লকডাউনIndrani Bandyopadhyay
কারখানায় কাজ করে দুখি।ছিদাম সামন্ত রায় বাবুদের কারখানাতে কাজ করতো।ব্যাগ তৈরির কারখানা।যেদিন টিবি রোগে মুখ দিয়ে রক্ত উঠে মরে গেল সেদিন ই দুখির জন্ম।রায়বাবুদের ওই কাজ এখন দুখি করে ।মাসে আটশ টাকা পায়।শুধু …
লকডাউন
Indrani Bandyopadhyay
কারখানায় কাজ করে দুখি।ছিদাম সামন্ত রায় বাবুদের কারখানাতে কাজ করতো।ব্যাগ তৈরির কারখানা।যেদিন টিবি রোগে মুখ দিয়ে রক্ত উঠে মরে গেল সেদিন ই দুখির জন্ম।রায়বাবুদের ওই কাজ এখন দুখি করে ।মাসে আটশ টাকা পায়।শুধু তাই নয়।বাড়ির যত ফাই ফরমাস সব দুখি করে দেয়।বিনিময়ে কলাটা মূলোটা কপালে জুটে যায় মাঝে মাঝে।
রন্ধ্রগত শনি দুখির জীবনের সঙ্গী।সবাই মিলে নাম দিলে দুখিরাম।যেন সব দায় ওর।অবশ্য নামে কী বা এসে যায়।দুখির বিয়ে হল লক্ষ্মীর সাথে।বারোমেসে রুগী।আসলে কপাল মূলোতোলা।
দুখির গানের গলা দারুন।বিয়েতে লক্ষ্মীর বাপ ওকে সাইকেল, টর্চ আর একখানা রেডিও দিয়েছিল।লক্ষ্মীর ওষুধ আর পথ্য জোগাড় করতে না পারায় সাইকেল আর টর্চ বিক্রি হয়ে গেছে।তবু দুখি রেডিও টা হাতছাড়া করে নি।ওর শখের জিনিস ওটা।
গ্ৰামের প্রান্তে যে পুকুর টা আছে ওর নাম বড়ো সরকার।ওর পাড়েই দুখির কুঁড়ে।সন্ধ্যা নামলেই লক্ষ্মীর সোই সোই ডাক শুনতে শুনতে হাঁসগুলোর সাথে দুখি ও ঘরে ফেরে।
দুখি এইসময় খোশমেজাজে থাকে।চা মুড়ি খায়।আর রেডিও টা জোরে চালিয়ে দেয়।দুখি গলা মিলিয়ে গাইতে থাকে "ও জীবন জীবন রে
ছাইড়া না যাও মোরে
তুই জীবন ছাইড়া গেলে
মাইনসে কৈবে মড়া জীবন রে"।
সন্ধ্যা গাঢ় হলে খবর শোনে দুখি।পৃথিবীতে কী ভাইরাস এসেছে।কত মানুষ মরে যাচ্ছে।কারখানা তে এ খবর ছড়িয়ে পড়েছে।অশনিসংকেত।রোগে মরবার আগে না খেয়ে মরতে হবে দুখিদের।
পরের দিন কারখানা গিয়ে ওটাই সত্যি হল।লকডাউন।রায়বাবুদের অত টাকা নেই যে বসিয়ে বেতন দেবে।
দিন দশেক কাটলো।আর হাঁড়ি চরে না।বেদনায় ভরা লক্ষ্মীর মুখ কাতর করে দুখিকে।
একটু পরেই দুখি ফিরলো।বেশ কিছু স ওদা করে এনেছে।তেল ,মশলা,একটু মাছ।রায়বাবুর নাতি জোরে রেডিও চালিয়ে দিয়েছে।দুখি গেয়ে ওঠে
"তুই জীবন ছাইড়া গেলে
মাইনসে কৈবে মড়া জীবন রে"।