Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-সম্মাননা

#এক_শ্রাবণ_সন্ধ্যায় #অরিন্দম_ভট্টাচার্য্য
সেই লোকটা আজ আবার এসেছিল। সেই শব্দকার। সেই যে -- যে লোকটা রোজ এসে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে অনুভূতির গল্প শোনায়, সেই লোকটা। সন্ধ্যা নেমেছে। আমি ব্যালকনিতে বসে, গরম চায়ে চুমুক দিতে দিতে মুগ্ধ …


#এক_শ্রাবণ_সন্ধ্যায়
#অরিন্দম_ভট্টাচার্য্য

সেই লোকটা আজ আবার এসেছিল। সেই শব্দকার। সেই যে -- যে লোকটা রোজ এসে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে অনুভূতির গল্প শোনায়, সেই লোকটা।
সন্ধ্যা নেমেছে। আমি ব্যালকনিতে বসে, গরম চায়ে চুমুক দিতে দিতে মুগ্ধ দৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছি। বাইরে ঝমঝম ক'রে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিজছে। এল ই ডি স্ট্রীট লাইটের আলোর ছটায় মনে হচ্ছে, বৃষ্টি নয় আকাশ থেকে ঝরে পড়ছে অজস্র হীরের টুকরো। মাটিতে পড়ে ওগুলো ভেঙ্গে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যাচ্ছে। আমি দু'চোখ ভ'রে দেখছি সেই হীরে খচিত প্রকৃতিকে। বৃষ্টি আজ আর থামবে বলে মনে হচ্ছে না। হঠাৎ পেছন থেকে আমার চোখটা চেপে ধরে মিষ্টি পুরুষ কন্ঠে কে একজন বলল -- আমি কে বলোতো?

আমি তো অবাক। এই অসময়ে কে আবার! গলাটা চেনা লাগলেও ভাবতেই পারিনি, ঐ জ্ঞানী লোকটা বাচ্চা ছেলের মতো এমনটা করতে পারে।
আমি বেশ কড়া সুরেই বললাম -- তুমি যেই হ‌ও, সামনে এসো। চোখ চেপে ধরাটা আমার মোটেই পছন্দ নয়। আর এখানে এলে কিভাবে? দরজা খুলল কে?

লোকটা আমার চোখ থেকে হাতটা সরিয়ে, কাঁচুমাচু মুখে সামনে এসে বলল -- বৃষ্টি দেখছো বুঝি?

আমি অবাক হয়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম -- হ্যাঁ। কিন্তু তুমি....

ও বলল -- আসলে ঘরে বসে কিছু ভালো লাগছিলো না, তাই গল্প করতে তোমার কাছে চলে এলাম।

আমি বললাম -- সেটা ঠিকই আছে। কিন্তু আসার আগে আমাকে একটা কল করে নিতে পারতে তো? সবসময় যে আমি গল্প করা বা শোনার মুডে থাকবো, এমনটা তো নাও হতে পারে!

-- সে তুমি ঠিকই বলেছো, কিন্তু এই বৃষ্টিতে আমিই আর একা থাকতে পারলাম না।
আচ্ছা! তোমার কি মনে হয় যে এই বৃষ্টিও কিছু বলতে চায়? তার মনের কোণে জমে থাকা কোনো গভীর বেদনার কথা, তার ভালোবাসার কথা, বা তার অভিমানের কোনো কথা......

-- সেটা যে একেবারেই মনে হয় না, তা নয়। তবে, তেমন কথা কিছু বুঝতে পারি না। ওর সঙ্গে দেখেছি পাতার খুব ভাব, দেখে বড়ো ভালো লাগে। কি সুন্দর! দু'জনে হাত ধরাধরি করে দোল খায়, নৃত্য করে, গান গায়....

-- এ নিয়ে একটা গান লিখেছি। শুনবে?

আমি বললাম -- বেশ তো,  শোনাও দেখি!

লোকটা চোখ বুজে সুর করে গান ধরলো -- 
বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর
পাতার পায়ে বাজলো নুপুর
রিনিঝিনি সকাল দুপুর...

বিভোর হয়ে গান শুনতে শুনতে কখন যেন চোখটা লেগে গেছে। পৌঁছে গেছি সেই ছোটোবেলার বর্ষার কোনো এক দিনে --
শ্রাবণের ধারা অব্যাহত। খালি গায়ে চুপড়ি ভেজা হয়ে আমি আর আমার বন্ধু কাঞ্চন কাঁধ ধরাধরি করে চলেছি আমাদের‌ই গ্রামের এক পিচ্ছিল কর্দমাক্ত রাস্তা দিয়ে। রাস্তার দু'পাশে বর্ষার জলে থৈ থৈ করছে দু'টো বড় বড় পুকুর। কখনো আমি পিছলে যাচ্ছি ও টেনে ধরছে, কখনো ও পিছলে যাচ্ছে, আমি টেনে ধরছি। মোটামুটি চারপায়ের ব্যালেন্সে আছাড় না খেয়ে পা টিপে টিপে টুকটুক করে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। হঠাৎ একটা শব্দ -- খড়াং ধুপ! তাল পড়ার শব্দ।
আমাদের চারটে চোখ জ্বলজ্বল করে উঠলো। দু'জনে দুজনের কাঁধ ছেড়ে ছুট লাগালাম তাল তলার দিকে। তালটা চাই....
আবার দু'টো শব্দ -- ঢিপ.. ঢিপ.. এবার আর তাল নয়, স্লিপ করে আমরা দু'জনে পড়েছি। একটাই তাল নিয়ে দু'জনে কাদায় লপটা-লপটি, টানাটানি, হেঁচড়া-হেঁচড়ি -- এই, আমি এটা আগে ছুঁয়েছি। এটা আমার।
-- না, এটা আমার। আমি আগে ধরেছি।
কেউ কাউকে ছাড়তে চাইছি না। হঠাৎ কাছাকাছি আরো একটা তাল আগের থেকে পড়ে আছে দেখতে পেয়ে দু'জনের মুখেই হাসি ফুটলো।
সমস্ত শরীর কাদাময়, শুধু সাদা সাদা দাঁতগুলোই দেখা যাচ্ছে দু'জনের। তালদু'টো পুকুর পাড়ে নামিয়ে রেখে দুজনেই একসাথে ঝাঁপ মারলাম পুকুরে -- ঝপাং....

ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। মেঘলা আকাশ, বৃষ্টি থেমে গেছে। আশেপাশে কেউ কোত্থাও নেই। সেই লোকটাও নেই। সব উধাও। টুকটুক করে উঠে গিয়ে দেখলাম, দরজাটা আলতো করে ভ্যাজানো। আমি কি দরজাটা লাগাতে ভুলে গেছিলাম? ঠিক মনে নেই।
ছেলেবেলার সেই বৃষ্টির ছোঁয়ায় চোখের পাতা ভিজে গেল। নিজের অজান্তেই গুনগুন করে উঠলাম --
বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর
পাতার পায়ে বাজলো নুপুর
রিনিঝিনি সকাল দুপুর...