মৌ দত্ত
সারা জঙ্গলমহল জুড়ে এই মুহূর্তে সব ভীতির ঊর্ধে সাধারণ গ্রামবাসীর ভেতরে বাসা নিয়েছে দলমার ত্রাস।বিগত বেশ কয়েক দশক ধরে তিন জেলা জুড়ে সবার ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা।
এই এক সপ্তাহে হাতির হানায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে পুরো দ…
মৌ দত্ত
সারা জঙ্গলমহল জুড়ে এই মুহূর্তে সব ভীতির ঊর্ধে সাধারণ গ্রামবাসীর ভেতরে বাসা নিয়েছে দলমার ত্রাস।বিগত বেশ কয়েক দশক ধরে তিন জেলা জুড়ে সবার ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা।
এই এক সপ্তাহে হাতির হানায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে পুরো দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে।চলতি বছরের এই কয়েকদিনেই পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম ও বাঁকুড়া এলাকায় হাতির তাণ্ডবে মৃত্যু হয়েছে আট জনের ।
বৃহস্পতিবার রাতে পশ্চিম মেদিনীপুরের আনন্দপুর থানার ঘুচিশোল গ্রামে হাতির আক্রমণে এক ব্যক্তির মৃত্যুর চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই এই জেলার শালবনী থানার ঢেঙাশোল গ্রামে হাতির হামলায় মৃত্যু হয়েছে আরও এক যুবকের । মৃতের নাম কালীপদ মাহাতো, ( 35)। বন বিভাগের সূত্রে জানা গিয়েছে যে শুক্রবার রাতে ঢেঙ্যাশোল গাঁয়ে ঢুকে পড়ে পাঁচটি হাতি । হাতিগুলি বেশ কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর করে । সেই সময়ে হাতি তাড়ানোর জন্য এগিয়ে যায় কালীপদ মাহাতো । গ্রামের লোকজন তাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও তিনি তা শোনেন নি । ওই দলে থাকা একটি হাতির সামনে পড়ে যান তিনি । হাতিটি তাকে শুঁড়ে পেঁচিয়ে পা দিয়ে পিষে দেয়।
মেদিনীপুরের বিভাগীয় বন আধিকারিক সন্দীপ বেরওয়াল বলেন নিয়ম মেনে এই ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের হাতে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে । " হাতি লোকালয়ে চলে এলে আমরা যেমন সেগুলো সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি তেমনই হাতি যাতে গ্রামে বা লোকালয়ে চলে না আসে তার যথাসাধ্য চেষ্টা করছি ।তার সাথে সাথে আমরা মানুষকে সচেতন করার দিকটিও নজর রাখছি। হাতি এলাকায় থাকলে কি করবে ও কি করবে না তা নিয়ে বারেবারে বলা হয়েছে ও হচ্ছে। আমরা মানুষকে বলছি হাতি এলে তাদের সামনে না যেতে । কিন্তু কিছু মানুষ বারবার অত্যুৎসাহী ভাবে নিজেদের বিপদ ডেকে আনছেন " বলে জানিয়েছেন তিনি ।
বৃহস্পতিবার রাতে পশ্চিম মেদিনীপুরের আনন্দপুর থানার ঘুচিশোল গ্রামে হাতির আক্রমণে মৃত্যু হয়েছে শিবু হেমব্রম নামে এক যুবকের । গ্রামে ঢুকে যাওয়া হাতির সামনে পড়ে যায় শিবু । হাতিটির আক্রমণে মৃত্যু হয়েছে তার ।
বুধবার রাতে ঝাড়গ্রাম শহর থেকে সামান্য কিছুটা দুরে নান্দিয়া কুন্দরি গ্রামে হাতির আক্রমণে মৃত্যু হয়েছে মনোরঞ্জন মাহাতো নামে এক ব্যক্তির । এই দিনই ঝাড়গ্রাম শহরে ঢুকে পড়ে একটি হাতি । ঝাড়গ্রাম শহরের বামদা এলাকায় আত্মীয়ের দেহ সৎকার করে শ্মশান থেকে ফেরার সময় হাতির আক্রমণে মৃত্যু হয়েছে সুভাষ মাহাতো নামে এক ব্যক্তির।
গত 1 জানুয়ারি তারিখ রাতে শালবনী থানার ভীমপুর এলাকার বলরামপুর গ্রামে হাতির আক্রমণে মৃত্যু হয়েছে একাদশ শ্রেণীর ছাত্র বিজয় মাহাতোর । 5 জানুয়ারি লালগড় এলাকায় হাতির আক্রমণে মৃত্যু হয়েছে বঙ্কিম হাঁসদার। জঙ্গলের ধারে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে গিয়েছিলেন তিনি । সেই সময়ে হাতি তাকে আক্রমণ করে । ৭ই জানুয়ারি বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরের চিতরং এলাকায় একইভাবে হাতির হামলার শিকার হয়েছেন অশোক সর্দার নামে এক ব্যক্তি ।
পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম ও বাঁকুড়া জুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বেশ কয়েকটি হাতির দল ।সেই দল ভেঙে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে মৃত্যু হয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।এই দলমার দামালরা যে শুধু মাত্র জমির ফসল ক্ষতি করছে তাই না, বাড়িতে ঢুকে খাবার দাবারও চুরি করছে । এমনকি বিভিন্ন এলাকায় স্কুলে স্কুলে ঢুকে দেওয়াল ভেঙে মিড ডে মিলের জন্য রাখা চাল সবজি ইত্যাদি নিয়ে পালাচ্ছে ।
এই দলমার দামালদের আক্রমণ বেড়ে চলার কারণে এলাকার লোকজনের লবে জান অবস্থা । তাদের অভিযোগ হাতিদের এলাকায় আসা ঠেকাতে কোন রকমের কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করছে না বন বিভাগ। যদিও বন দফতরের আধিকারিকের দাবি -তারা নানা ভাবে চেষ্টা করছেন যাতে এই হাতির দল লোকালয়ে চলে না আসে।