Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

চন্দ্র গোধুলি(ধারাবাহিক উপন্যাস;; পর্ব ৫)

ছবি --- গৌতম মাহাতো
-----
চন্দ্র গোধুলি(ধারাবাহিক 
                                উপন্যাস;; পর্ব ৫)

                তাপস কুমার দত্ত

শরৎদা বাড়িতে নেই। বড়দা দিল্লী গেছেন অনেক দিন। আর মা শুধু ঠাকুর আর পূজো।

বৌদি কেমন যেন গম্ভীর…

ছবি --- গৌতম মাহাতো
-----
চন্দ্র গোধুলি(ধারাবাহিক 
                                উপন্যাস;; পর্ব ৫)
           
                তাপস কুমার দত্ত

শরৎদা বাড়িতে নেই। বড়দা দিল্লী গেছেন অনেক দিন। আর মা শুধু ঠাকুর আর পূজো।

বৌদি কেমন যেন গম্ভীর হয়ে গেছে। শুধু মুনাই আর চন্দ্র ছাড়া আর
যেন পৃথিবীতে আপন বলে মনে হয় না। কিন্তু চন্দ্র ওর দিকে ফিরেও তাকায় না।
তখন গােধূলির হৃদয় দুঃখে ভরে আসে। মনে মনে বলে ওঠে প্লিজ একবার তাকাও

চন্দ্র.... একবার অন্তত তাকাও। কেউ যে তোমায় ভালবাসে তুমি না তাকালে কেমনে বুঝবে।

 গোধূলি আকাশের দিকে তাকাল। কখন যে পৃথিবীর বুকে নেমে
এসেছে গােধূলি খেয়াল করেনি।
ও অনেকক্ষন বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। সেই বিকেল প্রায় চারটে থেকে এখন

রাত্রি আটটা বাজতে চলল। ওর মনে প্রশ্ন এলাে চন্দ্র এতক্ষন কোথায় গিয়েছে।
হঠাৎ পরিচিত কণ্ঠস্বরে ওর টিন্তায় ছেদ পড়ল। কে যেন উষা বৌদিকে ডাকছে।

ডাকটা বৈঠক থেকে। বৌদি বােধহয় রান্নাঘরে। অনেক্ষন পরে বৌদির গলা শুনতে
পেল গােধূলি। কি যে কথা বলছে শুনতে পেল না গােধূলি। ও নিঃশন্দে নিচে নেমে এলো।

রান্না ঘরের দিকে পা বাড়াল শুনতে পেল চন্দ্রের কণ্ঠস্বর । ও কি মেন
চাইছে উষা বৌদির কাছে।।
বৌদির গলা শুনতে পেল-তােমাকে টাকা চাইতে কে বলেছে? আমি তােনায়
টাকা দিই না?

- হ্যাঁ, দাও।
—কত দরকার চন্দ্র ?
পাঁচশ।

মাত্র পাঁচ শ টাকা। তুমি আমার কাছে অনেক টাকা পাবে। প্রায় দশ বারাে
হাজার। তুমি তােমার টাকা নিতে পারাে।

- আচ্ছা চন্দ্র তােমার পাঁচশ টাকার কি এমন দরকার ?
-না, মানে।
 থাক বলতে হবে না। দাড়াও চন্দ্র আমি আসছি।
গােধুলি ওখান থেকে সরে এলাে। ও ভাবতে লাগল ওর আবার টাকার কি
দরকার ? গােধূলি নিজের দোতলার ঘরে ফিরে এলাে। পালঙ্কের ওপর নিজেকে
এলিয়ে দেয়। চোখ দুটো আধ বুজো অবস্থায় পড়ে থাকে।

এদিকে বৌদি টাকা দেওয়ার সময় বৌদির হাতটা চন্দ্রের হাতে ঠেকে যায়।
হঠাৎ চন্দ্রের মনে হল বৌদির হাত অসম্ভব গরম। মনে মনে ভাবল বােধহয় ভুল।

-বৌদি শুনে এপাশে।
-কেন?

-আরেশোনা না।

চন্দ্র হাত দিয়ে বৌদির কপাল স্পর্শ করল। চমকে উঠল চন্দ্র। প্রায় দুই থেকে
তিন জ্বর হবে।

-বৌদি তােমার এত জ্বর, তার ওপর তুমি রান্না করছ ? শােবে চলাে। জোর
করে চন্দ্র।

-তুমি দাড়াও চন্দ্র। আগে রান্না করে নিই তারপর।

-রান্না পরে হবে বৌদি। আগে চলাে। চন্দ্র জোর করে বিছানায় নিয়ে যায়।
কতদিন জ্বর হচ্ছে।

- প্রায় দশ-পনের দিন হবে।
কই আমাদের তো তুমি জানাও নি?

মুনাই বলে, মায়ের যখন প্রচুর জ্বর হয়, তাখন মা প্রচুর ভুল বকতে থাকে, ভুল
বকতে বকতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়ে।

- তােমার পিসিমনি জানে?
-না, মা বলতে বারন করেছে।
চন্দ্রের নিজেকে অপরাধী বলে মনে হলাে।
-বৌদি তুমি আমায় এতটা পর ভাবতে পারলে। আমার মনে কতটা আঘাত
লাগতে পারে, তা তুমি ভাবলেও না?

মুনাই তােমার মায়ের কাছে এসে বসাে। আমি এক্ষুনি আসছি।

চন্দ্র দোতলায় উঠল। দেখল পশ্চিম পার্শ্বের ঘরে বাতি নেভানাে। গােধুলি কি
ঘরের মধ্যে আছে? না- নেই? ও ভেতরে ঢুকল। দেশলাই ঠুকে বাতি জ্বালাল।
দেখল গােধূলি ঘুমিয়ে পড়েছে। বাতির আলাে ওর লাল মুখমন্ডলকে আরাে মােহনয়
করে তুলেছে। কিন্তু কিভাবে যে, ডাকবে ভেবে পেলনা চন্দ্র। ও বাইরে বেরিয়ে
এলাে। ডাক্তারের কাছেই যাই। তানেক খানি পথ। সেই বকুল গ্রামে ডাক্তার দিলীপ
মাহান্ত-এর বাড়ি। কিন্তু ওতাে তার-বাড়ি জানে না। এখন কটা বাজে? হাত ঘড়ি
দেখল চন্দ্র। প্রায় বারােটা। চন্দ্র বেরিয়ে পড়ার আগে আরেক বার গােপূলির ঘরে
প্রবেশ করল। ঢুকেই ইতস্তত করতে লাগল।

এতক্ষন গোধূলি চুপচাপ ওর কান্ড দেখছিল। গোধূলি জিজ্ঞাসা করে-আপনি
কিছু বলবেন?

ও আপনি জেগে আছেন? বৌদির প্রচুর জ্বর আপনি একটু নিচে আসুন।
আমি ডাক্তারের কাছে যাচ্ছি। চন্দ্র আর কিছু না বলে বেরিয়ে এলাে।

পথে সুখেন জেলেকে সঙ্গে নিয়ে ডা: দিলীপ মাহান্ত কে নিয়ে যখন বাড়ি ফিরল
তখন প্রায় রাত তিনটে। ডাক্তার দেখে ঔষধ দিয়ে বললেন তেমন গুরুতর নয়।
ম্যালেরিয়া হয়েছে ও সেরে যাবে। ঔষধ দিয়ে গেলাম।

চন্দ্র যদিও কিছুদিন ডাক্তারি বইগুলো পড়েছিল, কিছু ঔষধ নেই ওর কাছে।
 ডাক্তার বাবুকে আসার সময় ওই রোগের ঔষধ আনতে বলেছিল চন্দ্র। ফেরার
পথে ডাক্তার বলে গেলেন, আপনি যখন ডাক্তার আপনি খেয়াল রাখবেন।
আপনার ধারনাই ঠিক ম্যালেরিয়া হয়েছে ওনার।

-সুখেন তুমি বাড়ি যাও। আমি মাহান্ত বাবুকে ছেড়ে দিয়ে
ফেরে তখন ভাের প্রায় চারটে হবে।

-গোধূলি বৌদির মাথার পাশে বসে আছে। গােধূলির মা এসেছে।
-আপনারা যান ঘুমিয়ে পড়ুন, আমি বসছি।
-আপনি যান। আমি বসছি, গােধূলি বলে। আর মা- তুমিও যাও। ওর মা চলে যায়।



চন্দ্র দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।

-মাথায় জল দিয়েছিলেন?
-হ্যাঁ, দিয়েছিলাম। জ্বর কমেছে। আপনি যান। ঘুমিয়ে পড়ুন।

 গোধূলী আনমনে চন্দ্রের দিকেই তাকিয়ে থাকে।

চন্দ্র চোখ নামিয়ে  ঘর হতে বেরিয়ে আসে।
মুনাই ঘুমিয়ে আছে। চন্দ্র ওর মুখের পানে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে থাকে। এক
সময় মনে হলাে কেউ তাে রাত্রি থেকে কিছুই খায়নি। চন্দ্র রান্না ঘরে গিয়ে গোটা
কয়েক রুটি ও একটু তরকারি করে নিয়ে আসে।

-নিন আপনি উঠুন। আমি বৌদির পাশে বসছি। আপনি আর মুনাই দুজনে
মিলে এই রুটিগুলাে খেয়ে নিন। আমি বৌদিকে সাগু খাইয়ে দিচ্ছি। আপনা
মায়ের জন্যও দিয়ে এসেছি। নিন উঠুন।

গােধূলি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে চন্দ্রের দিকে।

-কি হয়েছে? না কিছুই হয়নি।
গােধূলি মুনাইকে জাগিয়ে তুলল। ওরা খেতে আরম্ভ করল। চন্দ্র বৌদিকে
খাইয়ে উপরে চলে এলাে। ঘুম জড়িয়ে এলাে চোখে। খাটের ওপর নিজের দেহটাকে
এলিয়ে দিয়ে ঘুমের জগতে বিলীন হয়ে গেল চন্দ্র।

হঠাৎ গােধূলির মনে হলাে চন্দ্র খেয়েছে তাে?ও
রান্না ঘরে এলাে। কোনাে এটো বাসন বা থালা পড়ে নেই। তাহলে ওকি না খেয়েই—
 -ছিঃ ছিঃ! লজ্জ্বা করতে লাগল গােধূলির। গােধূলি ওপরে উঠে এলাে,
দেখলে চন্দ্রের ঘরের দরজা হাট করে খােলা। চন্দ্র বিষণ্ণ বদনে ঘুমিয়ে আছে।
গােধূলি চন্দ্রের মুখের পানে তাকিয়ে দেখতে লাগলাে। হৃদয়ে যেন বেদনার সুর
তােলপাড় করে তুলল। অবশেষে কান্না বেরিয়ে এলাে গােধূলির। মনে মনে বলে
গেল বলাে না, কে তুমি? কেন চাওনা আমার পানে। আমাকে খাইয়ে নিজে না
খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে ?
গোধূলি রুটি করে নিয়ে এলাে। চন্দ্রকে ডাকল। চন্দ্র জেগে উঠল। চন্দ্র
দেখল গােধূলি তার চাঁদের মত রূপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হাতের থালায় রুটি,তরকারি।
গােধূলির রূপ যেন ঝরে পড়ছে ধরিত্রীতে। এক সময় গােধূলি চন্দ্রের মাথার পাশে
বসে পড়ে।

-কেমন আছে বৌদি ? চন্দ্র জিজ্ঞাসা করে।

ভাল আছে। কিন্তু আপনি যে, কিছুই খাননি সারারাত। আমাদের
খাওয়ালেন নিজে খেলেন না।

- আবার এসব বানাতে গেলেন কেন?
-আপনি উঠুন তাে।

চন্দ্রের মুখে বেদনা মাখা হাসি ফুটে উঠলো। চন্দ্রের খাওয়া গােধূলি তন্ময়
হয়ে দেখছিলাে। চন্দ্রের খাওয়া শেষ হওয়ার পর গােধূলি নিঃশব্দে নীচে নেমে
এলাে। চন্দ্রের মনে ঝড় উঠেছিলাে। কিন্তু তাকে দমন করতে হলাে।  বলতে
পারল না, আমি চিনি তােমায় গোধূলি । তােমার কি ফেলে আসা দিনগুলির কথা
কিছুই মনে নেই। উষা বৌদি সেরে উঠেছেন। চিঠি দিয়েছিল বাপের
বাড়িতে, বৌদির বােন এসেছে। এখন সারা বাড়ি গমগম করছে।

 এখন প্রায়ই জেলেদের বাড়ি যায় চন্দ্র। গল্প করে সরমী বৌদিদের সঙ্গে। খেলা করে
নদীর বেলাভূমির ওপর। ছােট বাচ্চারাও যােগ দেয় ওর সাথে।
.................. চলবে