#সাক্ষরতা#পিউ_হালদার_আশ #০৮_০৯_২০২০ মালতীর মা লতা পৃথার বাড়িতে কাজ করে আজ প্রায় পাঁচ বছর হয়ে গেলো। মালতীর বাবা দিন মজুরের কাজ করে। লতা কয়েকটা বাড়িতে কাজ করে। ওদের একটাই মেয়ে মালতী। মালতী এখন পাঁচ বছরের। স্কুলে এখন ও ভর্তি …
#সাক্ষরতা
#পিউ_হালদার_আশ
#০৮_০৯_২০২০
মালতীর মা লতা পৃথার বাড়িতে কাজ করে আজ প্রায় পাঁচ বছর হয়ে গেলো। মালতীর বাবা দিন মজুরের কাজ করে। লতা কয়েকটা বাড়িতে কাজ করে। ওদের একটাই মেয়ে মালতী। মালতী এখন পাঁচ বছরের। স্কুলে এখন ও ভর্তি হয়নি।
পৃথা একজন শিক্ষিতা মহিলা। শুধু শিক্ষিতা বললে ভুল হবে, উচ্চ শিক্ষিতা।কলেজের প্রফেসর। পৃথার স্বামী সোমনাথ বাবু বড় ডাক্তার। ওদের দশ বছর বিয়ে হয়েছে কিন্তু কোনো সন্তান হয়নি। মালতী কে পৃথা খুব ভালোবাসে। মালতীর মা লতা একদম ই লেখাপড়া জানে না।তাই মালতীকে পড়াশুনা করানো খুব সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় লতার কাছে। ঐটুকু মেয়েকে কোথায় ই বা পড়তে পাঠাবে?? কাউকেই তো ভরসা হয় না।
পৃথা কলেজের পরেও বাড়িতে টিউশন পড়ায় আর ওর একটা নিজের ছোট্ট স্কুল আছে যেখানে গরীব ঘরের বাচ্চারা পড়তে আসে। শুধু তাদের পড়াশোনা নয় তাদের জামাকাপড়, খাওয়া খরচ সব পৃথার। ওর স্বামী প্রথম দিকে রাজী হয়নি। কিন্তু পৃথার কথা ভেবে রাজি হয়ে যায়। সেই চলছে ওর স্কুল। এখন ওর স্কুলে কুড়িটা বাচ্চা আছে।
একদিন লতা পৃথা কে বলে "বৌদিমণি তোমারে একখান কতা কইবো?? "
হ্যাঁ বলো,, কি বলবে?? টাকা পয়সা কিছুর দরকার??
না বৌদিমণি,, আমি তো নেকাপড়া জানিনি কিচু, মেয়েটারে এক্কেবারে কিচ্চু দেকাতে পারিনি,, আমার খুব ইচ্ছা নেকাপড়া শেকার।
ওওওও এই ব্যাপার।তা সেটা আগে বলবে তো?? এতদিন আমার বাড়িতে কাজ করছো, আমি এত ছেলেমেয়েকে পড়াই, এতদিনে তো অনেক কিছু শিখে যেতে।
আসলে নজ্জা করচিল বৌদিমণি,, ছেলেবেলায় বাবা মরে গেলো,, মাও একটা বে করে চলে গেলো, আমি অনাথ হয়ে পড়ে রইলাম। কেউ দেকার নেই। ওইটুকু বয়সেই দোকানে কাজ করে পেট চালিয়েচি। তারপর একটু বড় হতে লোকের বাড়ি কাজ ধরলাম, তারপর যকন আমার বয়স পনেরো বচ্চর তকন মালতীর বাপের সাথে আলাপ হয়, ও ও অনাথ ছিলো,, বিয়ে করে ফেললাম। কষ্টে শিষ্টে চলে যাচ্চে। তারপর তো তোমার সব জানা। মালতী হোলো। কিন্তু একন যেটা সমস্যা সেটা হোলো মালতী কে নেকাপড়া করাতে গেলে আমাকে তো কিচু শিকতেই হবে। আমার যদি না অক্কর জ্ঞান থাকে, তাইলে আমি মেয়েটারে মানুষ করবো ক্যামনে। তাই বলচি বৌদিমণি আমারে ও ওই বাচ্চাগুলোর সঙ্গে এট্টু নেকাপড়া শেকাবে??
নিশ্চয়ই শেখাবো। তোমার পড়াশোনার প্রতি এত আগ্রহ দেখে আমি খুব খুশি। প্রথমে তোমাকে দিয়ে শুরু করবো। তারপর দেখবে আশেপাশে যত নিরক্ষর মানুষ আছে সবাই এগিয়ে আসবে শিক্ষার আলোয় আলোকিত হতে। তোমার এই আগ্রহ কে কুর্নিশ জানাই লতা। পৃথার স্বামী ও খুব খুশি হয় লতার এই পড়াশুনার প্রতি আগ্রহ দেখে। সোমনাথ বাবু ও এগিয়ে এসে পৃথার হাতের ওপর হাত রেখে বলে
" আজ থেকে আমি ও চলবো তোমার সাথে। কোনো মানুষ কে নিরক্ষর থাকবে দেবো না। প্রত্যেকটা মানুষ কে আমরা শিক্ষার আলোয় আলোকিত করে তুলবো। তার জন্য যদি লোকের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরতে হয় তাই করবো। আজ থেকে আমরা অঙ্গীকার করলাম এই দেশের প্রতিটা মানুষ কে সাক্ষর করে তুলবো। প্রতিটা ঘরে ঘরে পৌঁছে দেবো শিক্ষার আলো। আর সেটা আজ থেকেই শুরু করবো। "
পৃথা বলে হ্যাঁ আজ থেকেই আমরা কাজ শুরু করবো। প্রত্যেকটা খেটে খাওয়া মানুষের বাড়ি বাড়ি যাবো। তাদের কে বোঝাবো। বাড়ির মেয়ে বৌ রা যারা লেখাপড়া জানে না অথচ প্রবল ইচ্ছা তাদের পড়াশোনা শেখার। সবাইকে নিয়ে আসবো আমাদের স্কুলে।আজ আমরা লতা কে দিয়ে শুরু করবো। দেখবে লতাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে আর ও সবাই এগিয়ে আসবে। তাহলে আজ বিকালে ঠিক পাঁচটার সময় লতা চলে আসবে আমার স্কুলে। আর একটা কথা আমি অনেক দিন ধরেই তোমাদের বলবো বলবো ভাবছি সেটা আজকের দিনেই বলি.....
আমি মালতীর সবকিছুর দায়িত্ব নিতে চাই। ওর লেখাপড়া, খাওয়া দাওয়া, সবকিছুর। এমনকি বড় হলে ওর বিয়ের দায়িত্ব ও আমার। আমার কোনো সন্তান নেই। আমার খুব ইচ্ছা ছিলো আমার সন্তান হলে তাকে মানুষের মতো মানুষ করে তুলবো। কিন্তু সেটা তো আর এই জনমে হোলো না, তাই মালতীর মধ্যে দিয়ে আমি সেই আশাটা পূরণ করতে চাই।
আজ বিশ্ব সাক্ষরতা দিবস। তাই আজ থেকে আমি মালতীর সবকিছুর দায়িত্ব নিলাম আর সঙ্গে নিলাম লতাকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করে তোলার অঙ্গীকার।
বিকালে স্কুলে গিয়ে পৃথা আর ওর বর স্কুল টাকে নতুন করে সাজায়। একটা বোর্ডে লেখা আছে
"বিশ্ব সাক্ষরতা দিবস"
ঠিক পাঁচটার সময় শুধু মালতীই এলো না,, সঙ্গে এলো আর ও চারজন মহিলা। সবার চোখে মুখে খুশির আলো ঝলমল করছে।
পৃথা আর সোযনাথ একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে গান ধরে
"আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে, এ জীবন পূর্ণ করো
এ জীবন পূর্ণ করো দহন দানে...... "