মৃন্ময়ী গল্পপারমিতা চ্যাটার্জি ১৫/০৮/২০
অনেক দিন আগের আমার ঠাকুমার মুখে শোনা এই কাহিনি। আমাদের দেশ ছিল মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জে। তখনও দেশ স্বাধীন হয়নি, ঘরে বাইরে বিপ্লবী আর পুলিশের গুলি চলছে চারিদিকে। ধোঁয়া বারুদের গন্ধে ভরে থাকতো …
মৃন্ময়ী
গল্প
পারমিতা চ্যাটার্জি
১৫/০৮/২০
অনেক দিন আগের আমার ঠাকুমার মুখে শোনা এই কাহিনি।
আমাদের দেশ ছিল মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জে।
তখনও দেশ স্বাধীন হয়নি, ঘরে বাইরে বিপ্লবী আর পুলিশের গুলি চলছে চারিদিকে। ধোঁয়া বারুদের গন্ধে ভরে থাকতো ছোটো শহরটা। জিয়াগন্জ বিপ্লবীদের এক অন্যতম আস্তানা ছিল। ভাগীরথী নদী বয়ে গেছে শহরের প্রায় মধ্যে দিয়ে, মাঝি মোল্লাদের নৌকা ঘাটে বাঁধা থাকতো, আর মাঝিরা ছইয়ের ভিতর লুকিয়ে বিপ্লবীদের নিয়ে, " পরান মাঝি রে, ও তোর ঘর কোথায় আছে রে" এইরকম গান গাইতে গাইতে নিরাপদ জায়গায় তাদের পৌঁছে দিত। জিয়াগন্জের অনেক সম্ভ্রান্ত মহিলাও গোপনে, গহনা, টাকা দিয়ে এদের সাহায্য করতেন, অনেক পথ চলতি বিপ্লবী প্রচণ্ড ক্ষুধায় কাতর হয়ে এরকম কোনো সহৃদয়া দিদি বা মায়ের হাতের অন্ন খেয়ে আবার গোপনে পালিয়ে যেতেন।
মৃন্ময়ী ছিলো জিয়াগন্জের এক মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। মৃন্ময়ীর জীবনের সমস্ত প্রেরণা ছিল তার জ্যাঠামশাই। তিনি পুলিশের উচ্চপদস্থ পদে ছিলেন, চাকরিটা তাকে করতে হতো নেহাতই পরিবার চালানোর দায়বদ্ধতায়। অল্পবয়েসে বাবা মারা যাবার পরে এ চাকরি টা নিতে বাধ্য হন অনাহার ক্লিষ্ট মা ও ছোটো ভাইবোনেদের মানুষ করার তাগিদে। মৃণ্ময়ীর ঠাকুরদাদার করে যাওয়া বাড়িটা বেশ বড়ো ছিল, কিন্তু প্ল্যান সেরকম গোছানো ছিলোনা, এখানে একটা ঘর তো আরও বেশ অনেক দূরে আর একটা ঘর, রান্নাঘরের জন্য ছিল উঠোন পেরিয়ে একটা মাটির দাওয়া, ওপরে টালির চাল, তার ওপর দিয়ে উঠে গেছে নানারকম, শাকের গাছ। ইতস্তত ছড়ানো ছিটানো কয়েকটি চালাঘর মতান, সব ঘরের মাথা দিয়েই গেছে কোন না কোন গাছ। আবার অন্দরের উঠনে বেশ কিছু সুন্দর ফুলের গাছ ছিল।
ভাইদের মানুষ করতে গিয়ে জ্যাঠামশাইয়ের আর বিয়ে করা হয়নি। কোন ভাই স্কুল মাস্টার, কেউ বা মোক্তার, আবার কেউ বা জমির ধান চাষের ব্যাবস্থা করতো। মোটামুটি নিজেদের আয় তারা দাদার হাতেই তুলে দিতো,খুব সামান্য টাকাই দাদা ভাইদের কাছ থেকে নিয়ে বাকি টাকা ওদেরকেই ফেরত দিয়ে দিতেন। সবাই দাদাকে খুব মান্য করতো কারণ দাদা তাদের ভার না নিলে তারা ভেসে যেতো। এমনকি ভাই বোনদের জন্য দাদা বিয়ে পর্যন্ত করেননি। দাদার কথায় বাড়িতে শেষ কথা ছিল। বাড়িতে একটি ছেলে নাম অনন্ত সে থাকতো, পড়াশোনা করতো আর বাড়ির বাচ্চাদের পড়িয়ে দিতো, এখানেই তার বিনিময়ে খাওয়া থাকার ব্যাবস্থা আর সামান্য কিছু হাতখরচ হিসেবে সে পেতো। অবসর সময় বাঁশি বাজাতো। তার বাঁশির সুমধুর আওয়াজ মৃন্ময়ীর হৃদয় স্পর্শ করতো।
একদিন সব ভাইয়েরা ছেলেরা একসাথে খেতে বসেছে, মৃন্ময়ীর আদরের নাম ছিলো মীনু, মীনু জ্যাঠামশাইয়ের ভিষণ আদরের। তিনি খেতে বসেই মীনুকে না দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলেন, আমার মীনু মা কোথায়?
মীনুর মা বললেন, ও একটু পরেই বসবে দাদা,
- কেনো? ওর কি আজ খিদে নেই?
- না মানে মেয়ে তো! সবাইকে দিয়ে থুয়ে খেতে হয় এসব তো এবার শেখাতে হবে, দুদিন বাদে পরের ঘরে যাবে যখন -----
তার কথা শেষ হতে না হতে জ্যাঠামশাই বজ্রগম্ভীর স্বরে ডাকলেন, মীনু মা --- তুমি কোথায়? এসো খেতে এসো, তারপর বললেন, ওকে আমি ইস্কুলে ভর্তি করে দেবো, ও পড়াশোনা শিখে বড়ো হোক, এখন থেকে ওর বিয়ে নিয়ে কেউ কোনো কথা বলবেনা, এ আমার আদেশ রইলো।
সংসারের জন্য নিজের আদর্শ কে বিসর্জন দিয়ে ইংরেজদের দাসত্ব করছি, আমি জানি একমাত্র মীনুমাই পারবে আমার এই দাসত্বের উন্মোচন করতে।
হ্যাঁ জ্যাঠামশাইয়ের আদরের মীনু মা প্রতিদিন একটু একটু করে বীর বিপ্লবীদের গল্প শুনতে শুনতে তাদের মরণপণ লড়াইয়ের বর্ণনা শুনতে শুনতে দেশপ্রেমের দীক্ষা নিয়ে নিয়েছিল। সবার অজান্তে এই ছোটো মেয়েটি নীরবে বিপ্লবীদের সাহায্য করে যেতো। তার খাবার থেকে খাবার বাঁচিয়ে রেখে দিতো প্রতিদিন, তাদের বাগানে অনেকে এসে লুকিয়ে থাকতো, জ্যাঠামশাই জেনেও না জানার মতন ব্যবহার করতো। তাদের বাড়ি ছিল লুকিয়ে থাকার উতকৃষ্ট জায়গা। পুলিশ অফিসারের বাড়ি বলে কেউ বাড়িতে সার্চ করার কথা ভাবতোনা। মীনু লুকিয়ে সেই সব বিপ্লবীদের খাবার দিয়ে আসতো লুকিয়ে রাখতো তাদের আগ্নেও অস্ত্র। এই বিপ্লবীদের মধ্যেই ছিলো অনন্ত, যে মীনুদের বাড়িতে থেকে বাড়ির ছেলেমেয়েদের পড়াতো। সন্ধ্যার আবছায়া অন্ধকারে তার বাঁশি যখন সুর তুলতো, সুজলাং সুফলাং মলয় জো শীতলম। তখন মীনু ছুটে তার কাছে চলে যেতো। মীনু ভালোবেসে ফেলেছিল এই স্বল্পভাষী অনন্তকে, তার চোখের আগুনে সে যেনো খুঁজে পেতো দেশ মুক্তির আনন্দ। অনন্ত তাকে বলেছিল, আমার সাথে জড়িও না মীনু, আমাদের ভালোবাসতে নেই, আমার সবচেয়ে বড়ো লক্ষ্য এখন দেশের স্বাধীনতা।
অকুতোভয় মীনু বলেছিল, তোমার এই সাধনায় আমিও ব্রতী হতে চাই, অনন্ত হেসে বলেছিল, তুমি অনেক ছোটো মীনু, আগে বড়ো হও তারপর দেখা যাবে।
হঠাৎই একদিন জ্যাঠামশাই এসে বললেন, অনন্ত কই? তারপর অনন্ত কে ডেকে বললেন পালাও, পুলিশ আসতে পারে। আর মীনুকে বললেন, তোর কাছে কি লুকানো আছে? মীনু নির্ভয়ে জ্যাঠামশাইয়ের হাতে তুলে দিলো দুটি বন্দুক।
যখন পুলিশ এলো তখন জ্যাঠামশাই বন্দুক নিয়ে বিপ্লবীদের খোঁজার নাম করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বাগানের আনাচে কানাচে, আর মাঝে মাঝে বন্দুকের ফাঁকা শব্দ করছেন। পুলিশ যখন এলো তখন দেখলো অফিসার আগে থেকেই কাজে লেগে গেছেন, তারা এসে জিজ্ঞেস করলো, কেউ আছে এখানে স্যার?
জ্যাঠামশাই বললেন, চোখ মুখ কুঁচকে বললেন, আমিও খোঁজার চেষ্টা করছি কিন্তু কিছুই পাচ্ছিনা তো, সবাই জানে এটা পুলিশ অফিসারের বাড়ি, সব জেনে কি কারুর সাহস হবে এখানে লুকিয়ে থাকার?
হ্যাঁ স্যার আমরাও তাই ভাবছিলাম, ঠিক আছে স্যার, আমরা আসছি, দরকার হলে ডাকবেন,
হ্যাঁ নিশ্চয়ই ডাকতে তো হবেই।
পুলিশ চলে যেতেই মীনু জ্যাঠামশাইকে জড়িয়ে ধরে আসতে আসতে বললো, " বন্দে মাতারম ",
জ্যাঠামশাই ওপরে হাত তুলে বললেন বন্দে মাতারম।
অনন্ত তারপর আর ফিরে আসেনি, মীনুর বিয়ে হয়ে গেলো এক জমিদার বাড়িতে। জ্যাঠামশাই মীনুকে বললেন, জমিদার হলেও তোর বর খুব গোপনে বিপ্লবীদের সাহায্য করে। ওদের বার মহলে যে বাইজীদের নাচ ঘর আছে, সেখানে নিয়মিত বিপ্লবীরা বাইজীদের নাচ দেখতে এসেছে এই পরিচয় লুকিয়ে থাকে, আর তাদের অস্ত্র লুকিয়ে রাখে একজন বাইজী। তাই তোর বর রঞ্জনকে নিয়মিত নাচ ঘরে যাতায়াত করতে হয়, তুই যেনো ভুল বুঝিসনা। আমি সব দেখেশুনেই তোর বিয়ের ঠিক করেছি, আর রঞ্জন জানে তোর মনের ঠিকানা তাই তোকে বিয়ে করছে।
ফুলশয্যার রাতে দুজনে দুজনের হাতে হাত রেখে বলে ওঠে " বন্দে মাতারম "।
রঞ্জন বললো, এটাই আমাদের একমাত্র ভালোবাসা মীনু, এইবলে সে নববিবাহিতা পত্নীকে আলিঙ্গন করে বললো, যতদিন না স্বাধীনতা আসে আমাদের সন্তান আসবেনা মীনু,আমি চাই স্বাধীন ভারতের মাটিতে স্বাধীন নাগরিক হয়ে আমাদের সন্তান জন্ম নিক,
মৃন্ময়ী তার উজ্জ্বল দুটো চোখ স্বামীর দিকে তুলে বললো, তুমি যা চাইবে আমারও সেই চাওয়া, চাওয়া পাওয়া এক না হলে পথ চলবো কি করে!
একদম ঠিক কথা, আমাকে মাঝে মাঝে নাচঘরে যেতে হয় সম্পূর্ণ একটা অন্য কারণে, তুমি আমায় ভুল বুঝোনা যেনো,
আমি সব জানি, জ্যাঠামশাই আমাকে সব বলেছেন, তাই তো তিনি আমাকে তোমার সাথে বেঁধে দিয়ে এবার অবসর নিয়েছেন নিজের কাজ থেকে। আমার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর তিনি সবাইকে বললেন, আমার শেষ দায়িত্ব যা ছিল, তা আজ হয়ে গেলো, এবার সবাই নিজে নিজের দায়িত্ব নিয়ে নাও আমি অবসর নিলাম কাজ থেকে, অনেকদিন সংসারের কথা ভেবে ভেবে দাসত্ব করে গেছি, আর নয়।
আমার ঘরের সামনের বারান্দায় আমি নিজে স্বপাক সিদ্ধ ভাত করে খাবো, যেদিন পারবোনা, মুড়ি বাতাসা খেয়ে নেবো, আমার জন্য কাউকে ভাবতে হবেনা, এইভাবে আমি আমার কাজের প্রায়শ্চিত্ত করবো, তোমরা কেউ বাধা দিওনা, এটুকু আমার অনুরোধ।
রঞ্জন বললো, উনি এক অসাধারণ মানুষ, ওঁর চোখে দেখেছি আমি ছাইচাপা আগুন।
এরপর একবছর পার হয়ে গেলো, একদিন অনেক রাতে রঞ্জন এসে মীনুকে বললো, তোমাদের জিয়াগন্জ থেকে এক বিপ্লবী এসেছিল, আমি তাকে লুকিয়ে রেখেছিলাম, শুনলাম তার নাম অনন্ত, পুলিশ আসতে পারে শুনে তার হাতে বেশ কিছু টাকা দিয়ে লুকিয়ে বার করে দিয়ে এলাম, মনে হয় সে নির্বিঘ্নে পথটা পেরিয়ে যেতে পারবে। এই কথা শুনে মীনু চঞ্চল হয়ে উঠলো, রঞ্জন লক্ষ্য করে বললো, তুমি চেনো তাকে?
দেবতার মতন স্বামীর কাছে সে মিথ্যা বলতে পারলোনা, সব সত্যি বলে দিলো।
রঞ্জন ওর মুখ টা তুলে ধরে বললো, তুমি লজ্জা পাচ্ছ কেনো? তুমি তো কোনো অন্যায় করোনি, ভালোবাসা তো পাপ নয় মীনু।
এর কিছুদিন পর মীনু তার স্বামীকে বললো, আমায় একাটা অনুমতি দেবে?
রঞ্জন বললো, কি! সশস্ত্র বিপ্লবের পথে যেতে চাও? আমি তোমাকে বাধা দিতে পারিনা, তবে একটা কথা আমাকে দিয়ে যাও, তোমার আমার মধ্যে যেভাবেই হোক যেনো যোগাযোগ থাকে,
মীনু নীচু হয়ে স্বামীর পদধূলি মাথায় নিয়ে বললো, তোমার সাথে যোগাযোগ না রেখে কি আমিই পারবো,
রঞ্জন স্ত্রী কে কাছে টেনে নিয়ে বললো, আমিই তোমাকে ভিষণ ভালোবাসি মীনু, জানি তুমি হয়তো আমাকে শুধু শ্রদ্ধার বন্ধনেই বেঁধে রেখেছো --
মীনু স্বামীর বুকে মাথা রেখে বললো, কে বললো, আমি তোমাকে ভালোবাসিনি! এমন মানুষকে ভালো না বেসে কি থাকা যায়!
তাহলে চলো তোমাকে অনন্তর আখড়ায় পৌঁছে দিয়ে আসি,
মীনু বললো, নাঃ তোমাকে ওই বিপদের মধ্যে আমি কিছুতেই নিয়ে যাবোনা, তোমার কিছু হলে আমার সব সঙ্কল্প ব্যার্থ হয়ে যাবে যে, একটা কথা তোমাকে আজ বলে যাই, আমার জীবনে যে দুজন দেবতা আছেন তা তুমি আর একজন আমার জ্যাঠামশাই, পৃথিবীতে এই দুটো মানুষকেই আমি প্রাণ দিয়ে ভালোবাসি। আমি যাচ্ছি শুধু জ্যাঠামশাই যে কর্তব্যের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করে চলেছেন, তাঁকে বলে দিও তার মীনুমা আজ থেকে তার প্রায়শ্চিত্তের ভার নিলো, মানুষটা সারাজীবন শুধু বাড়ির জন্য নিঃশব্দে আত্মত্যাগ করে গেছেন, আজ আমি কি ওঁর জন্য কিছুই করতে পারবোনা!
কে বলেছে পারবেনা! তোমাকে পারতেই হবে।
শুনেছি জিয়াগন্জে একজন খুব বড়ো বিপ্লবী এসেছেন, আমি তাঁর সাথে দেখা করতে চাই তাঁর কাজে লাগার জন্য যাবো। আমার মেজমাসির বাড়িতে তিনি ওঠেন, সেখানেই যাবো,
তাই নাকি! তাহলে আমিও যাবো একবার ওঁর দর্শন করে পায়ের ধূলো নিয়ে চলে আসবো, তুমি এগিয়ে চলো মীনু, আমার আশীর্বাদ সবসময় তোমার সাথে থাকবে।
সুভাষ বসুর কাছে গিয়ে ওরা পৌঁছাতে মেজমাসি আলাপ করিয়ে দিলেন তাদের সাথে, মীনুর লক্ষ্য ও আদর্শের কথা, স্বামীর কথা, তার জ্যাঠামশাইযের কথা সব খুলে বললেন,
বিপ্লবী তার হাতে পতাকা তুলে দিয়ে বললেন, বন্দেমাতরম ,
মীনু আর রঞ্জনের কণ্ঠে একসাথে ধ্বনিত হলো, বন্দেমাতরম ।
এই ঘটনার পরে সবাই জানলো বউ কোথায় চলে গেছে কেউ জানেনা, শুধু মীনুর জ্যাঠামশাই সব সত্যটা জানলো রঞ্জনের কাছ থেকে।
তারপর থেকে এক পরিতৃপ্ত মুখ নিয়ে বললেন আজ থেকে আমি তোমাদের সাথেই খাবো তবে ওই সেদ্ধ ভাত, আমার প্রায়শ্চিত্তের ভার আরেকজন নিয়ে নিয়েছে।
রঞ্জনও নেমে পড়লো বিপ্লবের পথে, সেও আর লুকিয়ে থেকে কাজ না করে সামনাসামনি লড়াইয়ে যোগ দিলো।
বেশ কিছুদিন পর কলকাতার রেডরোড ধরে দুটো মুখোমুখি মিছিল আসছে, একটা মিছিলের সামনের সারিতে রঞ্জন, অন্য মিছিলের সামনে মীনু।
মীনু লক্ষ্য করলো রঞ্জনের বুক লক্ষ্য করে পুলিশ বন্দুক নিয়ে দাঁড়িয়েছে, মীনু একলাফে না------ বলে রঞ্জনের সামনে এসে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো, রঞ্জন কিছু বোঝার আগেই পুলিশের গুলি মীনুর বুক এসে লাগলো, রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়লো মীনু, রঞ্জন তার মাথাটা বুকে তুলে নিয়ে বললো, একি করলে মীনু!
হঠাৎ মীনু দেখলো পুলিশ মাথায় টুপি নামিয়ে মীনুর সামনে এসে বসেছে, মীনু চিত্কার করে উঠলো, অনন্ত দা তুমি!
হ্যাঁ রে, সেদিন তোদের বাড়ি থেকে পালাবার পর ধরা পড়ে গিয়েছিলাম, পুলিশের অত্যাচারের ভয়ে রাজসাক্ষী হতে রাজি হলাম, তারপর পেট চালাবার জন্য এই চাকরিই নিতে হল, তা নাহলে আমাদের দলের লোকেরা আমাকে মেরে ফেলতো।
মীনুর মুখ দিয়ে আর কথা বার হচ্ছেনা, শুধু বললো, ছিঃ
তারপর স্বামীর চোখের জল মোছাবার জন্য হাত তুলতে গেলো, কিন্তু পারলোনা, রঞ্জনই ওর কাঁপা হাতটা চেপে ধরলো, মীনু স্বামীর দিকে অশ্রুসজল দৃষ্টি নিয়ে কোনরকমে তাকিয়ে বললো, বন্দেমাতরম,
কান্নায় ভেঙে পড়ে রঞ্জন ও বললো বন্দেমাতরম।
শেষ হয়ে গেলো পুলিশের গুলিতে একটি কুড়ি বছরের মেয়ের জীবন। ইতিহাসে এরকম অনেক মীনু রঞ্জনের কথাই অলিখিত থেকে গেছে।