সাপ্তাহিক প্রতিযোগিতা
পর্ব-১৭
বিষয়-#গৃহ#বন্দী #জীবন
শিরোনাম-জবানবন্দী
কলমে-মিতা দাস বিশ্বাস
তারিখ-২৯/০৭/২০
আমি নন্দিনী শর্মা ।আজ কাগজ কলম নিয়ে বসলাম নিজেকে নিয়ে কিছু লিখব বলে ।আসলে এই "আমি" দের মনের কথা বোঝার বা শোন…
সাপ্তাহিক প্রতিযোগিতা
পর্ব-১৭
বিষয়-#গৃহ#বন্দী #জীবন
শিরোনাম-জবানবন্দী
কলমে-মিতা দাস বিশ্বাস
তারিখ-২৯/০৭/২০
আমি নন্দিনী শর্মা ।আজ কাগজ কলম নিয়ে বসলাম নিজেকে নিয়ে কিছু লিখব বলে ।আসলে এই "আমি" দের মনের কথা বোঝার বা শোনার লোক পাওয়া বড়ো মুস্কিল ।কেউ শুনলে বলবে ,রে ঘরে থেকে মেয়েটার মাথা গেছে।তাই এই কালো অক্ষরই ভরসা। আমার না এই ঘরটা খুব ভালো লাগছে।কেন ? একদিন একটা ভালোবাসা এসে হাত ধরেছিল আমার । পাগলিনী রায় হয়ে আমি সেই ভালোবাসার হাত ধরে নতুন পৃথীবিতে পা রেখেছিলাম। ভীষন ভালোবাসতাম ওকে , এখনো ভালোবাসি যদিও। বিয়ের পর বেশ কয়েকবছর ভালোই কেটেছিল। সংসার, স্বামী , শ্বয়ুর বাড়ি বেশ একটা স্বপ্ন স্বপ্ন ব্যাপার। একদিন হোঁচট খেলাম । দেখলাম সংসারে অভাব ঢুকেছে।কি করি ,বাধ্য হয়ে একটা চাকরি জোগাড় করলাম।সেই থেকে দৌড়াচ্ছি । সকালে উঠে সংসার সামলে , স্বামীকে সাজিয়ে অফিস পাঠিয়ে আমি নাকেমুখে গুঁজে দৌড়াতাম। অফিসে গিয়ে খানিক সময় চুপচাপ বিশ্রাম নিতাম ।তারপর ফাইলের পাঁজায় মুখ গুজতাম। এভাবে হটাৎ আবিস্কার করেছিলাম আমি মা হতে যাচ্ছি । খবরটা জেনে আমি হাসব না কাঁদব ভেবে পাচ্ছিলাম না । কারন এই দায়িত্বগুলো সামলাতেই আমি হাঁপিয়ে যাচ্ছি তারপর সন্তানের তো অনেক দায়িত্ব ।সবাই বলেছিলো আমি পাগলের মতো ভাবছি ।সব মেয়েকে এভাবেই বাঁচতে হয় । আবার কি যেন বলেছিল ,যে চুল বাঁধে সেকি রাঁধে না? হ্যাঁ মা হয়েছিলাম ভীষন আনন্দে।মা হবার একটা আলাদা অনুভুতি ।এক সম্পুর্না নারী ।ঐ ল্যাজে গোবরে হয়ে ছুটি নিয়ে কিছু দিন থেকে তারপর একটা কাজের মেয়ের জিম্মায় ছেলেকে রেখে আবার দৌড় ।এই করতে করতে দুবাচ্চার মা হলাম আমি । আমার ক্লান্ত মন ভালোবাসা খুঁজত , কিন্তু সেটা ও কেমন খবরের কাগজের মতো হয়ে গিয়েছিল। অভ্যেসে পরিনত হয়েছিল স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কটা।
ঐ রাতে ক্লান্ত হয়ে দুজনে ফিরতাম ।ও এসেই বাবা মায়ের সাথে তারপর ছেলে মেয়ের সাথে সময় কাটিয়ে রাতের খাবার খেয়ে যখন আমরা নিজেদের পৃথিবীতে আসতাম তখন ঘুম জড়িয়ে আসত দুচোখে। ওই দরকারী কথা বার্তা ছাড়া আমরা নিজেদের সম্পর্কটা ভুলেই গেছিলাম আর ভালোবাসা সেটা কোথায় যেন হারিয়ে গেছিল।
আজ বিয়ের তিরিশ বছর বাদে আমরা সবাই এখন গৃহবন্দী। ছেলে মেয়ে দুজনেই নিজের নিজের সংসার নিয়ে ব্যস্ত, শ্বশুর-শাশুড়ি গত হয়েছেন। এখন আমি আর আমার ভালোবাসা মানে আমার স্বামী একসাথে গৃহবন্দী। অফিস যাওয়ার তাড়া নেই , অফুরন্ত সময়। এখন আমার ভালোবাসা আবার আমার কাছে ফিরে এসেছে। হোক না তা বৃদ্ধ বয়সে তবুও ভালোবাসা তো ভালোবাসাই। এখন আমরা দুজনে একসাথে বসে গল্প করি ,গান শুনি ,খাবার খায়। জীবনে আমার চাওয়া গুলো খুব সামান্য ছিল আমি একটু রোমান্টিক টাইপের মেয়ে ,না না মহিলা। সব কর্তব্য করতাম সংসারের শুধু একটাই অভাব আমার ছিল তাহলো মানুষটার ভালোবাসাটা কেন জানি খুঁজে পেতাম না ,কর্তব্যর বেড়াজালে সেটা হারিয়ে যেতে বসেছিল। গৃহবন্দী জীবনে আমি সেটা আবার খুঁজে পেয়েছি। নিজের জীবনটাকে আবার নতুন করে ফিরে পেয়েছি। এখন আমি নিজের ভালোলাগা গুলোকে সময় দিতে পারি। এখন আমি ছাদে গিয়ে খোলা আকাশ টা দেখতে পারি ,উড়ে যাওয়া বকের সারি কে দেখে গুনগুন করে গাইতে পারি ,ওরে আমার হারিয়ে যাবার নেই মানা মনে মনে।
তবুও গৃহবন্দী জীবন তো বেশি দিন কারো ভালো লাগে না। আমরা মানুষেরা তো চিড়িয়াখানার বন্দী পশু নয় যে বন্দি জীবন ভালো লাগবে । সাময়িক ভালো লাগে । আমার মতো ঘরকুনোদের এই জীবনটাই শ্রেয় কিন্তু অনেকেই হাঁপিয়ে ওঠে অল্প দিনেই।তখন যেভাবেই হোক বাইরের জগতে ডানা মেলতে চাই । আমি ব্যতিক্রমী ।।