ফেরিওয়ালা ইন্দ্রাণী ব্যানার্জী
বংশী একজন ফেরিওয়ালা।নবগ্ৰামের রেলের ধারে যে বস্তি গড়ে উঠেছে সেখানেই ওর দরমার ঘর।এখানে যারা বাস করে সবাই পূর্ববঙ্গ থেকে এসেছে।বংশীর পরিবারে ওর বৌ আর দুই ছেলে আছে।অভাব থাকলে খিদেটাও বেশি হয়।সারাদিনে আড়া…
ফেরিওয়ালা
ইন্দ্রাণী ব্যানার্জী
বংশী একজন ফেরিওয়ালা।নবগ্ৰামের রেলের ধারে যে বস্তি গড়ে উঠেছে সেখানেই ওর দরমার ঘর।এখানে যারা বাস করে সবাই পূর্ববঙ্গ থেকে এসেছে।বংশীর পরিবারে ওর বৌ আর দুই ছেলে আছে।অভাব থাকলে খিদেটাও বেশি হয়।সারাদিনে আড়াই কেজি চাল লাগে।
বংশী বলে ও জাতিতে নমঃশুদ্র।ওর চরিত্রে একটা বিনয়ী ভাব আছে।তাই সকলেই ওকে বিশ্বাস করে।এই দেশটাকে নিজের দেশ বলতে কোথায় যেন বাধে ওর।
ওর শৈশব কেটেছে গৈলায়।ওখানে ওর মন পড়ে থাকে।সকাল হলেই বিরাট একটা বাজরা মাথায় নিয়ে বেরিয়ে পরে ফেরি করতে।ফলস্ চুল,মেয়েদের পায়ের আলতা,চিরুণি,ক্লিপ,টিপ,রাবার ব্যান্ড ,আয়না।সব আছে।
এক একটা পাড়ায় এক একদিন টহল।
পাঁচু ঘোষের বৌ সেদিন ওকে বলে তোমার জিনিসের বাজার ছাড়া দাম।পাতি মাল।
শুনে গজগজ করে বংশী।এ ক্যামন কথা কন।
বংশীর ডাকটা ভারি সুন্দর।"আলতা সিঁদুর নকপালিশ টিপ"।
পাড়ার দিদিমণি কে বংশী বড়ো ভালোবাসে।বাড়ির সামনে এসে হাঁক দেয়।"দিদিমণি আসেন নাকি।অ দিদিমণি"।
মাঝে মাঝেই সে দিদিমণি কে বলে আমার ভাইগ্য কত ভালো।আপনার মতো মানুষ আমার টিনের জিনিস কেনেন।
প্রতিবেশী রা হাঁক দেয় ম্যাডাম আপনার বিউটি পার্লার এসে গেছে।
,সেদিন ছিল বুধবার।এইদিন দশটাতে বংশী আসে।প্রতিমার মা আজ ফল কিনতে গেল।প্রতিমার জন্মদিনের পূজা দেবে।ফেরার পথে দেখলো রেলে একজন কাটা পড়েছে।একটা ঝুড়ি মতো কী পরে আছে দেখে ঔৎসুক্য ভরে দেখতে গিয়ে দেখে বংশী।নিথর শরীরটা পরে আছে ওর।
পড়িমড়ি করে ছুটে এসে সকলকে জানায় আমাদের বংশী আর নেই।
এমনি করেই আমাদের হয়ে যায় বংশীরা।