Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

শাল পাতার ডায়েরি ঃ দুই

শাল পাতার ডায়েরি ঃ দুই

অমিত মাহাত

মুক্তিপর্ব

মাঝে মাঝে নিজেকে বড় অদ্ভুত লাগে। তা ভাবলেও বিড়ম্বনা বাড়ে। না ভাবলে আমার আবার চলে না। ভাত হজম হয় না। দিন গুজরানো এমনই তিক্ত হয়ে ওঠে যে তা নিমপাতার মতো লাগে। মন্দের ভালো এই যা। ও আমার উপ…


শাল পাতার ডায়েরি ঃ দুই

অমিত মাহাত

মুক্তিপর্ব

মাঝে মাঝে নিজেকে বড় অদ্ভুত লাগে। তা ভাবলেও বিড়ম্বনা বাড়ে। না ভাবলে আমার আবার চলে না। ভাত হজম হয় না। দিন গুজরানো এমনই তিক্ত হয়ে ওঠে যে তা নিমপাতার মতো লাগে। মন্দের ভালো এই যা। ও আমার উপকারে থাকে। যা ক্ষতি হল সে তো ওই চলে যাওয়া দিনের।
-আমার?
-উঁহু। একটুও না।

বিকেলে আস্তাপাড়ার মুক্তি আসে। জলেশ্বর দাদু (হাঁসদা) র দাওয়ায় বসে। গেলাসে মহুল ঢালে। আমার দিকে কয়েকটা ঝুনো বাদাম বাড়িয়ে দেয়। -লে অমিত ভাই, চিবাতে থাক।
কাঁচা শালপাতায় করে কচড়া বেসাতি  মুক্তির সমুখে নামিয়ে  রাখে জলেশ্বর বুড়ো। তারপর চুমুক।


হাফ বতুলের জায়গায়। দেড় বতুল সাফা হয়ে যায়। মুক্তি কথা চালায় -কাকা একটা কাজ ছিল বঅ। দোকান ঘর খড়ে ছাইবার। ঝাঁড়গা'র যেখিনে নিমতল টা আছে না। তেল মিল। উয়ার উল্টা তরফে যে চপ বনায়। উয়ার কাজ। আমি ঠিকা নিইছি।

জলেশ্বর দাদু উৎফুল্ল হয়ে যায়। যাক দুটো পয়সা আসবেক। কাজের মরা দিন।  হাওয়া লেগে মুক্তির টলমলো দশা।
-কাকা কত হল্য ব?
-বেশি লয়। তিরিশ টাকা।
-দশ রইল ব। কুড়ি টা রাখ। উঠলি। অমিত ভাই কাইল তবে সকাল সকাল। খাটখুরা টেশনে ভেট হবেক।
মুক্তি অন্ধকারে মিশে যায়। সকাল হলে পেটের ধান্ধা। কাজ মিললে একশ টাকা। হাতে। তা থেকে তিরিশ যায় মদে। বিড়ি খইনি। দক্তা। আরও বিশ টাকা এ হাত ও হাত হয়। যা রইল তা পঞ্চাশ। মরদের গতি ভালো লয় গো... মুক্তির বউকে বনের ভরসা করতে হয় বেশি। শাল পাতা। তুলে আনে। হাজার বাঁধে। দু দিনে তিন দিনে হাজার পটলে আরও পঞ্চাশ যোগ হয় সংসারে। শাল পাতার গ্রাম গুলো এভাবেই বাঁচে। ঠিক ঠিক বাঁচা হয় তো এ নয়।


শাল পাতার গ্রামে মন খারাপের আনাগোনা। এ মন খারাপ আবার স্বপ্ন দেখায়। লড়তে শেখায়। যদিও লড়াইটা চলে বৌদ্ধিক অঙ্গুলি হেলনে। ভাই ফেলে দাদার লাশ। কারমু সরেন পিছমোড়া  হয়ে পড়ে থাকে রাস্তায়। পুলিশের জিপগাড়ি চাপিয়ে নিয়ে যায় লাল্টু মাহাত কে।
তখন আমার চেনা স্কুল জীবনের বন্ধুটির নতুন নাম হয় বুলেট। এইট ফেল হয়ে যায় পাড়ার নেতা। উদুমভুটিয়া ক্রমে বয়ার কাড়া। সন্ধে হলে মশাল মিছিল। ভোর হয় নতুন লাশের গন্ধে। গন্ধে গন্ধে পুলিশ। কাঁসাইএর চরে নতুন লাশ পচে পুরনো হয়। পাহাড়ি ঝর্ণায় আচমন সারে বিপ্লব।

এভাবেই গ্রাম ফাঁকা হয়ে পুরুষহীন। বাইরে কাজের হিড়িক। চাষ তথৈবচ। পয়সা চাই। কাজ চাই। চাই শুনে সব হাওয়া। গাঁয়ে থাকা চলছে না আর। গাঁয়ে এখন দুটো পক্ষ। একটা পুলিশের চর। যাকে খুশি দাগানো যায়। যদি সন্দেহ দানা বাঁধে। আর দ্বিতীয়টা মশাল মিছিল।
এ দুটোর মাঝে নিজেকে ফুটবল মনে হয়। এদিক থেকেও লাথ মারে। ওদিক থেকেও । ধাক্কা খেতে খেতে কোন দিন মাঠের বাইরে চলে যাব না তো!

পরের দিন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই  পান্তাভাতে গিঁটমেরে বেরিয়ে পড়ি মুক্তির খোঁজে।