Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-সম্মাননা

|| একটি অবান্তর ভাবনার মৃত্যু |||| বিষয় : ছোট গল্প |||| লেখক : চন্দন চক্রবর্তী |||| তারিখ : 16.09.2020 ||
মাথার ওপর ফ্যানটা কট কট শব্দ করতে করতে থেমে গেল !
ফ্যানটার বয়স হয়েছে তার মতই হবে আন্দাজ করা যায় । সেই প্রথম যখন সে এখানে আসতে…

 


|| একটি অবান্তর ভাবনার মৃত্যু ||

|| বিষয় : ছোট গল্প ||

|| লেখক : চন্দন চক্রবর্তী ||

|| তারিখ : 16.09.2020 ||


মাথার ওপর ফ্যানটা কট কট শব্দ করতে করতে থেমে গেল !


ফ্যানটার বয়স হয়েছে তার মতই হবে আন্দাজ করা যায় । সেই প্রথম যখন সে এখানে আসতে শুরু করে,সেওতো চল্লিশ বছর হয়ে গেল,তখনই ওটা বেশ পুরোনো । তার তখন কুড়ি টুড়ি হবে । 


থেকে থেকে একটা অস্বস্তি হচ্ছে শরীরে । সেটা মনেও সক্রামিত হচ্ছে ! এটা অনেকদিন আগেই শুরু হয়েছে । ফ্যানটা বন্ধ হওয়ায় যেন আরো বেড়ে গেল ! গরমও আজকে একটু বেশি । 


গতকাল পরিচালক মন্ডলীর অনেকে এসেছিল  । এক আধ দিন বাদ দিলে,প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ আসে ।  দু একবার চা আনিয়ে খায় । লাইব্রেরীর খরচ,বকেয়া চাঁদা,নতুন বই নিয়ে কিছু আলোচনা,হয় । ডোনেশন পাওয়ার চেষ্টায় মাতে । মাঝে মাঝে মিলেও যায় । তাতে আর কদিন ! মাস খরচ চালিয়ে আর কি বা থাকে ! চিন্তাটা আবার ঘনীভূত হয় । সমস্যার সমাধান যে তাদের হাতে নেই ! নতুন পাঠক তৈরি হচ্ছে না !  যারা বই নিতে আসে বেশির ভাগ আগের দিনের মানুষ,ক্রমশ কমে যাচ্ছে ! 


আজকাল বেশির ভাগেরই হাতে এখন আয়তাকার লম্বাটে বস্তুটা সে দেখতে পায় । রাস্তাঘাটে,বাড়িতে,এমন কি যারা এখানে আসে তাদের হাতেও সে দেখেছে বস্তুটা ।  সেটা নিয়েই নাড়াচাড়া করতে করতে,চোখ না সরিয়ে কথা বলে । সামনেই যে একটা মানুষ বসে আছে,তারা ভ্রুক্ষেপও করে না ! ব্যক্তি ছেড়ে এরা বস্তুকে আপন করেছে !  মনের আদান প্রদান নেই । কেমন নির্বিকার !

 

না একদম ভালো ঠেকছে না ! মনে হচ্ছে সে যেন কোন ধাতব তরঙ্গে ডুবে যাচ্ছে,যা তাকে ক্রমশঃ অবশ করে দিচ্ছে !


আগের দিনে বিয়ে,উপনয়ন,ইত্যাদি অনুষ্ঠানে বই উপহার দেওয়ার চল ছিল । বই পড়তে পড়তে লেখকের সাথে একাত্ম হয়ে যাওয়া,সে কি আর ওই যন্ত্রটাতে পাওয়া যায় ! তাদের আমলে একটা ছয়শো পাতার বই তারা যতক্ষণ পড়তো,বুদ হয়ে থাকতো । এখন ওই যন্ত্রটাতে এতটা একাগ্রতা সম্ভব ! একাগ্রতার অভাব আজকাল জীবনের সব ক্ষেত্রেই পরিলক্ষিত হচ্ছে । 


গতকাল একজন বই পাল্টে নিয়ে গেল । তার পাঁচ মাস চাঁদা বাকি । বলা হল । কোন উচ্চবাচ্য করল না !


আজ সন্ধ্যায় এখনো পর্যন্ত একজনও আসে নি । পরিচালক মন্ডলীর কেউ এখনও আসে নি । আর সময় কোথায় ! 


আহা নতুন বইয়ের গন্ধটা তার বেশ লাগে । কিন্তু এবছর এখনো কোন আলোচনা হয় নি । করবেই বা কি করে ! চাঁদা কেউই ঠিক মত দেয় না । কেউ ছমাস বই নিয়ে গেছে,না দেয় বই ফেরত,না চাঁদা ! চিঠি পাঠালেও কোন কাজ হয় না !


পুরোনো বই মেরামতি,নতুন সেল্ফ বানানো কিছুই সম্ভব হচ্ছে না । ঝারপোছ করার লোকটার মায়না,লাইট খরচ দিতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে । লাইব্রেরিয়ান হিসাবে তার যৎ সামান্য পাওনা ! সেটা নিয়ে সে ভাবে না । 


পুরোনো বইয়ের গন্ধ তার অবশ্য খারাপ লাগে না । পুরো বাড়িটায় কেউ না থাকলে বইগুলো থেকে মহান লেখকেরা বেরিয়ে ঘরময় হেঁটে বেড়ান । সে অনুভব করে । এটা সে কাউকে জানায় না । 


না আর কেউ আসবে না । বন্ধ করার সময় পার হয়ে গেছে । কিন্তু তার মাথাটা ঝিম ঝিম করছে । মনে হচ্ছে সে ডুবে যাচ্ছে ! চেয়ার থেকে উঠতেই তার বেগ পেতে হচ্ছে । শরীরটা ভারী ঠেকছে !


একি ! সারা ঘরে তরঙ্গটা এদিক থেকে ওদিক ছুটে বেড়াচ্ছে ! ওই তো শরৎচন্দ্র হেঁটে তার দিকেই আসছে ! আরে ওই তো বিদ্যাসাগর,বিভূতিভূষণ ! একে একে সবাই তার দিকে ছুটে আসছে । ঐতো নজরুল,ঐতো রবীন্দ্রনাথ ! 


এক এক করে সবাই তরঙ্গে ডুবে যাচ্ছে ! 


বাঁচাও বাঁচাও চিৎকারটা সে স্পষ্ট শুনতে পারছে ! 


তার শরীরটা নড়তে চাইছে না কেন ! তাকে তো যেতেই হবে ! প্রানপনে চেষ্টা চালাতে গিয়েও সে কাউকেও বাঁচাতে পারছে না ! ধাতব তরঙ্গটা তাকেও ডুবিয়ে দিচ্ছে ! তার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে ! গলা দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না ! সে পড়ে যাচ্ছে !


অনেক রাতে রাস্তা থেকে লোকজন দেখেছে লাইব্রেরীর দরজা হাট করে খোলা । ভিতরে আলো জ্বলছে । সন্দেহ হওয়ায়,ভেতরে এসে দেখে সবাই অবাক ! 


অসংখ্য বই মাটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ! তারই মাঝে তাদের পরিচিত লোকটার প্রাণহীন দেহটা উপুড় হয়ে পড়ে আছে !