।কিন্ত ধর্মের পাশা খেলা যে অনেক সোজা।ধর্মের কাজল পড়া চোখে মানুষ কে অন্ধ করে রাখা।বাহাদুরি না থাক রাজ্য পাট দখল তো থাকে।আর রাজ্য পাট হাতে থাকা মানেই তো ক্ষমতার অলিন্দ।যা একান্তই কাম্য তাঁদের।
শিক্ষার অঙ্গন থেকে ধর্মের বেড়াজাল কেটে মানবতার বানীতে গড়ে উঠুক ছাত্র দল।জাত পাতের কু প্রথার বিলোপ সাধন ঘটুক।
আর শিক্ষক শিক্ষিকারা বাজাক আগমনী গান।
আজ যে ছাত্র ছাত্রী আগামী কাল তাদেরই হাতে নিতে হবে রাষ্ট্রের ভার।তাই শিক্ষা অঙ্গন কে কলুষিত মুক্ত যে হতেই হবে।ধর্ম মুক্ত অবশ্যই। রাজনৈতিক মুক্ত বলা যাবে না।কারন কলেজ ইউনিভার্সিটির মধ্যে তো ছাত্র ইউনিয়ন থাকেই। তবে তা রাজনিতী মুক্ত হলেই মঙ্গল।
সেখানে অবশ্য ধর্মের বাতাস বয় না।কারন ইস্কুল জীবনে যে সাম্প্রদায়িক বিষ বপন হয় তা থেকে যায় আজীবন ।
সে প্রসঙ্গ থাক।উত্তর প্রদেশের সেই শিক্ষিকা অবশ্য ক্ষমা চেয়েছেন।আর এ ভুল তিনি করবেন না।
ভুল বা ঠিক বড় কথা নয়।বড় কথা হলো সেদিনের সেই ছাত্রের চোখে তিনি কি আর শিক্ষাগুরুর মর্যাদা পাবেন।
শিক্ষক শিক্ষিকারা মনে রাখবেন , মানুষ গড়ার কারিগর হতে গেলে আগে নিজেকে মানুষ প্রমান করতে হবে।তবেই তো মানুষ গড়বেন তিনি।
নতুবা এই পেশার গুরুভার তাঁর কাঁধে কাঁটার মতোই বিঁধবে।
ধর্মের কন্টক মুক্ত না হতে পারলে এ মনিহারে তিনি বেমানান।
যা ঘটেছে উত্তর প্রদেশের শিক্ষিকার কাজে।