https://youtu.be/YFEkofqAHOg
গৌতম মাহাতো
------------------
যাদের পায়ের তলায় সর্ষে কিন্তু পকেট গড়ের মাঠ কিম্বা যাদের ট্রাইপডে এস.এল.আর ফিক্সড খুঁজছেন পাখিদের নতুন আস্তানা!!
তাদের জন্য এবারের --
গরীবের ঘোরা রো…
গৌতম মাহাতো
------------------
যাদের পায়ের তলায় সর্ষে কিন্তু পকেট গড়ের মাঠ কিম্বা যাদের ট্রাইপডে এস.এল.আর ফিক্সড খুঁজছেন পাখিদের নতুন আস্তানা!!
তাদের জন্য এবারের --
গরীবের ঘোরা রোগ(1st Part)
ভূমিকাঃ- ঝাড়গ্রাম। এই নামটিই পর্যটক মহলে যথেষ্ট।এর সঙ্গে সঙ্গে মনের মধ্যে ডানা ম্যালে টুসু,ভাদু,জাওয়া, করম,ঝুমুর ও সেরেঞ-এর গুঁজ।কিন্তু না,আজ আমরা সে গেরস্থে প্রবেশ করব না বরং ঢুঁ দেব আতিথ্যের আঙিনায়।
ঝাড়গ্রামের তথাকথিত পর্যটনক্ষেত্রগুলি যেমন চিল্কিগড়,বেলপাহাড়ি, কাঁকড়াঝোড়,লালজল,তারাফেনি ব্যারেজ,মিনি জু চিল্কিগড়,রাজবাড়ি,সাবিত্রি মন্দির আজ শুধু বাংলা নয় পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলির ভ্রমণ পিপাসু মানুষের মনেও বেশ দোলা লাগিয়েছে।কিন্তু না।আজ এ সবের বাইরে নতুন এক পাখির রাজ্যে আমাদের তাঁবু পড়ল।
ঝাড়গ্রাম শহর থেকে মাত্র তিন কি.মি দূরে শালবনের ছায়ায় ঘেরা ছোট্ট একটুকরো স্বর্গ।পাখিদের নির্ভিক বিচরণভূম।
নাহ,গুগল-ম্যাপে এই জায়গার অবস্থান দেখালেও এর পরিচিতির জন্য কোনও বুকমার্কের পালক খুঁজে পাবেন না।কিন্তু গুরুত্বের বিচারে এই স্থান তার দাবীতে সোচ্চার হতেই পারে।"পরিযায়ী পাখি"।এই শব্দবন্ধটি হয়তো এর ক্ষেত্রে ততটা প্রযোজ্য নয়।লাগোয়া গ্রামগুলির কাছে তারা হল কুটুম পাখি।এদের আসা যাওয়া ও তাদের নিবিড় সম্পর্ক আজকের নয় বরং ৭০-৮০ বছরেরও বেশি সময়ের।অথচ এখানকার গ্রামবাসীরা অধিকাংশই জানেন না যে এই পাখির বেশ কিছু ঝুণ্ড আসে অন্যদেশ থেকে।মানে ভিনদেশী।সময় ফুরিয়ে গেলে তারা ফিরে যায় তাদের নিজ নিজদেশে।তবে রয়েও যায় কিছু কিছু।তাই কমবেশি পাখিদের কার্নিভাল চলে সারা বছর জুড়েই।সে এক অদ্ভুত ফিউশন কনসার্ট।
একটু এদিক ওদিক চোখ চালান সহজেই নজরের সীমায় পেয়ে যাবেন--
*লেজার হুইসলিং ডাক
*ব্রোঞ্জ উইং জাকানা
*ফেজান্টটেল জাকানা
*কটন পিগমি গুস
*পার্পেল সোয়ামফেন
*পার্পেল হেরন
*লিটল গ্রেব
*লিটল কর্মরেন্ট(পানকৌটি)
*কমন মুরহেন (কাম-পাখি)
জলের বাইরে পাড়ের দিকটায় একটু উঁকি ঝুঁকি দিলেই পেয়ে যাবেন--
*ওরিয়েন্টাল হানি বাজার্ড
*ব্ল্যাক কাইট
*ব্ল্যাক উইংড কাইট
*ইউরেশিয়ান ওয়াইরিনেক
*হেয়ার ক্রিস্টেড ড্রঙ্গো
*গোল্ডেন ওরিয়ল(সোনা বৌ)
*জঙ্গল আওলেট(কালি পেঁচা)
*শিকরা
*লার্জ কুককু স্ট্রাইক
*ব্রাউন স্রাইক
*ট্রাইকালার মুনিয়া
*স্পটেড আওলেট
*লেজার ফ্লেমব্যাক উডপেকার
*ব্ল্যাক হুডেড ওরিওল
*আলেকজান্দ্রিয়ান প্যারাকিট
*হুপি (মোহনচূড়)
এবার বাঁধের পূর্বপাড় ধরে সামান্য নেমে আসুন,আচমকা আপনার জন্য বুক পেতে দাঁড়াবে নিরালা অরণ্যবীথি।শীতল বনানির বাঁকে নানান পরিচিত অপরিচিত পাখিদের কাকলি।নসীব সহায় হলে অতি সহজেই মুলাকাত হতে পারে --
*গ্রে মঙ্গুশ
*গোল্ডেন জ্যাকল
*ইন্ডিয়ান গ্রে উল্ফ
বা * জঙ্গল ক্যাট
বাঁধের ইতিহাসঃ--
★ঝাড়গ্রাম মল্লরাজ বংশের বহুকীর্তির মধ্যে এই বাঁধটিও একটি।এর সমসাময়িক কালেই তৈরি হয় সাবিত্রি মন্দির সংলগ্ন বাঁধ ও মেলা বাঁধ।তৈরি করেন দ্বিতীয় মল্লরাজ বিক্রমজিৎ উগাল-ষণ্ডদেব।যদিও এই রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেন চন্দ্রবংশীয় ক্ষত্রিয় সর্ব্বেশ্বর মল্ল উগাল-ষণ্ডদেব(সময়কাল ১৫১৯ খ্রীঃ)
★এই বাঁধ প্রায় ৬০ বিঘা জমির উপর প্রজাদের ধান ও পান চাষের সেচের জন্য তৈরি হয় প্রায় ১৫৪০ খ্রীঃ নাগাদ।আর মেলা বাঁধ তৈরি হয় প্রায় ৩০ বিঘা জমির ওপর।(সুত্রঃ যোগেশ চন্দ্র বসু রচিত মেদিনীপুরের ইতিহাস)
★কথকতাঃ--
কথিত আছে সাবিত্রি মন্দির বাঁধ,মেলা বাঁধ ও এই বাঁধের মধ্যে নাকি কোনও সংযোগকারী সুড়ঙ্গও খোঁড়া হয়ে ছিল।৫০ বছর আগেও নাকি চমক লাগা কারণে এই বাঁধের প্রেক্ষিতেই - বদলে যেত বাকি দুটি বাঁধের জলের চরিত্র ও রং।
★আবার এমনটাও শোনা যায় এই বাঁধেই মল্লরাজারা শখের মাছ পুষতেন অতি সযত্নে।এমনকি তাদের আলাদা আলাদা নামকরণও ছিল।তাদের অঙ্গ সজ্জার জন্য সোনার অলঙ্কারও ছিল।পরানো হত দুল ও নথও।সেই সব মাছ এই বাঁধে ছাড়া হলেও নাকি তাদের বিচরন ছিল তিনটি বাঁধেই।
এই কেচন্দার পাড়ে বসে থাকতে থাকতে আপনার মনে হতেই পারে- আপনি ইতিহাসের হাত ধরে পৌঁছে গ্যাছেন ৫০০ বছর আগের কোনও এক দুপুরে।সেই একাকিত্ব,সেই নৈঃশব্দ,সেই সহজ বনানির আঙুল ছুঁয়ে যাচ্ছে অনন্ত দুচোখ আর অজানা এক পাখ-পাখালির দেশ।তারা হাওয়ায় হাওয়া বার্তা দেবে কোনও একদিন কোনও এক পুর্ণিমা-রাতে আপনার আমন্ত্রণ রইল এই কেচন্দা বাঁধের পাড়ে।নৈসর্গিক সে আনন্দ।
★কি ভাবে যাবেনঃ- প্রথমে চলে আসুন খড়্গপুর,সেখান থেকে যেকোনও টাটা গামী লোকাল ট্রেনে পৌঁছে যান ঝাড়গ্রাম।বাসেও আসতে পারেন NH-6 ধরে।ঝাড়গ্রাম থেকে টোটো ভাড়া করে নিন কেচন্দা বাঁধ অবধি।কিম্বা বাসে ভায়া ধেড়ুয়া মেদিনীপুরে বাসে উঠে পড়ুন।সেবায়তন স্টপেজে নেমে ৫ মিনিটের হাঁটা পথ।
নাইট স্টের জন্য তো ঝাড়গ্রাম হাতের পাঁচ।