Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

উত্তরবঙ্গে বন্যাবিধ্বস্ত মানুষদের পাশে দাঁড়ালো দক্ষিণবঙ্গের দুটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন

নিজস্ব প্রতিবেদক: উত্তরবঙ্গে বন্যাবিধ্বস্ত মানুষদের পাশে দাঁড়ালো দক্ষিণবঙ্গের দুটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।  গত ০৪/১০/২০২৫ শনিবার রাতে প্রবল বর্ষণ ও ভূটানের নদীবাঁধ ভেঙে জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়িসহ উত্তরবঙ্গের বহু জায়গায় ভয়ঙ্কর বন্যা দেখা দ…


নিজস্ব প্রতিবেদক: উত্তরবঙ্গে বন্যাবিধ্বস্ত মানুষদের পাশে দাঁড়ালো দক্ষিণবঙ্গের দুটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।  গত ০৪/১০/২০২৫ শনিবার রাতে প্রবল বর্ষণ ও ভূটানের নদীবাঁধ ভেঙে জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়িসহ উত্তরবঙ্গের বহু জায়গায় ভয়ঙ্কর বন্যা দেখা দেয়। যার জেরে মানুষ, ঘরবাড়ি, পশুপাখি... সব নিমেষের মধ্যে ভেসে যায়। আমরা সেসবই দৈনিক খবর থেকে জেনেছি। এসব দেখে বসে থাকেনি পূর্ব মেদিনীপুর জেলার চন্ডীপুরের দুটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন "শশীকিরণ" ও "জীববৈচিত্র‍্য সংরক্ষণ মঞ্চ"। তড়িঘড়ি করে গত ০৮/১০/২০২৫ বুধবার সন্ধ্যায় তারা সড়কপথে বেরিয়ে পড়ে উত্তরবঙ্গের উদ্দেশ্যে। সারারাত গাড়ি চালিয়ে সকালে পৌঁছায় দুধিয়া সেতু সংলগ্ন অঞ্চলে যে সেতুটি বন্যায় প্রায় ভেঙ্গে পড়েছে। সেই সেতু ভেঙ্গে পড়ার দৃশ্য ভাইরাল  হতেও দেখা গেছে। বালাসন্দ নদীর উপরে এই দুধিয়া সেতু যেটি শিলিগুড়ি থেকে মীরিক যাওয়ার রাস্তায় পড়ে।

দুধিয়া সেতুর পাড়ের দোকান ও ঘরগুলি বন্যার জলে ভেঙে পড়ে। দুটি দোকান একেবারে নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে। সেই দোকান দুটির মালিক নিমা লামা ও শান্তা তামাং এর সঙ্গে কথা বলে সেদিনের বীভৎস বন্যার রূপ যেন চোখের সামনে ভেসে ওঠে। বালাসন্দ নদীর বর্তমান যা অবস্থা তার থেকে পাঁচগুণ  ভয়ানক রূপ ধারণ করেছিল বন্যার রাতে। পাড়ের গাছপালা, ঘরবাড়ি, পিকনিক স্পট সব ধুয়েমুছে সাফ হয়ে গেছে। দুটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফ থেকে যৌথভাবে নিলা লামা ও শান্তা তামাং এর হাতে আর্থিক সাহায্য তুলে দেওয়া হয়। তাঁরা স্থানীয় বেশ কিছু মানুষের সাথে একটি অস্থায়ী শিবিরে থাকেন। তাঁদের সঙ্গে সংগঠনের সদস্যরা সেই শরণার্থী শিবিরে যান। কিন্তু সেখানে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের কার্যকলাপ দেখে ওই শরণার্থী শিবিরে কিছু অনুদান করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন নি।


এরপর শিলিগুড়ির ভারত সেবাশ্রমের মহারাজের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বন্যা বিধ্বস্ত বিভিন্ন অঞ্চলের খবরাখবর নেন। মহানন্দা ও বালাসন্দ নদীর সংযোগস্থলে অবস্থিত পোড়াঝাড় গ্রামটিও বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেখানে প্রায় একশত বাড়ির ভিতর দিয়ে বন্যার জল বয়ে গেছে। সদস্যদেরকে সেই গ্রামটি ঘুরিয়ে দেখান গ্রামবাসীরা। সেখানকার মানুষের মুখে তাঁদের দুর্দশার কথা শোনেন।  সেখানে একটি শরণার্থী শিবিরও করা হয়েছে। প্রায় ৪০০ জন শরণার্থী সেই শিবিরে থাকেন। ওইদিন রাতের খাওয়ারের দায়িত্ব নেন শশীকিরণ ও জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ মঞ্চের সদস্যরা। রাতে প্রায় ৪০০ জন মানুষ তৃপ্তিসহকারে চিকেন বিরিয়ানি গ্রহণ করেন। এই দুটি সংগঠনের সদস্যরা নিজেরাই খাবার পরিবেশন করেন। তাঁদের কথায় এ এক পরমতৃপ্তি, ঐশ্বরিকও বটে। বন্যাকবলিত অঞ্চলের মানুষ রাতের এই খাবার সানন্দে খেয়ে বলে "আজ আমাদের বিজয়া সম্মিলনী হচ্ছে বলে মনে হয়।" ভিটেহারা মানুষগুলোর মুখে যেন কিছুসময়ের জন্য মেঘ সরে গিয়ে আলো ফুটে উঠেছিল। তাঁরা খুবই খুশি। দুহাত তুলে সংগঠনের সদস্যদের আশীর্বাদ করেন। বেশ কিছু প্রয়োজনীয় ওষুধও শিবিরের সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। 

পরেরদিন অর্থাৎ  ১০ তারিখ সকালে ভারত সেবাশ্রমের মহারাজের হাতে সাত হাজার চারশত টাকা তুলে দেন সংস্থার সদস্যরা। যেহেতু তাঁরা এই অল্প সময়ের মধ্যে জলপাইগুড়ি ত্রান কার্যে যেতে পারেননি এবং জেনেছেন যে দেওয়ালির পরে ভারত সেবাশ্রম জলপাইগুড়ির বন্যাবিধ্বস্ত মানুষদের জন্য মেডিক্যাল ক্যাম্প করবেন সেইহেতু মহারাজের হাতে উক্ত অর্থ তুলে দেন। মহারাজ তাঁদের এই কাজের ভুয়সী প্রশংসা করেন।

দুই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যদের মতে এই  মানবিক কাজ করে তাঁরা এক পরম তৃপ্তির স্বাদ অনূভব করেন। আগামী দিনেও এই কাজে ব্রতী থাকতে চান।