#বাঁহাতি
#সোমা_ত্রিবেদী
মেয়েটাকে নিয়ে আর পারা যায় না। সেই উল্টো চটি পরে হাঁটতে গিয়ে পড়ে গেলো, হাঁটুটা কতোটা ছড়ে গেছে দেখোনা। কিছুতেই ডান বাঁ শেখাতে পারিনা গো।ছাড়ো অতো ভেবোনা বড়ো হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।হ্যাঁহ তোমার আর কি তারপর দেখবে ম…
#বাঁহাতি
#সোমা_ত্রিবেদী
মেয়েটাকে নিয়ে আর পারা যায় না। সেই উল্টো চটি পরে হাঁটতে গিয়ে পড়ে গেলো, হাঁটুটা কতোটা ছড়ে গেছে দেখোনা। কিছুতেই ডান বাঁ শেখাতে পারিনা গো।
ছাড়ো অতো ভেবোনা বড়ো হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
হ্যাঁহ তোমার আর কি তারপর দেখবে মেয়েটা ন্যাটা হয়ে গেল। আমাদের তো কই কেউ কোনোদিন এমন ন্যাটা ছিল না।
এইসব আলোচনার পরই একবাটি দুধসুজি করে বছর সাতেকের মেয়ে সমির দিকে এগিয়ে দিলেন শর্মিলা।
সমি নিজের বাঁ হাতটা বাড়িয়ে বাটিটা ধরতে গেলে শর্মিলা চেঁচিয়ে উঠল, বলেছিনা কেউ কিছু দিলে ডান হাত দিয়ে নিতে হয়।
সমি সরি সরি বলে বাঁহাতটা পিছিয়ে নিয়ে ডান হাতটা বাড়িয়ে নিজের প্রিয় দুধ সুজির পায়েসের বাটিটা কাছে নিল। সে জানে এবার মা এঘরে টুকটাক কাজ করার নাম করে তার ওপর নজর রাখবে সে চামচটা ডান হাতেই ধরেছে কিনা দেখার জন্য। সমি অনেকবার মা কে বলেছে ডান হাতে চামচে করে খেতে গেলে মুখে পুরোটা ঢোকানোর আগেই কিছুটা পড়ে যায়, মুখে চামচের খোঁচাও লাগে, তবুও মা বলেছে সব কিছুই অভ্যাস, ধিরে ধিরে ঠিক পারবে সমি। এটা ঠিক যে আগের থেকে ও এখন ভালই পারে ডান হাতে খেতে। সময় যদিও অনেক বেশি লাগে তাও মা খুশি হয় আর রাগারাগিও করেনা বলে সে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যায় ডান হাতে খাওয়ার।
খাওয়া তবুও যেমন তেমন যতো গোল বাঁধে লিখতে গেলে। কিছুতেই তাড়াতাড়ি লেখা যায় না। হাতের লেখাও খুব খুব খারাপ। সব সময় দিদিমণিদের অভিযোগ লেগেই থাকে। সমি মাকে অনেক বুঝিয়েছে, আমার লিখতে গেলে বড্ড হাত ব্যাথা করে বোর্ডের লেখা শেষ হওয়ার আগেই ঘন্টা পড়ে যায়, পরীক্ষা হলে দুঘন্টা মুহূর্তে ফুরিয়ে যায় আর তখনও অনেক উত্তর লেখা বাকি রয়ে যায়। অথচ সেই সব প্রশ্নের উত্তর গুলো আমার জানা। লিখতে গেলে অক্ষর গুলোও আমি উল্টো দেখি মা, আমি বাঁহাতে লিখলে ভালো পারবো গো, লিখিনা মা বাঁহাতে।
মা কিছুতেই মানতে নারাজ। চেষ্টা করো, চেষ্টা করলে সব হয়। তুমি কি কাউকে দেখছো বাঁহাতে কাজ করছে লিখছে, দেখো কেউ এমন করেনা। সমি ভেবে দেখে সত্যিই তো সে তো কাউকে অমন দেখেনি। মাও সমিকে যথেষ্ট সাহায্য করে এই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার পাওয়ার। রোজ ঘড়ি ধরে দুপাতা ডিক্টেশান দেয়। একদিন মা একটা নোয়া কিনে এনে বাঁহাতে পরিয়ে দিলো। এতে করে ডান হাত বাঁহাত গুলোগুলি বেশ কমে গেল। বড় হতে হতে উল্টো জুতো পরা আর লিখতে গিয়ে উল্টো লেখাটাও ধিরে ধিরে ঠিক হয়ে গেল। এখন সময়ের মধ্যেই লেখাও শেষ হয় আর ডান হাতে খেতেও সমস্যা হয় না। শুধু সমির নিজের মনে হয় যে তার ডান হাতের থেকেও বাঁহাতটা অনেক বেশি করিতকর্মা অথচ তাকে শুধু শুধুই বেকার করে রাখা হলো।
শৈশবের দিন পার করে এলো কৈশোরের দিন। টিভি চালাললেই অমিতাভ বচ্চন বাঁহাতে ঠাঁই ঠাঁই করে গুলি চালাচ্ছে দিব্বি। ক্রিকেটের মাঠে দাদাও বাঁহাতেই বল শাষন করছে দেখে সমি আশ্চর্য হয়। তবে এই তো আছে কেউ ঠিক আমারই মতন যে বাঁহাতে বেশি কর্ম নিপুণ। মাকে বলতেই, মা মানতে নারাজ। মায়ের বক্তব্য ছোট থেকে ঠিক মতন না শিক্ষা দেওয়ার ফল এটা।
এরপর দিন বদলের সঙ্গে মনের বিকাশ হয়। মানুষের বাঁহাতি হওয়া যে অত্যন্ত স্বাভাবিক ব্যাপার এটা সমি বুঝে যায়। এখন সে মধ্যবয়সী, হাতের লেখা তার আজও বড্ড খারাপ। তবে মনের মধ্যে প্রায়ই আসে যদি মা সেদিন তার স্বাভাবিক বাঁহাতি হয়ে ওঠার স্বাধীনতা দিতো তাহলে আজ আর লেখাগুলোকে লুকিয়ে রাখতে হতোনা।
~~~~~~~~~
(শব্দ সংখ্যা ~৫০০)