Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-সম্মাননা

দৈনিক প্রতিযোগিতা 
নায়কনবনীতা সই 19.8.20
মালটা কিন্ত গুরু লক্কা পেয়ারা!আমি তো রোজ দেখি বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকে৷বাসস্ট্যান্ডে ? হ্যাঁ গুরু, তাহলে আর কি বলছি? হেঁ হেঁ বাজারের মাল  না গুরু৷ পড়তে যায়৷ আসে ঠিক সাতটা নাগাদ৷ ও তাই নাকি…

 

দৈনিক প্রতিযোগিতা 


নায়ক

নবনীতা সই 

19.8.20


মালটা কিন্ত গুরু লক্কা পেয়ারা!

আমি তো রোজ দেখি বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকে৷

বাসস্ট্যান্ডে ? 

হ্যাঁ গুরু, তাহলে আর কি বলছি? হেঁ হেঁ বাজারের মাল  না গুরু৷ পড়তে যায়৷ আসে ঠিক সাতটা নাগাদ৷ 

ও তাই নাকি?  শালা তোদের এলাকাটা ভালো না৷ ঐ টাইমে খুব ধান্দাবাজি হয়৷  আমাদের শিবপুর টা অনেক ভালো বে৷

সে ঠিক গুরু৷ আমাদের বেলতলায় রোজ মারামারি লেগেই থাকে৷ আর মেয়েছেলের ও আজকাল রমরমা৷ মদের দোকান হয়েছে না পুবালীর  মাঠে৷ 

হ্যাঁ রে ৷ আমাদের শিবপুরে শালা মদের দোকান নেই ৷  অনেক ভালো রে৷ কোন ঝুট ঝামেলা নেই৷ আমার দুটো  দিদি  দ্যাখ ৷ কেউ পিছনে লাগতে পারে? ৷ 

কাকা আজকাল কি করছে গুরু?

কে জানি কি করছে৷ আমি বে খোঁজ রাখিনা৷ উচ্চমাধ্যমিকে তো করোনা বাঁচিয়ে দিলো৷ এবার কলেজে যাবো৷ বলে দিয়েছি ভালো কলেজে পড়বো৷ শালা তিনপিস ছেলে মেয়ে বানিয়েছে দায়িত্বটা কার বে?৷

আরে তুমি তো স্টার গুরু৷ কি চিকনা গাল মাইরি৷ গুরু , তুমি কিন্তু হেব্বি দেখতে৷

আরে আমার মা কে তো দেখিস নি, কি সুন্দর দেখতে৷ দুটো দিদি বাবার মতন কালো৷ আমি মায়ের মতন ফর্সা৷

কি করে দেখবো গুরু কোনদিন বাড়িতে নিয়ে গেছো? শিবপুরে কোথায় বাড়ি তাই জানিনা৷

আরে ক্ষেপেছিস? বাড়ি নিয়ে গিয়ে মরবো? বাপের কপচানো শুনতে হবে৷ আমি উঠি বারোটায়, গিলে কেটে পড়ি , বিকালে আড্ডা টিফিন সব বাইরে৷ আবার সব ঘুমালে রাতে গিয়ে গিলে সোজা বিছানায়৷ 

তবু গুরু কোনদিন নিয়ে যাও না বাড়িতে৷

আমি বে  হাফ লিটার তেল পুড়াই তোদের সাথে আড্ডা দেবার জন্য৷ আমাদের ওখানে আড্ডা দেবার কোন চান্স নেই বে৷ এক তো বুড়ো জয়ন্ত মিস্ত্রি খ্যাকখ্যাক করবে৷ তার উপর শালা টিকটক করার জায়গাই নেই ৷ 

তাহলে বলো গুরু, বেলতলায় এসে তুমি ফেমাস হলে?

একদম৷ ওখানে থাকলেই কেউ না কেউ জ্ঞান দিতে আসবে৷ মাষ্টার গুলো দেখা হলে বকবক করবে৷ আর দুটো দিদি আছে৷ কি দরকার ৷ তারথেকে সোজা খাল পাড় হয়ে চলে যাই শিমুলতলা, আবার কখনও তোদের এখানে আসি৷ শালা এখানে টানলেও কেউ দেখার নেই ৷ মস্তি সে টিকটক বানাও  ৷

এটা কিন্তু আধা সচ গুরু৷ তুমি কিন্তু আসতে অ্যাঞ্জেল প্রিয়া কে দেখতে৷ 

হ্যাঁ তা ঠিক৷ দুজনেই তো আমরা টিকটক করে উঠেছি৷ 

তোমরা গুরু ফেমাস! 

আর ফেমাস৷ টকটক  বন্ধ হয়ে গেলো তো৷ 

তাতে কি , তুমি গুরু নায়ক হব্বেই৷

আরে পেরান দা দুটো চা দাও ৷ 

তাহলে গুরু সন্ধ্যা হয়ে গেলো যাবে না মালটা দেখতে? ৷

যাবো? বলছিস? শালা আজ কি পড়তে যাবে যা বৃষ্টি ৷ 

আরে তুমি চলো তো৷ 

মনটা ভালো না রে৷ যবে থেকে টিকটক বন্ধ , প্রিয়া আমাকে পাত্তাই দিচ্ছে না৷ 

কি যে বলো গুরু৷ অমন কত প্রিয়া তোমার পিছনে ফ্যা ফ্যা করবে৷ এই মালটা দ্যাখো, ঝক্কাস দেখতে৷ 

তুই আমার রিয়েল দোস্ত আছিস বে৷ একদম সচ্চা৷ 

কি যে বলো গুরু, তোমার বাইকে পিছন ঠেকিয়ে রেল্লা মেরেছি কত ৷ শ দুশো কত্ত হেল্প করো তুমি৷

আরে জানিস তো রকি নিজের বন্ধুর জন্য জান দিতে পারে৷ চল দেখে আসি৷ 

হ্যাঁ গুরু আজ দেখে আসি৷ পরে একদিন ফলো করবো৷ মেয়েটা দারুণ দেখতে৷ 


সারাদিন বৃষ্টির পর ,চারিদিকে হালকা জলের কুয়াশার মতন ধোঁয়ায় ঢাকা৷ বেশ জোলো বাতাস বইছে ৷ হালকা ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব৷ বাসস্ট্যান্ডে একটি মেয়ে শাড়ি পড়ে দাঁড়িয়ে আছে একজন মহিলার সাথে ৷ মেয়েটা পঁচিশ ছাব্বিশ  বছরের ৷ মহিলাটি বছর চল্লিশের৷ লাস্ট বাস রাত নটায়৷ মেয়েটা লাস্ট বাস ধরবে , এখন সবে সাতটা বাজে৷ মাঝে মাঝে বাইক হুসহাস করে চলে যাচ্ছে ৷ দু একটা মাতাল পাশে দাঁড়াচ্ছে ৷ 

 মেয়েটা রোজ বেলা চারটেয় টিউশনের নাম করে বের হয়৷ বেলতলা আসে৷ আবার ফিরে যায়৷ দুপুরের দিকে,  বাসে করে বেলতলা আসে, তারপর অঞ্জলী বৌদির বাড়িতে ঢুকে পড়ে৷ বৌদির বাড়িতে চা টুকু খেয়ে দুজনে রেডি হয়ে যায়৷ বৌদির দুটো ছেলে কোলকাতায় মামারবাড়ি থেকে পড়াশুনা করে৷ ঘরে শুধু শাশুড়ি৷ বর নেই ৷

 শাশুড়ি পুরো বিছানায় সারাদিন রাত শাপমন্ত করে৷ বৌদির বাড়িতে চারিদিকে বেশ গাছ- গাছালি আর বাস স্ট্যান্ড থেকে হেঁটে মাঠের দিকে নেমে গেলে,  মাঠের শেষে এই একটাই বাড়ি৷ এরপর আর যে বাড়িটা আছে সেটা কোন নেতার বাগানবাড়ি ৷ সচরাচর কেউ আসেনা এদিকটায়৷ বাজার দোকান সব স্টেশনের দিকে৷ বৌদির বাড়ির থেকে কিছুটা গেলেই মদের দোকান ৷ রাস্তা থেকে দুরে দোকান করার নিয়ম চালু হয়েছে বলেই মাঠের একপাশে বড় দোকান৷ মাঝে মাঝে মাঠে মদ মাতাল বসে থাকে৷ মেয়েটির কাজের জন্য জায়গাটা আদর্শ ৷ 


আজ যা আবহাওয়া তাতে কাস্টমার হবে না মনে হয়৷ মেয়েটা ব্যস্ত ৷ তাকে যে করেই হোক লাস্ট বাস ধরতে হবে৷ অঞ্জলী দুবার ঘর ঘুরে এসেছে৷ দুটো কাজ হয়ে গেছে৷ খুব ভালো খদ্দের পায় অঞ্জলী৷ বয়েস হলেও ভরন্ত শরীর৷ অপারেশন করানো তাই কোন কন্ডোমের ঝামেলা নেই ৷ সেই অনুযায়ী মেয়েটা রোগা, গায়ের রঙ চাঁপা৷ আবার অবিবাহিত ৷ 

 তাই রোজ কোনরকমে একটা দুটো কাস্টমার পায়৷ খুব কপাল ভালো হলে তিনটে৷ 


আজ মনে হয় কিছু হবেনা৷ 

চিন্তা করিস না৷ আমি বাস ভাড়া দিয়ে দেবো৷ তুই আসলে ভালো লাগে৷ নইলে একা একা দাঁড়ানো কি রকম বাজে লাগে৷ আগে যে মেয়েটা আসতো সে ট্রেন ধরে  আসতো বলে আর আসতে পারছেনা৷ ঐ দ্যাখনা একটা মাল আসছে৷

ধুর আজ আমার কিছু হবেই না৷ কতক্ষন হয়ে গেলো৷

 সবে আটটা হয়েছে৷ দাঁড়া কিছুক্ষণ ৷তুই তো কোলকাতায় যেতে পারবিনা৷ নইলে আরও টাকা পেতি৷

না তা পারবো না৷ বাড়িতে কি বলবো?

হুম৷ সেটাই ৷ দাঁড়া কিছু টাকা করে নে, আর এসব আপুদে রোগ বালাই যাক, পার্লারে নিয়ে গিয়ে তোকে ঘষেমেজে আনবো৷

আর কয়লা ধুলে কি সাদা হবে?

আরে অনেককিছু হয়৷ তুই দেখিস৷ জানিস না তো আমি কি ছিলাম ৷ জমজ ছেলে পেটে তখন বর গেলো পালিয়ে ঐ বুড়ি মা কে ফেলে৷ পরে শুনলাম চেন্নাই তে গিয়ে সে ব্যাটা কি গোপন রোগে মরেছে৷  কিন্ত দ্যাখ কেমন জ্বলজ্বলে সিঁদুর আর শাখায় বাঁচিয়ে রেখেছি৷ সেই থেকে আমি কম কষ্ট করিনি৷

আজ কি ফিরে যাবো , খালি হাতে?

আরে সবুর কর! ঐ তো দুটো ড্যাকরা আসছে৷ দাঁড়া তো দেখি৷ 


বাস স্টপ টা রাস্তার ধারে হলেও বেশী আলো নেই ৷ বাইক টা দাঁড়ায় রাস্তার ধারে৷ আর একটু পর একটা বাস আসবে৷ কোলকাতা যাবার লাস্ট বাস৷ তারপর আপের লাস্ট বাস৷

বাইক থেকে ছেলে দুটো নেমে , সিগারেট ফুঁকতে থাকে৷  ভ্যাপারের হলদেটে আলোয় দীপশিখা কে দেখে, ছিটকে সরে যায় রাজা ৷ ঐ সাজ, পাশে দাঁড়