অরুণ কুমার সাউ, তমলুক : দীপাবলি মানেই আলোর উৎসব। আর সেই উৎসবে বিগত কয়েক বছরের রঙিন বাহারি ইলেকট্রিক লাইটের দাপট কাটিয়ে আবারও বাড়ছে চিরাচরিত মাটির প্রদীপের চাহিদা। বিক্রেতাদের দাবি, গত কয়েক বছর ধরেই মাটির প্রদীপ তৈরি ও বিক্রি ক্রম…
অরুণ কুমার সাউ, তমলুক : দীপাবলি মানেই আলোর উৎসব। আর সেই উৎসবে বিগত কয়েক বছরের রঙিন বাহারি ইলেকট্রিক লাইটের দাপট কাটিয়ে আবারও বাড়ছে চিরাচরিত মাটির প্রদীপের চাহিদা। বিক্রেতাদের দাবি, গত কয়েক বছর ধরেই মাটির প্রদীপ তৈরি ও বিক্রি ক্রমবর্ধমান, বিশেষ করে করোনা-পরবর্তী সময়ে এর চাহিদা অনেকটাই বেড়েছে। ফলে কালীপুজো বা দীপান্বিতা অমাবস্যাকে কেন্দ্র করে মাটির প্রদীপ তৈরিতে ব্যস্ত কুমোরপাড়ায় ফিরেছে চিরাচরিত হাসি।
বহু প্রাচীনকাল থেকেই দীপান্বিতা অমাবস্যা বা কালীপুজোয় প্রদীপ জ্বালানোর প্রচলন থাকলেও, একসময় শহরের পাশাপাশি বাংলার ঘরে ঘরে বাহারি ইলেকট্রিক আলোর শোভায় মাটির প্রদীপের আলো ফিকে হয়ে গিয়েছিল। একটা সময় প্রদীপের শিখা হারিয়ে যেতে বসেছিল। কিন্তু এখন মানুষ আবারও প্রদীপের আলোর দিকে ঝুঁকছেন। তমলুকের নারায়ণদাড়ী বাজারে আসা এক কুম্ভকার জানান, - আগের তুলনায় কালীপুজোর সময় মাটির প্রদীপের চাহিদা বেড়েছে। রংবেরঙের আলো যতই থাকুক, মাটির প্রদীপের বিকল্প কিছু হয় না। মানুষ কালীপুজোর দিন মাটির প্রদীপেই আস্থা রাখছেন। বিগত তিন-চার বছর ধরে কালীপুজোর সময় মাটির প্রদীপের চাহিদা উত্তরোত্তর বাড়ছে। প্রতি বছর দুর্গাপূজার পর থেকেই দীপাবলির জন্য প্রদীপের অর্ডার আসা শুরু হয়। অনেক সময় সময়ের অভাবে অর্ডার অনুযায়ী প্রদীপ তৈরি করে দিতেও পারছেন না অনেকে।
মাটির প্রদীপের আকার অনুসারে দাম ভিন্ন হয়। তমলুকের বড়বাজার, ডিমারি বাজার ও নারায়নদাড়ী বাজারের ঘুরে জানা গেল একেবারে ছোট প্রদীপের দাম ২ টাকা থেকে শুরু হয়ে বড় প্রদীপগুলির দাম ৫ টাকা থেকে ৭ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। অন্যদিকে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় দেওয়ালি পুতুলেরও বেশ চাহিদা রয়েছে। এটি পুতুল আকৃতির এবং এর হাতের ওপর ছোট ছোট প্রদীপ থাকে। বর্তমানে বিভিন্ন শিল্পীরা মাটির প্রদীপকে আল্পনা দিয়ে সাজিয়ে বাজারে বিক্রি করছেন। আল্পনা দেওয়া রংবেরঙের প্রদীপের সেটগুলির দাম ১০০ টাকা থেকে শুরু করে ২০০-৩০০ টাকা পর্যন্ত হয়, যেখানে এক-একটি সেটে ৬ থেকে ১০টি করে প্রদীপ থাকে। বিভিন্ন দাম অনুসারে সেট গুলিতে প্রদীপ থাকে। কাঁথির শিক্ষক প্রসেনজিৎ মাইতি মুকুন্দপুর বাজার থেকে ৫০টি প্রদীপ কিনে বলেন, - মাটির ছোট ছোট প্রদীপে যখন তুলো আর তেল জ্বলে ওঠে, চারপাশে এক শান্ত, স্নিগ্ধ আলো ছড়িয়ে পড়ে – মনে হয় অন্ধকারের মাঝে যেন আলোয় ভরা এক উৎসব শুরু হয়েছে। প্রতিটা প্রদীপ যেন একেকটা আশার আলো, একেকটা ভালোবাসার ছোঁয়া।দীপাবলিতে মাটির প্রদীপের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত কুম্ভকারদের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে।