হিমেল হাওয়ার পরশ লাগতেই বাঙালির হেঁশেলে উঁকি দেয় নলেন গুড় আর চালগুঁড়োর ঘ্রাণ। ‘বারো মাসে তেরো পার্বণ’-এর তালিকায় পৌষ পার্বণ মানেই বাঙালির ঘরে ঘরে পিঠে-পুলি তৈরির মহোৎসব। সেই চিরন্তন ঐতিহ্যের স্বাদ এবার ধরা পড়ল কোলাঘাটের মেলা প্রা…
হিমেল হাওয়ার পরশ লাগতেই বাঙালির হেঁশেলে উঁকি দেয় নলেন গুড় আর চালগুঁড়োর ঘ্রাণ। ‘বারো মাসে তেরো পার্বণ’-এর তালিকায় পৌষ পার্বণ মানেই বাঙালির ঘরে ঘরে পিঠে-পুলি তৈরির মহোৎসব। সেই চিরন্তন ঐতিহ্যের স্বাদ এবার ধরা পড়ল কোলাঘাটের মেলা প্রাঙ্গণে। বৃহস্পতিবার বিকেলে সেখানে আয়োজিত পিঠে-পুলি উৎসবকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো।
গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে ২৯তম বর্ষের কোলাঘাট উৎসব। উৎসবের ষষ্ঠ দিনে, বৃহস্পতিবারের দুপুরটি উৎসর্গ করা হয়েছিল বাংলার রসনা বিলাসকে।
মা ও মেয়েরা নিজেদের হাতের জাদুতে তৈরি হরেক রকমের পিঠে ও পুলি নিয়ে হাজির হয়েছিলেন এই প্রাঙ্গণে।
এদিনের মেলায় শুধু স্বাদ নয়, নজর কেড়েছে পিঠের শৈল্পিক রূপও। প্রথাগত মুগের পুলি, ভাজা পুলি, দুধপুলি, চন্দ্রপুলি কিংবা সেদ্ধ পুলির পাশাপাশি থরে থরে সাজানো ছিল পাটিসাপটা, গোকুল পিঠে, পোস্তর পিঠে এবং সরুচাকলি।
শুধু গোল বা লম্বাটে নয়, ডালিয়া, গোলাপ কিংবা কদম ফুলের আকৃতির পিঠে দেখে থমকে দাঁড়িয়েছেন দর্শনার্থীরা। নজর কেড়েছে মৎস্যকন্যা, কচ্ছপ কিংবা চিংড়ি মাছের আদলে তৈরি চমকপ্রদ সব পিঠে।
অংশগ্রহণকারীরা জানালেন, আটা, ময়দা, দুধ আর খোয়াখিরের সঙ্গে নলেন গুড় ও নারকেল কোরা তো ছিলই, স্বাদে ভিন্নতা আনতে ব্যবহার করা হয়েছে মুগ ও বিউলির ডাল, সুজি এমনকি পোস্তও। শীতের মিষ্টি রোদ গায়ে মেখে এই রকমারি পদ চেখে দেখতে ভিড় জমিয়েছিলেন বহু মানুষ।
স্থানীয় গৃহবধূ প্রিয়দর্শিকা হাইত বলেন, "সারা বছর আমরা এই দিনটির প্রতীক্ষায় থাকি। কর্মব্যস্ততার মাঝেও পৌষ উৎসবে পিঠে বানিয়ে হাজির হওয়াটা এখন আমাদের নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে।" অন্যদিকে, নবীন প্রজন্মের প্রতিনিধি পূজা দাসের কথায়, "এই ধরনের আয়োজনের ফলেই আমরা নতুন করে পিঠে তৈরির কৌশল শিখছি। এটা যেমন আনন্দের, তেমনই শিক্ষার।"
সেরার লড়াই ও সম্মাননা উৎসব কমিটির পক্ষ থেকে পিঠের গুণগত মান, স্বাদ এবং শৈল্পিক নিরিখে বিচার বিশ্লেষণ করে সেরা ১৫ জনকে পুরস্কৃত করা হয়। তবে প্রতিযোগিতার চেয়েও বড় হয়ে উঠেছিল উৎসবের আমেজ। বাকি অংশগ্রহণকারীদেরও বিশেষ স্মারক দিয়ে উৎসাহিত করেন উদ্যোক্তারা। কোলাঘাট উৎসবের এই পিঠে-পুলি সমারোহ প্রমাণ করে দিল, বিশ্বায়নের যুগেও বাঙালির পিঠে-পার্বণের টান আজও অমলিন।
কোলাঘাট থেকে কাজল মাইতির রিপোর্ট। দেশ মানুষ
