Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া সাহিত্য পত্রিকা দৈনিক সেরা সম্মাননা

(রাগী লেখকরা এবং যাঁদের রসবোধ কম, তাঁরা দয়া করে এই রচনাটি পড়বেননা)
#ফেসবুক,সাহিত্যচর্চা...এবং পিঠচুলকানো...(শ্রুতি নাটক)#সুস্মিতা 
স্থান - উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারের সাজানো গোছানো শয়নকক্ষ
কাল - রাত প্রায় সাড়ে দশটা
পাত্র - মধ্যবয়সী স্বাম…

 


(রাগী লেখকরা এবং যাঁদের রসবোধ কম, তাঁরা দয়া করে এই রচনাটি পড়বেননা)


#ফেসবুক,সাহিত্যচর্চা...এবং পিঠচুলকানো...

(শ্রুতি নাটক)

#সুস্মিতা 


স্থান - উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারের সাজানো গোছানো শয়নকক্ষ


কাল - রাত প্রায় সাড়ে দশটা


পাত্র - মধ্যবয়সী স্বামী (মাল্টি ন্যাশনাল কম্পানীতে উচ্চপদে আসীন।)


পাত্রী - স্ত্রী (আধুনিকা,মধ্যবয়সী)

         ******


স্বামী - (প্রসাধনরতা স্ত্রীর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে )

কি গো, আজ তোমাদের কোনও নৈশ সাহিত্যসভা আছে নাকি ?...হটাৎ এত রাতে সাজতে বসলে যে...


স্ত্রী - (মুখে রহস্যময় হাসি) ধ্যাত ...কি যে বলোনা ...রাত এগারোটায় সাহিত্যসভা...তোমার কি  মাথা খারাপ হল ?


স্বামী - (নিজের মাথায় হাত বুলিয়ে) না...মানে আজকাল তো তুমি প্রায়ই সন্ধ্যাবেলা সাহিত্যসভায় যাও...ফিরছও বেশ রাত করে ... 

তোমাদের অনেক লেখক লেখিকা বন্ধুরা সব অফিস কাছারি সেরে সেখানে পৌঁছান...

মানে ইয়ে সব মিলিয়ে বেশ রাতই হয়ে যায়...

তাই ভাবলাম, তোমরা বোধহয় অনুষ্ঠান শুরুটাই একটু দেরিতে করছ...


স্ত্রী - আরে না না...সেসব কিছু নয়, আজ একটু অন্য ব্যাপার। 

আজ ভাবছি একটু ফটোশ্যুট করব...

এ্যাই, প্লীজ একটু ভালো অ্যাঙ্গেল থেকে আলো টালো ঠিকঠাক করে সুন্দর কয়েকটা ছবি তুলে দাওনা গো...


স্বামী - ব্যাপারটা কিরকম হল ? তুমি তো লেখিকা হতে চাও...মানে সাহিত্যিক আর কি...

তা লেখিকার হঠাৎ এমন  নায়িকা হওয়ার বাসনা কেন ?


স্ত্রী - উফ...অত কথা তুমি বুঝবেনা ,ফটো তুলে দেবে কিনা বলো...


সেল্ফিতে না ছবিটা তেমন ভালো আসেনা...হাতটা লম্বা করে বাড়িয়ে ফোনটা মুখের সামনে ধরতে হয় তো...বাড়ানো হাতটা ফটোতে কেমন যেন পেত্নী পেত্নী লাগে...সেইজন্যই তোমাকে বলা...


স্বামী -(বিছানার আরাম ছেড়ে তার নড়তে ইচ্ছে করছেনা ,তাই শেষ চেষ্টা করে ) আরে বাবা, গত সপ্তাহেই তোমার মাসতুতো দিদির নাতনীর মুখেভাতে তো সেজেগুজে কত ছবি তুললে...মাত্র কদিন আগের কথা...একেবারে রিসেন্ট ফটো...


স্ত্রী - (স্বামীর কথা শেষ করতে না দিয়ে) মাই গড্ !ওই ছবিগুলো? প্রত্যেকটা ছবিতে কোলে বাচ্চা...পুরো একটা দিদিমা ঠাকুমা টাইপ ব্যাপার...

তুমিও কিন্ত ওসব ছবি কোথাও পোস্ট করবে না -বলে দিলাম


স্বামী - কেন ?কেন ?


স্ত্রী - বললাম না, তুমি বুঝবেনা


স্বামী - হ্যাঁ সোনা, আমি তো পৃথিবীর অনেক ব্যাপারই ভালো বুঝিনা, বিশেষ করে তোমাদের মহিলাদের ব্যাপার স্যাপার...তবে তুমি ভালো করে একটু বুঝিয়ে বললে কিন্তু...


বলোই না খুলে একটু...এসব ফটোশ্যুট্ ফুট কি ব্যাপার ?


স্ত্রী - (একটু নরম হয়ে) বলছি বলছি, আমার ছবিগুলো ভালো করে তুলে দেবে তো ?

তাহলে কাল সকালেই ফটোগুলো ফেসবুকে পোস্ট করে দিতে পারব।...ক্যাপশন কয়েকটা ভেবে রেখেছি...দেখি ছবির সাথে মিলিয়ে আরও কয়েকটা লিখে নেব...


স্বামী - (স্ত্রীর নরম কন্ঠস্বরে কাবু হন না এমন স্বামীর সংখ্যা আজও কম, তা বিবাহিত জীবনের বয়স যতই হোক না কেন ) আচ্ছা,দিচ্ছি দিচ্ছি ...তুমি সাজগোজ সেরে নাও, আমার ফোনটা ততক্ষণ ফুল চার্জ হয়ে যাক ...

তার আগে তুমি বলো তো ব্যাপারটা কি ?একটু খুলে বলো


স্ত্রী -(ড্রেসিংটেবিলের সামনে থেকে উঠে এসে বিছানায় স্বামীর কাছে একটু ঘন হয়ে বসে)

দেখো, তুমি তো আমাকে আজ এতগুলো বছর 

ধরে দেখছ...বলো আমি কি কোনোদিন তোমার সংসারকে অবহেলা করেছি ?

বলো, সত্যি করে বলো-তুমি তো শুধু নিজের মনে চাকরীই করেছ...তোমার ট্যুর, তোমার মিটিং...ছেলেমেয়েদের একলা হাতে কে মানুষ করল বলো ?


স্বামী - (মনের মধ্যে দু একটি জবাব ভেসে আসলেও সেসব তিনি মনেই রেখে দিলেন৷ মুখে কৃতজ্ঞতাসূচক হাসি ফুটিয়ে ) সে তো ঠিক কথা...একেবারে একশো ভাগ খাঁটি কথা। সংসারের জন্য মাত্র কয়েকটা টাকা রোজগার করা ছাড়া আমি আর সারাজীবন কিই বা করেছি...ঠিকই তো...


বলো বলো ...তুমি যা বলছিলে বলো


স্ত্রী - হ্যাঁ, সেইজন্যই বলছিলাম আর কি...এখন সংসারের সব দায়িত্ব সেরে টেরে আমার না খুব নিজের মনের একটা বাসনা পূরণ করতে ইচ্ছে করে...


স্বামী - (এবার সত্যিই গভীর মমতাসহ ) এটা তো খুব ভালো কথা...সত্যিই সারাজীবন তুমি সকলের জন্য অনেক খাটাখাটনি করেছ, সেবা করেছ।  ঠিকই তো, এখন তোমার নিজের আনন্দের জন্যই বাঁচা প্রয়োজন...একশোবার। 


তুমি সাহিত্য ভালবাসো, লেখালেখি করতে চাও মানে লেখিকা হতে চাও, সে তো খুব ভালো কথা...অবশ্যই তাই করবে। 

আশাপূর্ণাদেবী, মহাশ্বেতাদেবীদের মতো তোমার লেখাও সমাদৃত হবে - আমিও তো তাই চাই


স্ত্রী (উৎসাহিত হয়ে ) জানো, শুধুমাত্র লেখিকা নয়...আমি একজন সেলিব্রিটি হতে চাই...বুঝলে ?


স্বামী - (চোখদুটি এবার একটু গোল গোল হয়ে গেল ) মানে ? সেটা ঠিক কিরকম ?


স্ত্রী - ওইটাই তো বলছিলাম, তোমাকে যে ঠিক কিভাবে বোঝাই...তুমি না কিছু বোঝো না...


জানো, এই লেখালেখির দুনিয়ায় এসে বুঝলাম আজকাল না ফিল্মজগত বলো,মিউজিক,আর্ট,খেলার জগত সব জায়গাতেই তোমাকে হতে হবে একটা ফুল প্যাকেজ। 


সাহিত্যিক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করতে হলে শুধুমাত্র ভালো লেখাটাই কিন্ত এখন আর যথেষ্ট নয়...


স্বামী - (অবাক কণ্ঠে ) সে কি ? লেখকের কাজ তো শুধু লেখাই...


স্ত্রী - উঁহু বাবা, সেসব দিন  আর নেই। এখন লেখার সাথে সাথে চাই আরও অনেক কিছু...


স্বামী - যেমন...যেমন ? একটু ব্যাখ্যা করে বলো তো...


স্ত্রী - এই যেমন ধরো -আজকের পৃথিবীতে রিয়েল ওয়র্ল্ড আর ভার্চুয়াল ওয়র্ল্ড এর মধ্যে আর কোনো পার্থক্য নেই বুঝলে...ভার্চুয়ালটাই এখন সত্যিকারের পৃথিবী। 


অতএব সাহিত্যিক হতে চাইলেও এখন তোমাকে ফেসবুকের সাহায্য নিতেই হবে...ওটাই বর্তমানে যোগাযোগের আসল জায়গা...আর সেজন্যই তোমাকে হতে হবে ফুল প্যাকেজ...


স্বামী - (চোখদুটি আরও একটু বেশি গোল এবং মুখগহ্বরটি ক্রমবর্ধমান ) কিরকম...কিরকম ?


স্ত্রী - এই ধরো, তুমি প্রতি সপ্তাহে তোমার একটি করে রচনা ফেসবুকে পোস্ট করবে স্থির করেছ...


সেক্ষেত্রে ঠিক সিনেমা হলে ছবি রিলিজের মতো পাঠকের পালস্ টা  তোমাকে আগে থেকে একটু বোঝার চেষ্টা করতে হবে


মানে, পাঠক পাঠিকারা সব ব্যস্ত মানুষ, অতএব সপ্তাহের কোন দিন বা দিনের কোন সময়টা তাঁরা ফেসবুক দেখবেন এইসব আর কি...

গৃহবধূ পাঠিকাদের জন্য আলাদা স্লট...অনেকটা টিভি সিরিয়ালের মতো


মনে রাখতে হবে, উৎসব অনুষ্ঠানের সময় কিন্ত মানুষজন নিজেদের ছবি তুলতে এবং পোস্ট করতেই বেশি ব্যস্ত থাকেন। তখন ফেসবুকে কোনো সাহিত্যপাঠ নয়। অতএব সেই সময়ে গল্প কবিতা পোস্ট করলে কিন্তু ফ্লপ হওয়ার সম্ভবনাই বেশি...


ফিল্মী খবরে দেখতে পাও  না...রিলিজের ডেট নিয়ে সলমন শাহরুখরা কেমন মারামারি করে। ইদে সলমন তো ক্রিসমাস হৃতিকের ।


আরও আছে, সিনেমাতেও যেমন এডিটিংটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, কতটা কাটাকুটি যাবে...কতটা থাকবে, তবেই তৈরী হবে একটা নিটোল সিনেমা...সাহিত্যেও তেমনি ।


এসব আগেও ছিল ঠিকই ,তবে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ফেসবুক পাঠকের রুচি ,আচরণ ,পালস্ বুঝে নেওয়াটা খুব জরুরী। 


মানুষের এখন সময় কম, ধৈর্য্য আরও কম। বড় লেখা পড়ার অভ্যাসটাই চলে যাছে বুঝলে...

অতএব "কিস্ থিওরী" মেনে "কিপ ইট শর্ট এন্ড সিম্পল"। এখন হল টি-টোয়েন্টি, ইনস্ট্যান্ট নুডলস, ফ্রোজেন পরোটা আর অণুগল্পর বাজার ।


স্বামী -(জোরে জোরে মাথা নেড়ে )তা বটে ,তা বটে ...আজকাল সারাদিন ওয়াটসঅ্যাপে প্রচুর অণুগল্প পাই বটে ।এমন কি মাত্র ছয়টি শব্দের গল্পও চোখে পড়ছে... 


স্ত্রী - হুঁ হুঁ বাবা ,ওই জন্যই তো বলছিলাম...


তবে জেনে রাখো, অণুগল্প লেখা কিন্তু মোটেই সহজ নয়, সার্থক অণুগল্প লেখা  বিশাল কঠিন ব্যাপার।  কিন্তু সাইজ টাইজ দেখে অনেকেই ভাবছে -মনের মধ্যে যা জমা কথা আছে, দু তিন লাইন লিখে অণুগল্প বলে চালিয়ে দিই। 

  যার ফলে এখন সবাই লেখক। বাজারে যেমন এখন ক্রেতার থেকে বিক্রেতার সংখ্যা বেশি, সাহিত্য জাগতেও তেমন পাঠকের থেকে লেখকের সংখ্যা বেড়েই চলেছে ,তা সে লেখার মান যেমনই হোক না কেন...


অতএব, এই বাজারে জায়গা করতে হলে শুধু "লেখা" নয়, আরও অনেক কিছু চাই...


স্বামী -(একটু নড়েচড়ে উঠে বসে ) বাব্বা...ব্যাপারটা বেশ ইন্টারেস্টিং তো...বলো দেখি খুলে


স্ত্রী - মনে করো, তুমি প্রতি সপ্তাহে একদিন...যেমন প্রতি শুক্রবার একটি করে রচনা পোস্ট করবে স্থির করেছ...


কিন্তু বাকি দিনগুলো কি হবে? সেই দিনগুলো কিন্তু মোটেই ফাঁকা রেখে দেওয়া চলবেনা। ওই যে বললাম "ফুল প্যাকেজ"। ঠিক ফিল্মস্টারদের মত তোমাকে যেভাবেই হোক খবরে থাকতেই হবে


স্বামী -(একটু উত্তেজিতভাবে ) কিভাবে ?


স্ত্রী - আরে বাবা ,ওই বাকি দিনগুলোর মধ্যে একটা দিন হল তোমার ছবি পোস্ট করার দিন ।


লেখিকারা সুন্দর করে সেজেগুজে বাড়ির বাগানে, দোলনায়, চায়ের টেবিলে, ঘরের জানলায়, ছাদে ফুলের টবের পাশে বিভিন্ন পোজে ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করতে থাকবেন। এসবের সাথে মিষ্টি হাসি, কিশোরীসুলভ দুষ্টুমি...সব, সব থাকবে। 


লেখকরাও কম যাবেন কেন? তারাও কখনও  নৌকাভ্রমণে, কখনও  জঙ্গলে, কেউ কেউ বড় চাকুরীরত হলে, স্যুটবুটে কর্পোরেট লুকে ছবি তুলে পোস্ট করবেন


হ্যাঁ, ভালো কথা...এর সাথে সাথে লেখক লেখিকাদের পশুপাখির সাথে প্রেম-ভালোবাসার ছবি, অনাথ শিশু বা বৃদ্ধাবাসে গিয়ে দানধ্যান, সমাজসেবার ছবি, ফুটবল খেলতে গিয়ে পা মচকানো কিম্বা রান্না করতে গিয়ে ছ্যাঁকা লাগার ছবিও চলবে...মানে ভ্যারাইটি আর কি । সাহিত্যিকের জীবনের নানা দিক ফেসবুকে নিয়মিত তুলে ধরতে হবে।  


স্বামী -(মনে মনে স্মৃতি হাতড়ে ভাবছেন ,তাদের সময়ের বহু কালজয়ী সাহিত্যিক যেমন বিমল কর, বিমল মিত্র, রমাপদ চৌধুরী...বা আরও অনেকের চেহারা বা ছবি কতজন পাঠক দেখেছেন ? মনের কথা মনেই রেখে মুখে বললেন ) বাহ, ব্যাপারটা মন্দ নয় কিন্তু, সাহিত্য ছাড়াও সাহিত্যিকের জীবনের নানা ইনফরমেশন...ভালোই তো "ইনফরমেশন ইজ পাওয়ার"


স্ত্রী -(খুশি হয়ে ) দাঁড়াও, দাঁড়াও...আরও আছে, আমি তো সবেমাত্র সপ্তাহের দুটো দিনের হিসেব দিলাম। বাকি দিনের ইম্পরট্যান্ট কাজগুলোর কথা শুনবে না ?


(স্বামী অবাক চোখে চেয়ে মনে মনে ভাবলেন ...লেখালেখি ছাড়া এযুগের সাহিত্যিকদের ফেসবুকে আর কি গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকে শোনাই যাক...)


স্ত্রী -( এবার একটু সলজ্জভাবে) জানো, ফেসবুকে সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে সপ্তাহের একটা দিন খুব বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ...


স্বামী - কিরকম ?


স্ত্রী - সেই দিনটা হল "পিঠচুলকানোর দিন"


(স্বামীর চোখ এবং মুখগহ্বরের আয়তন ক্রমশ...সে যাক্ গে ,তার মুখ থেকে কোনও শব্দই নিঃসৃত হলনা )


স্ত্রী - হ্যাঁ গো, এই দিনটা দারুণ জরুরি, এটা হল "নেট ওয়ার্কিং"য়ের দিন। 


আগেই বলেছি, এখন পাঠকের থেকে লেখকের সংখ্যা বেশি। সকলেই লিখছেন এবং ফেসবুকে পোস্ট করছেন। এবং সকলেরই চাই প্রশংসার বন্যা ও স্বীকৃতি। অর্থাৎ ফেসবুকে লাইক আর কমেন্টস্ এর তুফান। 


তা, সেইজন্য একটা দিন হল একে অপরের পিঠচুলকানোর দিন। 

সমসাময়িক যত লেখক লেখিকারা আছেন(মানে তাদেরই সব পাঠক হিসেবে পেতে হবে তো), কমেন্টস্ য়ের মাধ্যমে প্রত্যেকের সাথে একটা মিষ্টিমধুর সম্পর্ক গড়ে রাখতে হয়। বাস্তবে কার সাথে কেমন  যোগাযোগ -ওসব ভাবার দরকার নেই... বলেছি না, ভার্চুয়ালটাই এখন রিয়েল। 


যাক গে, যা বলছিলাম, অন্যদের লেখা মনোযোগসহকারে পড়ো কিম্বা না পড়ো নিত্যনূতন অসাধারণ সব কমেন্টস্ কিন্তু লিখতেই  হবে। আর সেই সব মন্তব্যের মধ্যেও থাকবে সাহিত্যের ছোঁয়া... কে কত কাব্যিক মতামত দিতে পারে...এও কিন্তু একধরনের সাহিত্যচর্চা । আর শুধুমাত্র  লেখালেখিতেই  নয়, সমসাময়িকরাও যেসব ব্যক্তিগত ছবি যেমন তাদের বাগানের  ফল, ফুল, সব্জি, কারুর বাড়ির জলের গ্লাস, চামচের ছবি ইত্যাদি পোস্ট করেছেন -সেসবেও কমেন্টস্ লিখে নেটওয়ার্কিংকে শক্তিশালী করতে হবে। 


বুঝতেই তো পারছ  ব্যপারটা যথেষ্ট পরিশ্রমের। ক্লান্তির চোটে মাঝেমাঝে ছোটখাটো একটা দুটো শব্দেও মতামত জানানোর কাজ চালাতে হয়, এই যেমন শ্রদ্ধা, মুগ্ধ, কুর্ণিশ, স্নিগ্ধ,  ভালোবাসা...ইত্যাদি। 

কারণ কমেন্ট না করলে, তোমার নিজের লেখায় কমেন্টস্ আসবে কেন?


অতএব বুঝতে পারছ তো এই "পিঠ চুলকানো থুড়ি নেটওয়ার্কিংটা" কত জরুরি...


স্বামী -(একটি গভীর দীর্ঘশ্বাস এর সাথে ) হুমম


স্ত্রী - বুঝলে মশাই, সেলিব্রিটি হওয়া কি অতই সোজা? অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়...তবুও এখন আর কেউ শুধু সাহিত্যিক হতে চায়না, চায় সেলিব্রিটিই হতে ...


এখনও আর একটা বিরাট পদক্ষেপ আছে, শুনবে নাকি ?


স্বামী - আরে বলো বলো...


স্ত্রী -(আদুরে গলায় )এই ব্যাপারটাতে অবশ্য কিছু কিছু লেখিকাদের স্বামীদেরও একটু কন্ট্রিবিউশন থাকে...


স্বামী - কিভাবে? আমি তো মাথামুন্ডু কিছুই বুঝতে পারছিনা


স্ত্রী -আরে বাবা "অর্থনীতি" , ব্যপারটা একেবারে সিম্পল...কিরকম জানো ?


ফেসবুকের ছবি টবি থেকে আন্দাজ করে সমমানসিকতার বা সম অর্থনৈতিক অবস্থার 

লেখক লেখিকারা মিলে বেশ একটা ক্লাব টাইপের ব্যাপার করে ফেলতে  পারে


স্বামী - এ তো বেশ আনন্দের কথা...


স্ত্রী-একশোবার,

আজকের এই একলা হয়ে যাওয়া পৃথিবীতে এই মেলামেশাটা বেশ স্বাস্থ্যকরও বটে...


তারপর সকলে মিলে টাকাপয়সা খরচ করে বেশ সেভেন স্টার স্টাইলে নিজেদের বইটই, ম্যাগজিন প্রকাশ করা হয়, সেখানে বড় বড় হোমরাচোমড়াদের দিয়ে বই উদ্বোধন সঙ্গে আকাশপথে, গঙ্গাবক্ষে পার্টি...এসবও থাকে...


ব্যাপারটা কিন্তু দারুণ জানো...সাহিত্যচর্চার সঙ্গে আনন্দ অনুষ্ঠান...বেশ একটা কর্পোরেট স্টাইল...বিজনেস উইথ প্লেজার...


শুধু জানো তো, এত আনন্দের মধ্যেও কতগুলো মুখ আমাকে বড্ড এলোমেলো করে দেয়...সেই যে গো সেই আমাদের কলেজ জীবনের...তখন আমরাও কিরকম অন্যরকম ছিলাম। পেছন ফিরে নিজেকেই কেমন অচেনা মানুষ মনে হয়...

সেই একদল তাজা ছেলেমেয়ে... অসাধারণ সাহিত্য প্রতিভা দেখেছিলাম কত বন্ধুর  মধ্যে, চোখ জুড়ে কত স্বপ্ন...ওদের বোধ হয় আর কিছুই হয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি...দারিদ্র‍্যর কাছে সব স্বপ্নই হেরে যায়। অর্থনীতিই তো  ভাগ্যকেও নিয়ন্ত্রণ করে। 


স্বামী - বুঝলাম...কিন্তু এতসবের মাঝে তোমাদের প্রকৃত সাহিত্যচর্চাটা তাহলে কখন...


স্ত্রী -(স্বামীর কথা শেষ করতে না দিয়ে, অত্যন্ত সিরিয়াসভাবে ) দেখো, তোমাকে আমি সপ্তাহের তিনদিনের হিসেব দিয়েছি -একদিন রচনা পোস্ট, একদিন ছবি পোস্ট আর একদিন ইয়ে মানে পিঠচুলকানো।


এবার বলছি আরও তিনদিনের কথা - এই একটা জায়গায় কিন্তু সেকাল বলো, একাল বলো সাহিত্যিকদের মধ্যে কোনো ফাঁকি নেই ।রীতিমতো পড়াশুনা করে, খেটেখুটে, হৃদয়ের সমস্ত আবেগ ভালোবাসা মিশিয়েই সাহিত্যচর্চা, সাহিত্য রচনা করতে হয় । এই ব্যপারে কোনো কথা হবেনা বুঝেছ মশাই...


যুগের সাথে তাল মিলিয়ে অনেক কিছু বদলে যেতে থাকে, বদলাতে হয় সকলকেই...সেটাই স্বাভাবিক, কিন্তু বাঙালির  সাহিত্যপ্রেমে আজও কোনো ভেজাল নেই ।


(স্ত্রী এবার একটু গলা নামিয়ে )

স্ত্রী - নাও, ছয়দিনের হিসেব তো হয়ে গেল,  রইল বাকি আর একটা মাত্র দিন...

(গলার স্বর আরও নরম আরও আদুরে )

আর সেই দিনটা আজও শুধু তোমার, তোমার একার জন্য...


কথা শেষ করে লেখিকা স্ত্রী স্বামীর দিকে চেয়ে দেখলেন...কখন যেন তিনি ঘুমিয়ে পড়েছেন ।তার মুখগহ্বরটি তখনও হাঁ করে খোলা ।


পরম মমতায় স্ত্রী স্বামীর ঠোঁটদুটি বন্ধ করে দিলেন। 


(আধার কার্ড এর সঙ্গে শয়নকক্ষটির কোনো লিঙ্ক না থাকায় মুখবন্ধটি কিভাবে হল-সেটি গোপনই রইল ।)


সমাপ্ত