Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকার-দৈনিক-সেরা-সম্মাননা

দৈনিক প্রতিযোগিতাবিভাগ:গল্পশিরোনাম:হিস্ট্রি রিপিট্সকলমে:শম্পা বিশ্বাস24/9/20
             নবম শ্রেণী আমাদের,,আমি আর সৌমশ্রী খুব বন্ধু,,আমরা একই স্কুলে পড়তাম না কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় এক সাথে কোচিং ক্লাসে পড়তাম,,একই পাড়ায় থাকতাম,,,স…

 


দৈনিক প্রতিযোগিতা

বিভাগ:গল্প

শিরোনাম:হিস্ট্রি রিপিট্স

কলমে:শম্পা বিশ্বাস

24/9/20


             নবম শ্রেণী আমাদের,,আমি আর সৌমশ্রী খুব বন্ধু,,আমরা একই স্কুলে পড়তাম না কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় এক সাথে কোচিং ক্লাসে পড়তাম,,একই পাড়ায় থাকতাম,,,সৌমশ্রীদের বাড়িতে আমি খুব যেতাম সময় অসময়ে,সেটার একটা কারণ আছে,,,

           সৌমশ্রী বাবা আর আমার বাবা একই ডিপারমেন্টে ইনকাম ট্যাক্সে চাকরি করতেন,,কারণ টা কিন্তু এটা নয়,,কারণ হচ্ছে সৌমশ্রীর মা এবং ওর বাড়ির পরিবেশ,,,সৌমশ্রীর মা একটা প্রাইভেট স্কুলের কেমিস্ট্রি পড়াতেন,,অত বছর আগে এরকম আধুনিকা প্রগতিশীল নারী খুব কম চোখে পড়তো,,আমরা বন্ধুরা যখন যেতাম,,উনি আমাদের সাথে বিভিন্ন ধরণের বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন,পৃথিবীর বিভিন্ন সাইন্টিস্টদের জীবনের গল্প করতেন,মজার ছলে পড়া জিগ্যেস করতেন,এর মধ্যে কখন গিয়ে একটু সবার জন্য কফি করে আনতেন কিংবা ছোট্ট করে চিঁড়ের পোলাও করে আনতেন,,উনি ভীষণ মিষ্টভাষী ছিলেন,,আমাদের কে তুমি বলে কথা বলতেন,এমন কি নিজের মেয়েকেও তুই বলে কথা বলতেন না।

           গল্পটা এখান থেকে শুরু,,,এ হেন মহিলা কে যাকে আমরা বন্ধুরা এত পছন্দ করতাম তার মিষ্টি স্বভাবের জন্য,,সেই সৌমশ্রীর মা কে সৌমশ্রী দুচোক্ষে দেখতে পারতো না,,একদম সহ্য করতে পারতো না,,মা মেয়ের ঠারে ঠোরে কথা হতো আমরা বুঝতে পারতাম। সৌমশ্রী কে অনেকবার এর কারণ জিগ্যেস করেছিলাম কিন্তু ও কোনোদিন বলতে চাইনি ,,,বুঝতাম সৌমশ্রীর ওর মার প্রতি তীব্র ঘৃণা মনে পুষে রেখেছে।

             আমরা তখন সদ্য মাধ্যমিক পাস করেছি,,একজায়গায় জটলা হয়ে নিজেদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করছি,,হঠাৎ সৌমশ্রী বলে বসলো,"আমি আর যাই করি জীবনে কোনোদিন বিয়ে করবো না,,স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক মানেই নোংরা সম্পর্ক।",,,,আমরা তো অবাক।চোখ বড় বড় করে হাঁ করে চেয়ে আছি,,কি বলবো বুঝতে পারছি না।আমাদের চার বন্ধুর মধ্যে আমি বোধহয় একটু বিচক্ষণ ছিলাম,,সেই মুহূর্তে আলোচনা অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিলাম।পরে একদিন ওকে একা পেয়ে বললাম,"সৌমশ্রী,তুই আমাকে সব কিছু খুলে বল,, আমি তো দেখতে পাচ্ছি তুই দিন দিন মানসিক রুগী হয়ে যাচ্ছিস।" সৌমশ্রীর চোখের কোণে জল,যা বললো তার সারমর্ম টা যত টা ভালো ভাষায় পারা যায় আমি এখানে ব্যক্ত করছি,,,

           সৌমশ্রী যখন অষ্টম শ্রেণী তে পরে কোনও এক ছুটির দিন ভরদুপুরে ওর বাবা মায়ের ঘরে কিছু একটা বলতে এসে বাবা মা কে খুব বাজে অবস্থায় দেখতে পায় এবং ও ফিরে যেতে গিয়েও ফিরে যেতে পারেনি, পর্দার ফাঁক দিয়ে পুরো প্রক্রিয়া টা শেষ পর্যন্ত দেখেছে,,ওর কেন জানি মনে হয়েছে মা একটা মহিলা হয়েও এই বাজে কাজ টা কিভাবে করলো,ওর মা দোষী,ওর বাবার কোনও দোষ নেই।

       এত গুরুগম্ভীর একটা বিষয়,প্রথমে আমি একটু কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গিয়েছিলাম,,কিন্তু ওই যে বললাম ছোটবেলা থেকে আমি লজিক ছাড়া এক পাও চলি না।,,,ওকে বললাম,"সোমা,এই তুই বায়োলজি নিয়ে পড়ছিস, ভবিষ্যতে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখিস?? এটা একটা খুব স্বাভাবিক ঘটনা,প্রত্যেক পূর্ণ বয়স্ক মানুষের এটা একটা স্বাভাবিক জৈবিক চাহিদা,,এর মধ্যে কোনও নোংরামো বা পাপ নেই।"ও কি বুঝলো জানি না,মাথা নিচু করে ছিল।

        এর পরের ঘটনা,বহু বছর পেরিয়ে গেছে,নদী দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গেছে,, আমরা যে যার পছন্দের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত,,শুনেছি মেডিক্যাল কলেজে সৌমশ্রী প্র্যাক্টিস করছে,সৌমশ্রী বিয়েও করেছে এবং দুটি সন্তানের মা।,,,,বহু বছর পর সৌমশ্রীর সাথে এক বিয়ে বাড়িতে দেখা,,,সেরকমই বিষণ্ণ মুখ,মনে কোনও আনন্দ নেই।

       আমাকে টেনে নিয়ে গিয়ে একটা কোণের চেয়ারে বসালো, নিজেই বলতে শুরু করলো,"জানিস আমি খুব সমস্যায় আছি।" আমি বললাম,"কেন কি হলো?",,,,"জানিস আমরা ভেবেছি ছেলে ঘুমিয়ে পড়েছে,,কখন উঠে বসে সব কিছু দেখেছে আমরা খেয়াল করিনি,,যখন খেয়াল হলো,ততক্ষনে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেছে,,,তারপর থেকে আমাদের দুজনকে এক সাথে দেখলেই ক্ষেপে যায়,বিকট চিৎকার করে,,,তারপর যখন আমার মেয়ে হলো,,বোনকে সহ্য করতে পারে না,,ভীষণ মারধর করে,সুযোগ পেলেই খামচিয়ে নেয়,,সেদিন তো আড়ালে নিয়ে গিয়ে গলা টিপে ধরেছিল,,একটা সাইক্রিয়াটিস্ট এর সাথে এপয়েন্টমেন্ট করেছি।"

           আমি বললাম,"দেখ তোর মাকে তুই যে পরিমাণ কষ্ট দিয়েছিস আজ তার দ্বিগুন কষ্ট তুই পাচ্ছিস,,,কর্মের ফল তো ভোগ করতেই হবে! হিস্ট্রি রিপিট্স।

শম্পা বিশ্বাস©