Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

বন্যার সাথী তাল গাছের ডোঙা এখন বিলুপ্তপ্রায়

অরুণ কুমার সাউ, তমলুক: পরিবেশবান্ধব ও সহজ নৌযান তাল গাছের কাণ্ড থেকে তৈরি ডোঙা।কালের বিবর্তনে দুই মেদিনীপুরের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী তাল গাছের ডোঙা। বর্তমান প্রজন্মের কাছে তালের ডোঙা শব্দটি যেন এক অদ্ভুত নাম।…


অরুণ কুমার সাউ, তমলুক: পরিবেশবান্ধব ও সহজ নৌযান তাল গাছের কাণ্ড থেকে তৈরি ডোঙা।কালের বিবর্তনে দুই মেদিনীপুরের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী তাল গাছের ডোঙা। বর্তমান প্রজন্মের কাছে তালের ডোঙা শব্দটি যেন এক অদ্ভুত নাম।এক সময় দুই মেদিনীপুর জেলার অধিকাংশ খাল-বিল, নদী-নালা ও ডোবাতে তালের ডোঙা চোখে পড়ত।‘ডোঙা’ শব্দের মূল উৎপত্তি হয়েছে ‘ডিঙি’ থেকে। ‘ডিঙি’ অর্থ ছোট। তালের ডোঙা মূলত নির্মাণ করা হয় তাল গাছ থেকে। ১০ থেকে ১৫ বছর আগেও পর্যন্ত মেদিনীপুরের বন্যা কবলিত বেশিরভাগ এলাকায় প্রচুর তালের ডোঙা দেখা যেত, কিন্তু কালের স্রোতে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে আজ বিলুপ্তির পথে।

অতীতে গ্রামে বসবাস করা মানুষের জলপথের প্রধান বাহন ছিল এই তালের ডোঙা। কিন্তু আগের মতো তালের ডোঙা এখন আর চোখে পড়ে না। এখন ডোঙার নাম শুনলে হয়তো অনেকে উল্টো প্রশ্ন করবেন এটা আবার কী? অথচ দুই থেকে তিন দশক আগেও তালের ডোঙার কদর ছিল।ঘাটালের বাসিন্দা তপন দাস বলেন, বর্ষায় কাজের জন্য প্রতি বাড়িতে তালের ডোঙার অবশ্যক ছিলো। গত দু মাসের মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটালে ও পাঁশকুরাতে তালের ডোঙা চোখে পড়লো। আর বর্তমান প্রজন্ম তাল ডোঙা কী চেনে না, নামও শোনেনি। এককথায় তাল ডোঙা যেন আমাদের অঞ্চল থেকে প্রায় বিলুপ্ত।


এটি মূলত মাছ ধরা, শামুক সংগ্রহ অথবা স্রোতহীন কোনো বিল পার হওয়ার জন্য ব্যবহৃত হতো। স্থানীয় এক তাল গাছের ব্যবসায়ী বলেন,বর্তমান প্রজন্ম এখন তালের ডোঙা কি সেটা চিনে না। এলাকার মানুষ তার কাছে ডোঙা তৈরির জন্য তাল গাছের বায়না দিতেন।তিনি জানান, তাল গাছের আধিক্যের কারণে তখনকার দিনে ডোঙা তৈরি সহজ ছিল। অনেকে ডোঙা তৈরি ও সরবরাহ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তবে প্রবীণরা বলেন, ‘এখনও বর্ষাকালে আমরা তালের ডোঙার প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করি। তালের ডোঙা স্রোতের মধ্যে চলতে পারে না। একসময় ছোটখাটো কাজ করার জন্য তালের ডোঙা প্রসিদ্ধ ছিল। সর্বোচ্চ দুজন কি তিনজন মানুষ এক সঙ্গে ডোঙায় চলাচল করতে পারত। এর বেশি হলে ডুবে যেত। বর্ষাকালে চলাচলের জন্য তালের ডোঙা ব্যবহৃত হতো।নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে তালের ডোঙা নির্মাতারা হারিয়ে গেছেন, সেই সঙ্গে হারিয়ে গেছে ডোঙাও। বর্তমানে দেশে ডোঙা তৈরি হয় না বললেই চলে।তাছাড়া তাল গাছের দাম অনেক বেশি, এখন আর আগের মতো পাওয়াও যায় না।পরিবেশবান্ধব ও সহজ নৌযান তালের ডোঙা। এ ধরনের নৌযান টিকিয়ে রাখার জন্য সরকারি উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন স্থানীয়রা।

ঘাটালের বাসিন্দা তপন দাস বলেন, আমি অনেক বছর ধরেই একটি ডোঙা ব্যবহার করছি। স্মৃতি হিসেবে এখন টুকটাক ব্যবহার করি।বন্যা কালীন সময়ে একটু বেশি ব্যবহার হয়, ১০ গ্রাম ঘুরে দুই-একটি তালের ডোঙা চোখে পড়বে কি না সন্দেহ। পল্লী-গ্রাম থেকে তালের ডোঙা বিলুপ্ত হতে চলেছে।

 তালের গাছ দিয়ে তৈরি নৌকাকে আঞ্চলিক ভাষায় তেলে ডোঙ্গা বলা হয়। মূলত যারা গ্রামে বসবাস করেছে তারা তালের ডোঙাকে মাছ ধরার কাজে এবং খাল-বিল পারাপারের জন্য ব্যাবহার করতো। এখন আগের মতো বর্ষাও নেই। ডোঙার মিস্ত্রিও পাওয়া যায় না। তাই ডোঙা নেই বললেই চলে।মেদিনীপুরের প্রবীন তেলে ডোঙার মিস্ত্রি গোকুল দোলই বলেন, এর চাহিদা নেই বলে এ পেশা ছেড়ে দিয়েছি। এখন তেমন মিস্ত্রিও নেই। আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। মানুষ আধুনিক হয়েছে। গ্রামাঞ্চলে বর্ষার সময় তালের ডোঙার ব্যবহার অনেক কমে গিয়েছে। ডোঙার ব্যবহার ও মিস্ত্রিদের পেশা পরিবর্তন হয়েছে। এক কথায় তালের ডোঙা এ অঞ্চল থেকে যেন বিলুপ্তির পথে।