Page Nav

HIDE

Post/Page

May 19, 2025

Weather Location

Breaking News:

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-সম্মাননা

#লকডাউনের বন্দিজীবনে "নতুনবৌমা" টাইপস ফিলিং...
(পটলার মায়ের গল্প)
#সুস্মিতা

  কি বললেন? বন্দিজীবনের সঙ্গে নতুন বৌমার যোগসূত্রটা কোথায়? তার ওপরে আবার লকডাউন?

 আরে মশাই এসব হল পটলার মায়ের জীবনের গল্প। হ্যাঁ হ্যাঁ মিল খান…


#লকডাউনের বন্দিজীবনে "নতুনবৌমা" টাইপস ফিলিং...
(পটলার মায়ের গল্প)
#সুস্মিতা

  কি বললেন? বন্দিজীবনের সঙ্গে নতুন বৌমার যোগসূত্রটা কোথায়? তার ওপরে আবার লকডাউন?

 আরে মশাই এসব হল পটলার মায়ের জীবনের গল্প। হ্যাঁ হ্যাঁ মিল খানিকটা আছে বৈকি...বন্দিজীবন আর নববধূর জীবনের যোগসূত্রটা অভিজ্ঞজনরা ঠিকই বুঝবেন... কি বলেন? লকডাউনের সঙ্গে সম্পর্কের  ব্যাপারটা বলছি...দাঁড়ান...

 মহিলার মানে পটল কুমারের মায়ের বয়সের কোনও গাছ পাথর নেই। তার জীবনে বিবাহ নামক দুর্ঘ...থুড়ি ঘটনাটি ঘটেছিল সেই কোন হরপ্পা মহেঞ্জোদরোর আমলে।
  শ্বশুরমশাই বিগত হয়েছেন বেশ কয়েক বছর আগে। বর্তমানে প্রবাসী জীবনে আশেপাশে কোনও শাশুড়ি,ভাসুর, জা, ননদও নেই, তবুও পটলার মার আজকাল মানে এই "লকডাউনজনিত বন্দি জীবনে" কেমন যেন "নতুনবৌমা" টাইপের ফিলিং হয়। আসলে ব্যাপারটা হল অবচেতন মনে গেঁথে যাওয়া একটা ফিলিং। না, ঠিক লজ্জাবতীলতা টাইপ নতুনবৌমা ফিলিং নয়। বেশ ভীত, সন্ত্রস্ত ধরণের অনুভূতি।

 গত তিন চারমাস ধরে লকডাউনের বাজারে এই ভয়ের অনুভূতিটা, পটলার মায়ের অবচেতন মনে গেড়ে বসে থাকা একটা ফিলিংয়ের সঙ্গে এমন মিলে যাচ্ছে... যে আজ সকালে...

 আচ্ছা, ব্যাপারটা তাহলে খুলেই বলি।

 আপনাদের সকলের প্রিয় পটলকুমারের মা পুণের একটি হাউসিং সোসাইটির এক ভদ্দরনোকের বাড়িতে কেয়ারটেকারের কাজ করে। কাজ করে আজ বহু বছর ধরে। কেয়ারটেকার বলতে ভদ্দরনোকটির রান্নাবান্না, বাসন মাজা, কাপড় কাচা, ঘর ঝাড়াপোছা...স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখা... সব কাজ।

  সত্যি কথা বলতে লকডাউনের আগে বাসন মাজা আর ঘর পরিষ্কারের জন্য অন্য কাজের লোক ছিল। তা এখন করোনা ভাইরাসের ভয়ে তাদের আসা বন্ধ। সেসব নিয়ে পটলার মায়ের বিশেষ কোনও অভিযোগ নেই। কর্তাবাবুর সংসারকে ও নিজের ভেবে "আপন" মনে করে খুব মনপ্রাণ দিয়েই সব কাজ করে। কর্তাবাবুর একমাত্র সন্তানকেও পটলার মা কোলেপিঠে করে মনের আনন্দে মানুষ করেছে।
    তা এসবের জন্য মাইনেপত্তরের ব্যবস্থা অবশ্য নেই। তবে প্রভিডেন্ট ফান্ড গ্র্যাচুইটি হিসেবে কর্তাবাবু বুড়ো বয়সেও পটলার মায়ের দেখাশোনা করবেন বলে কথা দিয়েছেন। তা ভদ্দরনোক মানুষও খুব খারাপ নয়। পটলার মাকে তিনি হোটেল, রেস্টুরেন্ট, সিনেমা থিয়েটারেও অনেকবার নিয়ে গিয়েছেন। এখন এই লকডাউনের বাজারে আর...
  যাকগে যারা এখনও বুঝে উঠতে পারেননি, তাদের সুবিধার জন্য বলে দিই- "ওই কর্তাবাবুকেই আইনী ভাষায় পটলার মায়ের পতি পরমেশ্বর বলা হয়ে থাকে।"

 ওই দেখ...কোন কথা বলতে কোন কথায় চলে যায় পটলার মা... অশিক্ষিত মানুষ হলে যা হয় আর কি।

  ব্যাপারটা হল, যে হাউসিং সোসাইটিতে বর্তমানে সেই ভদ্দরনোক এবং পটলার মা থাকে, সেখানে লকডাউনের নিয়মের খুব কড়াকড়ি। সেটা সত্যিই খুব ভালো কথা। মানুষের ভালোর জন্যই তো এসব ব্যবস্থা। তো, এইসব ব্যবস্থা সকলে ঠিকঠাকভাবে  মানছে কিনা সেসব দেখার দায়িত্ব সোসাইটির মেইন গেটের সিকিউরিটি গার্ডদের।

  বাইরে থেকে সোসাইটির ভেতরে কেউ আসতে পারবেনা। যদি বা আসে, তার জন্য আছে অনেক নিয়ম কানুন। কে আসছে?কোথা থেকে আসছে?কেন আসছে? সোসাইটির কার সঙ্গে তার কি প্রয়োজন? সবকিছু সিকিউরিটি গার্ড এবং তার ম্যানেজারকে জানাতে হবে। 

 নতুন বিয়ের পরে পটলার মায়ের বাপেরবাড়ির লোকজনদের, ছোটবেলার বন্ধু বান্ধবীদেরও ওর শ্বশুরবাড়িতে আসতে হলে এইসব নিয়মকানুন পেরিয়েই আসতে হ'ত। পরিবারের মঙ্গলের জন্যই অবশ্য। নতুন বৌমার বালিকাবেলা কিম্বা কৈশোরের প্রিয়জনরা তার শ্বশুরকূলের উপযুক্ত কিনা সেটা খুঁটিয়ে দেখতে হবেনা? সবই তো সংসারের মঙ্গলের জন্য...

  সোসাইটির ভেতর থেকেও কেউ চাইলেই যখন ইচ্ছে যেখানে সেখানে যেতে পারবেনা।
  বেরোনোর সময় প্রথমেই গার্ডরা কপালের ঠিক মাঝখানে বন্দুকের নল ঠেকানোর মতো করে জ্বর আছে কিনা মাপবে, তারপরে তাদের জানাতে হবে কোথায় যাচ্ছি, কেন যাচ্ছি,কতক্ষণ বাইরে থাকব এবং কখন ফিরব। সব দিক বিচার বিবেচনা করে তারা অনুমতি দিলে তবেই সোসাইটির বাইরে যাওয়া যাবে।
 সবই অবশ্যই মানুষের ভালোর জন্যই।

 তা এখন কথাটা হল গিয়ে, কে না জানে ক্ষমতা হাতে পেলে মানুষের চেহারা, আচার ব্যবহারও একদম বদলে যায়। যে সিকিউরিটিগার্ড ছেলেপুলেগুলোকে কয়েকমাস আগেও পটলার মা "বাবাবাছা" করে কথা বলত...এখন তাদের রোয়াব দেখে কে...
  ওদের গম্ভীর মুখে জ্বর মাপা, আর পুলিশি জেরার মতো প্রশ্নের বহর দেখে ভয়ে পটলার মায়ের বুক কাঁপতে থাকে।

 আসলে মল, সিনেমাহল বা যেকোনও জায়গায় যে কোনও ধরণের চেকিং এর সময়ই পটলার মায়ের খুব ভয় করে। সব নিয়মটিয়ম মেনে চলেও ওর মনে হতে থাকে "কিছু একটা ঘটবে, ওর সঙ্গেই কিছু একটা ঘটবে এবং পটলার মায়ের শান্তিতে বেড়ানোটা বানচাল হবেই হবে।"

  একেবারে নতুন বিয়ের ঠিক পরেপরেই শ্বশুরবাড়ি থেকে কোথাও বেরোনোর সময়( বিশেষ করে বাপেরবাড়ি যাওয়ার সময়) যেরকম ভয় করত, সেরকম লাগে। যতই সব কাজ, দায়িত্ব কর্তব্য সেরে বাপেরবাড়ি যাও না কেন, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত টেনশন। শ্বশুর শাশুড়ি বাপেরবাড়ি যাওয়ার কারণ সম্পর্কে এমন পুলিশি জেরা করবেন...

 তারপর তারা বিচার বিবেচনা করে দেখবেন যে একটি সদ্য কৈশোর পেরোনো, মা বাবাকে ছেড়ে আসা মেয়ের বাপেরবাড়ির জন্য মনকেমন করাটা, কয়েক ঘন্টার জন্য বাবামাকে দেখতে যাওয়াটা সত্যিই কতটা যুক্তিসঙ্গত। তারপরে অনুমতি মিলতেও পারে আবার নাও মিলতে পারে...

 গত তিন চারমাস ধরে সোসাইটির গেটেও এরকমই চলছে। ভয়টা পটলার মায়ের মনে এমন গেঁথে গিয়েছে...

 আজ সকালে দুধ আনার জন্য গেটের দিকে এগোতেই , যেই না গার্ড ছেলেটি বন্দুকের মতো যন্ত্রটা নিয়ে এগিয়ে এসেছে...নিজের অজান্তেই পটলার মা সালোয়ার কামিজের ওড়নাটা দিয়ে মাথায় ঘোমটা টেনে ফেলেছে...সেই নববধূটিকে যেরকম আচরণের শিক্ষা দেওয়া হয়েছিল আর কি...

 তারপরেই পটলার মায়ের স্পষ্ট মনে হল "এইরে এবার শ্বশুরমশাইকে লম্বা কৈফিয়ত দিতে হবে যে"...
  গার্ডয়ের পেছনেই দাঁড়িয়ে শাশুড়ি থুড়ি সোসাইটির ম্যানেজার, তিনি তারপরে পটলার মায়ের সব জবাবগুলো খুঁটিয়ে বিচার বিবেচনা করে দেখবেন...
  তার সিদ্ধান্তই "শেষ কথা"...

***********