অরুণ কুমার সাউ, চন্ডিপুর: "......... বৃহন্নলারূপী কিরীটি, বিরাটপুত্র সহ উদ্ধারিতে গোধন, সাজিলা শূর শমীবৃক্ষমূলে।"- মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা অভিষেক কবিতা থেকে আমরা শমী বা শামি বৃক্ষের কথা পাই। একটি দেশীয় গাছ অথচ আমাদে…
অরুণ কুমার সাউ, চন্ডিপুর: "......... বৃহন্নলারূপী কিরীটি, বিরাটপুত্র সহ উদ্ধারিতে গোধন, সাজিলা শূর শমীবৃক্ষমূলে।"- মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা অভিষেক কবিতা থেকে আমরা শমী বা শামি বৃক্ষের কথা পাই। একটি দেশীয় গাছ অথচ আমাদের রাজ্য থেকে এখন বিলুপ্তপ্রায়।
হিন্দু পুরাণ শাস্ত্রে শমী গাছের কথা বা গুরুত্ব বারংবার পেয়েছি। রামায়ণে, লঙ্কা যুদ্ধের আগে ভগবান রাম এই গাছের পূজা করেছিলেন বলে উল্লেখ আছে।নবরাত্রির দশম দিনে এবং দশেরার সময় গাছটিকে বিশেষভাবে শ্রদ্ধা জানানো হয়। আবার মহাভারতে, বনবাসের সময় অর্জুন বৃহন্নলার ছদ্মবেশে তাঁর দিব্য গাণ্ডীব ধনুকটি একটি শমী গাছের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিলেন। পাণ্ডবরাও তাদের বনবাসের শেষ বছরের আগে তাদের স্বর্গীয় অস্ত্রগুলি একটি শমী গাছের হাতে অর্পণ করেছিলেন এবং ফিরে এসে তারা তাদের অস্ত্রগুলি নিরাপদে পেয়েছিলেন, গাছটিকে তাদের রক্ষা করার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন। অস্ত্র গ্রহণের আগে, তারা গাছটিকে পূজা করেছিলেন। পুরান মতে গণেশ এবং দুর্গা পূজাতেও শমী গাছের পাতা ব্যবহার করা হয়। গাছটি সুরক্ষা এবং আধ্যাত্মিক বিকাশের প্রতীক। হিন্দু ধর্মগ্রন্থ অনুসারে শমী গাছ শনির প্রতিকূল প্রভাব কমাতে সাহায্য করে। সুরক্ষা কামনা করে আজও এই গাছের নীচে মানুষ প্রদীপ জ্বালান। মারাঠা দশেরা ঐতিহ্য অনুসারে দশেরার সময়, মারাঠারা শামী গাছে তীর নিক্ষেপ করত এবং তাদের পাগড়িতে ঝরে পড়া পাতা সংগ্রহ করত, যা আশীর্বাদের প্রতীক। শামি গাছকে শুভ ও সৌভাগ্যের প্রতীক বলে কোনও গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় অনেকেই গাছটি দর্শন করেন।
শামী গাছের ভেষজ উপকারীতা রয়েছে যথেষ্ট।কান্ডের রস হজম ক্ষমতা বাড়ায় ,গাছের শিকড় ও পাতা সেবন করলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমাধানে সহায়ক। পাতা ও ছাল শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি এবং ব্রঙ্কাইটিসের মতো রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। শিকড় ও পাতা মূত্রনালীর সংক্রমণ সমাধানে সহায়ক। পাতা ও ছাল চুলকানি, ফুসকুড়ি এবং একজিমার ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়। এছাড়াও ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, জ্বর সহ আরও অনেক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।শামী গাছ বাতাসকে বিশুদ্ধ করে এবং পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
চন্ডিপুর বায়োডাইভার্সিটি কনজারভেশন ইউনিটের পক্ষ থেকে কয়েকদিন থেকে রোপণ করছে এ ধরণের বিরল কিছু গাছ ।চন্ডিপুর ধান্যশ্রী কামদেব চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে দুটি গাছ লাগানো হয়। এদিন গাছ লাগানোর সময় উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তপন কুমার মাইতি, চন্ডিপুর বায়োডাইভার্সিটি কনজারভেশন ইউনিটের দেবগোপাল মণ্ডল, নব্যেন্দু মাইতি, বিকাশ চন্দ্র প্রধান , বাজকুল বনদপ্তর এর দুই কর্মী সহ বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকেরা ।চন্ডিপুর বায়োডাইভার্সিটি কনজারভেশন ইউনিটের অন্যতম সদস্য দেব গোপাল মণ্ডল বলেন, আমরা জেলার বিভিন্ন স্থানে এই ধরণের হারিয়ে যাওয়া গাছগুলো আবার ফিরিয়ে আনতে চাই পরিবেশে। এই সব দেশীয় গাছের গুরুত্ব জনমানসে তুলে ধরতে প্রয়াস জারি রাখছি নিরন্তন।