Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া সাহিত্য পত্রিকা দৈনিক সেরা সম্মাননা

#বেঁচে থাকাটাই খুব বড় কথা...তবুও আনন্দে বাঁচতেই হয়"
#সুস্মিতা

(যখন একাকীত্ব অসহনীয় হয়ে ওঠে, যখন বেঁচে থাকার মানে খুঁজে পাওয়া যায়না... তখন হয়ত আমার এই গল্প মানুষের মনে প্রলেপের কাজ করতে পারে, জীবনের মানে খুঁজে পেতে সাহায্য ক…


#বেঁচে থাকাটাই খুব বড় কথা...তবুও আনন্দে বাঁচতেই হয়"
#সুস্মিতা

(যখন একাকীত্ব অসহনীয় হয়ে ওঠে, যখন বেঁচে থাকার মানে খুঁজে পাওয়া যায়না... তখন হয়ত আমার এই গল্প মানুষের মনে প্রলেপের কাজ করতে পারে, জীবনের মানে খুঁজে পেতে সাহায্য করতে পারে...
 "বেঁচে থাকাটাই খুব বড় কথা ...তবুও আনন্দে বাঁচতেই হয় ..."
গল্পের নাম "নৈঃশব্দের শব্দ।)

#নৈঃশব্দের শব্দ
#সুস্মিতা

     আজকের কিটিপার্টিতে খেলাটার নাম ছিল "তোমার প্রিয় শব্দ বা ধ্বনি"। কি সুন্দর ইন্টারেস্টিং বিষয়বস্ত...
    বাড়ি ফেরার পথে একলা হাঁটতে হাঁটতে সে কথাই ভাবছিলেন নন্দিতা। প্রতিবারই 'লেডিস মীট'এ সব থেকে কনিষ্ঠা সদস্যা অর্চনা ভারি মজার এক একটা 'খেলা' নিয়ে আসে। নন্দিতার কর্মহীন,নিস্তরঙ্গ জীবনে প্রতিমাসের এই একটা দিন তিন সাড়ে তিন ঘন্টা কি সুন্দর তরতর করে কেটে যায়। সময় কাটানোটাই তো বার্ধক্যের সবচেয়ে বড় সমস্যা...
   ভাগ্যিস প্রবাসী কন্যার জোরাজুরিতে ও প্রতিবেশিনী দুইতিনজন মহিলার উৎসাহে নন্দিতা এই কিটিপার্টির দলে যোগদান করেছিলেন। আজকাল তো বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়,টেলিভিশনে...এমন কি ডাক্তাররাও বলছেন -"আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের গুণে প্রলম্বিত বার্ধক্যে লেডিস কিটিপার্টি একটা থেরাপির কাজ করে।"

      তবুও তো একটা দিন মানুষের সঙ্গ পাওয়া যায়...হ্যাঁ..."মানুষের সঙ্গ"। এই বয়সে পৌঁছে কে কতটা বন্ধু হয়ে উঠতে পারেন -বলা মুশকিল। তবু কয়েক ঘন্টার "সঙ্গ"টাও অনেক। একটু কথা বলা যায়...অন্যের কথা শোনার সুযোগ হয়...। বহু বছরের পাট না ভাঙ্গা একটা ভালো শাড়ি অন্তত পরা হয় সেদিন...কখনোসখনো শুন্য সিঁথির নীচে একটা ছোট্ট টিপও। বয়সের ভারটা এই দিনটাতে একটু কম অনুভূত হয়। শুধু তাই নয়,হাসি ঠাট্টার মধ্যে দিয়ে কখন যেন মনেমনে কৈশোর যৌবনেও ফিরে যাওয়া...। ওই তিনঘন্টা সময়টাতে ওঁরা কেউই যেন আর দিদা,ঠাকুমা,মা-কাকীমা থাকেন না...
   সবাই তখন শুধু এক একজন সম্পূর্ণা...নারী ...সেই মুহূর্তগুলো তাঁদের একান্ত নিজস্ব ..."লেডিস মীট"।

     
একলা হাঁটতে হাঁটতে কত কথাই যে মনের মধ্যে উঁকিঝুঁকি মারে। আজকাল ডান পা টা অল্প একটু টেনে টেনে হাঁটতে হয় নন্দিতার।হাঁটুদুটো ওদের অপারগতা জানান দিতে শুরু করেছে। ওদের আর দোষ কি?অনেক বছর তো ভার বহন করল ওরা...।
   হাঁটতে হাঁটতেই নন্দিতার মনে পড়ল-"এই মাসের ব্লাডস্যুগার টেষ্টটা এখনও করানো হয়নি "। তা না হয় হোক্...আর ভালো লাগে না। সেই তো এক রুটিন...সোসাইটির সিকিওরিটি গার্ড ছেলেটিকে ডেকে 'বাবা বাছা'করে একটা অটো রিক্সা আনানোর ব্যবস্থা করা, তারপর ঠিকে কাজের মেয়েটার 'কবে' একটু সুবিধা হবে জেনে নিয়ে,তার হাত ধরে ডাক্তারখানায় গিয়ে ব্লাডস্যুগার,কোলেস্টেরল আরও কত হাজারো গন্ডা পরীক্ষা করা...।
  কি হবে এত সব করে ?বাঁচতেই হবে?আরও কতদিন...কত বছর?কেন ?কিসের জন্য? কার জন্য ? পৃথিবীর কোন্ প্রয়োজনে,কোন উপকারে লাগছেন এখন নন্দিতা ?

     দূর প্রবাসে থাকা একমাত্র সন্তান তবু মানবে না। প্রতি মাসে মায়ের সুস্থতার রিপোর্ট তার চাই ই। "মা এখনও আছেন"-এইটুকুই হয়ত ওর স্বান্তনা। নন্দিতারও তো ঠিক এইরকমই হ'ত...। "একলা মা"এর মনের ভিতরে যে তখন ঠিক কি চলত-সন্তান হিসেবে নন্দিতাই কি পুরোটা বুঝতে পারত ?
      মা যখনই তাঁর প্রয়োজন ফুরানোর কথা কিম্বা মৃত্যুর কথা বলতেন, নন্দিতা ভীষণ রেগে যেত...মুখ ঝামটা দিয়ে সে মাকে বলত-"সব সময় এত নেগেটিভ কথা কেন বলো মা ?বড্ড মেজাজ খারাপ করে দিতে পারো তুমি"।
যখনই সুযোগ পেত নন্দিতা, মাকে বোঝানোর চেষ্টা করে বলতো-"দেখ তো তুমি কত ভালো আছ...কত মানুষের আরও কত দুঃখ...কত কষ্ট...তাদের থেকে তো অন্তত তুমি অনেক বেশি সুখে আছ,শান্তিতে আছ "। মা কেমন যেন শুন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতেন ,কোনো উত্তর দিতেন না। ক্রমশঃ যত দিন যেতে লাগলো মা আর কোনো অভিযোগ বা অসুবিধার কথা আর বলতেন না।নিজেকে কেমন গুটিয়ে রাখতেন। কে জানে ?হয়ত অভিমানে...।
শেষের কয়েকটা বছর তো প্রায়  কোনও কথাই মা বলতেন না। সেই সময় মাকে দেখে নন্দিতা মনেমনে ভাবতেন-"আমার যখন বয়স হবে...আমি কখনও অভিযোগ জানিয়ে, অহেতুক অভিমান করে আমার মেয়েকে বিরক্ত করব না, আমি ঠিক সবরকম পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে একেবারে সুস্থ, হাসিখুশি আর আধুনিকমনস্ক থাকব..."

   
         সত্যিই যদি ঠিক তেমন হত...সত্যিই যদি সকলে সঠিক সময়ে সব শিখে নিতে পারত...সত্যিই যদি বার্ধক্যে সবাই সুস্থ থাকত...সত্যিই যদি সবাই সবাইকে বুঝত...
      কিন্তু না ,পৃথিবীর হিসেব নিকেষ, সম্পর্কের যোগ-বিয়োগ,গুণ-ভাগ  রোজ পাল্টে যায়...বার্ধক্য তার সাথে তাল মেলাতে হিমশিম খায়।"সময়" তার নিজস্ব খেলা নিজের মনে একলাই খেলতে থাকে...।

     
 হাঁটুর কাছে খট্  করে একটা শব্দ হ'ল। পায়ের নীচে এক টুকরো ইঁট পরেছিল। একটু থেমে নন্দিতা সামলে নিলেন...
     যাইহোক্ নন্দিতার বাড়ি আর বেশি দূরে নয়। মাল্টিষ্টোরিড বিল্ডিং এর এগারো তলার ফ্ল্যাটে নন্দিতা থাকেন,একদম একা। এইটুকু দূরত্ব তিনি এখনও একাই চলাফেরা করেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজার হাটের ব্যবস্থা সব সোসাইটির ভিতরেই। বাকি...ব্যাঙ্ক,পোস্ট অফিস,ডাক্তার বদ্যির কাছে যাওয়ার সময় কাজের মেয়ে সুশীলা সঙ্গে থাকে।

        মাসের এই একটা দিন অর্থাৎ 'লেডিস মীট' এর দিনটির দিকে নন্দিতারা সবাই হাঁ করে তাকিয়ে থাকেন।
 নন্দিতারা-মানে নন্দিতার মতই আরও এগারোজন...সব মিলে বারো। প্রত্যেকেরই জীবন যে একেবারে একরকম তা নয়। তবে প্রধান সাদৃশ্যটা হল-এই দলের সকলেরই বয়স পঞ্চাশের ওপরে।
সর্বজ্যেষ্ঠা আটাত্তর বছরের আল্পনাদি, তিনি একসময় স্কুলের হেডমিস্ট্রেস ছিলেন। তাঁর বাড়িতে পুত্র,পুত্রবধূ ,নাতি-নাতনি সবাই আছে। তবুও আল্পনাদির দীর্ঘ কর্মজীবনের কারণে কিছুটা সাংগঠনিক কাজ না করে তিনি আজও থাকতে পারেননা। অতএব এই বয়সে পৌঁছেও 'লেডিস কিটি পার্টি'। তিনিই প্রধান উদ্যোক্তা।
বিভিন্ন পরিবারের ভিন্ন রুচি,নানাবিধ সুবিধা-অসুবিধা সামলে দশ বারোজন মহিলাকে একত্রিত করে প্রতিমাসে আমোদ,খাওয়াদাওয়া বা খেলাধুলোর ব্যবস্থা করা কিন্তু খুব সহজ কথা নয়। কিছুটা কর্পোরেট বুদ্ধির প্রয়োজন এখানেও হয়। আল্পনাদি অত্যন্ত সুযোগ্যা নেত্রী।
     আল্পনাদির সুযোগ্যা সহ