Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-সম্মাননা

একটি বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যা
নবনীতা সই
10,7,20
ছোটো গল্প

ফোনটা যখন আসলো তখন কথা বলার সময় ছিলো না তমার হাতে৷ পলাশ তখন বেরোবে , পাপড়ি স্কুলে যাবে৷ ফোনটা দুবার বেজে বেজে যখন কেটে গেলো তখন হাতে নিয়ে আননোন নাম্বার দেখে রেখে দিলো তমা৷
তোম…


একটি বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যা
নবনীতা সই
10,7,20
ছোটো গল্প

ফোনটা যখন আসলো তখন কথা বলার সময় ছিলো না তমার হাতে৷ পলাশ তখন বেরোবে , পাপড়ি স্কুলে যাবে৷ ফোনটা দুবার বেজে বেজে যখন কেটে গেলো তখন হাতে নিয়ে আননোন নাম্বার দেখে রেখে দিলো তমা৷
তোমার মানিব্যাগ , ফোন সব নিয়েছো৷
হ্যাঁ নিয়েছি৷ ও ফাইলটা দাও ৷ পাপড়ি মা ভালো মেয়ে হয়ে থাকবে বাবান দুদিন পরই চলে আসবে৷
আর আমাকে দীঘা নিয়ে যাবে, হুররে!
লক্ষী মা৷ আমরা সবাই যাবো৷ মা কে বিরক্ত করবে না৷
তাড়াতাড়ি আসবে বাবান৷
আচ্ছা আমি পাপড়ি কে ড্রপ করে সোজা এয়ারপোর্টে চলে যাবো৷
সাবধানে যেও৷ পৌছে ফোন কোরো৷
আজ পলাশ দুদিনের অফিস ট্যুরে যাচ্ছে৷ হঠাৎ ৷
পুরো ফ্ল্যাট টা ফাঁকা হয়ে যায় দুজনে বেরিয়ে গেলে৷ তবে তমার ভালোলাগে৷ কিছুক্ষণ নিজের জন্য সময় পাওয়া যায়৷
ফোনটা বেজে ওঠে আবার৷ ভাবনাটা ছিঁড়ে যায়৷
হ্যালো
হ্যালো
মনে হয় যেন অনেকে যুগের ওপার থেকে আওয়াজ টা আসছে৷ না তমা কিছু শুনতে পাচ্ছেনা৷
হ্যালো... তুমি কেমন আছো ?
ভালো৷ তুমি?
আছি৷ তুলি আমি আজ কোলকাতা এসেছি৷
কতদিন পর কানের ভিতর দিয়ে মনের ভিতরে কাঁপিয়ে দিয়ে গেলো নামটা৷
তুলি, হ্যালো....
বলো শুনছি৷
তুলি আমি কাল চলে যাবো কানাডা৷ আজ তোমার সাথে একবার দেখা হতে পারে?? প্লিজ তুলি না কোরোনা৷
কেন আবার আমাকে...
কষ্ট দিচ্ছি ? তাইতো? তোমাকে কষ্ট ছাড়া আর কিছু তো দিতে পারিনি তুলি ৷ আজ না হয় শেষবারের মতন সহ্য করলে৷
আসো৷
কোথায় কখন বলো?
বাড়িতে আসো ৷ ঠিকানা তো জানো৷
আমি ঠিক আলাদা করে দেখা করতে...
বাড়িতে পলাশ নেই , বাইরে গেছে৷ আর পাপড়ির আজ জন্মদিনের নিমন্ত্রণ আছে৷
ঠিক আছে ৷ আমি ছটা নাগাদ আসবো৷
ফোনটা রেখে, সোফায় ধপ করে বসে পড়ে তমা৷ হাসবে না কাঁদবে? চিৎকার করতে পারতো হয়ত তাহলে কিছুটা হাল্কা লাগতো৷ কেন কেন আবার জয় আমাকে কষ্ট দিচ্ছো ??
কিছুক্ষণ চুপ করে বসে তমা উঠে পড়ে৷ নাহ্ হয়ত আর দেখা হবেনা আজ দিনটা স্মৃতির খাতায় জমা থাকবে৷
চটপট কাজ সারতে থাকে তমা ৷ কিন্ত মাঝে মাঝেই ভুল হয়ে যাচ্ছে ৷ কি যেন জয় খেতে ভালোবাসতো? পছন্দের রঙটা?  ঘরটা সবসময় সুন্দর গোছানো থাকলেও তমা আর একটু সাজিয়ে নেয়৷ সে সুখী সেটা যেন জয়ের চোখে পড়ে৷ কয়েকটা জয়ের পছন্দের রান্না করে নেয় তারপর নিজেকে ছেড়ে দেয় শাওয়ারের নীচে৷ সব অনুভূতি গুলো যেন জলের সাথে ধুয়ে পা দিয়ে নেমে যাচ্ছে৷ রেডি হয়ে সোজা পার্লারে চলে যায়৷
স্পা করে অনেকদিন পর৷ বেরোতেই পলাশের ফোন৷
কি হলো ফোন করছি তুলছো না৷
আমি তো পাপড়ির স্কুলে এসেছি , খেয়াল করিনি৷
তুমি পৌছে গেছো?
হ্যাঁ৷অনেক আগে৷ আমার লাঞ্চ হয়ে গেছে৷ শোনো সন্ধ্যার সময় মিটিং য়ে থাকবো হয়ত ফোন অফ থাকবে৷ রাতে ফোন করবো৷
আচ্ছা ঠিক আছে৷ সাবধানে থেকো৷
পাপড়ি কে নিয়ে চলে যেও বাড়ি৷ আর হ্যাঁ লক ভালো করে কোরো৷
চিন্তা কোরোনা৷ একা থাকা অভ্যাস হয়ে গেছে৷
তমা বোঝার চেষ্টা করো কাজ তো করতেই হবে৷
হ্যাঁ জানি৷
বলেছি তো ফিরেই উইক এন্ডে তোমাদের দীঘা নিয়ে যাবো৷
ঠিক আছে রাখো৷
হ্যাঁ বাই৷
মানুষ যে কখন কি চায় আর চায়না সেটা নিজেও জানেনা৷ কয়েকঘন্টা আগে তমার খুব রাগ হচ্ছিলো পলাশের হট করে এই অফিস ট্যুরে যাবার জন্য৷ আর এখন মনে হচ্ছে আশীর্বাদ ৷ ভালো হলো ৷
ফোনটা ব্যাগে রেখে তমা পাপড়ি কে আনতে গেলো৷

মা মা আজ রুবাই য়ের জন্মদিন তুমি যাবেনা?
না মা৷ রুবাই য়ের মা গাড়ি পাঠাবে সবাই কে নিতে৷ তুমি ঝটপট রেডি হয়ে নাও তো৷
আমি লাল ফ্রকটা পড়বো৷
আচ্ছা ৷
গাড়ি আসলে পাপড়ি কে আরও দুজন বাচ্ছার সাথে বসিয়ে দিয়ে তমা চলে আসে৷
হ্যালো
হ্যাঁ পাপড়ি আসছে তো?
হ্যাঁ তোমাদের গাড়ি স্নেহা , টুবলু আর পাপড়ি কে নিয়ে গেলো৷ দেখো মেয়ে তো একা ছাড়িনা৷
তুমি চিন্তা কোরোনা৷ ঠিক দশটায় আবার ওদের সাথে পৌছে যাবে৷ তুমি আসলে আরও ভালো হতো৷
না গো শরীর টা ভালো না৷ আর তুমি তো বাচ্ছাদের জন্যই পার্টিটা থ্রো করেছো৷
হ্যাঁ গো গার্জেন থাকলে ওরা ভালো এনজয় করতে পারেনা৷ আর চিন্তা কোরোনা এখানে সবাই আছে৷ ঘরের ভিতর তো কোনো সমস্যা নেই ৷
হ্যাঁ সে জানি দুমিনিটের তো পথ তোমাদের আবাসন৷
রাখি?
হ্যাঁ হ্যাঁ আর রুবাই এর জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইলো জন্মদিনের ৷

মনটা কেমন উদাস হয়ে আছে৷ আবার অনমনা মনে প্রশ্ন হাজার৷ থেকে থেকে স্মৃতি গুলো তমাকে টেনে নিয়ে অতীতে ফেলে দিচ্ছে৷ একসাথে তো পড়তো জয় আর তমা৷ ইউনিভার্সিটির দিন গুলো ছিলো লাগামছাড়া ভালোবাসার দিন৷
কখনও গড়ের মাঠ, কখনও ভিক্টোরিয়া৷ অবাধ্য দুটো ঠোঁটের দুষ্টুমি আর ভালোবাসার আবদার৷ কোনদিন ভাবেনি জীবনে আর কেউ আসতে পারে৷ জয় , জয়ন্ত ব্যানার্জী আর তমা তমলিকা মূখার্জী ৷ দুজনে মনে করেছিলো জীবনে শুধু ভালোবাসা থাকবে৷ উত্তাল প্রেম যৌনতা আর বাধা নিষেধের গণ্ডি পেরিয়ে তখন অনেকদুর৷
খুব ভালো ছাত্র জয়ের প্রেমে সুন্দরী তমলিকার হাবুডুবু অবস্থা ৷সবাই বলতো লাভবার্ড৷
বেল বাজার শব্দে তমা চমকে গেলো পৌনে ছটা বাজে৷ তাড়াতাড়ি আসলো??
আারে মিসেস চৌধুরী আপনি ?
হ্যাঁ ভাই বিরক্ত করলাম ৷ বলছি কি রুবাই য়ের পার্টিতে পাপড়ি গেছে??
হ্যাঁ এই তো গেলো৷
আচ্ছা আমার মেয়ে সোনালী গেছে৷ তুমি আনতে যাবে?
না রুবাই য়ের মা বললো পৌছে দেবে৷
বেশ বেশ ৷ ভালো হলো৷ দ্যাখোনা টিপটিপ বৃষ্টি শুরু হয়েছে ৷
চিন্তা করবেন না৷ ঘরের ভিতরে তো অসুবিধা হবেনা৷ আগেরবার ও সুন্দর পার্টি হয়েছিলো৷
আচ্ছা ৷
দরজা বন্ধ করে ধানি রঙের পিওর সিল্কটা পড়ে নিলো তমা৷ চুলে কিছুটা ফুল৷ চোখে গভীর কাজল৷ ব্যলকনি তে কটা মোমবাতি আর ধূপ ধরিয়ে ঘরের আলো গুলো মৃদু করে নিজের হৃপিণ্ডের আর ঘড়ির টিকটিক শব্দ শুনতে লাগলো৷
বাইরে বৃষ্টি আর মনে?? স্মৃতির বরষা৷
বেল বাজতেই বুকটা ধড়াস করে উঠলো৷
মেয়ের বয়স প্রায় দশ ছুঁইছুঁই , অনেকদিন পর মনে হলো যেন সেই যুবতী তমার হৃদপিন্ড৷
কেমন আছো ?
ভিতরে এসো৷
হাতে একগাদা রজনীগন্ধা নিয়ে যে মানুষ টা দাঁড়িয়ে আছে তাকে চেনা যায়না৷ অর্থ সম্পদ আর বয়েস তাকে সৌম্যতা দিয়েছে৷ সেই দামালপনা দৃষ্টি আজ ভারী হয়ে গেছে চশমার তলায়৷
তুমি বললে না তো কেমন আছো ?
সব প্রশ্নের উত্তর এককথায় হয়না জয়৷ বসো৷
নিজেকে সোফায় ছেড়ে দিয়ে জয় আরাম করে বসে৷ নীলাভ সার্টে আরও সুন্দর লাগছে৷
কি দেখছো?
চুল পাকিয়ে ফেলেছো?
হ্যাঁ কাজের চাপ৷ বিভিন্ন জায়গার খাওয়া আর কালো