#আকাশ_পথ_ক্লাসরুম
আজ তিন্নি ছাদে একা একা পায়চারি করছিল--লক ডাউনে বাড়ি বসে বসে সে বোর ফিল করছে।ক্লাসরুম পড়াশুনা অনলাইনে হয়!ভীষণ এক বিরক্তি লাগা মন নিয়ে ধ্যুস ভাল্লাগেনা বলে---ছাদে চলে যায়। যদি কিছুক্ষণ পায়চারি করলে মনটা ভালো লাগে…
#আকাশ_পথ_ক্লাসরুম
আজ তিন্নি ছাদে একা একা পায়চারি করছিল--
লক ডাউনে বাড়ি বসে বসে সে বোর ফিল করছে।ক্লাসরুম পড়াশুনা অনলাইনে হয়!
ভীষণ এক বিরক্তি লাগা মন নিয়ে ধ্যুস ভাল্লাগেনা বলে---
ছাদে চলে যায়। যদি কিছুক্ষণ পায়চারি করলে মনটা ভালো লাগে, কিছু খেলনাপাতি চিলেকোঠার ঘর থেকে এনে.. ছাদে পাতিয়ে বসে খেলতে। হঠাৎ লক্ষ্য করে কাঁচপোকার মতন একটা পোকা ;কিন্তু সাইজে একটু বড়ো, সে ভালো করে পোকাটা লক্ষ্য করতে থাকে।
তার পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা অনেকটা গভীর।
সে দেখে পোকার ডানা দুটো খুলে গিয়ে দু'জন
মানুষের মতন কারা বেড়িয়ে এলো,ঠিক এখনকার ডক্টর, নার্সেদের মতন ড্রেস পরা।
তিন্নি ভয় পেয়ে চিৎকার করতে যাচ্ছিল,
তারা থামিয়ে দিয়ে বললো--
ভয় পেওনা তিন্নি, আমরা তোমার বন্ধু।
তোমার মন খারাপ দেখে তোমাদের এই ছাদে আমরা নেমে পড়লাম, আসলে আমরা এই আকাশ পথ দিয়েই যাচ্ছিলাম..।
এসো, কিছু গল্প করি, তোমাকে মন খারাপের কারণ গুলো বলি, কিছু কথা জানাই।
এই যে পৃথিবীতে তোমরা নিজেদের যতটা মহান এবং বুদ্ধিমান মনে করো হয়তো ততটা নও।
যদি প্রকৃতই বুদ্ধিমান হ'তে তাহলে' কী এইভাবে, বাস্তুতন্ত্র কে ধ্বংস করতে? তোমরা বিজ্ঞান সাধক, কিন্তু প্রকৃত সাধনা কী জানো? তিন্নি ঘাড় নাড়ে না জানিনা। প্রকৃত সাধনা হ'লো বেঁচে থাকা আর বাঁচিয়ে রাখা, প্রকৃতি কে বাঁচিয়ে রেখে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখা।
অগ্রগতি মানে ধ্বংস নয়, আচ্ছা, আচ্ছা, ভারি, ভারি, কথা হয়ে যাচ্ছে,। তুমি এখন খুব ছোট এইসব বুঝবেনা।
চলো,তোমাকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসি, মন ভালো হয়ে যাবে।
কোথায়!!
এই যে তোমরা টেলিফোটো লেন্স দিয়ে দূর কে কাছে আনো, একবার কাছে গিয়ে তাদের দেখবে চলো...
এই মহাবিশ্ব কত বিশাল.. কত নক্ষত্র রয়েছে,
কত কিছু জানার আছে, তুমি যাবে?
তিন্নি বলে কী করে!! এসো আমাদের এই মহাকাশ যানে,কিন্তু মা যদি খোঁজে!!
আরে আমরা তোমাকে দশ মিনিটে অনেকটাই ঘুরে দেখিয়ে দেবো। একঘেয়েমি কাটাতে উঠে এসো দেখি আমাদের এই যানে।
না, না, চিন্তা করো না, উঠে এসো।
তিন্নি চড়ে বসে, আজব প্রাণীদের সেই যানে,
মুহুর্তে তারা পোঁছে যায় আকাশের নক্ষত্র সীমানায়, তিন্নি অবাক বিস্ময়ে দেখতে থাকে মহাকাশ। তিন্নি চিৎকার করে বলে উঠে...
দ্যাখো, দ্যাখো, ওটা কী?
ওটা? ওটা " পারসিউস তারকামন্ডলী".
এটা আকাশের উত্তর দিকে থাকে,
এদের নাম, ক্যাসিওপিয়া, আ্যলগল,আর কৃত্তিকা,এরা কয়েকটি তারার সমষ্টি,
এদের সঙ্গে যোগ হয়েছে একটি নবতারা।
নবতারা বা নোভা এরা নতুন তারা নয়।
যখন অনুজ্জ্বল তারায় বিস্ফোরণ ঘটে তখনই এদের উজ্জ্বলতা বেড়ে যায়, আর তোমরা তখন দেখতে পাও।কখনো কখনো এরা খুব উজ্জ্বল
হয়ে উঠে, তখন বলে সুপার নোভা, যা খুবই
কম দেখা যায়। তিন্নি মুগ্ধ হয়ে শুনতে ও দেখতে থাকে।
তিন্নি এবার চলো, আরও ওইদিক টা ঘুরে দেখিয়ে আনি তোমাকে।
এই দ্যাখো সপ্তর্ষিমণ্ডল, তিন্নি হাততালি দিয়ে বলে উঠে জানি,জানি, ভূগোল বইতে পড়েছি।
বাহ্!!
এদের নাম জানো? জানতাম, এখন মনে নেই।
এরা হলেন সমস্ত ঋষিদের নামে, ক্রতু, পুলহ,
পুলস্ত, অত্রি, অঙ্গিরা, বশিষ্ঠ, মরীচি, আর বশিষ্ঠর পাশেই অনুজ্জ্বল তারার নাম অরুন্ধতী।
বাঃ,বাঃ, তিন্নি আহ্লাদে ডগমগ।
শোনো তিন্নি, আমাদের সৌরজগতের পাঁচটি গ্রহ খুবই উজ্জ্বল, এই পাঁচটি গ্রহ হ'লো বুধ,শুক্র, মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনি। আরও তিনটি গ্রহ আছে, তবে এরা এত উজ্জ্বল নয়, এদের নাম ইউরেনাস, নেপচুন আর প্লুটো। তুমি বড়ো হও অনেক কিছু জানতে পারবে। মহাকাশ সম্পর্কে জানার শেষ নেই। "স্টিফেন উইলিয়াম হকিং" নাম শুনেছো?
না,শুনিনি,
এই একটি নাম, মনে হলে মনে পড়ে যায়, চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ-তারার কথা, মন পড়ে ব্রহ্মাণ্ডের কথা, 'বিগ্ ব্যাং' 'ব্ল্যাক হোল' 'গ্যালাক্সি' র কথা।
স্টিফেন হকিং, ---- বিজ্ঞান জগতের বিখ্যাত নাম।
তোমাকে একদিন এনার জীবন কাহিনী শোনাবো।
এইবার চলো,চাঁদ মামার কাছে, পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ, চাঁদে জল,বাতাস, কিম্বা অন্য কোন গ্যাস নেই, চাঁদে দিনের তাপমাত্রা 125°C আর রাতে -160°C,, মানুষ চাঁদে এসেছিল তুমি কী জানো।
হ্যাঁ, জানি,জানি, নিল আমর্স্ট্রং 1969 সালে।
বাঃ; আমাদের তিন্নি তো অনেক কিছু জানে--
এবার দক্ষিণ আকাশের দিকে দ্যাখো তিন্নি,
ও-ই যে তারকামন্ডলী ওর নাম কালপুরুষ,
এর দুটি উজ্জ্বল তারা যে দেখছো ওদের নাম
আর্দ্রা ও বানরাজা, এর একদম নিচে বাঁ দিকে
যে তারাটা দেখছো ওর নাম লুব্ধক।
কালপুরুষের কাছাকাছি নীহারিকা আছে, তার গল্প আর একদিন বলবো, না, না, আজই শুনবো, আরও ঘুরবো, বাঃ, বাড়ি ফিরতে হবে না ! বায়না করলে হয়।
না'হলে যে তোমার মা আবার চিন্তা করবেন।
তবে তিন্নি,এই পৃথিবীর বুকে কত কী রয়েছে
তার কতটুকুই বা আমরা জানি।
এই মানুষই একমাত্র বুদ্ধিমান জীব, আবার আগাগোড়া ষ্টুপিডও বলতে পারো।
পৃথিবী তে থেকেও পৃথিবীর ক্ষতি মানুষই তো করছে,
প্রাণীজগৎ ৮৩%, গাছপালা প্রায় ৫০% ধ্বংস করে ফেলেছে। এই ধ্বংসের ফলে জীববৈচিত্র্যের কত ক্ষতি হচ্ছে, তারা যাবে কোথায়!! তোমাদের বোকামি তোমাদের ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে...
ধরিত্রী মা তোমাদের আগলে রাখতে চান,
তবে তোমাদেরও নিজেদের পরিবর্তন করতে হবে। আজ তোমরা যেমন মন খারাপ করে আছো, পৃথিবীও তেমন মনমরা হয়ে আছে।
তাই তিন্নি বলছি কি, ধ্বংস নয়, আগলে রাখতে হবে। তবেই না সভ্য মানুষ আরও এগিয়ে যাবে..।
এ-ই তিন্নি, তিন্নি, ওঠ ওঠ , অনলাইন ক্লাস শুরু
হবে এক্ষুনি, মায়ের ডাকে তিন্নির ঘুম ভাঙে।
বুকের উপর ভূগোল বই খোলা। ভূগোল বইয়ের মলাট উল্টে তন্নতন্ন খোঁজে তিন্নি---
চারদিকে তাকাতে থাকে, দ্যাখে ভীনগ্রহের
দুইবন্ধু তিন্নি কে টা,টা, জানিয়ে বিদায় নিচ্ছে ---
তিন্নি চুপ করে বসে থাকে, মা বলে কীরে দাঁত ব্রাশ হ'লো? ক্লাস শুরু হয়ে যাবে -----।
#শ্বেতা_ব্যানার্জী
১৬,৮,২০.