Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

অনন্য সৃষ্টি সাহিত্য পরিবার এর পাক্ষিক সেরা গল্প সম্মাননা

পাক্ষিক প্রতিযোগিতা পর্ব - ০১
বিভাগ-গল্প
বিষয়-  উন্মুক্ত
শিরোনাম -  ক্ষমাহীন ভুল
কলমে - প্রদীপ সেন
তারিখ- ২৪/০৬/২০

          ছেলেটা এ পাড়ায় ভাড়াটিয়া হয়ে এসেছে এক সপ্তাহ হলো। সাতাশ- আঠাশের ছেলেটি বোধয় বেচেলার। তা না হলে নিশ্চয় …


পাক্ষিক প্রতিযোগিতা পর্ব - ০১
বিভাগ-গল্প
বিষয়-  উন্মুক্ত
শিরোনাম -  ক্ষমাহীন ভুল
কলমে - প্রদীপ সেন
তারিখ- ২৪/০৬/২০

          ছেলেটা এ পাড়ায় ভাড়াটিয়া হয়ে এসেছে এক সপ্তাহ হলো। সাতাশ- আঠাশের ছেলেটি বোধয় বেচেলার। তা না হলে নিশ্চয় ছেলেটাকে হাত পুড়িয়ে নিজের রান্না নিজেকে করতে হতো না। অন্তত হেনা ও তার মায়ের মধ্যে বিস্তর আলোচনার পর এই সম্ভাবনায় সিল মোহর পড়েছে।
    হেনা কলেজের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রী। ও বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। ওর বাবা প্যারামেলিটারি, বি এস এফ
-এ চাকরি করে। মা-মেয়ে একা থাকে। ছেলেটা ওদের বাড়ির লাগোয়া দোতলা বাড়ীটার উপর তলায় থাকে। দক্ষিণের বারান্দায় বসে ছেলেটা রোজ সকালে হা-করে হেনাদের বাড়ির দিকে তাকিয়ে থাকে। হেনার মা হেনার চাইতে আঠারো বছরের বড়ো হলেও মা মেয়েকে মনে হয় দুই বোন। হেনা প্রায়ই টিপ্পনি কাটে য়ু আর লুকিং টু ইয়ং,  মা। তোমার বয়সে আমি তো বুড়িয়ে যাবো।
  মা টোল গালে হাসেন। সেই মা যখন সকালে লালপেড়ে শাড়ি পরে বাগানে ফুল তুলতে যায় সাজি হাতে, দোতলার বারান্দায় বসে থাকা ছেলেটির সব অ্যাটেনশন হেনার মায়ের উপর। চোখ দুটো যেন কম্পাস। হেনাই প্রথম লক্ষ করে ব্যাপারটা। মাকে ইশারায় বুঝিয়ে দেয় দোতলা থেকে দুটো বাজপাখির চোখ এদিকে ফিক্সড্।
   হেনার মায়ের অস্বস্তি বোধ হয়। মেয়ে মাকে ক্ষ্যাপায়। সত্যিই তুমি ম্যাগনেট। বাবা সাধেই তোমার প্রেমে পড়েন নি। য়ু ডিজার্ভ টু বি লাভড। হেনা মনে মনে হিসেব কষে বুঝে উঠতে পারে না ওর প্রতি ছেলেটা এতোটা উদাসীন কেন। অথচ হেনা প্রকৃত সুন্দরী। কলেজে ওর প্রেম প্রার্থীর সংখ্যা নেহাত কম তো নয়। ছেলেটি সেই হেনাকেই ইগনোর করে তার মায়ের পেছনে পড়েছে!
  ব্যাপারটা দিন দিন বেড়েই চলেছে। হেনার মায়ের বিষয়টা মোটেই ভালো লাগছে না। তিনি এর একটা বিহিত চাইছেন। হেনা এই দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নিল। দায়িত্ব পড়লো পাড়ার ক্লাবের ছেলেদের হাতে। একদিন ওরা দল বেঁধে ছেলেটিকে শাসিয়ে দু'চার ঘা বসিয়ে সাত দিনের আলটিমেটাল দিয়ে গেলো। এই সময়ের মধ্যে ছেলেটাকে এ পাড়া ছাড়তে হবে। আদারওয়াইজ সিরিয়াস কনসেক্যুুয়েন্স এর জন্য সে যেন প্রস্তুত থাকে।
   তিন দিনের মাথায় ছেলেটা তল্পিতল্পা গুটিয়ে বাড়ি ছাড়লো কাক ডাকার অনেক আগেই যখন সমস্ত পাড়া ঘুমে আচ্ছন্ন। হেনা ঘুম থেকে উঠেই দোতলার দরজায় বড়ো তালা ঝুলতে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে মাকে বলে, মা, চিচিং বন্ধ। পাখি ফুরুৎ।
    একটু বেলা হতেই হেনা লেটার বক্সটা খুলল। একটা বড়ো লেফাফা ছিল। ঠিকানায় প্রেরকের নাম লেখা আছে 'ছেলেটা'। যাকে পাঠানো হয়েছে 'মা'। হেনা ঘরে গিয়ে মা-র হাতে লেফাফাটা দিল। একটা ছবি। হেনার মায়ের। অসাধারণ অঙ্কন। হুবহু হেনার মায়ের চেহারা। লাল পেড়ে শাড়ি পড়া। কপালে সিঁদুরের ফোটা। সিঁথিতে সিঁদুর টানা। মুখে মিষ্টি হাসি, বাঁ গালে টোল। ছবির নিচে বড়ো করে লেখা "মা"। তারও নিচে লেখা অঙ্কনে ছেলেটা। সঙ্গে ছোট্ট একটা চিরকুট।
  "আমি অনাথ আশ্রমে বড়ো হয়েছি। জানি না আমার মা বাবা কে। মনে মনে মায়ের মূর্তি কেমন হয়, ভেবেছি। আপনাকে লালপেড়ে শাড়িতে ও সাজি হাতে দেখে মনে হলো মায়ের ছবি বুঝি এমনটাই হয়। তাই ছবিটা এঁকে ফেললাম। যদি অপরাধ করে থাকি, ফরগিভ মি। - ইতি ছেলেটা।
  হেনার মা ধপ করে সোফায় বসে পড়েন। থর থর করে হাত কাঁপছে। চোখের দুকোণ চকচক করছে। হেনা মায়ের হাত থেকে ছবি ও চিরকুটটা নিজের হাতে নিল। সেও ধপ করে সোফায় বসে মাথাটা ঝুঁকিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো। সেম্পু করা চুলে ওর মুখটা ঢেকে গেলো। কীজানি হেনার মনেও আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে কি না!


🌷পাক্ষিক সর্বোত্তম গল্প 🌷