#প্রবন্ধ
#শিক্ষা_প্রসঙ্গ
#অরিন্দম_ভট্টাচার্য
আচ্ছা! পৃথিবীটা গোল বলের মতো, না চ্যাপ্টা থালার মতো?
সূর্য,পৃথিবী, চাঁদ এগুলো কে কার চারদিকে পাক খায়?
আলেকজান্ডার, পুরু, সেলুকাস -- এরা কারা?
ক্রুসেড কি? কখন, কোথায় হয়েছিল?
এ প্লা…
#প্রবন্ধ
#শিক্ষা_প্রসঙ্গ
#অরিন্দম_ভট্টাচার্য
আচ্ছা! পৃথিবীটা গোল বলের মতো, না চ্যাপ্টা থালার মতো?
সূর্য,পৃথিবী, চাঁদ এগুলো কে কার চারদিকে পাক খায়?
আলেকজান্ডার, পুরু, সেলুকাস -- এরা কারা?
ক্রুসেড কি? কখন, কোথায় হয়েছিল?
এ প্লাস বি হোলস্কোয়্যার এর সুত্রটা কি?
উপপাদ্য এক-এ কি বলা আছে?
পচা ডিমের মতো গন্ধযুক্ত গ্যাসটা কোন গ্যাস?
কি! ভাবছেন বুঝি ক্যুইজ চলছে? লেখক মশাই গল্প লেখা ছেড়ে হঠাৎ ক্যুইজ নিয়ে পড়লেন বোধহয়!
তা কিন্তু মোটেই নয়। ওপরের ঐ সহজ সহজ প্রশ্নের উত্তরগুলো আমরা প্রায় সকলেই জানি। সেইটা বলতেই ঐসব প্রশ্নের অবতারণা। কিন্তু দেখুন, ওর চেয়েও অনেক সহজ সহজ প্রশ্নের উত্তর আমরা অনেকেই জানি না।
যেমন:
আমরা নিজের ঠাকুরদা ঠাকুরমা বা দাদু দিদিমার নাম যদিও কোনোক্রমে বলে ফেলতে পারি, কিন্তু ভুল করেও যদি ওঁদের মা বাবার নাম জিজ্ঞেস করা হয়, তাহলেই হয়ে গেল।
নিজের পরিবারের ইতিহাসটাকি বলতে পারবো আমরা? কেমন ছিলেন আমার পরিবারের এক দু'পুরুষ আগের মানুষজন? কি করতেন তারা? কিংবা, আমাদের বাবা মা'র সম্বন্ধেই বা আমরা কতটুকু জানি?
অথচ দেখুন, ওঁদের জিন আমাদের শরীরে রয়েছে। নিজেকে জানতে ওঁদেরকে জানা খুবই জরুরী।
শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যটাই তো নিজেকে জানা এবং জীবন স্রোতে সঠিকভাবে বয়ে চলা।
বিজ্ঞান বলতে সবচেয়ে প্রথম জানা দরকার নিজের শরীর এবং মনটাকে। জানা দরকার শারীরিক এবং মানসিক দিক থেকে সুস্থ থাকতে আমাদের চারপাশের কোন কোন খাবারগুলো একান্তভাবে খাওয়া উচিৎ। জানা দরকার খাদ্য গ্রহনের সাথে সাথে, নৃত্যগীত, খেলাধুলা ও মেডিটেশনের প্রয়োজনীয়তা কোথায়।
আমরা সত্যিই কি জানি এসব?
আমরা জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় মূল জিনিসগুলো ছেড়ে দিয়ে দিনরাত কোন শিক্ষার পেছনে ছুটছি কে জানে!
আমরা শিক্ষিত। কিন্তু খাবার কথা উঠলেই চিকেন ছাড়া আর ফাস্টফুড ছাড়া কিছু চোখে পড়ে না।
আমরা শিক্ষিত। কিন্তু খেলাধুলা বন্ধ করে বদ্ধ ঘরে মোবাইল নিয়ে বসে থাকি অবিরাম।
আমরা শিক্ষিত। কিন্তু শরীরের মতো মনেরও যে পরিচর্যা করা দরকার, জীবনে কখনো ভাবিনি সেকথা।
আমরা শিক্ষিত। কিন্তু সমাজের প্রতি যে আমাদের একটা বিশেষ দায়-দায়িত্ব আছে, মানিই না সেকথা। শুধু সমাজইবা বলি কেন! আমাদেরকে ঘিরে যে মানুষগুলো রয়েছে তাদের জন্যই বা কতটা দায়-দায়িত্ব পালন করছি আমরা?
তবুও জোর গলায় বলবো 'আমরা শিক্ষিত'। গর্ব করে বলবো 'আমরা শিক্ষিত'। তাও না মানতে চাইলে ইংরাজী শব্দ ছুঁড়ে ছুঁড়ে বলব 'আমরা শিক্ষিত'।
ওরে,
শিক্ষিত সে, যাকে দিনরাত ডাক্তার আর ওষুধের দোকানে চক্কর কাটতে হয় না।
শিক্ষিত সে, যার মা বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে দিন কাটাতে হয় না।
শিক্ষিত সে, যার কাছে ঘর একটা মন্দির।
শিক্ষিত সে, যে নেশাগ্রস্ত অবস্থাতেও মানুষের সম্মান দেয়।
শিক্ষিত সে, যে ঘন ঘন ডিপ্রেশনে পড়ে না।
শিক্ষিত সে, যার কাছে গাড়ি বাড়ি পোশাক আশাকের থেকে মানুষের দাম অনেক বেশী।
আমরা যদি ঠিকমত শিক্ষিত না হই তাহলে তার জন্য আমাদের বাবা মা দায়ী। আবার ঠিক একই রকমভাবে আমাদের সন্তানরাও যদি প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত না হয়, তাহলে তার জন্য আর কেউ নয়, স্বয়ং আমরাই দায়ী হবো।
সন্তানের শিক্ষার প্রধান দায়িত্বটা মা বাবার নিজের হাতেই তুলে নেওয়া উচিৎ। শুধু স্কুলের পড়ার বই নয়, নিজেদের জীবনের অভিজ্ঞতা লব্ধ জ্ঞানগুলো প্রথম দিন থেকে একটু একটু সন্তানের মধ্যে ঢোকাতে থাকা উচিত। তার জন্য যদি কোনো কোনো দিন স্কুলের পড়াও ব্যহত হয়, তাও ভালো।
তবেই, বেলাশেষের শেষদিনটায় আর চোখের জল মুছতে মুছতে নয়, হাসিমুখে যেতে পারবেন সমস্ত বাবা মা-ই।