Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

মানস ভ্রমণ

মানস ভ্রমণ
----------------------
ঋত্বিক ত্রিপাঠী
**********
পাঠনির্ভর জীবনে অসম্পূর্ণতাই বেশি। পূর্ণ জীবন ও জীবনানন্দের জন্য চাই ভ্রমণ। বাড়ির বাইরে। কাছেপিঠে কিংবা দূরে। ভ্রমণ একক হলে অভিজ্ঞতার সঞ্চয় অংশত ভুল হওয়ারই সম্ভাবনা বে…



মানস ভ্রমণ
----------------------
ঋত্বিক ত্রিপাঠী
**********
পাঠনির্ভর জীবনে অসম্পূর্ণতাই বেশি। পূর্ণ জীবন ও জীবনানন্দের জন্য চাই ভ্রমণ। বাড়ির বাইরে। কাছেপিঠে কিংবা দূরে। ভ্রমণ একক হলে অভিজ্ঞতার সঞ্চয় অংশত ভুল হওয়ারই সম্ভাবনা বেশি। চাই যৌথ ভ্রমণ। যেমন যৌথ ক্ষেত্রীয় সমীক্ষা। নিরীক্ষা সঠিক না হলে না হবে সমীক্ষা, না হবে শিক্ষা, না হবে দীক্ষা।
তবে অনেকেই শারীরিক কারণে কিংবা সময়াভাবে বেড়াতে যেতে পারেন না মূলত তাঁদের জন্যই এই মানসভ্রমণ। বেড়ানো শব্দটা বড্ড দুর্বল। নিছক সময়যাপন কিংবা বিনোদন। ভ্রমণ শব্দটির সঙ্গে চিন্তন, দর্শন, বিজ্ঞান, মনন ইত্যাদি শব্দগুলো যুক্ত। এই সূত্র ধরেই আপ্তবাক্য বলা যায়-- ভ্রমণে যাঁদের মন উদার ও প্রসারিত না হয় তাঁদের কাছে বাড়ির বাইরে নিছক সময় যাপন, বেড়ানো।

 পুরীভ্রমণ
---------------
যাতায়াত দু'দিন,  মাঝে রাত্রিবাস তিন দিন -- এই পরিকল্পনা নিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে নেওয়া। সঙ্গে থাকুক অন্তত একটা কবিতার বই। নেওয়া যায় শ্যামলকান্তি দাশের 'উঁকি দেয় ছেলেবেলা' বইটি, যেখানে তিনি লিখেছেন : "কোথায় কোথায় যাচ্ছি আমি/কোথায় কোথায় যাইনি/ভেবে ভেবেও অদ্যাবধি/হিসেব খুঁজে পাইনি।" আহা।


হাওড়া থেকে এক্সপ্রেস ট্রেনে ৯-১০ ঘণ্টা সময় লাগবে। রাতের ট্রেনে উঠে ঘুম। সহযাত্রীদের ব্যস্ততায় ঘুম ভাঙবে। তখনও সকাল হয়নি। পুরী স্টেশন। অটো বা টোটোতে স্বর্গদ্বার।আগে থেকে হোটেল বুকিং না থাকলে অটোচালককেই বলা যায়।


 আপনার রুচি ও মেজাজ অনুযায়ী আপনাকে পৌঁছে দেবে হোটেলে। সমুদ্রের পাশে ৮০০- ১০০০ টাকায় ভালোই হোটেল পাওয়া যায়। হোটেলে ২-৩ ঘণ্টা জিরিয়ে বেরিয়ে পড়া যায় আশপাশের দর্শনীয় জায়গায়।
 যেমন জগন্নাথ মন্দির, চন্দন সরোবর, মাসি ও পিসি বাড়ি, মহাত্মাগান্ধি পার্ক,বৌদ্ধ মন্দির ইত্যাদি। বৌদ্ধ মন্দিরে দেখতে পাবেন পাথরশিল্পীদের হাতের জাদু। বাকি সময় সমুদ্রের ধারে কেটে যাবে। বঙ্গোপসাগরের তরঙ্গ দেবে আপনাকে অসীমের ঠিকানা। কিছু আগে পুরীর মন্দিরের অকারণ ঠেলাঠেলিতে বিব্রত আপনার মন এখানে এসে শান্ত হবে। সামনে ঘুরে বেড়াবে ততোধিক শান্ত উট ও ঘোড়া।

দ্বিতীয় দিন ১৩০০ টাকায় চার আসনযুক্ত গাড়ি ভাড়া করে চিল্কা। ১৮০০ টাকায় মোটরবোট ভাড়া করে দ্বীপে দ্বীপে ঘুরে বেড়ানো। ডলফিন, সমুদ্রমুখ, লাল কাঁকড়া ইত্যাদি দেখা। সমুদ্রমুখে গিয়ে মুখে তুলে নিতেই পারেন কাঁকড়া ভাজা। তৃতীয় দিনে ২২০০ টাকা দিয়ে একই রকম গাড়ি নিয়ে ভুবনেশ্বরযাত্রা।
 কোনারক মন্দির,
উদয়গিরি,খণ্ডগিরি,নন্দনকানন, লিঙ্গরাজ মন্দির, ধবলগিরি ইত্যাদি দেখা। এই সব মন্দির মানেই অবাক হয়ে যাওয়া, এই ভেবে যে কতকাল আগে কী করে এসব নির্মাণ সম্ভব হয়েছিল-- যেখানে ধরা আছে জীবনের কথা, মিলনের কথা,প্রতিদিনের সহজ প্রসঙ্গ কত শত!  কোনারকে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া গড়ে তুলছে মিউজিয়াম। মিউজিয়ামের মধ্যে আছে মন্দিরের ইতিহাস বর্ণনা করে তথ্যচিত্র দেখানোর ব্যবস্থা।
 নন্দনকাননের বাঘ দেখে মনে পড়বে শ্যামলকান্তি দাশের কবিতা :" বাঘটা ছিল ছড়ার মতো/ছড়ার ছবি গড়ার মতো /ফুলুরি ডালবড়ার মতো /বাঘটা ছিল ছড়ার মতো! " যাই হোক সন্ধেতে ফিরে সৈকতের জমজমাট বাজারে কেনাকাটা। সৈকতে পাবেন বালিশিল্পীর নির্মিত বালি দিয়ে নানান মূর্তি। মূর্তিতে ধরা পড়ে সাম্প্রতিক বিষয়। আর প্রিয়জনদের জন্য আদি নৃসিংহ মিষ্টান্ন দোকানের ৩৬০ টাকা কেজি দরে ঘিয়ে ভাজা খাজা নিতে ভুলবেন না। হোটেলের ফিরে ব্যাগ গুছিয়ে পরের দিন সকালে ট্রেন ধরে সন্ধেতে বাড়ি।
তারপর লিখে ফেলুন আরও সুন্দর ও বিস্তারিত ভ্রমণ কাহিনি।

--------------------------
ছবি - লেখক