আমার পাঠকদের আমার লেখা এর আগের দুটি গল্পে #পদ্মকাঁটা ও #ইচ্ছে_ইলিশ বড্ড ব্যথা দিয়ে ফেলেছি। তাই এবার ভিন্ন স্বাদের গল্প আনলাম যা অবশ্যই বাস্তব চিত্রও মন ভালোকরা positive গল্প। কেমন লাগল জানাতে ভুলবেন না যেন।
#আরাধনা#সোমা_ত্রিবেদী
…
আমার পাঠকদের আমার লেখা এর আগের দুটি গল্পে #পদ্মকাঁটা ও #ইচ্ছে_ইলিশ বড্ড ব্যথা দিয়ে ফেলেছি। তাই এবার ভিন্ন স্বাদের গল্প আনলাম যা অবশ্যই বাস্তব চিত্রও মন ভালোকরা positive গল্প। কেমন লাগল জানাতে ভুলবেন না যেন।
#আরাধনা
#সোমা_ত্রিবেদী
ভোগের কুপন মিলিয়ে ভোগ দেওয়ার জায়গাটাতে লম্বা লাইন পড়েছে। কুপন টাকার বিনিময়ে পাওয়া যায়। উদ্যোক্তাদের কথা আলাদা। "সূর্য তোরণের" পূজোর ভোগটা অসাধারণ হয়। হবে নাইবা কেন, দায়িত্বে এলাকার সেরা ক্যাটারার ভাই বন্ধু ক্যাটারিং আছে যে। উদ্যোক্তা কর্মকর্তা আর মোটা টাকা চাঁদা দেয় এমন কিছু পরিবারে তিনদিনের ভোগ যায় কমিটির তরফ থেকে। বাকি এলাকার সবাইকে আগের দিন কুপন কিনতে হয় তবেই মায়ের ভোগ জোটে।
খিচুড়ি আলুরদম চাটনি পায়েস, ছোট ছোট সাদা কন্টেনারে ভরছে তিনটে যুবক আর দুজন মিলে ক্যারিতে ভরে ভরে দিচ্ছে। পাঁচজন মিলে যেন হিমশিম দশা। প্রায় শতিনেক প্যাকেট হবে।
একশোর ওপর লোকের লাইন পড়ে গেছে। তার মধ্যেই এক অন্তস্বত্বা মহিলা সঙ্গে দুটি ছোট ছোট মেয়ে ও একটি বছর বারোর ছেলেকে সঙ্গে করে ভোগের ঘরের সামনে এসে দাঁড়িয়ে একটু ভোগ চাইতে লাগল। সে ওই পাঁচটি যুবকদের কেবল অনুনয় বিনয় করতে থাকে ভোগের জন্য।
ছেলেগুলির মুখে মহিলাকে দেখে আদি রসাত্মক ইয়ার্কি। তিন তিনটে বাচ্চা আবার পেটে একটা। খেতে দেবার ক্ষমতা নেই তাও বছর বছর.....
তাড়াতাড়ি হাত চালা রে তোরা, কি এতো হাসাহাসি করছিস রে বলতে বলতে ভোগের ঘরে সূর্য তোরণের সর্বময় কর্তা চক্রবর্তীদার প্রবেশ ছেলেগুলি চক্রবর্তীদা আসতেই সংযত হয়।
- তার মধ্যে চক্রবর্তীর স্নেহধন্য দিলীপ বলে, দাদা দেখুন না এই মহিলা কোথা থেকে চলে এসেছে গোটা কতক গাণ্ডা বাচ্চা নিয়ে। এখনো কুপনের সব ভোগ দিয়ে উঠতে পারিনি, কমিটির ভোগ তোলাই হয় নি আর এ খালি বলছে একে ভোগ দাও, আমরা কি করব বলুনতো।
- একি মুখের ভাষারে তোদের। গাণ্ডা বাচ্চা? ছি ছি। তা বলি মা দুর্গার কটা বাচ্চা রে? যত্ন করে তো পুজো করছিস। কান খুলে শুনে রাখ, এই মা তার বাচ্চাদের নিয়ে তিন দিনই আসবেন উনি আগে খাবেন তবেই সেই ভোগ বিতরণ হবে। সে কমিটিই হোক আর কুপনই হোক।
ছেলে গুলি একদম চুপ করে গেছে চক্রবর্তীদার শাসনে।
- চক্রবর্তীদা পিছন ফিরে মহিলাকে উদ্দেশ্য করে বললেন আসুন মা আমি আপনাকে নিজে বসিয়ে খাওয়াবো তবেই আজ জলগ্রহণ করবো। এই একটা টেবিল আর চারটে চিয়ার পেতে দে এনাদের বসা।
নিজেই পরিবেশন করতে লাগলেন। ওনারা পরিতৃপ্ত হয়ে খেয়ে উঠলে, সেই এঁটো পাতা চক্রবর্তীদা নিজে হাতে তুলে পরিচ্ছন্ন করে টেবিল মুছে ফেললেন। ওই মাকে করো জড়ে অনুরোধ করলেন বাকি দুদিন ও আসবেন এখানে ভোগ খেয়ে যাবেন।
- ওরা চলে যেতে দিলীপকে বললেন ওরে একটু জল দেরে আমাকে সুগার প্রেশারের ওষুধটা তো খেতে হবে নাকি।
- দিলীপ একটা এলুমিনিয়ামের জগ হাতে ছুটে এলো সঙ্গে দুটো সন্দেশ এগিয়ে ধরলো।
- চক্রবর্তী রসিকতা করে বললেন, কি ব্যপার দাদার বকা ধমকা ভালো লাগছে না বলে সুগার বাড়িয়ে মারতে চাস নাকি রে?
- দিলীপ মাথা নিচু করে বলে কি যে বলেন দাদা। আপনি যে মায়ের আরাধনা আজ করলেন, পুজো শেষে জল মিষ্টি দেবোনা। তবে আপনার এই খাওয়ানো নিয়ে রজতদা আর প্রশান্তদা ভালো চোখে নেয়নি।
- চক্রবর্তী ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন করলো, কি রকম?
দাদা ওই মহিলা নাকি জাতে মুসলমান, কুমারদা ওকে চেনে।
- চক্রবর্তী দিলীপের দিকে হাসি মুখে চেয়ে বলল, আমি কি জাতের তুই জানিস?
- দাদা আপনি তো হিন্দু ব্রাহ্মণ।
- দুর আমি নিজেই জানিনা, আর তুই বললি হিন্দু ব্রাহ্মণ। আমার মা বাবা আমাকে হোম থেকে দত্তক নিয়েছিল। পৈতেও দিয়েছে। তোদের ওই যে ব্রাহ্মণ পুজো করছে আমি তার থেকেও বেশি ধার্মিক। নিজের পৈতে দেখিয়ে বললেন রোজ তিন সন্ধ্যা আহ্নিক করি আজও। এবার বল আমার কি জাত। ওরে জাত কেউ নিয়ে জন্মায়না রে। জন্ম হওয়ার পর যে ধর্ম আমরা ধারণ করি আমরা সেই জাতের হয়ে যাই। গোঁড়ামি ছাড়। ধর্মে আদিতে যা। শান্তি পাবি।
- আর হ্যাঁ তোর ওই রজত আর প্রশান্ত কে একবার বলিস আমি ডাকছিলাম। তারপর দেখি কে কোন জাতের বুঝলি। যা পালা কাজে লাগ, তাড়াতাড়ি হাত চালা। আর আমাকে কিছু করতে হলে বলিস।
দিলীপ মন্ত্রমুগ্ধের মতন জগ হাতে নিয়ে ভোগের ঘরে ফিরে গেল।
___________________