Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-সম্মাননা

দৈনিক সাহিত্য প্রতিযোগিতা

#ঠুন্ডা

#মিষ্টিমৌ

-"সুমিতা ওকে নিয়ে আর বাড়াবাড়ি করোনা।ওর জন্য পাপানকে তুমি সময় দাওনা, যত্ন করোনা।কতবার বলবো,মা-বাবার বয়স বেড়েছে, ওনাদের পক্ষে পাপানকে সামলানো সম্ভব না।"
-"চয়ন,আমি আগেও যা …


দৈনিক সাহিত্য প্রতিযোগিতা

#ঠুন্ডা

#মিষ্টিমৌ

-"সুমিতা ওকে নিয়ে আর বাড়াবাড়ি করোনা।ওর জন্য পাপানকে তুমি সময় দাওনা, যত্ন করোনা।কতবার বলবো,মা-বাবার বয়স বেড়েছে, ওনাদের পক্ষে পাপানকে সামলানো সম্ভব না।"
-"চয়ন,আমি আগেও যা বলেছি এখনও তাই বলবো,পাপান আমার সন্তান আমি ওকে অবহেলা করিনা।ঠিক তেমনই পিহুও আমার সন্তান ওর প্রতি কোনও অবহেলা আমি মেনে নেবনা।হ্যাঁ, এও সত্যিই যে পাপানকে তোমার মায়ের কাছে রেখে পিহুকে নিয়ে আমি বেরিয়ে যাই,কিন্তু যদি ওনারা ঘরে না থাকতেন এর বিকল্প কিছু আমাকে ভাবতে হবে।প্রয়োজনে তুমি পাপানকে দেখবে।"
-"আমি দেখব!চাকরি করবোনা?"
-"আমিও চাকরি করতাম সন্তান সামলাতে গিয়ে চাকরি ছেড়েছি।আর প্লিজ মাইন্ড ইট মিঃদত্তরায়,আইম ইউর বস আ্যট দ্যাট টাইম।তবুও ছেড়েছি চাকরি।"
-"ঐরকম একটা ঠুন্ডাকে জন্ম দিলে তাই করতে হবে।"
-"পিহু ইজ গিফ্ট অফ গড।ওকে এভাবে বলতে পারোনা তুমি।আমি ওকে সমাজের সবার সামনে প্রতিষ্ঠিত করে ছাড়ব।এই লড়াই পিহুর একার না আমারও।"

***********************************************

কফির কাপে চুমুক দিয়ে সুমিতা চোখের জল মুছলো।স্মৃতির পাতায় এমন কতদিন ছিল যেখানে পিহুকে নিয়ে ওর সঙ্গে চয়ন, চয়নের মা-বাবার এমনকি এই সমাজের সবার সঙ্গে লড়াই করে গেছে সে।তার পাশে কেউ ছিল না তখন।ছোট্ট পাপানকে ছেড়ে চয়নের সংসার ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিল শুধু এইদিনের আশায়।বড় হতেই পাপান তাকে সঙ্গ দিয়েছে, তবু ফিরে গেছে বারবারই ওর বাবার কাছে।

আজ সত্যিই বিশেষ দিন সুমিতার কাছে।এতদিনের লড়াইয়ের ফল আজ সবার সামনে আসবে।আজ পিহু ইন্টান‍্যাশনাল ডান্স কম্পিটিশনে নাচবে।যে পিহুকে জন্মের পর থেকে কেউ ঠুন্ডা,কেউ আ্যবনর্মাল,কেউ হাবা,কেউ পাপের ফল বলে এসেছে,সেই ডাউন সিন্ড্রোমের বাচ্চা পিহু বড় হয়েছে, বয়সন্ধিকাল পেরিয়ে এসেছে।নিজেকে প্রমাণ করতে চলেছে সারাবিশ্বের সামনে-"আমি পিছিয়ে নেই,আমি ঠুন্ডা না, আমিও পারি অন্যান্যদের মত একই কাজ।করতে।"

জন্মের পর থেকে সুমিতা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে পড়েছিল ওকে তৈরি করার জন্য।নাওয়া খাওয়া ভুলে ওকে স্পেশাল স্কুলে নিয়ে যাওয়া, আঁকা, নাচ,ক্যারাটে শেখানো সব করেছে।আজ এত বড় মঞ্চে নাচতে পারা বিশাল ব্যাপার।এখানে হারজিত বড় নয়,অংশগ্রহণ করাই আসল কথা।ভারতের হয়ে যে কজন প্রতিনিধিত্ব করছে তাদের মধ্যে পিহুও একজন।এযেন সত্যিই গর্বের কথা সুমিতার কাছে।

**********************************************

-"পিহু যাও ঈশ্বর ও গুরুজিকে প্রণাম করে মঞ্চে ওঠো।মন দিয়ে তাল লয় মিলিয়ে সব করবে।সোনা আমার।ভাই কিন্তু টিভিতে সব দেখবে আজ।"
-(সুমিতাকে প্রণাম করে জড়িয়ে ধরে আধো স্বরে বলে)"তুমি আমার গড,আই লাভিউ মাম্মা।"

সুমিতার চোখে তখন জল।পিহুর নাম ঘোষনা করেছে,সে মঞ্চে উঠেছে।চাপা উত্তেজনা মনে সুমিতার।তার চোখ বন্ধ।শুধু শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের আওয়াজ কানে ভাসছে।মিনিট আটেক পর সব বন্ধ,শুধু একটাই আওয়াজ কানে এল -"ওয়ান্স মোর,ওয়ান্স মোর।"আবার শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শুরু।কানে ভাসছে করতালির শব্দ।চোখ মেলে দেখে পিহু দর্শকদের মন জয় করে ফেলেছে।মঞ্চ থেকে নেমে মাকে জড়িয়ে ধরে সে।

অনুষ্ঠান শেষে বিজয়ীর নাম ঘোষণার সাথে সাথেই দর্শকদের করতালি।সবার মুখে পিহুর নাম।পিহুকে মঞ্চে ডেকে পুরষ্কৃত করা হচ্ছে।কতশত ক্যামেরার ফ্ল্যাশের ঝলকানিতে পিহুকে আজ এক উজ্জ্বল নক্ষত্র মনে হচ্ছে।সারাবিশ্বের মিডিয়ার সামনে একটাই নাম।সুমিতা চয়ননকে ফোনে বললো-"চয়ন ১৭বছরের ঠুন্ডা আজ বিশ্বদরবারে সবার মন জয় করেছে।ও নিজেকে প্রমাণ করেছে।আমার লড়াই সফল।তুমি হেরে গেছ চয়ন তুমি হেরে গেছ।"

এরপর পিহুকে জড়িয়ে ধরে বলে সে-"মারে এইতো শুরু এখনও অনেকটা পথ চলতে হবে তোকে।আরও অনেক দূরে এগিয়ে যেতে হবে তোকে।"

*********************************************