দলহারা পাখিটা প্রদীপ সেন আগরতলা, ০৪/০৮/২০
লোকে তাকে ওনামেই ডাকে- দলহারা পাখি। চারদিকে যখন পায়ে-পা মিলিয়ে চলার হিরিক বদান্যের ডালি উপুড় করে ঝুলিতে ভরার তোড়জোড়, আত্মভোলা গায়কের মতো দলহারা পাখিটা নিজের স্বরলিপি ধরে ধরে মুখরা অন্তরা…
দলহারা পাখিটা
প্রদীপ সেন
আগরতলা, ০৪/০৮/২০
লোকে তাকে ওনামেই ডাকে-
দলহারা পাখি।
চারদিকে যখন পায়ে-পা মিলিয়ে চলার হিরিক
বদান্যের ডালি উপুড় করে ঝুলিতে ভরার তোড়জোড়,
আত্মভোলা গায়কের মতো
দলহারা পাখিটা নিজের স্বরলিপি ধরে ধরে
মুখরা অন্তরা গেয়ে চলে মনের আনন্দে।
চোখ-কান বুজে সে যখন তন্ময় হয়ে গেয়ে চলে
খেয়াল থাকে না সুর তাল লয়
শ্রোতাহীন আসরে সে-ই শ্রোতা, সে-ই যে গায়ক।
তৃপ্ত মনে পথে যেতে যেতে দেখে
আসর মাতানো জলসায় শ্রোতার মিছিল
রাজা বসে সিংহাসনে, মুখে দীপ্ত হাসি
নিচে বসে কৃপাধন্য গায়ক গাইছে রাজ প্রশস্তি।
সাধু সাধু রব ওঠে, হাততালি মুহুর্মুহু।
দু'হাতে ছড়ানো অর্থ কুড়িয়ে নেয় স্তাবকের দল।
রাজভৃত্য দু'পা এগিয়ে এসে বলে-
দলহারা পাখি যে! এসো, এসো
চাও তো সুযোগ করে দিই?
তোমার কলম একবার ছড়িয়ে দেখুক রাজপ্রশস্তি
ঝুলি ছিঁড়ে যাবে দ্যাখো কৃপালব্ধ ধনে।
তুমি হরিষেণ হয়ে দ্যাখো একবার,
লিখে ফেলো আর একটা হর্ষচরিত
দেখবে, আজকের ওই হর্ষবর্ধন দেখিয়ে দেবে
দান কাকে বলে। এই যে আসরটা দেখছো-
এ হলো এ যুগের দানমেলা।
চাইলে তুমি সন্ধাকর নন্দীও হতে পারো,
লিখে দাও আর একটা রামচরিত।
ওই যে দেখছো রামপাল বসে আছেন আসরে
মুক্ত হস্তে ঢেলে দেবে কৃপাভান্ডের ধন।
দলহারা পাখি ডাগর ডাগর চোখে
চক্রব্যূহ ভেদের রহস্য শোনে অবাক বিস্ময়ে।
মুখে তার রা ফোটে না।
আশান্বিত রাজভৃত্য আরো দু'পা এগিয়ে এসে বলে-
চাইলে এ সুযোগে আবুল ফজল হতে পারো
তোমাকে সুযোগ বুঝে আইন-ই-আকবরি লিখতে হবে।
এইবেলা কলমের কথা শুনে না চলে
তোমার কথাগুলো ওকে দিয়ে বলিয়ে নাও।
দিন ফিরে যাবে, হয়ে যাবে মালামাল
দেখবে চর্ব-চোষ্য-লেহ্য-পেয় তোমার নাগালে।
দলহারা পাখিটা থলে থেকে কলমটা হাতে নিয়ে
কয়েক মুহূর্ত কী যেন ভাবলো
তারপর কলমটা কপালে ঠেকিয়ে বিড়বিড় করে
কী যেন বলতে বলতে আপন পথে চলে গেল।
চেলা গিয়ে রাজাকে বোঝায় -
লোকে মিথ্যে বলেনা
কানাকে পথ দেখাতে তর্জনী তোল আর বৃদ্ধাগুলি
দুয়েতে কোনো ফারাক পড়ে না।
পারিষদ দল কোরাস ধরে, বটেই তো, বটেই তো।