Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৌমেন শেখরের কবিতাগুচ্ছ

সৌমেন শেখর
-------------------

অবনীমোহন-১
*************
এখনও হাওয়া দেয় জলের পাশে, তির তির করে কাঁপে ঝাউবন
 দুলে দুলে ওঠে আমাদের প্রিয় ধানক্ষেতগুলি
আলপথে সবুজ ঘাসের পাশে সোনালি শিষ জাগে
খামার সেজে ওঠে হলুদ শস্যরেখায়
ব্যস্ততা ছড়া…



সৌমেন শেখর
-------------------

অবনীমোহন-১
*************
এখনও হাওয়া দেয় জলের পাশে, তির তির করে কাঁপে ঝাউবন
 দুলে দুলে ওঠে আমাদের প্রিয় ধানক্ষেতগুলি
আলপথে সবুজ ঘাসের পাশে সোনালি শিষ জাগে
খামার সেজে ওঠে হলুদ শস্যরেখায়
ব্যস্ততা ছড়ায় ভেজা আঁচল,শাড়িতে

এই সমস্তকিছুর মাঝে নতজানু হয়ে বসে থাকেন অবনীমোহন
সংসারময়  ধুলোঝড় ওঠে , মেঘ ঝুঁকে আসে কিশোরী বেনীর মত
অবনীমোহন ভাবেন...
এই নরম আলোর সবটুকু জুড়ে হয়তো একদিন বেজে উঠবে বিরহরঙের সানাই

উদাসীন আলো মেখে তার কিছু পরে বিষাদ গোধূলি নেমে আসে সমস্ত চরাচর জুড়ে
 -----------------                                             
অবনীমোহন-২
***************

অপাপবিদ্ধ আলোয় জানু পেতে বসেছেন অবনীমোহন
কোলের উপর দুই হাত পৃষ্ঠার মতন খোলা
কপালের দীর্ঘ বলিরেখায় ফুটে উঠেছে শাদা সমুদ্রহাওয়া, অসংখ্য লিপিসংকেত

প্রেমিকা তার বহুকাল শেষ শয্যায় শুয়ে

অবনীমোহন জানেন, আর কক্ষনো উঠবে না সে
মৃত্যুমানচিত্র ফুটে উঠেছে তার শরীরের দেশকাল জুড়ে
বিহান বেলায় প্রার্থনাছায়া জড়ো করে আনেন বৃদ্ধ সমুদ্রসারেঙ
শুনতে পান মৃত্যুজাহাজ নোঙর ফেলছে খুব কাছে
অবনীমোহন চেয়ে থাকেন দিগন্ত রেখায়...

তার ভাগ্যের উঠোন ভিজে যায় অকাল শ্রাবনে।
                       --------------
অবনীমোহন-৩
*************
নক্ষত্রবীথির আলোয় রোজ নীলাভ হয়ে ওঠে  দালানবাড়ি ,প্রাচীন চৌকাঠ।
ঋজু হাতে অবনীমোহন বেঁধে রাখেন শস্যের জরায়ুমুখ,সূর্যের সামগান।
ক্ষয়াটে মাস্তুল তার দাঁড়িয়ে থাকে একা... বিদ্রোহধ্যানে ।

কার বিরুদ্ধে?  জানেন না অবনীমোহন।
শুধু জানেন একদিন দুপুরময় প্রায়শ্চিত্য হাওয়ায় ফুলে ফেঁপে উঠবে  সবকটি পাল।

এই যে নিষাদজন্ম এই যে কুয়াশাশরীর,সব ম্লান হয়ে আসে এই নির্বাণক্ষনে ।
হাওয়া দেয় রক্তপাতের মতন

ক্ষতবিক্ষত হতে হতে অবনীমোহন বোঝেন এই তার শেষ সমুদ্রযাত্রা স্বরবর্নের দেশে ।
                                         
 ****************

অবনীমোহন-৪
************* 
অফুরান অবসর আলোয় বসে , অবনীমোহন ভাবেন প্রিয় বিবাহকথাগুলি
গোধুলিরঙের আলো এসে পড়ত  বিছানো শয্যার একপাশে...অন্যপাশে নবপরিনীতা, অপেক্ষায়
সে এক মায়াবী বিবাহবেলা,জারুল ফুলের মত আজও ভেসে ভেসে ওঠে
কায়কল্পের ভেতর ডুব দেন অবনীমোহন, তুলে আনেন একলা আকাশ একলা বাতাসের কথা
সমস্ত গ্লানিরেখা জুড়ে তার বেজে ওঠে নিদারুন সানাই।

 একাকীত্ব নয়, এক আশ্চর্য আলোলিকায়  ভরে ওঠে অবনীমোহনের মুখ

বিবাহকথাগুলি ভেসে যায় কপোতাক্ষের কাকচক্ষু জলে।
 অবনীমোহন বোঝেন, মন এক অক্ষতপুরুষ যার ধারা বয়ে যায় কাল থেকে অন্য কোনো কালে ।
  *****************

অবনীমোহন-৫
**************
এক আজানুলম্বিত কল্পকাহিনীর শেষ ধাপে এসে দাঁড়িয়েছেন অবনীমোহন ।
সত্ত্বার সমস্ত যতিচিহ্ন এক আশ্চর্যসরনী বেয়ে এগিয়ে চলেছে আবছা পান্ডুলিপির দিকে।
কী লিখবেন অবনীমোহন? আকাশ জাজিমের পিঠে ফুটে ওঠা নক্ষত্রগাথা, নাকি প্রিয় ঘুমছায়ারোদ?
আজ শেষ পৃষ্ঠার কাছে এসে শুধু কাঁধ পেতে দেন, নামিয়ে রাখেন সব শব্দকল্পমায়া।
বিষাদসমুদ্র ঢুকে আসে  ধূসর ফুসফুসে, কুয়াশাশরীর জুড়ে বেড়ে ওঠে রুপকথাগাছ ।
প্রার্থনা ছায়ার নীচে শেষ বার জানু পেতে বলেন...

"হে আকাশ... হে বাতাস... ক্ষমা দাও, দাও নরম পালকের মত প্রিয় বালকবেলার স্মৃতি ।"
তারপর ক্লান্ত ডানার এক আহতপাখির মত স্থির হয়ে যান অবনীমোহন ।

কাল হয়তো আবার এক নতুন শুকতারা ফুটে উঠবে পৃথিবীর নীলাভ  গালিচা আকাশে।
 **************

দর্শক
***********
সমস্ত জন্মদিনের পর একটা মৃত্যুদিন আসে । কাছে ।

নরম ধূপের আলো আর রজনীগন্ধার ছায়ায় লেগে থাকে নিহত স্পর্শের দাগ। অনেকখানি ।

সারারাত তুমুল হাওয়া দেয় আজকাল।

প্রিয় বোতাম থেকে ঝরে পড়ে গুঁড়ো গুঁড়ো পেনসিল রঙের মুগ্ধতা,ঋতুগন্ধের রেশ।

অনেক জন্ম পার করে বিষণ্ণতা ভিজে মাটির মতো ক্লান্ত।

শেষ রাতে মৃদু ওমের  নিথর দেহ নামে। ধীরে

...আগুনের কাছাকাছি। জন্মের কাছাকাছি।স্পর্শের কাছাকাছি।

ছাই ওড়ে। ওড়ে  অভিমান সুতো।

 আঘাত আসে,পালকের মতো

এসো, উদযাপিত হই, এই প্রিয় স্পর্শে-
                                          মৃত্যুদিনে।

****************