#নারী বনাম বান্ধবী
#সুস্মিতা
#গল্প
(নিজের অপুষ্ট নিস্তনী শারীরিক গঠনের জন্য মনামী তো দায়ী নয় ...)
ঠিক বেলা তিনটের সময় মাথার কাছে ফোনটা বেজে উঠতেই সুদেষ্ণার মন বলে দিল- "এটা মনামীর ফোন"... ঠিক , একেবারে ম…
#নারী বনাম বান্ধবী
#সুস্মিতা
#গল্প
(নিজের অপুষ্ট নিস্তনী শারীরিক গঠনের জন্য মনামী তো দায়ী নয় ...)
ঠিক বেলা তিনটের সময় মাথার কাছে ফোনটা বেজে উঠতেই সুদেষ্ণার মন বলে দিল- "এটা মনামীর ফোন"... ঠিক , একেবারে মিলে গেল। এটাই বোধ হয় মস্তিষ্কের সাথে মস্তিষ্কের তরঙ্গ, ইংরেজি ভাষায় টেলিপ্যাথি। বেশির ভাগ টেলিপ্যাথিরই কার্যকারণ সূত্রটা খুঁজে পাওয়া যায়না। কিন্তু এক্ষেত্রে সুদেষ্ণার টেলিপ্যাথির একটি কারণ আছে ।
বিয়ের পর থেকে টানা প্রায় বারো বছর সুদেষ্ণা ও মনামী তাদের স্বামীদের কর্মসূত্রে জামসেদপুরের একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল টাউনশিপে কাটিয়েছে। সুদেষ্ণা মাঝেমাঝেই ভাবে ছোটবেলায় ভাইবোনেরাও কিন্তু সঠিকভাবে একসাথে কাটায় ওই পনেরো ষোলো বছরই। এমনকি মা-বাবার সাথেও সন্তানের একসাথে থাকার মেয়াদটুকুও বড় জোর সতেরো আঠেরো বছর। তার মধ্যে একেবারে শিশু অবস্থার দিনগুলো বাদ দিলে বাকী থাকে আর কতটুকু? সুদেষ্ণার মনে প্রায়ই প্রশ্ন জাগে - "তবে কি একজন পরিনত বয়স্ক মানুষকে সবচেয়ে বেশি বোঝে তার পাশের বন্ধু বা বান্ধবীটি? কারণ অন্য সব সম্পর্কের মধ্যেই একটা বাঁধা বা আড়াল থাকে। মা, বাবা, দাদা, দিদি, ভাইবোন...প্রায় সব সম্পর্কর মধ্যেই । এমন কি স্বামী স্ত্রীও বোধহয় একে অপরের কাছে নিজেকে ততটা মেলে দিতে পারেনা, যতটা নিজেকে খুলে ধরা যায় সব থেকে প্রিয় বন্ধুটির কাছে।
তাই কি? ফুলপ্রুফ্ উত্তরটা অবশ্য সুদেষ্ণার হাতে নেই। তবুও সাহিত্য - পাগল সুদেষ্ণার মনের মধ্যে প্রিয় লেখকের একটি উক্তি কবে কখন কিভাবে যেন একেবারে গেঁথে গিয়েছিল। লেখক লিখেছিলেন -"বন্ধুদের আমি সমকামীর মত ভালবাসতাম।"
সুদেষ্ণার নিজের জীবনেও বান্ধবীদের ভূমিকা বড় গুরুত্বপূর্ণ। একাধিক ভাইবোনের মধ্যে কনিষ্ঠ সন্তান শ্যামলা মেয়েটি বাড়িতে ছিল একটু একাচোরা। খানিকটা যেন ভীরের মধ্যে হারিয়ে যাওয়া... এক কোণায় পড়ে থাকা। ।
শুধু ওই একলা মেয়েটার মনের মধ্যে ঢুকে গিয়েছিল একটা বিরাট আকাশ... সেটা গল্পের বই এর হাত ধরে। আর সেই সাহিত্যের জগতের স্বাদ ও সন্ধানও সুদেষ্ণা পেয়েছিল প্রানের দুই বান্ধবীর মাধ্যমেই । বান্ধবীরা ছিল ওর মনের মুক্তির জায়গা। সেটা ছিল সেই স্কুলজীবনের কথা। কালের নিয়মে সেসব বান্ধবীরা জীবন থেকে হারিয়েও গিয়েছে।
অবশ্য তারপরেও জীবনে এসেছে আরও অনেক নূতন সখী সহচরী। তারাও প্রত্যেকেই সুদেষ্ণাকে বড় ঋদ্ধ করেছে। একেক সময় মনে হয় - প্রিয় লেখকের উক্তিটিকে নিজের জীবনে সত্যি করে তোলার জন্য সুদেষ্ণা যেন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ...বান্ধবীদের ও সত্যিই সমকামীর মতই ভালোবাসে।
সবচেয়ে বড় দিদি সুজাতা ছোট বোন সুদেষ্ণাকে একটু বেশি বোঝেন। বোনের এই বন্ধুপ্রীতি আর বই এর বাতিক দেখে অভিজ্ঞ অগ্রজা তাকে সদুপদেশ দেওয়ার চেষ্টায় বলেন - "ওরে বন্ধুবান্ধব আর গল্পের বই নিয়ে এত ভেসে যাস না, একটু বাস্তববাদী হতে চেষ্টা কর, নিজের ভালো-মন্দ বুঝতে শেখ।" সুদেষ্ণার মাথার উপর দিয়ে ভেসে যায় সে সব উপদেশ...।
এ ভাবেই দিন কেটে যায়। গল্পের বই আর বন্ধু বান্ধবীদের পাল্লায় পড়া সুদেষ্ণা ততদিনে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তুখোড় ছাত্রী।শ্যামলা মেয়েটা তখন লোকের চোখে বেশ রূপসীও বটে । রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করার ফলে দুই দাঁড়িওয়ালা বুড়ো মার্কস ও এঙ্গেলস্ সুদেষ্ণার মাথার ভেতরটা অনেকটাই খেয়ে ফেলেছেন।
অন্যদিকে সুদেষ্ণা ঠিক ব্রা-পোড়ানো ফেমিনিষ্ট না হলেও একটা কথা ওর মনের মধ্যে চোরাস্রোতের মত সবসময়ই ভেসে চলে। ও ভাবে, কেন যে লোকে বলে- "দুজন নারীর মধ্যে কখনোই প্রকৃত বন্ধুত্ব হতে পারে না। ঈর্ষা, রেষারেষি মেয়েদের মনের মধ্যে পাঁচিল হয়ে দাঁড়ায়।" ইশ্ , যেন বন্ধুত্ব, উদারতার মত মহান ব্যাপারগুলো শুধু পুরুষেরই একচেটিয়া।
এইসব ধারনাগুলোর বিরুদ্ধে এক অদৃশ্য লড়াইয়ে সুদেষ্ণা নিজেকে সবসময় নিয়োজিত রাখে। বান্ধবীদের সাথে বড় ভালবাসার সম্পর্ক ওর, এবং সেটা দুতরফ থেকেই।
দুই
এবার জীবনের আর একটা নূতন পর্ব। বিয়ে হ'ল সুদেষ্ণার । নতুন সংসার হবে ওর জামসেদপুরে। জামসেদপুরে যাওয়ার দুদিন আগে রাত্রিবেলা অন্ধকারে বিছানায় শুয়ে মাতৃসমা বড়দি সুদেষ্ণার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বললেন - "দ্যাখ বোনটি, এবার তোর নূতন জীবন, বুদ্ধি দিয়ে সংসার করবি। নতুন জায়গায় যাচ্ছিস, সেখানে নতুন সব লোকজন... নতুন বন্ধু বান্ধবও হবে। তবে কারুকেই অন্ধভাবে বিশ্বাস করে একেবারে সব ব্যক্তিগত কথা বলবি না কিন্তু। একটু নিজেরটা বুঝে চলিস।" - অন্ধকার ঘরে সুদেষ্ণা বড়দির ভারী ভারী কথাগুলোর প্রতি মন ভর্তি অবিশ্বাস নিয়ে দেওয়ালের দিকে চেয়ে রইল। মনের গভীরে রইল বন্ধুত্ব আর ভালোবাসার প্রতি অনড়, অটল বিশ্বাস......।
জামসেদপুরে সুদেষ্ণা-সৌগতর ছোট্ট ছিমছাম নূতন সংসার। সম্বন্ধ করে অভিভাবকদের পছন্দেই ওদের বিয়ে হয়েছে। তবে ওরা দুজনেই দুজনকে জীবনসঙ্গী পেয়ে বেশ খুশি। যাই হোক নতুন বিয়ের প্রাথমিক উন্মাদনা মাস পাঁচ ছয় পরে একটু তো থিতিয়ে যাবেই। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দাম দিনগুলো আর কলেজ স্ট্রিটের বই পাড়ার গন্ধ মাঝে মাঝেই সুদেষ্ণাকে একটু বিষন্ন আর আনমনা করে দেয়।
একদিন সৌগত অফিসে চলে যেতেই সুদেষ্ণা একাএকা বেরিয়ে পড়ল কাছাকাছি একটা বাংলা বইএর দোকান অথবা লাইব্রেরী খুঁজে বের করার জন্য। পেয়েও গেল এবং সেটি বাড়ি থেকে খুব বেশি দূরেও নয় - একটা লাইব্রেরি। সেখানে বাংলা সাহিত্যের বেশ বড়সড় এক ভান্ডার রয়েছে। সুদেষ্ণার মনে আনন্দ আর ধরে না। খুশীতে, উত্তেজনায় ও দোতলা লাইব্রেরীর সিঁড়ি বেয়ে উঠতে শুরু করল...।
তিন
শিল্পনগরীর লাইব্রেরিটি বাংলা বই এর সাথে সাথে সুদেষ্ণাকে উপহার দিল তার নতুন বান্ধবী মনামীকে। লাইব্রেরীর বড় হল ঘরটার এক কোনায় বসে এক মনে সদ্য প্রকাশিত একটা বাংলা ম্যাগাজিন পড়ছিল মনামী। ভারী শান্ত কমনীয় চেহারা। বাংলা ম্যাগাজিন ছাড়াও দুহাতের সরু শাখা পলা মনামীকে চিনিয়ে দিল একজন বাঙ্গালী বলে। "বাংলায় কথা বলা যাবে এবং তিনি সাহিত্য পাঠও করেন" - এরকম একজন মানুষকে চোখের সামনে দেখে সদ্য কোলকাতা ছেড়ে যাওয়া সুদেষ্ণার মনে ভারি উত্তেজনা। নিজেই এগিয়ে গিয়ে যেচে আলাপ করল সে মনামীর সাথে। দশ মিনিটের কথাবার্তার পরেই বোঝা গেল - দুজনের মধ্যে বেশ মিল।
বয়সে মনামী সুদেষ্ণার থেকে বছর চার পাঁচেকের বড় হবে হয়ত। সে কোলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের ছাত্রী। সাহিত্যে যথেষ্ট আগ্রহ। বছর চারেক আগে সুদেষ্ণার মতই বিয়ে হয়ে কলকাতা ছেড়ে জামসেদপুরে এসেছে। ওর স্বামী টাটা কোম্পানির খুব উচ্চ পদস্থ অফিসার। তিন বছরের দুটি যমজ ছেলে আছে ওদের। তারা এই সময়টাতে কাছাকাছি একটা প্লে-স্কুলে যায়। সুযোগ পেলেই সেই সময়টুকু মনামী লাইব্রেরীতে চলে আসে। নানা কথার আদান প্রদানের মধ্যে দিয়ে দুজনেরই দুজনকে বেশ ভালো লেগে গেল। লাইব্রেরী থেকে মাত্র মিনিট পাঁচেক দূরেই মনামীর বিশাল বাংলো। সে সুদেষ্ণার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল নিজের বাড়িতে। ছেলেদের স্কুল থেকে ফিরতে তখনও ঘন্টাখানেক দেরি আছে। কফি আর স্যান্ডউইচ খেতে খেতে দুজনের বন্ধুত্ব আরো বেশি জমে উঠল।
ভারি ফুরফুরে মন নিয়ে সেদিন বাড়ি ফিরল সুদেষ্ণা । প্রথমেই তার মনে হল স্বামীর পদমর্যাদা নিয়ে মনামীর একটুও অহংকার নেই।
লাইব্রেরিতে বসে ততটা বুঝতে পারেনি কিন্তু মনামীর বাংলোবাড়িতে গিয়ে তার বিশালত্ব, ব্যবস্থাপনা ও কর্মীবাহিনী দেখে সুদেষ্ণার তাক্ লেগে গিয়েছিল। কিন্তু মনামী যে কি সুন্দর সহজ সরল শান্ত একটি মানুষ। আচার আচরণে কোথাও কোনো প্রচ্ছন্ন অহংকার বা উগ্রতা দেখা গেল না। বড় শ্রদ্ধা জাগলো সুদেষ্ণার মনে । শ্রদ্ধাও তো বন্ধুত্বের একটা অন্যতম শর্ত। এরপর থেকে খুব ঘন ঘন দেখা দেখা হতে থাকলো মনামী আর সুদেষ্ণার । বন্ধুত্বও বেড়ে চলল। তারপরে খুব স্বাভাবিক নিয়মেই দুই বান্ধবীর স্বামীদের মধ্যেও আলাপ পরিচয় হল। শুরু হল পারিবারিক গেট-টুগেদার, খাওয়া দাওয়া। ঠিক এই জায়গাটাতেই সুদেষ্ণার মনে জেগে উঠল প্রশ্নচিহ্নের মত একটা খটকা।
মনামীর স্বামী অর্ধেন্দুদাকে দেখলে রিফাইন্ড, পলিশ্ড, সফিসটিকেটেড এই বিশেষণগুলো মনে পড়বেই। বাংলা সাহিত্যে ততটা আগ্রহী না হলেও বিদেশী সাহিত্য ও পাশ্চাত্য উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের তিনি গুনগ্রাহী।
অর্ধেন্দুদার বাড়ির পার্টিতে যত্নআত্তির সুবিশাল আয়োজন থাকে। কোন্ রকম গ্লাসে কোন্ পানীয় দেওয়া হবে - এ বিষয়ে তিনি ভীষণ সচেতন। মহিলা মহলে ভীষণ জনপ্রিয় অর্ধেন্দুদা সব পার্টিরই হিরো। মহিলা পরিবৃত হয়ে থাকতে তিনি বিশেষ পছন্দ করেন। কাজের প্রয়োজনে তাকে বছরে প্রায় ছ'মাস বিদেশে ট্যুর করতে হয়। চৌকস ভাষায় দেশ বিদেশের মজাদার গল্প অর্ধেন্দুদাকে সব পার্টিরই মধ্যমনি করে রাখে। অর্ধেন্দুদা নিজেই সগর্বে ঘোষনা করেন যে লোকজনের সাথে মেলামেশা ব্যাপারে তিনি কত চ্যুজি এবং কি ভিষন ঝাড়াই বাছাই করে তিনি তার বাড়ির পার্টির গেস্ট লিস্ট তৈরী করেন। এসব কথা শুনে অর্ধেন্দুদার মুগ্ধ শ্রোতা অতিথিরা নিজেদের বড় দামী ভেবে ভারি গর্ববোধ করে গ্লাসে চুমুক দেন। আর ঠিক এখানেই মার্কস-এঙ্গেল্স পড়া সুদেষ্ণার মনটা একেবারে ঠান্ডা হয়ে মিইয়ে যায়। ও জানে ওর অপছন্দের ব্যাপারটা ও কারুকেই বোঝাতে পারবে না। সৌগতও অর্ধেন্দুদার মত সফল মানুষের নামী-দামী গেস্ট লিস্টে নিজের নাম আছে দেখে বেশ গদগদ হয়ে থাকে। অর্ধেন্দুদার আতিথেয়তায় কোনো ত্রুটি তো থাকেই না, উপরন্তু সুন্দরী সুদেষ্ণার প্রতি ভদ্রলোকের একটু বাড়তি মুগ্ধতাও আছে। অল্পবয়স থেকেই পুরুষের মুগ্ধ দৃষ্টি সুদেষ্ণা চেনে এবং একজন স্বাভাবিক নারীর মত সেটা উপভোগও করে। কিন্তু অর্ধেন্দু ব্যানার্জির এই পদমর্যাদা আর স্ট্যাটাস সিম্বল দেখে মেলামেশা করার নীতিটিকে মনেমনে বড় ঘৃনা করে সুদেষ্ণা । তার আচরণের মধ্যে কোথায় যেন বান্ধবীর স্বামীটির প্রতি প্রচ্ছন্ন একটা অপছন্দের ভাব ফুটে ওঠে, কিছুতেই সেটা লুকোতে পারে না সুদেষ্ণা ।
আর সবথেকে আশ্চর্যের ব্যাপার হল, ঠিক এই কারণেই মনামী সুদেষ্ণাকে আরো কাছে টেনে নেয়। কিম্বা বলা যায় সুদেষ্ণাকে নিয়ে ও যেন খানিকটা নিশ্চিন্ত বোধ করে। তার প্রমাণ পাওয়া গেল কিছুদিন পরে...।
চার
প্রবাসে শিল্পনগরীতে বাঙালিদের জীবন ঠিক যেরকম চলে, সেরকমভাবেই কেটে গেল কয়েকটা বছর সুদেষ্ণা আর মনামীদেরও। পয়লা বৈশাখ আর দূর্গাপুজোর বাঙালীয়ানা। আর প্রতি উইক-এন্ডের সাহেবী পার্টি ... এই ওদের জীবন।
ইতিমধ্যে সুদেষ্ণাও মা হয়েছে। মনামী আর ওর নিজের ছেলেমেয়েরা একই স্কুলে পড়ে। দুই বান্ধবীর বন্ধুত্বও বিশেষভাবে গাঢ় হয়েছে। বিশেষ ভাবে বলার কারন...
একদিন এক বড় বেশী মন খারাপের দিনে মনামী তার জীবনের এমন এক যন্ত্রণার, এক অপমানের, এক বেদনার কথা বান্ধবীকে খুলে বলে যে সুদেষ্ণা স্তব্ধ হয়ে যায়। শুধুমাত্র মনামীর দুঃখ ভাগ করে নেওয়া নয়, সুদেষ্ণা ভাবতে থাকে - যে কতখানি ভালবাসা, কতখানি বিশ্বাস, শ্রদ্ধা আর ভরসা থাকলে তবেই একজন নারী অপর একজন নারীর কাছে খুলে বলতে পারে তার জীবনের এমন চরম অপমান আর যন্ত্রণার কথা। সুদেষ্ণার মনে হল মনামী যেন পৃথিবীর সমস্ত ক্ষুদ্রতা, নীচতাকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিল বন্ধুত্বের প্রতি সম্মান আর শ্রদ্ধা দেখিয়ে।
ব্যাপারটা এরকম... অর্ধেন্দুদা চরম মহিলাসক্ত। মনামী ও সুদেষ্ণা এ বিষয়টি নিয়ে আগে কখনও খোলাখুলি আলোচনা না করলেও কারুর কাছেই ব্যাপারটি অঞ্জাত ছিল না। মনামীর জীবনের এই দিকটি অত্যন্ত দুঃখের তো বটেই কিন্তু তার থেকেও বেশী যন্ত্রণা আর অপমানের ব্যাপারটি সেদিন খুলে বলল মনামী, সে আর বাঁচতে চায় না...। অর্ধেন্দু তার মহিলাসক্তি নিয়ে একটুও লজ্জিত নয়। সে দায়ী করে মনামীকে। প্রতিরাতেই মনামীর কামুক স্বামী বিকৃত, কদর্য ভাষায় বর্ননা করে মনামীর অপরিনত নিস্তনী শরীরকে। লজ্জায়, অপমানে, যন্ত্রণায় শিউরে ওঠে নারীটি । কুঁকড়ে যায় দুই সন্তানের জননী মনামী। তার আত্মবিশ্বাস তলানিতে এসে ঠেকেছে। সে নিজেও নিজেকে দায়ী ভাবতে শুরু করেছে। পার্টি তে সুন্দরী মহিলারা যারা অর্ধেন্দুকে ঘিরে থাকে তাদের দেখে হীনমন্যতায় ভোগে মনামী, ভয়ে ওর বুক কাঁপে, ও আজকাল নিজেকে সবার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতে চায়। শুধু ওর সংবেদনশীল মন নিয়ে ও বুঝেছে যে সুদেষ্ণা কোথায় যেন অর্ধেন্দুকে একটু অপছন্দ করে। আর সেটাই এই হেরে যাওয়া মেয়েটির বড় নিশ্চিন্তির জায়গা। সুদেষ্ণার কাছে মনামী একটু আশ্রয়, ভালোবাসা আর সম্মানের খোঁজ করে।
পাঁচ
বাকরুদ্ধ হয়ে যায় সুদেষ্ণার । মহিলাসক্ত পুরুষ ও আগেও অনেক দেখেছে। বান্ধবীর এই অপমানে, দুঃখে ও স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে। শক্ত মুঠোয় ধরে. থাকে মনামীর হাত। এই দুঃখ এত গভীর গোপন, এত লজ্জার যে জামসেদপুরের মত ছোট্ট শহরে কোনো প্রফেশনাল হেল্প পাওয়ার জায়গাও ওরা খুঁজে পায় না।। সুদেষ্ণা শুধু মনেমনে প্রতিজ্ঞা করে যে-মনামীর আত্মবিশ্বাস ও ফিরিয়ে দেবেই। নিজের অপুষ্ট নিস্তনী শারীরিক গঠনের জন্য মনামী তো কোনোভাবেই দায়ী নয়। অর্ধেন্দুদার সাথে আজকাল একটুও কথা বলতে ইচ্ছে করে না সুদেষ্ণার ।
ছেলে মেয়েরা বড় হয়েছে ওদের পড়াশোনার চাপও বেড়েছে।
আজকাল আর আগের মত পার্টিও হয় না। কাজেই পারিবারিক দেখা হওয়া বেশ কমে গিয়েছে। সুদেষ্ণা শুধু মনামীর মনের শুশ্রুষার ভার নিজের হাতে তুলে নিয়েছে। নিজেকে ক্রমশ গুটিয়ে নেওয়া, কুঁকড়ে যাওয়া মনামীকে হাত ধরে বাড়ির বাইরে টেনে বের করে ও। নিজের হাতে সাজগোজ করতে শেখায়। শহরের বিভিন্ন মহিলা সংগঠনের কাজে মনামীকে সাথে নিয়ে এগিয়ে যায় সুদেষ্ণা । জার্মান ভাষা শেখার ক্লাসে ভর্তি হয় ওরা। মনামী কোনো এক সময় বেকিং এর কোর্স করেছিল। বাড়িতে মাঝেমাঝেই কেক, প্যাটিস, বিস্কিট বানায়। সুদেষ্ণা জোর করে মনামীকে দিয়ে একটা বেকিং এর ক্লাস খোলায় নিজের বাড়িতে। সময়ের প্রলেপ পড়তে থাকে থাকে মনামীর যন্ত্রণার উপরে। দেখতে দেখতে বেশ কয়েক বছর কেটেও যায়। সুদেষ্ণা একদিনের জন্যও হাতের মুঠো থেকে মনামীর হাত আলগা হতে দেয়নি।
ছয়
জীবনে কোনো কিছুই নিরবিচ্ছিন্ন হয় না। এক্ষেত্রে ও তার ব্যতিক্রম হল না। একদিন সন্ধ্যা বেলা সৌগত অফিস থেকে ফিরল সেই অমোঘ চিঠি টা নিয়ে। ওদের কোম্পানির মেইন অফিস চলে যাচ্ছে মুম্বইতে। অতএব ফ্যাক্টরি জামসেদপুরে থাকলেও একুশজন অফিসারের ঠিকানা এখন মুম্বই শহর। খবরটা শুনে সেই ক্লিশে হয়ে যাওয়া উপমাটাই মনে এল সুদেষ্ণার । এ যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত। এতদিনের সাজানো গোছানো সংসারের পাট তোলা, ছেলেমেয়েকে নূতন শহরে নূতন স্কুলে ভর্তি করার ঝামেলা এসব কিছু ছাপিয়েও ওর মনটা হু হু করে উঠল মনামীর জন্য। ওর সাথে সময় কাটানোটা যেন একটা অভ্যাস। সে যেন সুদেষ্ণার অস্তিত্বেরই একটা অংশ কিংবা যেন ঠিক নিঃশ্বাস - প্রশ্বাসের মতই হয়ে গিয়েছিল। বিয়ের পরে কোলকাতা ছেড়ে আসার সময় কষ্ট হলেও - দুচোখে ছিল নূতন জীবনের স্বপ্ন। জামসেদপুর ছেড়ে চলে যেতে হবে ভেবে সুদেষ্ণার মনের ভেতরটা হাহাকার করে উঠল।
বান্ধবীকে খবরটা জানানোর পরের সাতদিন শুধু কাটলো একসাথে কান্নাকাটি করে। সব কথার মধ্যে শুধু একটাই আলোচনা - কে? কতবার? কখন কিভাবে মুম্বই যেতে ও জামসেদপুরে আসতে পারবে?...
যাই হোক দেখতে দেখতে অনিবার্যভাবেই সেই দিনটা এসে গেল। সুদেষ্ণাদের জামসেদপুর ছেড়ে চলে যাওয়ার দিন।
সাত
তিন মাস হয়ে গেল সুদেষ্ণা সৌগতর মুম্বাইয়ের সংসারের। নূতন শহরে আসার পর থেকেই ছেলেমেয়েদের স্কুলে ভর্তি করা, স্কুলবাসের ব্যবস্থা করা, নূতন ফ্ল্যাটবাড়িতে আবার সংসার সাজিয়ে বসা ইত্যাদি কাজ সুদেষ্ণাকে ভারি ব্যস্ত রেখেছিল।
কিন্তু এসবের মধ্যেও এক মুহূর্তের জন্যও সে স্মৃতিকাতরতা থেকে মুক্তি পায়নি । মন জুড়ে শুধু জামশেদপুর আর মনামী ।
মনামীর ছেলেরা এবার বোর্ডের পরীক্ষা দেবে । তাদের পড়াশোনা ও টিউশন নিয়ে সেও ব্যস্ত। তবুও সপ্তাহে তিনদিন ফ়োন্ করে মনের কথা দুজনেরই বলা চাই।
সুদেষ্ণা এখনও মাঝেমাঝেই মনেমনে ভাবে , কি গভীরভাবে তাকে বিশ্বাস করে "বন্ধুত্ব"কে এক অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছিল মনামী। তা না হলে এত গোপন কথা কি অন্য কারুর কাছে খুলে বলা যায় । ভাবলেই মনামীর প্রতি শ্রদ্ধায় মন ভরে যায় সুদেষ্ণার ...
এরই মধ্যে গত পরশু দিন এক মজার ঘটনা হলো।
সেদিন ছিল শনিবার । নূতন শহরে অফিস থেকে বাড়ি ফিরতে সৌগতর প্রায় রাত সাড়ে দশটা এগারোটা বেজে যায় । মুম্বাই শহরের দূরত্ব আর ট্র্যাফিক জ্যাম তো লেগেই আছে ।
সন্ধেবেলা সুদেষ্ণা একা বাড়িতে । ছেলেমেয়েরা গিয়েছে বন্ধুর বাড়িতে জন্মদিনের পার্টিতে । এখানে সবকিছুই বড় রাত করে হয় ।
হঠাৎ ফ্ল্যাটের ল্যান্ডফ়োনটা ঝনঝন্ করে বেজে উঠলো ...
রিসিভারটা কানে তুলতেই সুদেষ্ণাকে একেবারে অবাক করে দিয়ে অন্যপ্রান্তে অর্ধেন্দুদার হই হই করা কণ্ঠস্বর- "কি ম্যাডাম, বাড়িতে আছো তাহলে? আমি অফিসের কাজে মুম্বাইতে এসেছি , তোমাদের পাড়াতেই আছি । অতএব চলে আসছি তোমাদের বাড়িতে আধঘন্টার মধ্যে...জমিয়ে আড্ডা দেওয়া যাবে। " - কথা শেষ করেই সুদেষ্ণাকে আর একটিও কথা বলার সুযোগ না দিয়েই অর্ধেন্দুদা ফ়োনটা ছেড়ে দিলেন।
ঠিক আধঘন্টার মধ্যেই ফ্ল্যাটের কলিংবেলটা বেজে উঠলো ।
দরজায় দাঁড়িয়ে অর্ধেন্দুদা ।
ঘরে ঢুকে নূতন বাড়ি সাজানোর প্রশংসা করতে করতে অর্ধেন্দুদা যখন ড্রয়িংরুমের সোফায় বসলেন , তখন সুদেষ্ণা জানানোর সুযোগ পেল যে সৌগতর অফিস থেকে ফিরতে বড় দেরি হয় এবং ছেলেমেয়েরাও কেউ বাড়িতে নেই।
অর্ধেন্দুদা কিন্তু একটুও অপ্রতিভ হলেন না । খুব স্বাভাবিকভাবে তিনি সুদেষ্ণাদের মুম্বাই জীবনের গল্প শুনতে থাকলেন । আড্ডার মধ্যে জামশেদপুরের নানা মজার ঘটনার স্মৃতিচারণ তো ছিলই ।
সুদেষ্ণারও এই প্রথমবার মনে হল, সেই মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির বিগ বস্ অর্ধেন্দু মিত্র নয় , ঠিক যেন নিজের বড় জামাইবাবুর সাথে গল্প করছে ও । ভারি সুন্দর স্বাস্থ্যময় সম্পর্ক।
গল্পগুজবের মাঝে সুদেষ্ণা অনুযোগ করতে লাগলো- "কেন অর্ধেন্দুদা মুম্বাই ট্যুরে মনামীকে সঙ্গে করে নিয়ে আসলেন না ?"সেই সঙ্গে আরও জানতে চাইলো , অর্ধেন্দুদার আজকের এই সুদেষ্ণাদের বাড়ি আসার কথা মনামী জানে কি না ?
অর্ধেন্দুদা উত্তর দিলেন- "আরে না না , আমি তো গুজরাট , পুণে হয়ে দুপুরেই মুম্বাই এসেছি । হঠাৎই সন্ধের মিটিংটা ক্যানসেল হয়ে গেল , তাই ভাবলাম তোমাদের সঙ্গে একটু আড্ডা দিয়ে যাই...গিন্নীকে জানানোর আর সুযোগ পাইনি।"- কথা শেষ করেই অর্ধেন্দুদা নিজের মোবাইল ফ়োনটা এগিয়ে দিয়ে বললেন- "এই নাও না, এখনই তুমি ওর সঙ্গে কথা বলে সারপ্রইজটা দাও।"
সুদেষ্ণা অনেকবার ডায়াল করে কথা বলার চেষ্টা করলো মনামীর সাথে । অর্ধেন্দুদাও চেষ্টা করলেন । কিন্তু কিছুতেই লাইন পাওয়া গেল না । মাঝেমাঝে এরকম হয় ...
গল্প করতে করতে প্রায় সাড়ে নটা বেজে গেল । তখনও সৌগত অফিস থেকে ফেরেনি। এদিকে অর্ধেন্দুদাকেও পরদিন খুব ভোরের ফ্লাইট ধরতে হবে। এতদূরে এসেছেন দেখা করতে , তাকে তো আর না খাইয়ে ছাড়া যায়না । জামশেদপুরে ওদের দুই পরিবারের সম্পর্কটাই এমন ছিল যে কেউ কারুর বাড়ি থেকে ডিনার লাঞ্চ না করে ফিরত না ।
অতএব সুদেষ্ণা একাই ভারি যত্ন করে অর্ধেন্দুদাকে ডিনার করালো। আজ প্রথমবার মনে হলো অর্ধেন্দুদার মধ্যে দিয়ে সুদেষ্ণা যেন মনামীকেই কাছে পাচ্ছে । বারবার মনে পড়ে যাচ্ছিল...জামশেদপুরে কত দুপুর কেটেছে দুই বান্ধবীর খাবার টেবিলে বসে মনের কথা শেয়ার করে।
ওদের দুই ছেলে ঋজু আর ঋভুও সুদেষ্ণার বড় আদরের । তাদের বাবার কাছ থেকে ওদের গল্পও শুনলো সুদেষ্ণা মন দিয়ে।
গোটা সন্ধেটা স্মৃতির অনুরণনে বড় ভালো কাটলো । সপরিবারে আবার আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাত দশটা নাগাদ বিদায় নিলেন অর্ধেন্দুদা ।
পরের দিন রবিবার । ছুটির দিন...পারিবারিক দিন । এই দিনটিতে সংসারী মহিলাদের পক্ষে "বান্ধবী" হয়ে ওঠার সুযোগ একটু কম্ হয় । রবিবারে তারা একটু বেশিরকমের স্ত্রী এবং মা । কিন্তু সুদেষ্ণা সারাদিন মনেমনে ছট্ ফট্ করতে থাকলো..."আজ তো অর্ধেন্দুদার জামশেদপুরে ফিরে যাওয়ার কথা , মনমীর কাছে গিয়ে তিনি নিশ্চয় সুদেষ্ণার গল্প করবেন, কি অবাক কি খুশিই না হবে বান্ধবীটি আমার " - হাজারো কাজের মধ্যেও শুধু এই কথাই ভেবে চলেছে সুদেষ্ণা ।
তার মন জুরে তীব্র প্রতীক্ষা ... "কখন ফ়োন্ করবে মনামী ?"
পরদিন সোমবার । ঠিক বেলা তিনটের সময় মাথার কাছে রাখা ফ়োনটা বেজে উঠতেই সুদেষ্ণার মন বলে দিল - "এটা ঠিক মনামীর কল্ "...
আনন্দে খুশিতে ঝলমল করে ফ়োন রিসিভ করলো সুদেষ্ণা...
ঠিক তাই , অপর প্রান্তে মনামী ...
মনামী বললো- "হ্যাঁরে, তোর অর্ধেন্দুদার কাছে তোদের নতুন জীবন , নতুন বাড়ির গল্প শুনলাম...খুব ভালো লাগলো ।"
সুদেষ্ণাও খুশির গলায় বলে উঠলো- "জানিস মন, এবার অর্ধেন্দুদাকে দেখে আমারও খুব ভালো লাগলো , খুব অন্যরকম । দেখবি , এবার তোদের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে ।"
সুদেষ্ণার কথাটা একেবারে লুফে নিয়ে মনামী বললো- "ঠিক বলেছিস , আমারও তাই মনে হয় । এই তো দেখ না, গত শনিবারে তো ও কিছুতেই তোদের বাড়ি যেতে চাইছিল না...আমি এখান থেকে ফ়োন্ করে জোর করে ঠেলে পাঠালাম । তা , তোর দাদা বলছিলেন , উনি নাকি ফ়োন করেই তোদের বাড়ি গিয়েছিলেন ...তবে তুই অবশ্য একটু হিন্টও দিসনি যে সৌগত আর ছেলেমেয়েরা বাড়িতে থাকবে না...তুই একেবারে একা । যাক্ গে , এরপরে এরকম হলে একটু আগে থেকে জানিয়ে দিস কেমন ।
তোর অর্ধেন্দুদা আমাকে এসে বলছিলেন ...তোর ওখানে ও বড্ড আনকমফোর্টেবল ফীল করছিল ..."
এরপরের বাকি কথোপকথন সুদেষ্ণার আর মনে নেই ...
মনামী আর কিছু বলেছিল কি না কিম্বা ও নিজেও আর কোনো কথা বলতে পেরেছিল কি না সুদেষ্ণা সত্যিই মনে করতে পারে না ।
ফ়োনটা কে আগে ছেড়েছিল ? ও নিজে না মনামী ? সে উত্তর অবশ্য অপ্রয়োজনীয় ...
তারপরের ক'টা দিন সুদেষ্ণার ভীষণ জ্বর হয়েছিল । একটু বাড়াবাড়ি রকমের জ্বর ...মুম্বাই শহরের ভাইরাল ফিভার হয়তো ...
জ্বরের ঘোরে বিছানায় শুয়ে শুয়ে সুদেষ্ণা শুধু ভাবতো- "মনামীর একটু আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার প্রয়োজন ছিল ... বন্ধুত্বকে হত্যা করে ওর নারীত্বের আত্মবিশ্বাস , নারীত্বের অহংকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তো ? মনামী ভালো থাকুক ..."
**************