Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-সম্মাননা

#দৈনিক_সেরা_কলম_সন্মাননা_প্রতিযোগিতা_পর্ব~২০
#বুলবুলিটাও_মা_হয়েছে
(অনু গল্প)

#সোমা_ত্রিবেদী

আমার ছাদের বাগানের টগর গাছটায় এক জোড়া বুলবুলি বাসা বাঁধলো। নব দম্পতির সুখের নীড় দেখে আমার কেবল সেই বছর পঁচিশ আগের আমাদের ভাড়াবাড়িরতে বিয়…


#দৈনিক_সেরা_কলম_সন্মাননা_প্রতিযোগিতা_পর্ব~২০
#বুলবুলিটাও_মা_হয়েছে
(অনু গল্প)

#সোমা_ত্রিবেদী

আমার ছাদের বাগানের টগর গাছটায় এক জোড়া বুলবুলি বাসা বাঁধলো। নব দম্পতির সুখের নীড় দেখে আমার কেবল সেই বছর পঁচিশ আগের আমাদের ভাড়াবাড়িরতে বিয়ের পরের জীবনটা মনে পড়ে যায়। কতো কথা থাকতো তখন আমাদের। আর এখন কটা বা কথা হয় সারাদিনে। ওরাও কটর কটর করে কতো কথা বলে।

একদিন ওদের ডিম ফুটে দুটো ছানা হলো, ঠিক যেমন আমার রোশনি এসেছিল কোল জুড়ে। পুরুষ পাখিটা কি যত্নটাই না করে। এমন করেই রোশনির বাবাও আমাদের আগলে রাখতো। চোখে হারাতো মেয়েটাকে।

ধীরে ধীরে চোখ ফুটলো গায়ে পালোক গজাল ডানায় জোর পেলো। ওদের দেখলেই বড্ড রোশনির কথা মনে পড়ে। মেয়েটা বড্ড রুগ্ন ছিল। হাতের তেলোয় তুলে রাখতাম ওকে। ধীরে ধীরে বড়ো হচ্ছিল মেয়েটা। গলার স্বরে বদল এসেছিল। এসেছিল মুখে মুখে তর্ক করার সাহস। পাশের পাড়ার সবথেকে বখাটে ছেলেটার প্রেমে পড়েছিল যে কবে আমরা বুঝতেই পারলাম না।

পাখির ছানা দুটো কাছাকাছি উড়তে শুরু করেছিল কখনও কখনও মায়ের নজর এড়িয়েই। একদিন বড়ো পাখি দুটো খাদ্য সংগ্রহে বেরোল আর এসে দেখলো ওদের ছানারা বাসায় নেই। আমার রোশনিতো এভাবেই চলে গিয়েছিল, কাউকে কিচ্ছু না বলে। সে দিন বিকেলে টিউশন থেকে আর ফিরলোনা।

পাখি দুটো ছটফট করছে একবার এগাছ একবার ওগাছ করছে। এক এক বার বাসায় গিয়ে বসছে। আবার কখনও আমার রান্না ঘরের জানালার সামনে বসে ওর নিজের ভাষায় কতো কি বলে চলেছে। রোশনির বাবাও তো সে দিন আত্মীয় বন্ধু পাড়া প্রতিবেশী কারও বাড়ি খোঁজ করতে দ্বিধা করেনি। আর আমি ঘর আগলে বসেছিলাম, কোত্থাও যাইনি। যেন মেয়েটা ফিরে বাড়িতে তালা না দেখে।

না ছানা গুলো খোলা আকাশে উড়ে গেছে আর ফেরেনি বাসায়। আমার রোশনিও আর ফেরেনি আমার কাছে। যে নিজে হারিয়ে যেতে চায় তাকে কেউ খুঁজে পায়না। আমরা থানা পুলিশ হাসপাতাল মর্গ অনেক করেছি। আমার শূন্য বাসায় রোশনি আর ফিরে এলো না।

পাখি দুটো হয়তো আর কিছু দিনের মধ্যেই উড়ে যাবে নতুন জীবনের খোঁজে। হয়তো সব কিছু ভুলেই যাবে। কিন্তু আমরা...... রোশনি আমাদের যে অন্ধকার উপহার দিয়ে গিয়েছে যাবার বেলায়, সেই আঁধার টুকু সম্বল করেই বেঁচে আছি, মেয়েটা যদি ফেরে সেই ক্ষীণ আশা টুকু বুকে নিয়ে।

                   ________________