Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

তাপস দত্তের ধারাবাহিক উপন্যাস - চন্দ্র গোধূলি

ধারাবাহিক উপন্যাস
চন্দ্র গোধূলি

 তাপস দত্ত
...........

 কি ওটা? চন্দ্রের মনে কৌতূহলের উদ্রেক হলাে। ওটা মানুষ না অন্য কিছু? এগিয়ে গেল চন্দ্র। হ্যাঁ একটি ছােট মেয়ে। চন্দ্র শেয়ালটিকে তাড়িয়ে দিলাে। চন্দ্র মুখটিকে দেখার জন্য সাম…


ধারাবাহিক উপন্যাস
চন্দ্র গোধূলি

 তাপস দত্ত
...........

 কি ওটা? চন্দ্রের মনে কৌতূহলের উদ্রেক হলাে। ওটা মানুষ না অন্য কিছু? এগিয়ে গেল চন্দ্র। হ্যাঁ একটি ছােট মেয়ে। চন্দ্র শেয়ালটিকে তাড়িয়ে দিলাে। চন্দ্র মুখটিকে দেখার জন্য সামনে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসল। মেয়েটির মুখটি উপুড় হয়ে, আছে। চন্দ্র সােজা করেই চমকে উঠল। পরক্ষনেই আর্তনাদ বেরিয়ে এলাে।

-মুনাই, তােমার একি হলাে তুমি কি করে....ভগবান কেন তুমি এত নিঠুর। এই নিষ্পাপ  মেয়েটি কি এমন দোষ করেছিল তাকে এমন শাস্তি দিলে। অশান্ত হৃদয়ে অশ্রু বিসর্জন করতে করতে একটি গর্ত খুঁড়ে মুনাইকে সমাধিস্থ

করে। চলার পথে পা বাড়াল। সুখেন মাঝি বাড়ি ফিরেই খবরটা জানাতে গেল। সুখেন যাওয়ার পর ওকে উষা বৌদি জিজ্ঞাসা করে। | -চন্দ্র কোথায় গেল? তুমি একা? তুমি চুপচাপ কেন? তােমাদের মাস্টার ' মশাই কোথায় ?

গোধূলি দোতলায় দাঁড়িয়ে কান পেতে শুনতে লাগল। তনিমার সঙ্গে রাতের ঘটনায় মােটেই চন্দ্র দায়ী ছিলনা। তা পরের দিনই জানতে পেরেছে গােধূলি। সেই তখন থেকেই গােধূলির মনটা বিষন্নতায় ভরে গেছে।ও পথ চেয়ে আছে কখন চন্দ্র
আসবে। তার কাছে ক্ষমা চাইবে। নিজের সমস্ত কিছু সমর্পণ করবে চন্দ্রকে। কিন্তু চন্দ্র কোথায় ? শুধু সুখেন মাঝি এলো?সুখেনের কথাগুলো শুনতে পাচ্ছে গোধূলি।

-জানেন বৌদি আমি আর মাস্টার মশাই নৌকা করে মােল্লাল গ্রামে। গিয়েছিলাম।

-ওখানে তাে বন্যায় সব ভেসে গেছে?

-তাই আমি আর মাস্টার মশাই গিয়েছিলাম।

-আমি আর মাস্টার মশাই যখন ফিরছি নৌকো নিয়ে তখন জলের স্রোত প্রায় দ্বিগুন হয়ে গিয়েছে। প্রবল খরস্রোতে জল ছুটে চলেছে। কোথায় বা ঘর্ণির সৃষ্টি
 করেছে। আর সেই প্রবল স্রোতে ভেসে আসে মরা জীব, জন্ত, বড় বড় গাছ। বা কোন মতে নৌকো নিয়ে ফিরছালাম, হঠাৎ লক্ষ করলাম একটি কুঁড়ে সব চালের ওপর একটি ছােট সুন্দর শিশু বসে কাঁদছে। প্রবল স্রোতে ঘরের চালাটি ছুটে চলেছে। তাই দেখে মাস্টার মশাই নদীর দুরন্ত স্রোতে ঝাপ মারল।

আবর্তের মধ্যে ঘরের চালাটি ডুবে গেল। আর মাস্টার মশাই সেই যে ডুবলেন আর তারপর...

গােধুলি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল, পরের কথাটা শােনার জন্য।

-সুখেন বলাে তারপর ?

-ওই দুধের বাচ্চাটিকে বাঁচাতে গিয়ে বানে ভাসিয়ে নিয়ে গেল মাস্টার মশাই কে।

আমি কত চিৎকার করে ডাকলাম-মাস্টার মশাই। মাস্টার মশাই!

কিন্তু কে শােনে আমার কথা।-জানাে বৌদিমনি নৌকাতে বলেছিল আমার বাঁচার কোনাে মানে নেই। আর আমার পৃথিবীতে আপন বলতে কেউ নেই। তাই জীবনটাকে বাঁচিয়ে রেখে লাভ কি?

| উষা বৌদি কেমন যেন নিঃস্তব্ধ হয়ে গেল। গোধূলি সিড়ি দিয়ে নামতে নামেতে

হঠাৎ সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেল। শরৎ কেমন যেন হতভম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। শরৎ সুখেনকে বলল ধরাে ধরাে গােধূলিকে। গােধূলির মাথা ফেটে
ফিনকি দিয়ে রক্ত ঝরছে। ওরা ওকে হাসপাতালে নিয়ে গেল।

ডাক্তার বাবুরা বললেন- যে পরিমান রক্ত ঝরেছে তাতে আটচল্লিশ ঘন্টার

মধ্যে রক্ত না দিলে আপনার বােনের বাঁচার আশঙ্কা খুবই কম!

এদিকে কারোর রক্ত মিলছে না। সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কেও কোনাে রক্ত নেই | দেখতে দেখতে তিনদিন হয়ে গেল। গােধূলির অবস্থার অবনতি হতে লাগল। এদিকে বাদলের ধারা মেঘের গর্জন শরৎকে ভাবিয়ে তুলল, দাদা মহেন্দ্রকে
 চিঠি দিয়েছে কবে যে ফিরবে তারও দেখা নেই। তনিমা যদিও ছিলাে দিন কয়েক

আগে বাড়ি চলে গেল। বাদলা দিনে হঠাৎ শরৎ-এর মনে পড়ল আজ তাে মুনাইকে স্কুল থেকে তার ই আনার কথা। হাত ঘড়িটা উল্টে দেখল শরৎ-ও বাবা! প্রায় পাঁচটা বাজে। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে এল শরৎ। এগিয়ে চলল নদীর পাড় বরাবর স্কুলের দিকে। অনেক দুরে দেখতে পেল মুনাই নদীর জলে খেলা করছে। শরৎ চিৎকার করে ডাকলাে। কিন্তু মুনাই শুনতে পেল না। নদীতে বন্যা দেখা দিয়েছে। অশান্ত উদ্দাম জলস্রোত। মুনাই জলে পা নামিয়ে খেলা করতে থাকে। হঠাৎ স্রোতের আবর্তে পড়ে যায় মুনাই। উদ্দাম স্রোত মুনাইকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। শরৎ চিৎকার করে ছুটে এলাে। কিন্তু ততক্ষন মুনাই অনেক দুরে ভেসে গেছে। শরৎ চিৎ্কার করতে করতে কান্নায় ভেঙে পড়ে। বুকে অসহ্য ব্যথা শরৎ-এর।-কিন্তু কি করে মুনাই-এর ভেসে যাওয়ার খবর বাড়িতে জানাবে। বৃষ্টি টিপ টিপ করে পড়তে শুরু করেছে। শরৎ নদীর তীরে বসে কাঁদতে থাকে। বৃষ্টিরজলও শরৎ-এর চোখের জলের সঙ্গে ভেসে যেতে থাকে। ক্রমেসন্ধ্যা নেমে এলে। বৌদি যদি জিজ্ঞাসা করে তাহলে কি উত্তর দেবে শরৎ। সন্ধ্যে গড়িয়ে আঁধার নেমে এলাে। ধীর পদক্ষেপে হাঁটতে লাগল শরৎ। উঠানের সামনে আসতেই শরৎকে জিজ্ঞাসা করল বৌদি -শরৎ মুনাই কোথায় ? শরৎ মাথাটা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।

-শরৎ মুনাই কোথায় ? বৌদির জোরালাে কণ্ঠস্বর।

-জবাব দিচ্ছে না কেন শরৎ ? ও এখন স্কুল থেকে ফেরেনি। শরৎ চুপ করে হাঁটু গেড়ে বসেপড়ল মাটিরওপর। অবিশ্রান্ত বর্ষন ওর চোখের জলের সঙ্গে মিশে
যেতে লাগল। অনেকক্ষন পরে বলল

-ও নেই বৌদি
 কি নেই? বৌদি জিজ্ঞেস করে!

মুনাই নেই...ও আমাদের ছেড়ে চলে গেছে চন্দ্র দার কাছে।

বৌদি চিৎকার করে ওঠে। -তুমি কি বলছ পাগলের মতাে  শরৎ ?
মুনাই কোথায়?

নেই...নেই....বৌদি ও নদীর স্রোতে ভেসে গেছে।

বৌদি কেমন যেন পাগলের মত হেসে উঠল।

-তােমরা সকলে চলে যাও। আমি একা থাকব..... আমি একা থাকব।

-দেখতে দেখতে আরাে দিনকয়েক কেটে গেল। গােধূলির অবস্থা খারাপের দিকে এগুতে লাগল। রক্তের কোনো সুরাহা হেলেনা। শরৎ গােধূলির সঙ্গে দেখা করে, আবার রক্তের খোঁজে বেরিয়ে যায়।

-আচ্ছা বৌদি তুমি খুব রােগা হয়ে গেছ না?

-আচ্ছা বৌদি মুনাই এলো না?ও বুঝি পড়েছে?চন্দ্র দা বুঝি ওকে পড়াচ্ছে?

তাই না? জিজ্ঞাসা করেই কাঁদতে লাগল গােধূলি।।

-বৌদি চন্দ্র দার মৃত্যুর জন্য আমিই দায়ী তাই না?

-তুই কেন হবি পাগলি ?

-জানাে বৌদি, চন্দ্রদাকে আমি ভালবাসতাম। আর ও আমায় ছেড়ে চলে গেল। চন্দ্রদা আমাকে ক্ষমা না করে চলে গেল। ও আমার জন্যই পৃথিবী থেকে চলে গেল। ও আমার সমস্ত কথা বুকে চেপে রেখে নীরবে চলে গেল। চলে যাবে জানলে আমি কিছুই বলতাম না। কান্নায় লুটিয়ে  পড়ে অজ্ঞান হয়ে গেল গােধূলি। ডাক্তার এসে বাইরে যেতে বললেন উষা বৌদিকে।
[09/03, 10:10 AM] Kobi Tapas datta2: কি নেই? বৌদি জিজ্ঞেস করে!

মুনাই নেই...ও আমাদের ছেড়ে চলে গেছে চন্দ্র দার কাছে।

বৌদি চিৎকার করে ওঠে। -তুমি কি বলছ পাগলের মতাে  শরৎ ?
মুনাই কোথায়?

নেই...নেই....বৌদি ও নদীর স্রোতে ভেসে গেছে।

বৌদি কেমন যেন পাগলের মত হেসে উঠল।

-তােমরা সকলে চলে যাও। আমি একা থাকব..... আমি একা থাকব।

-দেখতে দেখতে আরাে দিনকয়েক কেটে গেল। গােধূলির অবস্থা খারাপের দিকে এগুতে লাগল। রক্তের কোনো সুরাহা হেলেনা। শরৎ গােধূলির সঙ্গে দেখা করে, আবার রক্তের খোঁজে বেরিয়ে যায়।

-আচ্ছা বৌদি তুমি খুব রােগা হয়ে গেছ না?

-আচ্ছা বৌদি মুনাই এলো না?ও বুঝি পড়েছে?চন্দ্র দা বুঝি ওকে পড়াচ্ছে?

তাই না? জিজ্ঞাসা করেই কাঁদতে লাগল গােধূলি।।

-বৌদি চন্দ্র দার মৃত্যুর জন্য আমিই দায়ী তাই না?

-তুই কেন হবি পাগলি ?

-জানাে বৌদি, চন্দ্রদাকে আমি ভালবাসতাম। আর ও আমায় ছেড়ে চলে গেল,
 আমাকে ক্ষমা না করে।   ও আমার সমস্ত কথা বুকে চেপে রেখে নীরবে চলে গেল। চলে যাবে জানলে আমি কিছুই বলতাম না। কান্নায় লুটিয়ে  পড়ে অজ্ঞান হয়ে গেল গােধূলি। ডাক্তার এসে বাইরে যেতে বললেন উষা বৌদিকে।
 -প্লিজ আপনি বাইরে যান। আমাদের দেখতে দিন। ডাক্তারবাবু বাইরে এসে শরৎকে ডেকে পাঠালেন।

-দেখুন রক্ত না পেলে আর কিছুই করার নেই আমাদের।

চন্দ্র হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। বাজার এসে পৌঁছাল। সারা শরীর যেন অবশ হয়ে গেছে। হঠাৎ বাজারে শরৎকে দেখে চমকে উঠে চন্দ্র। তার পিছনে ঊষা বৌদিকে হাসপাতাল থেকে বেরুতে দেখে ও লুকিয়ে পড়ল আড়ালে। চন্দ্রের। মনে সন্দেহ দানা বেঁধে উঠল। কারাে কিছু অসুখ করেছে ?

মুনাই? না সে তো আর এ জগতে নেই। তবে কি গােধূলি ? হাসপাতালে ঢুকল চন্দ্র। ডাক্তার-এর কাছে সব কিছু জেনে নেয়। ডাক্তার বললেন-খুব তাড়াতাড়ি ও' নেগেটিভ রক্ত দরকার। না হলে ওই গোধূলি ভটচার্যকে বাঁচানাে প্রায় অসম্ভব।

-আমি রক্ত দেব। কিন্তু একটা শর্তে, আমার নাম গােপন রাখবেন।

ঠিক আছে? আপনার শর্ত  মানলাম। চন্দ্র যখন গােধূলি ওয়ার্ডে প্রবেশ করল। তখন গােধূলি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। ওর রক্ত দেওয়া শেষ হলে। শেষবারের মতাে গােধূলির কপালে হাত রাখল। ঘুমাও তুমি প্রিয়া। তােমার প্রিয় তােমার অপেক্ষায় থাকবে আজীবন। আজ আমি আসি!

-আপনার নামটা বলুন প্লিজ? ভয় নেই, আমরা আপনার শর্ত মেনে চলব।

-চন্দ্রময় চ্যাটার্জী।

-আচ্ছা ডাক্তারবাবু এখানে কিছু মেডিসিন পাওয়া যাবে?

-কেন বলুন তাে? ডাক্তার জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে দেখল।
সামনেই মেডিক্যাল স্টোর আছে ওখানেই পেয়ে যাবেন সব।
……...….………
 চলবে