Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-সম্মাননা

দৈনিক সেরা কলম সম্মাননা প্রতিযোগিতা
**************************************
(পর্ব ০৬)
*********
বিভাগ - গল্প
""""""""""""""""
কুসুম যেন...
**********…


দৈনিক সেরা কলম সম্মাননা প্রতিযোগিতা
**************************************
(পর্ব ০৬)
*********
বিভাগ - গল্প
""""""""""""""""
কুসুম যেন...
***********
কুসুম, একটি আদিবাসী নারী।যখন কিশোরী ছিলো, ঘটনাটা তখনকার। ভাইটিকে সাথে নিয়ে গেছলো ঝর্ণা থেকে জল আনতে। টাঁড় অঞ্চলের ঝর্ণার শরীরও কিশোরীর মতোই শীর্ণকায়! বর্ষা এলে যুবতী হয়ে ওঠে । কুসুম ভাইকে একটু দূরে দাঁড়াতে বলে, নিজে একদম ঝর্ণার বহতা জলে নেমে , কাঁখের কলসি ভরছে মন দিয়ে।ভরে উঠলো দুটি কলসিই, একটির ওপরে আরেকটি বেশ পারদর্শিতায় সাজিয়ে, মাথায় চাপিয়ে নিয়ে, ফিরে আসতে পেছনে ফিরেই দেখে চারজন ভিনদেশী ছেলে দাঁড়িয়ে ,সাজপোশাক বলছে দূর শহরের। কিছুটা দূরে একটা চার চাকার গাড়ি।

ওরা কুসুমের কাছে জল চাইলো।কুসুম,হাতের ইশারায় ঝর্ণা দেখায়।ওরা জেদ ধরে, কুসুমের কলসির জলই পান করবে।অগত্যা মাথা থেকে সযত্নে নামায়, ভর্তি কলসি দুটো। জল দেয় ওদের। সবাই তৃপ্তি করে জলপান করে। শেষের জন হঠাতই ওর হাত ধরে টানে। কলসিটা পড়ে ভেঙে যায়।কুসুম চিৎকার করে , নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করে। কিন্তু,ছেলেটির শক্তির সাথে পেরে ওঠেনা। মুকুলোদ্গম হবার আগেই কুসুম শুকিয়ে যায় !

ওর ছোট্ট ভাইটি কিছু না বুঝলেও, গন্ডগোল আঁচ করে ছুট্টে গিয়ে গ্রামে খবর দেয়।কিন্তু গ্রামের লোক যতক্ষণে ওখানে পৌঁছয়, ছেলেগুলো গাড়ি করে উধাও আর কুসুম একটা ঝড়ে ছিন্নভিন্ন হওয়া লতার মতো ভূলুণ্ঠিত । জ্ঞান হারিয়েছে...!

চিকিৎসায় সাড়া দেয় কুসুম।সেরে ওঠে আস্তে আস্তে।কিন্তু কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলে ! তাই দেখে ডুকরে কেঁদে ওঠে ওর ভাইটি।দিদি যে ওর প্রাণ !

কুসুম একদিন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পায়।এই কদিনে ও যেন অনেক পরিণত হয়ে গেছে! কথা না বললেও, মানুষের মধ্যে কিছু সহজাত শিল্পস্বত্তা থাকে। কুসুমও তেমনই এক শিল্পী। কাউকে কিছু না বলে, বাড়ির উনুন থেকে , কাঠ কয়লা নিয়ে কাগজে একটা গাড়ির ছবি আঁকে অপূর্ব দক্ষতায়, যার নম্বর গুলো জ্বলজ্বল করে দৃষ্টি আকর্ষন করতে থাকে।আর কেউ না হলেও, ভাই ঠিক বুঝতে পারে।এই সেই গাড়ি।যাতে করে.....

প্রত্যন্ত অঞ্চলের আদিবাসীরা, তথাকথিত শিক্ষিত সমাজের থেকে, মানসিকতায় অনেক উন্নত।তাই সব জেনেই কুসুমকে বিয়ে করে ওর ছোটবেলার সাথী মংলু ।ওরা সংসার পাতে, অনেক দূরের শহরে। সুখী হয় নিজেদের মতো করে। মংলু ওখানে সরকারি কলেজে কাজ করে।থাকে স্টাফ কোয়াটারে।

একদিন কাজ থেকে ফেরার পথে মংলু দেখে, বাড়ির সামনে লোকে লোকারণ্য! ছুটে গিয়ে ও আরো অবাক হয় ! কুসুমের হাতে একটা কাটারি আর মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ওই কলেজেরই অ্যাকাউন্ট্যান্ট! ততক্ষণে পুলিশ আর অ্যাম্বুলেন্স হাজির।কাউকে কিছু বলতে হয়না, কুসুম নিজেই কাটারিটা পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে , ধীর গতিতে গাড়িতে উঠে বসে।তার আগে ঘরের থেকে নিয়ে আসে , আজ থেকে প্রায় সাত বছর আগের আঁকা সেই ছবিটা ! একটা গাড়ি ও তার নম্বরপ্লেট।...তুলে দেয় স্বামীর হাতে।

কুসুম বাগান থেকে, গাড়িটার নম্বর দেখেই বেরিয়ে আসে ।তারপর গাড়ির মালিককেও চিনতে পারে। সেদিনে ঝর্ণার কাছে ধস্তাধস্তির সময় , লোকটার কপালে, কুসুমের কাঁচের চুড়িতে গভীর ভাবে কেটে গেছলো,দাগটা আজও অক্ষত।

এতো বছর পর আজ আবার কথা বলে কুসুম,

"তুই আবার বিয়ে করিস মংলু।আমার জন্যে ভাবিস না। পশুটাকে একদম জানে মেরে দিয়েছি।আর কোনো মেয়ের ,ক্ষতি করতে পারবে না...!"

হতবাক মংলু মাটিতে বসে পড়ে!

কুসুমকে নিয়ে পুলিশের গাড়িটা ধীরে ধীরে কলেজের গেটে থেকে বেরিয়ে যায়।একবুক শূন্যতা তখন জমাট বেঁধে ঘিরে ধরেছে উপস্থিত সকলকে।সকলের মনে একটাই আকুতি, " কুসুম যেন সুবিচার পায়!"

দেবযানী
22/6/20

( শব্দ সংখ্যা 474)