Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

উপন্যাস চন্দ্র গোধূলি

ধারাবাহিক উপন্যাস
চন্দ্রগোধূলি (পর্ব-২)
তাপস দত্ত
-----------
 চন্দ্র সামনে এগিয়ে যায়। দোকানের মালিক প্রহার করে চলেছেন অসহায়
এক বৃদ্ধ ভিখিরীকে দোকানের এক টুকরাে রুটির জন্য। চন্দ্র-এর চোখ জলে ভরে
এলাে। দারিদ্রতা সত্যিই অভিশাপ। হ…


ধারাবাহিক উপন্যাস
চন্দ্রগোধূলি (পর্ব-২)
তাপস দত্ত
-----------
 চন্দ্র সামনে এগিয়ে যায়। দোকানের মালিক প্রহার করে চলেছেন অসহায়
এক বৃদ্ধ ভিখিরীকে দোকানের এক টুকরাে রুটির জন্য। চন্দ্র-এর চোখ জলে ভরে
এলাে। দারিদ্রতা সত্যিই অভিশাপ। হাজার কাকুতি মিনতি উপেক্ষা করে হরদয়াল
মালিক পশুর মত অত্যাচার করে গেল ভিখিরীটাকে।
চন্দ্র ধীরে ধীরে মুখটি তুলল,ওর
-বাবুগো আজ সারাদিন কিছুই খাইনি, তাই খিদের জ্বালায় রুটি চুরি করেছি।
চন্দ্রের চোখ জলে ভরে এলাে।
-তুমি খাবে রুটি?

চন্দ্র উত্তরের অপেক্ষা না করে দুটো রুটি নিয়ে এলো ওর জন্য। বৃদ্ধ ভিখিরীর
আনন্দে চোখ জলে ভরে এলাে।

চন্দ্রের মনে হতে লাগল, ভগবান তােমার একি সৃষ্টি।

ওদের অনেক আছে ওরা তবুও দেয়না।
-তোমার নাম কি? চন্দ্র জিজ্ঞাসা করে।
-আমার নাম পাগল।
-তোমার আসল নাম কি?
-সাগর ভৌমিক।
-তােমার আর কেউ নেই?
-ছিল, এখন আর নেই। স্ত্রী ছিলাে সুপর্ণা, ছােট একটি ছেলে ছিল মরে গেছে!



কান্নায় বুক ভরে ওঠে ভিখিরীর।
চন্দ্ৰ জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিয়ে তাকায়।

-আমরা শিলিগুড়ি থেকে টেনে ফিরছিলাম হাওড়া। হঠাৎ ট্রেন অ্যাক্সিডেন্টে
স্ত্রী সুপর্শা মারা গেল। ছেলেকে গুরুতর আহত অবস্থায় এন.আর.এস.-এ ভর্তি করলাম।
 ওকে বাঁচাবার জন্য সবকটি বাড়ি বিক্রি করলাম কিন্তু তবুও ছেলেও
চলে গেল আমায় ছেড়ে। আর আমি এই হা—হা— হা—হা হাসতে হাসতে পালিয়ে
গেল ভিখারী।
চন্দ্রের চোখ দুটো নীল আকাশের বুকে ভেসে চলল, সেই অনন্ত সুখ দুঃখের সন্ধানে।
অসীম নীলিমা ছাড়া চন্দ্র কিছুই পেল না।
 হৃদয়ের বাঁ কোন ঘেষে যেন একরাশ দুঃখ টনটন করে উঠল। হঠাৎ পরিচিত কন্ঠস্বর কানে ভেসে এলো।

-চন্দ্রদা ও চন্দ্র দা বাড়ি যাবেন না ?
চিন্তায় ছেদ পড়ে চন্দ্রের।
পিছন ফিরে দেখে শরদিন্দু দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসছে।
-চলুন বাড়ি যাবেন তো?
-ও হ্যাঁ! বলে চন্দ্র।
-তুমি কোথায় গিয়েছিলে শরৎ?
-আমি বাজারে, এই যে, মুরগীর মাংস আনতে। চন্দ্র কোনাে  আর প্রশ্ন করল না।
 তাকাল পশ্চিম দিগন্তে। সবে সূর্য পশ্চিম দিগন্তে পশ্চিমের পথ ধরেছে।
তার আবীর মাখানো রঙ দিগন্তে ছড়িয়ে দিয়েছে। চন্দ্রের মনে প্রশ্ন এলাে, তাহলে—
সব সুখ কি ওই আবীর মাখানাে দিগন্তের মধ্যে ছড়িয়ে আছে।
-আচ্ছা চন্দ্রদা তুমি মন্দির বাদ দিয়ে ওই নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলে কেন?
-ওই দেবীকে খুঁজছিলাম শরৎ।
দুজনে হা-হা করে হেসে উঠল।
শরৎ হাসতে হাসতে বলতে লাগল তুমি নিশ্চয় বৌদির কথা ভাবছিলে?
-বিয়েই করলাম না, আবার বৌদি কোথা থেকে এলাে শরৎ?
 ওকে বাঁচাবার জন্য সবকটি বাড়ি বিক্রি করলাম কিন্তু তবুও ছেলেও
চলে গেল আমায় ছেড়ে। আর আমি এই হা—হা— হা—হা হাসতে হাসতে পালিয়ে
গেল ভিখারী।
চন্দ্রের চোখ দুটো নীল আকাশের বুকে ভেসে চলল, সেই অনন্ত সুখ দুঃখের সন্ধানে।
অসীম নীলিমা ছাড়া চন্দ্র কিছুই পেল না।
 হৃদয়ের বাঁ কোন ঘেষে যেন একরাশ দুঃখ টনটন করে উঠল। হঠাৎ পরিচিত কন্ঠস্বর কানে ভেসে এলো।
-চন্দ্রদা ও চন্দ্র দা বাড়ি যাবেন না ?
চিন্তায় ছেদ পড়ে চন্দ্রের।
পিছন ফিরে দেখে শরদিন্দু দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসছে।
-চলুন বাড়ি যাবেন তো?
-ও হ্যাঁ! বলে চন্দ্র।
-তুমি কোথায় গিয়েছিলে শরৎ?
-আমি বাজারে, এই যে, মুরগীর মাংস আনতে। চন্দ্র কোনাে  আর প্রশ্ন করল না।
 তাকাল পশ্চিম দিগন্তে। সবে সূর্য পশ্চিম দিগন্তে পশ্চিমের পথ ধরেছে।
তার আবীর মাখানো রঙ দিগন্তে ছড়িয়ে দিয়েছে। চন্দ্রের মনে প্রশ্ন এলাে, তাহলে—
সব সুখ কি ওই আবীর মাখানাে দিগন্তের মধ্যে ছড়িয়ে আছে।
-আচ্ছা চন্দ্রদা তুমি মন্দির বাদ দিয়ে ওই নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলে কেন?
-ওই দেবীকে খুঁজছিলাম শরৎ।
দুজনে হা-হা করে হেসে উঠল।
শরৎ হাসতে হাসতে বলতে লাগল তুমি নিশ্চয় বৌদির কথা ভাবছিলে?
-বিয়েই করলাম না, আবার বৌদি কোথা থেকে এলাে শরৎ?
 চন্দ্র সামনে এগিয়ে যায়। দোকানের মালিক প্রহার করে চলেছেন অসহায়
এক বৃদ্ধ ভিখিরীকে দোকানের এক টুকরাে রুটির জন্য। চন্দ্র-এর চোখ জলে ভরে
এলাে। দারিদ্রতা সত্যিই অভিশাপ। হাজার কাকুতি মিনতি উপেক্ষা করে হরদয়াল
মালিক পশুর মত অত্যাচার করে গেল ভিখিরীটাকে।
চন্দ্র ধীরে ধীরে মুখটি তুলল,ওর
-বাবুগো আজ সারাদিন কিছুই খাইনি, তাই খিদের জ্বালায় রুটি চুরি করেছি।
চন্দ্রের চোখ জলে ভরে এলাে।
-তুমি খাবে রুটি?
চন্দ্র উত্তরের অপেক্ষা না করে দুটো রুটি নিয়ে এলো ওর জন্য। বৃদ্ধ ভিখিরীর
আনন্দে চোখ জলে ভরে এলাে।
চন্দ্রের মনে হতে লাগল, ভগবান তােমার একি সৃষ্টি।
ওদের অনেক আছে ওরা তবুও দেয়না।
-তোমার নাম কি? চন্দ্র জিজ্ঞাসা করে।
-আমার নাম পাগল।
-তোমার আসল নাম কি?
-সাগর ভৌমিক।
-তােমার আর কেউ নেই?
-ছিল, এখন আর নেই। স্ত্রী ছিলাে সুপর্ণা, ছােট একটি ছেলে ছিল মরে গেছে।
কান্নায় বুক ভরে ওঠে ভিখিরীর।
চন্দ্ৰ জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিয়ে তাকায়।
-আমরা শিলিগুড়ি থেকে টেনে ফিরছিলাম হাওড়া। হঠাৎ ট্রেন অ্যাক্সিডেন্টে
স্ত্রী সুপর্শা মারা গেল। ছেলেকে গুরুতর আহত অবস্থায় এন.আর.এস.-এ ভর্তি করলাম।
 চন্দ্রের। তখন ও সবে মাত্র বি.এস.সি.তে দ্বিতীয় বর্ষে পা দিয়েছে। কল্পতরু,
মলয়, গােপাল, দেবু ছিলাে ওর পরম বন্ধু। ওরা প্রতিদিন লিজার পিরিয়ডে
কলেজের সামনে ছাতিম গাছের তলায় বসে গল্প করত। ওখান থেকে কলেজের
সব বিল্ডিংগুলি চোখে পড়ে।
একদিন বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করতে করতে চন্দ্রের চোখে পড়ে গেল বিন্ডিং-এর
দোতলায়। যেন চন্দ্র স্বপ্ন দেখছে। একটি অনিন্দ্য সুন্দরী মেয়ে তন্ময় হয়ে তাকিয়ে
আছে ঘন নীলাকাশে। ওর ওড়না বাতাসে এলােমেলাে হয়ে উড়ছে। ওর দীঘল
কালো চুলে বাতাস যেন কোন গােপন খবর জানিয়ে যাচ্ছে। ওর চোখে মুখে যেন
এক প্রশান্ত দীপ্তি।
চন্দ্র তন্ময় হয়ে পড়েছিল ওকে দেখে।হঠাৎ ধ্যান ভঙ্গ হলাে কল্পতরুর ডাকে।
- কি চন্দ্র, অমন করে কী দেখছিস?
-ওই যে দোতলায়। আঙ্গুল তুলে দেখায় চন্দ্র।
-তুইও কি পড়লি ওর প্রেমে? কল্পতরু জিজ্ঞাসা করে।
-ওর প্রেমে যদি পড়েছিস, তবে মরেছিস। কল্পতরু বলে। ওর প্রেমিকের
সংখ্যা জানিস ? —না!
-সবে ত্রিশ ছাড়িয়েছে। তুই হলে একত্রিশ। বলে কল্পতরু হাসতে থাকে।

চন্দ্র কেমন যেন মিইয়ে যায়। তারপর মনে মনে বলে তুমি যেই হও নারী,
আমি তোমার পিছু ছাড়ছি না।
মলয় বলে ওঠে-হয়তো ও ছাড়বে না কিন্তু তুই ছেড়ে দিবি?
সেদিন ছিলাে ভ্যালেন্সটাইন্স ডে, চন্দ্র মেসের বাগান থেকে একগুচ্ছ রক্ত
গোলাপ হাতে নিয়ে চলতে লাগলাে কলেজের পথে। ফুলকে আপন মনে বলে চন্দ্র
-তুমি সুন্দর তোমার সুন্দর সৌন্দর্য্য গোধূলির শান্ত সৌন্দর্য্যের সঙ্গে মানায়।
-আমি তো বলছি ভাবি বৌদির কথা,
দুজনেই হাসতে লাগলো হো হো করে।
- আচ্ছা চন্দ্রদা একটা কথা তােমায় জিজ্ঞাসা করব ?
যদি কিছু মনে না করাে।
-এমনকি কথা?
-আমি প্রায় দেখি তুমি নিশুতি রাতে দোতলায় দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে আকাশের
দিকে তাকিয়ে থাকে। তখন তোমাকে যেন আলাদা জগতের ক্লান্ত অবসন্ন পথিক
এর মত দেখায়।

-আচ্ছা চন্দ্রদা তুমি কি কবি ?
চন্দ্র মাথা নাড়ে।-না।
-তুমি ভুল দেখ শরৎ। আর আমি কবি নই।
-তাহলে কি ভূত ? বলে শরৎ।

ওরা যখন বাড়ি গিয়ে পৌঁছল তখন সন্ধ্যার শঙ্খ ধ্বনি শােনা যাচ্ছে, দয়াময়ী
দেবীর  ঠাকুর ঘর থেকে। চন্দ্র দেরি না করে দোতলায় ওঠে, মুনাই হয়তাে পড়তে
বসে গেছে।
চন্দ্র দোতলায় এসে দেখে মুনাই আসেনি। হয়ত ঠাকুর ঘরে ? খাটের ওপর—
অবসন্ন ক্লান্ত দেহটাকে এলিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পরে উষাবৌদি এসে জানিয়ে যায়
-মুনাই আজ পড়তে বসবে না। চন্দ্র তুমি আজ বিশ্রাম করতে পারাে।

ক্রমে সন্ধ্যার গাঢ় আঁধার সমগ্র পৃথিবীটাকে আচ্ছন্ন করে দিলাে।
আজ ভাল লাগছে না চন্দ্রের। মনটা বড্ড ছটপট করছে।
তবে কি গোধূলি দেখার জন্য ? সকাল থেকে এসেছে এখনো মুখটা পর্যন্ত দেখেনি।
হয়ত সেই গোধূলি হতে ও পারে ? -আর নাও পারে?
পূরনো দিনের অনেক জট পাকানো চিন্তাগুলো চোখের সামনে ফুটে উঠে।
 আমার হাতে তোমায় মানায় না।
প্রতিদিনের মতাে বিল্ডিং-এর উত্তর দিকে ঝাউতলা ঘিরে থার্ড ইয়ারের ছাত্র
ছাত্রীরা গল্পে মশগুল হয়ে রয়েছে। চন্দ্র কোনদিন তো ভালবাসেনি। আজ প্রথম
ওর মনের মধ্যে জায়গা পেল। তাই কেমন যেন একটা অজানা ভয় ওর মনে
বাঁসা বেধেঁছে।
চন্দ্র কোনাে দিন ক্লাসে ফাস্ট ছাড়া সেকেন্ড হয়নি। কিন্তু অনেক ভালবাসতে
চেয়েছিল।  চন্দ্র কাকে যেন খুঁজে বেড়িয়েছে। আজ তার দেখা পেয়েছে।
মলয় বলেছিল -মেয়েকে কোনােদিন বিশ্বাস করিস না। ওদের ছলাকলায়
দেবতারাও পরাজিত হয়েছে বারবার। আমি ওদের কে তাে পুরুষদের ভােগ্যবস্তু
ছাড়া কিছুই মনে করি না।

-একদল মেয়ে আছে যারা শুধু আজ একজন, কাল একজন বয়ফ্রেন্ড পাল্টায়।
তারা আমার কাছে বেশ্যার সমান। ওদের দেখলে আমার মুখে থুতু বেরিয়ে আসে।
সেদিন মলয় কেন ওকথা বলেছিল চন্দ্র আজও জানে না। চন্দ্র জানতে
চেয়েছিল কিন্তু মলয় চেপে গেছে। হয়তো একরাশ বিরহের বিষােদগার।
-আজ এই দিন চন্দ্রের এসব ভাবার কোনাে যুক্তি নেই। যাকে মন প্রাণ দিয়ে
ভালবেসেছে, তাকে ভালবাসার কথাটা না বলা পর্যন্ত কেমন যেন অস্থির হয়ে
পড়েছে।
চন্দ্রের বাম চোখটা ক্রমশ নাচছে। কোন চোখ নাচলে লাভ হয় বা ক্ষতি হয় তা চন্দ্রের জানা নেই।
চন্দ্রের সন্ধানী চোখ খুঁজতে থাকে গােধূলিকে। অনেক জায়গায় খুঁজল কিন্তু কোথাও পেল না ওকে। গােধূলি কি আজ কলেজে আসেনি ?
  চন্দ্রের মনে প্রশ্ন জাগে।
দুরে সুতৃষ্ণাকে দেখতে পেল চন্দ্র। গোধূলির  বান্ধবী।সুতৃষ্ণা তােমার বান্ধবী কোথায় জানাে?

........... চলবে

 ***********