Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-পত্রিকার-লেখনি-সম্মাননা

পড়ে দেখার অনুরোধ রাখলাম 🙏🙏
আমার এই তথ্য মূলক লেখাটা নারীশক্তির কলম হিসেবে ইউ টিউবে আবৃত্তি করা আছে, কেউ লিংক চাইলে বলবেন..........
অনেকেরই আমার এই লেখা পড়ে ভাল লাগবেনা জানি, তবু প্রতিবাদের জন্য কাউকে না কাউকে তো এগিয়ে আসতেই হয়, আ…

 


পড়ে দেখার অনুরোধ রাখলাম 🙏🙏


আমার এই তথ্য মূলক লেখাটা নারীশক্তির কলম হিসেবে ইউ টিউবে আবৃত্তি করা আছে, কেউ লিংক চাইলে বলবেন..........


অনেকেরই আমার এই লেখা পড়ে ভাল লাগবেনা জানি, তবু প্রতিবাদের জন্য কাউকে না কাউকে তো এগিয়ে আসতেই হয়, আজ বলব অন্ধকারের চোরা কুঠুরিতে একটি মেয়ের হারিয়ে যাওয়ার গল্প। 


শিরোনাম - স্বপ্ন বিক্রি 

কলমে - সুমিতা সরকার ঘোষ 

১৯.০৯.২০২০


পর্ব - (১)


বেশ্যা বাড়ীর মাটি ছাড়া দেবী অসম্পূর্ন

আমরা থাকি আলোয় আর 

ওদের ভাগ্য কেন শূন্য? 


তুই শিবের ঘরের রাজেন্দ্রানী, 

ক্ষমতার অধিষ্ঠাত্রী,

তোর হাতের একটু ছোঁয়া দিয়ে 

করনা ওদের ধন্য? 


তোর অংশেই সৃষ্টি যত,

কন্যা, কুমারী, স্ত্রী, নারী,


সবার দিকে তোর দৃষ্টি আর, 

ওদের বেলায় কি আড়ি?


এখানে রাতে স্বপ্ন আর রজনীগন্ধা

বিক্রি হয় উপাদানের দামে,


সবাই এদের চেনে দেহপসারিনী নামে


প্রত্যেকটি নারী এক একটি দূর্গা 

তোর অংশেই সৃষ্টি, 


সবার মুখে সুখের হাসি আর,

ওদের চোখে জলের বৃষ্টি........!!!!


পর্ব - (২)


পর্দায় যৌনপল্লীর ঘুপচি অন্ধকার,

অনিচ্ছুক কিশোরীকে মারধর প্রহার।


নরক সদৃশ বাথরুমে আটকে রাখার করুন দৃশ্য,


বোনকে খুঁজতে গিয়ে, কিম্বা পেটের দায়ে কাজ খুঁজতে গিয়ে শহরের, 


চোরাগলির অতল তলে তলিয়ে যাওয়া রিক্ত, নিঃস্ব। 


শেষ হয়ে যাওয়া একটি মেয়ের জীবনকথা।


বাংলাদেশের খুলনা জেলার মেয়ে নাম তার কল্পনা, 


ছোট থেকেই তার মনেও সাজানো  ছিল

বাস্তবের রঙিন তুলির আল্পনা।


একদিন হবে বড়,সমাজের আর পাঁচটা 

মেয়ের মতোই সংসার করবে সাজিয়ে। 


কিন্তু ত্রিলোকের যিনি অদৃশ্য কারুকাজনামায় ব্যস্ত,সেই ব্রম্মা,


বিষ্ণু,মহেশ্বর, তার ললাটলিখনে অন্য কিছুই রেখেছিলেন গুছিয়ে। 


ভাল কাজের প্রলোভন দেখিয়ে, রাতারাতি ঠেলে দেওয়া হোল তাকে 


এই নরকে, যা কোনোদিন, স্বপ্নেও সে ভাবেনি।


এমনি এক রাত এল তার জীবনে যা সে কোনোদিন কল্পনাও করেনি।


একটি মেয়ের মাংসপিন্ড হয়ে ওঠার কাহিনীর দৃশ্যে অভিনয় করা যতটা সোজা, বাস্তবে ততটাই কঠিন। 


অথচ তখনও দুচোখ স্বপ্নে রঙ্গীন। 


মেরুদন্ডে ব্যথার চোরাস্রোত বহনকারী, 

এদেশের বিভিন্ন যৌনপল্লীর চোরাপথের


বাঁকে হারিয়ে যাওয়া অমানুষিক অত্যাচার,


সিনেমা বাস্তবের  হাত ধরল, যন্ত্রনার সেতু হোল আধার।


নারী পাচার বিরোধী সমাজকর্মী, 


কিন্তু বেশীরভাগ পুরুষই তো ব্যাভিচারী,বিধর্মী। 


এদেশের পাচারচক্রের শিকার ত্রিশ লক্ষ মেয়ের ভগ্নাংশ মাত্র মুক্তি পায়,


তস্য গলি,ঘুটঘুটে সর্পিল সিঁড়ি, ঘরের ভেতরে ঘর,খাটের নীচে খাট, চোরাকুঠুরির গল্প শোনায়,


অনিবার্যভাবে কলকাতার সোনাগাছি,

অঞ্চলের বৌবাজারকে মনে করায়।


নাবালিকার ওপরে অত্যাচার সোনাগাছিতে এখনও হয়নি বন্ধ, 


মেয়েদের ওপরে শোষন এবং শাসন, এখনও রোধ করা যায়নি, কারন আইন এখনও অন্ধ। 


পৃথিবীর সব পুরুষই তো এই শ্রেনীতে

পড়েন না??


অনেকে দেখেও না দেখার, মত করে দেখেন না।


আমি তামাম হিন্দুস্থানের সমস্ত ভাইদের

উদ্দেশ্যে রাখব অনুরোধ, 


ওরাও কারও বোন,কারও মেয়ে কারও স্ত্রী, কোনো শিশুর হয়ত  মা,


নিজেকে সেই মেয়েদের অভিভাবক, 

হিসেবে ভেবে একটু, বিচার করবেন বিষয়টা। 


দেশের বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংগঠনের,

ভাইয়েরা আসুন এগিয়ে, 


যে হাত ছোট ভাইয়ের চোখের জল মোছায়, হাতে ভালবাসার,আশীর্বাদের

রাখী পরায়,


যে হাতে আয়ুবৃদ্ধির জন্য ভাইফোঁটা দেওয়া হয়,সেই হাতকে এভাবে অন্ধকারে দেবেন না যেতে হারিয়ে। 


যে চোখে আমরা রাতে দেখি, সাজানো সুন্দর স্বপ্ন, 


সে চোখে ওরা দেখে আতঙ্ক, ঘৃনা আর ভয়ানক দুঃস্বপ্ন। 


যে নারীজাতির জন্য মনুষ্যজাতির, সৃষ্টি, জন্ম, বিকাশ? 


দুনিয়ার অন্ধকার,অতল গলির কবলে,

সেই হাতই নারীকে করে গ্রাস।


ভাইয়েরা?? নিষ্পাপ শত শত চোখ, মুক্তির আশায় আপনাদের দিকে তাকিয়ে, এগিয়ে আসুন।


পর্ব - (৩)


অপূর্ব বেলোয়ারী কাঁচের ঝাড়ের নীচে,

বসে সান্ধ্য আসর।


বাবুদের মনোরঞ্জনের কাজই হোল, মুখ্য কামনার রঙ্গীন বাসর।


যূপকাষ্ঠে বলির আগে অনেক নমুনা আড়ষ্টতা, কৃত্রিম আদর।


এ যেন সেই জীবন্ত লাশে ঢাকা রঙ্গীন চাদর।


শরীরের প্রতিটি তন্ত্রে, তন্ত্রে,খাঁজে ভাঁজে, বিভাজনে ক্ষত, বিক্ষত ছাপ।


চোখের পাতায় অলীক স্বপ্নের মত, রাতে নামে পাপ।


সন্ধ্যেরা মুখ ভার করে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে

ঝরে পড়ে জানলার প্রতি কাঁচে


প্রতিটা মূহুর্তে স্বপ্নের রাত বিক্রি হয়, রজনীগন্ধা, গোলাপের, সৌরভের উগ্র আঁচে।


অজস্র নীল স্বপ্ন আর আবেশেের হাতছানি,


শরীরের জড়ানো বেহায়া উষ্ণতা, ঠোঁট চুম্বন করে জানি।


দুচোখে গভীর সাগরের তরঙ্গ নিরুদ্দেশের পথিক লিখতে চায়।


অনুভবের কলমে রাতের কাহিনী বিহঙ্গ। 


মনের সাদা পাতায় লেখা হয়,

অনুভূতির নিজস্ব কাহিনীর রানী।


আবেগের নিষিদ্ধ স্পর্শ ছোঁয়া দেহ তৈরী করে কোরা কাগজের লেখনীর বানী।


কাজ শেষে ঘরে ফেরার পথে, বাবুর হাতের সতেজ রজনীগন্ধা।


দুমড়ে মুচড়ে শেষ হওয়া শরীর যেন মূর্চ্ছানো পাপড়ির নিস্তেজ সুরছন্দা।


আবার দিনের শেষে আসবে একটা ভয়াবহ রাত, পাশের ঘর থেকে ভেসে

আসবে সুর............. 


ফেকে নজরকে সিক্কে উসিনে/ বিক গ্যায়ি হু ম্যায় / উসনে ছু লিয়া তো/ লাগে কে নয়ি হু ম্যায়..........??


ইয়ে তো প্রেমী পচাত্তর হামারে/ লে যা তু কর সাতাত্তর ইশারে / দিল মেরা মুফত্ কা............


পর্ব - (৪)


কলকাতার বৃহত্তম নিষিদ্ধ পল্লী সোনাগাছি। এই পতিতা পল্লীর কয়েকশত বহুতল ভবনে প্রায় ১০,০০০ যৌনকর্মী বসবাস করেন। সোনাগাছি উত্তর কলকাতার মার্বেল প্যালেসের উত্তরে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, শোভাবাজার ও বিডন স্ট্রিটের সংযোগ স্থলের  নিকটে অবস্থিত।


কিংবদন্তি বলে বহুকাল আগে এই এলাকার মালিক ছিলেন সানাউল্লাহ্ গাজী বা সোনা গাজী নামে এক পীর।এখনও সেই গাজীর মাজার এলাকা

রয়েছে। সেই সোনা গাজী নামই কালে কালে সোনা গাছি হয়ে যায়। মধ্য কলকাতার বউ বাজার এলাকা কিম্বা দক্ষিনের কালীঘাট সহ আরও অনেক জায়গায় পতিতাপল্লী তৈরী হয়। আজকাল তো পাড়ায় পাড়ায় সোনাগাছি, কটা মধুচক্র আর পুলিশ ধরে??  এটা সেখানকারই এক সহকর্মীর বক্তব্য। 


বর্তমানে বহু এন. জিও. কর্মী এদের জন্য কাজ করছে। এন. জিও. সংলাপের প্রতিষ্ঠাতাদের দ্বারা রচিত বই "গিলটি উইথ আউট ট্রায়াল " এই অঞ্চলের দেহ ব্যবসার বহু তথ্য জ্ঞাপন করে। সোনাগাছি প্রকল্প যৌনকর্মীদের সমবায়। এই সোনাগাছিতে পশ্চিমবঙ্গের ৬৫,০০০ যৌনকর্মী তাদের সন্তানদের নিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প পরিচালনা করে থাকে।


এর পরেই ভারতের দ্বিতীয় বড় যৌনপল্লী কামাথিপুর মুম্বাই।  ১৯৮০ র দশকে দাউদ ইব্রাহীম, হাজী মস্তানকে এই এলাকায় দেখা যেত প্রায়শই।


এর পরের তৃতীয় বৃহৎ যৌনপল্লী বুধওয়ার পেট পুনে। এখানে আজকাল ইলেকট্রনিক পন্য এবং বইয়ের ব্যবসা শুরু হয়েছে এখানে। যৌনকর্মীরা এখানে ক্রমশ এই ব্যবসায় চলে আসছেন।


মিরগঞ্জ, এলাহাবাদ নারীপাচারের জন্য কুখ্যাত ছিল। ক্রমশ সেই সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। 


জিবি রোড দিল্লি,  রাস্তার পাশে দোতলা বা তিন তলা বাড়ি। নীচের গাড়ি যন্ত্রাংশের ব্যবসা ওপরে কোঠা, ভারতে এ এক আজব সংমিশ্রন।  আজকাল অনেকেই দেহ ব্যবসা ছেড়ে হরেক কিসিমের ব্যবসায় এগিয়ে আসছেন।


চতুর্ভুজস্হান- মুজফফরপুরঃ এখানে দেহ ব্যবসার পাশাপাশি এখনও মুজরার আসর বসে। বাইজির গান শুনতে এখানে এখনও অনেকে আসেন।


ইটওয়ারি- নাগপুরঃ ভারতের সবথেকে উপদ্রুত যৌনপল্লী। এখানে অপরাধের মাত্রা কিন্তু প্রশাসনের কাছে দুশ্চিন্তার বিষয়।


শিবদাসপুর- বারানসীঃ প্রাচীন শহর, যৌনপল্লীও প্রাচীন। ফেলে আসা দিনের রমরমা এখন আর নেই। পেশা ছেড়ে অন্য কাজে ক্রমশ যুক্ত হচ্ছেন এখানকার মহিলারা। শিবদাসপুরই হয়তো বাকীদের পথ দেখাতে পারে।🙏🙏