#দৈনিক_প্রতিযোগিতা
#বিভাগ_ছোটোগল্প
২০.০৬.২০
"দেবী ফুলমণি"
(ছোটো গল্প)
✍®©সুমিতা মুখোপাধ্যায়
বুধন সর্দার আজ ফুলমণির ঘরে সেবা নেবে.....ফুলমণির সেই রাতের কথা মনে পড়ে গেলো......আজ থেকে ২০ বছর আগের সেই রাত! কী বিভীষিকাময় রা…
#দৈনিক_প্রতিযোগিতা
#বিভাগ_ছোটোগল্প
২০.০৬.২০
"দেবী ফুলমণি"
(ছোটো গল্প)
✍®©সুমিতা মুখোপাধ্যায়
বুধন সর্দার আজ ফুলমণির ঘরে সেবা নেবে.....ফুলমণির সেই রাতের কথা মনে পড়ে গেলো......আজ থেকে ২০ বছর আগের সেই রাত! কী বিভীষিকাময় রাত,কী যন্ত্রণাময় রাত,আজও ভাবলে শিউরে ওঠে।বুধন সর্দারের বয়স তখন ৪৫ পেরিয়েছে,তাগড়াই চেহারা,সুঠাম দেহ, কালো কুচকুচে চামড়া,মাথায় কোঁচকানো এক ঝাঁকড়া চুল।বুকের পেশী যেন ঠেলে বেরিয়ে আসছে,হাত দুটি লোহার মতো শক্ত,কড়া পড়া হাতের চেটো...মুখে ঠঁটের ওপর এক গুচ্ছ গোঁফ বেশ দুপাশে পাকানো।
আবার একটু কেঁপে উঠে ফুলমণি তার ১৩ বছরের মেয়ে কে শাড়ি পরাচ্ছে.....মেয়ে অনেক প্রশ্ন করছে,কিন্তু ফুলমণি এখন অন্য ভাবনায়,মাঝে মাঝে চোখে জল চলে আসছে।....
বুলবুলি বলে উঠলো... হঁ কেনে,তুই কানছিস! আগে মোকে বোল তো,হামি কী করবক,আমাই সাজাইছিস কেনে! বোল তো মা! সেই থিকা কী ভাবছিস মা!বোল তো...? বলেই মাকে জড়িয়ে ধরে। ফুলমণি বলতে শুরু করে....ওরে কাঁদবো না তো কী! মোর বিটিছেলেক সাবালক হঁইছে,সীকিতি পাবেক,হামার চোকের জল লারছে রে...আ মোর বিটি...বুলি এট্টু আদর করি মুঈ।
মেয়ে আর মায়ের টুকিটাকি কথোপকথন চলছে...তারই মাঝে ফুলমণি হারিয়ে যাছে সেই রাতে,যেদিন তাঁর মা লীলাবতী তাঁকে এই ভাবেই সাজিয়ে....বুধন সর্দার কে ঘরে এনে সেবা করে তাঁকে বুধনের ঘরের দোড় পর্যন্ত টলমল পায়ে দিয়ে এসেছিলেন।বয়স তখন তারও ১৩। সবে কয়েক দিন আগে ঋতুমতী হয়েছিলো,গা পরিস্কার হলে তবে এই নিয়ম,এই মহল্লায়।আশেপাশে আরো অনেক মহল্লা আছে,যেখানে বুধন সর্দার সেবা নিয়ে ফেরে।
টলমল পায়ে বুধনের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো ফুলমণি....দুটো চোখ তাঁর জ্বল জ্বল করছিলো, বুধন তখন তামাক সেবন করছিলো,গা টা ঘুলিয়ে উঠেছিলো.....ওয়াক করে বমি উঠে আসছিলো,কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে বুধন তাঁর লৌহবাহুদ্বয় দিয়ে চেপে ধরলো,কেমন যেন...শক্ত বন্ধনে আবদ্ধ..... দুচোখে অন্ধকার দেখছিলো। তারপর কিছুক্ষণ কিছু জানে না। যখন চোখ খুললো দেখলো...ফুলমণি বিছানায় শুয়ে আছে,পুরো উলঙ্গ,বুধনও তাই...পোশাক নীচে গড়াগড়ি খাচ্ছে...আসল খেলা শুরু হলো এবার....বুধন মহল্লার নিয়ম অনুযায়ী পদ্ধতি শুরু করলো.....গোটা গা কড়াপড়া হাত দিয়ে টিপে টিপে দেখতে লাগলো,আর হাসতে লাগলো.....তারপর কিছু ফুল ছড়িয়ে দিয়ে....দাঁতে করে কামড়ে কামড়ে দেহ থেকে তুলতে লাগলো...তাতে স্তনবৃন্ত ক্ষত হলো,ক্ষত হলো অনেক জায়গায়।আশ্চর্য সব দেখতে পাচ্ছে,কিন্তু ফুলমণির উত্থান শক্তি নেই.......তারপর চললো....যন্ত্রণা দায়ক পীড়ন....গোপন অঙ্গ ক্ষতবিক্ষত.... বুঝতে পরাছে...কী গড়িয়ে পড়ছে...তবুও নিশ্চল।বুধন শুধু পাশবিক হাসি হাসে আর অঙ্গ চালায়,মুখ চালায়।গোটা নারী শরীর তার দখলে,যা খুশী করতে পারে...করেও চলেছে.....।
চুল বাঁধতে গিয়ে অব্যক্তকষ্টের বহিঃপ্রকাশ ঘঠলো...মা গো মা! বুলি বলে উঠলো কী হলো মা! কেমন করিস ক্যান,কী হইছে বলবিক কী? হামি জান্তি চাই রে...বল দিনি.....ফুলমণি বললো,যা হামার মা করে নাই,তাই হামি করবোক।তুকে সব বুলবো বিটি। তু থাম কেনে....এট্টু আসি হামি...রান্নাগুলাক সারি আসিক। থাম কেনে আসছিক। বিটি তু ইখানে চুপটি করে বসে থাকবিক।
বেশ কিছু সময় পার করে ফুলমণি এলো,মেয়ের কাছে,বেশ করে মাথায় হাত বুলিয়ে কোলে মাথা টেনে সব ঘটনা এক টানা বলতে লাগলো মেয়েকে।মহল্লার নিয়ম...মেয়ে প্রথম ঋতুমতী হওয়ার পর,তার শরীর শুদ্ধ করবে,মহল্লার সর্দার...সর্দার মারা গেলে তবে সর্দারের ছেলে সেই শুদ্ধির কাজে লাগবে...এককথায় হলো কোমল নারী শরীর কে ভোগ করা।কেউ এই নিয়ম লঙ্ঘন করতে পারেনি,করতে চায়ওনি।সবাই বিশ্বাস করে,মানে।ভয় পায়,যদি কিছু ক্ষতি হয়!
তারপর ফুলমণির যখন সেদিন ঠিকঠাক জ্ঞান ফিরলো,সাতদিন বিছানায়।তাঁর ঠাকুমা রোজ ক্ষত সারানোর জন্য টোটকা করতো...খুব জোর জ্বরও এসেছিলো...ভুল বকতো,...আরও কতো ভয়!!!!
ফুলমণি এবার মুখফুটে বললো...তুওর বাবা ভালোমানুষ বিটি,বিয়ার পর হামি ভয় পেতুম,কিন্তুক সেই আস্তে আস্তে সোহাগ করে কাচে টেনে নিলো...বড়ো ভালোমানুষ,একদিনও কষ্ট দেই নাই রে......
সব শুনে বুলি বললো..হঁ মা।মোর বাপ মোকে কত্তো ভালোবাসে,কিন্তুক বাপ আজ ঘরে নাই কেনে! ফুলমণি বললো....তুওর বাপ মনখারাপ কইরে লদীর পাড়ে চইলা গেছেক রে....যাওয়ার সুময় টলটল করচিলোক চোখের জল....হামার কাঁধে হাত রেখেক বলি গেলো....বিটিটা কে একটু দেখিস,হামি ইসব মানি লাই...একবার মহল্লায় বলেছিলুম তো হামাকে সব রোয়াবি দেখাইলোক।কিচু কর ফুলি! দুই হাত ধরি তোরে বলছিক...বিটি যেদিন থেকি ঋতু হইলক,সেই দিন থেকি..হামার বুক ধড়ফড় করে উঠিছিলো...কিছু কর ফুলি..........বলে রামধন বেরিয়ে যায়।
ফুলমণি বিটি কে বললো,শুন ভালো কইরে....হামাকে সেদিন হামার মা লিসা হওয়ার জন্য পানীয় দিছিলো,হামি তুকে দেবো লাই.....তু সবটা ভান করবিক চেতন হারানোর,কষ্ট পেলেও চুপ থাকবি।যখন তুওর ওপর ফুল ছিটাক দিবে তু চুপ করে থাকপিক।ফুল ছিটানোর বাদ সর্দার এক পানীয় লেয়।উতে হামি শেকড়ের বিষ মিশায়ে রাখবো। সর্দার পান করে তুওর কাছে আস্তে আস্তে মুখে রক্ত উঠিক পড়ে যাবেক।তু কিন্তুক চেতন হারানোর মতোই থাকবিক।তারপর হামি সব বুঝে লিবো........
মধ্য দুপুরে...ফুলমণির চিৎকার,...ও গো আসো কেনে দিনি...সর্দার আর লাই.....বলে মরা কান্না কাঁদতে লাগলোক......মহল্লার সবাই এলো,দেখলো...দুই জনের গায়ে কাপড় ঢাকা।সর্দারের বউ দুই হাত তুলে মনে হয়....ঠাকুরের উদ্দেশ্যে প্রণাম জানাইলো....বাকীরা চুপ! আশ্চর্য কেউ সর্দারের মৃত্যু কী ভাবে হইছেক জান্তি চাইলো নাকো।ফুলমণি অবাক!!!! রামধন ফিরে এয়েচে।চুপটি করে দাওয়ার বসে আছেক।সর্দারের ছেলের মুখে এক পাশবিক হাসি...এবার তার পালা!
সর্দারের সৎকার হলো,খাওয়া দাওয়া হলো,গান হলো....সেই দিনই...ফুলমণি ঘোষণা করলোক....সর্দার যেহেতু এই অবস্থায় মরেচে,তো ঠাকুরের কোপ লেগিছে.. বেটির কোনো শুদ্ধতার আর প্রেরোজন লাই.....আর এই প্রথার অবসান হোক।সর্দার বউ,ও ছেলের বউও সম্মতি জানালো....সর্দারের পর বয়োবৃদ্ধ একজন বললো.....এই প্রথার অবসান হোউক,আর লয়.....মহল্লা সব নারী শুদ্ধ। জয় মা...শীতলক্ষ্যা দেবী।জয় হউক।আজ থেকি সবাই পুজো করতি পারবেক।অনেক যুবকও সম্মতি জানালো।
সব মিলিয়ে একটা উৎসবের আয়োজন হলো,নাচ,গ