অনন্য সৃষ্টি সাহিত্য পাক্ষিক প্রতিযোগিতা পর্ব-০১
বিষয়- উন্মুক্ত
বিভাগ- গল্প
ছোটোগল্প- লাল গোলাপ
সুমিতা চৌধুরী
তাং-২২\০৬\২০২০
সারা বাড়ি যেন গোলাপের গন্ধে ভরে আছে। কিন্তু মৃণাল ছাড়া সেই গন্ধ কেউ পাচ্ছে না। যদিও তেমন কেউ থাকে না…
অনন্য সৃষ্টি সাহিত্য পাক্ষিক প্রতিযোগিতা পর্ব-০১
বিষয়- উন্মুক্ত
বিভাগ- গল্প
ছোটোগল্প- লাল গোলাপ
সুমিতা চৌধুরী
তাং-২২\০৬\২০২০
সারা বাড়ি যেন গোলাপের গন্ধে ভরে আছে। কিন্তু মৃণাল ছাড়া সেই গন্ধ কেউ পাচ্ছে না। যদিও তেমন কেউ থাকে না এই বাড়িতে এখন আর। মৃণাল আর তার সবসময়ের কাজের লোক সহদেব ছাড়া। রিটায়ার্ড করার পরপরই অমৃতা ছেড়ে চলে গেছে মৃণালকে। নাঃ, বোধহয় ছেড়ে যায়নি। তার মারণরোগ তাকেই কেড়ে নিয়েছিল মৃণালের থেকে। খুব ইচ্ছে ছিল অমৃতার, মৃণালের অবসরকালীন সময়গুলো মনের মতো করে দুজনে মিলে একান্তে কাটানোর। হামেশাই সে এই বিষয়ে নানা পরিকল্পনার কথা মৃণালকে বলতো। কিন্তু হঠাৎই এই রোগের প্রাদুর্ভাব আর তারপর খুব দ্রুত উত্তরোত্তর এই কালরোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় কোনো পরিকল্পনাই বাস্তবায়িত হয়নি আর।এমনকি ওদের একমাত্র মেয়ে মৌয়ের বিয়েটাও সময়ের কিছু আগেই একরকম তাড়াহুড়ো করে সেরে ফেলতে হয়েছিল। মৌকে নিয়েও অমৃতার মনে হাজার স্বপ্নের জাল বোনা ছিল। তাই সবার বারণ স্বত্তেও অসুস্থ শরীরেই মৌয়ের বিয়ে নিয়ে কম মাতামাতি করেনি সে। সেই ধকল শরীর আর সইতে পারেনি। মৌয়ের বিয়ের একমাস যেতে না যেতেই অমৃতা চলে গেল সবাইকে ছেড়ে চিরতরে দুরারোগ্য ব্লাড ক্যান্সারে। মৃণাল একেবারে একা হয়ে গেল বাকী জীবনের জন্য।
শেষের দিনে মৃণাল আর সামলাতে পারেনি নিজেকে। চোখের জলও বাধ মানেনি তার। অমৃতার শিথিল হাত দুটো নিজের মুঠোয় নিয়ে বলে উঠেছিল, " তুমি যে বলেছিলে, আমায় ছেড়ে যাবে না। একসঙ্গে থাকবে, আমার পাশে থাকবে আজীবন ।এতোদিন ধরে এতো পরিকল্পনার কথা বলে আজ আমায় এভাবে একা ফেলে চলে যেতে পারো না তুমি কিছুতেই ।" কথাগুলো বলতে বলতে কথার মতোই অশ্রু ঝরে পড়ছিল মৃণালের চোখ থেকে তার মুঠোয় ধরা অমৃতার হাতে। অমৃতার তখন ভীষণ শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল, প্রাণবায়ু বেরোতে গিয়েও আটকে ছিল বোধহয় শেষ কটা কথার জন্য। অমৃতা জলভরা দুচোখের ঘোলাটে দৃষ্টিতে মৃণালের দিকে তাকিয়ে জড়ানো গলায় শুধু এটুকুই বলতে পেরেছিল, "দেখা হবে। যাবো না ছেড়ে। " তার প্রায় সাথে সাথেই সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিল মৃণালের হাতের মুঠোয় নিজের হাত রেখেই।
যখন অমৃতা বুঝেছিল তার আয়ূ একেবারে শেষের পথে,তখন সে মৃণালকে বারবার একটা কথা খুব বলতো," সবাই তো সাদা ফুল দেবে, তুমি একটা লাল গোলাপ অন্তত দিও আমায়। "
লাল গোলাপ অমৃতার ভীষণ প্রিয় ছিল । হ্যাঁ, প্রেম করেই বিয়ে হয়েছিল মৃণাল আর অমৃতার। তবে অতোবছর আগে গোলাপ দিবস ,বা প্রেমদিবস বলে তেমন কিছু ছিল না। তবে গোলাপ তো চিরকালই প্রেমের প্রতীক । তাই মৃণাল মাঝে মাঝেই তাকে লাল গোলাপ উপহার দিত। আর অমৃতার লাল গোলাপ ভীষণ প্রিয় জানার পর থেকে সেই ধারা বজায় ছিল বিয়ের পরও,এতোবছর ধরে একইভাবে প্রায়।
মৌ মায়ের এই শেষ ইচ্ছাটা জানতে পেরে মৃত্যুরদিনও তার স্বামীকে দিয়ে লাল গোলাপ এনে বাবার হাতে তুলে দিয়েছিল সর্বসমক্ষে। যা, মৃণাল অমৃতার ঠিক বুকের উপর রেখে কান্নায় ভেঙে পড়েছিল ।
আজ অমৃতার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী । তবে কি মৃণালকে তার গোলাপের কথা মনে পড়ানোর জন্যই অমনভাবে অমৃতা এসেছে আজ গোলাপের গন্ধ মেখে? মৃণাল আজ নিজে হাতেই খুব সকালে সবার সব কাজ শুরু হওয়ার আগেই কয়েকটি লাল গোলাপ কিনে এনে অমৃতার ছবির নীচে রাখল ভালোবাসার অর্ঘ্যরূপে। আর ঠিক তখনই, মৃণালের হাতে কয়েকফোঁটা অশ্রু ঝরে পড়ল জানি কোথা থেকে। মৃণাল হকচকিয়ে অমৃতার ছবির দিকে তাকাতেই যেন ঘোর লেগে গেল। দেখল, অমৃতার দুচোখ জলে ভরা আর মুখে অম্লান হাসি । আর কোথা থেকে যেন এক শীতল বাতাস ফিসফিসিয়ে কানে কানে বলে গেল, " আমি আছি তোমার পাশেই। আমি কথা রেখেছি, যেমন তুমি রেখেছো, ভালবাসার লাল গোলাপে।" ⚘⚘⚘⚘
🌷পাক্ষিক সেরা গল্প 🌷