Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-সম্মাননা

বিশ্বকর্মা পুজো আর ঘুড়ি, জড়াজড়ি করে এই উৎসব। আজ ঘুড়ি ওড়ানো নিয়ে একটি অণু গল্প লিখলাম।
                             ভো কাট্টা
ঘুড়ির ওড়ানোর স্মৃতির সাথে, আমার ভাই তুয়া জড়িয়ে আছে  লাটাই সুতোর মত।আট বছরের মা মরা ছেলে, মায়ের স্মৃতি আর ঘ…

 



বিশ্বকর্মা পুজো আর ঘুড়ি, জড়াজড়ি করে এই উৎসব। আজ ঘুড়ি ওড়ানো নিয়ে একটি অণু গল্প লিখলাম।


                             ভো কাট্টা


ঘুড়ির ওড়ানোর স্মৃতির সাথে, আমার ভাই তুয়া জড়িয়ে আছে  লাটাই সুতোর মত।

আট বছরের মা মরা ছেলে, মায়ের স্মৃতি আর ঘুড়ি ওড়ানোর মধ্যই জীবন কাটায়।  মামা র্বাড়িতেই থাকে তারা খুবই ভালবাসে কিন্ত, “মা” তো মা।

তাকে খুঁজে বেড়ায় পৃথিবী জুড়ে।


প্রতিটি গাছে মায়ের নাম, বা ছবি আঁকা, বেলুনে খোলা চুলে মায়ের ছবি, স্পষ্ট নয় কিন্ত ভালবাসায় সুগন্ধিৎ। 

কবিতা লিখত খুব সুন্দর কিন্ত বেশির ভাগ মাকে নিয়ে। মামীমা খুব ভালবাসতেন তুয়াকে। সারা পাড়ার আদরের ছেলে, কারুর সাথে ঝগড়া বিবাদ ছিলনা

 শুধু আমার সাথেই চলত ঝগড়া। তার সব কিছু দেখতে হবে পড়তে হবে আবার মন্তব্য ও চাই।

ঘুড়ি নিয়ে ছিল পাগলামি।


সেপ্টেম্বর মাস পড়লেই সাজ- সাজ রব। লাটাই আর সুতো নিয়ে আমাকে যে কতবার বাজার যেতে হত অবশ্যই মামা ছিলেন সঙ্গী। 

ছাতে যেন মেলা বসত,  তুয়া, আমি, মামা- মামী,তুয়ার বন্ধুরা। রকমারি ঘুড়িতে ছবি আর কবিতা লেখা। 

ফর্সা রঙ, একমাথা কোঁকড়া চুল, আর মামীর পছন্দের লাল, হলুদ অপূর্ব দেখতে জামা আর পাঞ্জাবি। ভাইটি আমার রাজকুমার। 

লাটই থাকত আমার হাতে তুয়ার হাতে ঘুড়ি,মস্ত নীল আকাশে রঙিন ফুলের মত উড়ছে কত ঘুড়ি তার মাঝে আমার তুয়ার আশ্চর্য ঘুড়ি উড়ছে। 


যদি কোনদিন ঘুড়ি কেটে গেল, ব্যাস তুয়া রেগে আগুন। মন খারাপ, কান্না আর আমায় দোষারোপ, তোর জন্যই হল, লাটাই ধরতে পারিস না। 

তাই ভো--কাট্টা শুনতে হল। আমিও কান্না জুড়ে দিতাম আড়ি হয়ে গেল।

মামী মামা ছুটে এসে আমাদের আদর করে ঠান্ডা করত।

এলো সাতরেই সেপ্টেম্বর বিশ্বকর্মা পুজো ঘুড়ি উড়াবার বিশেষ দিন। তুয়া সবুজ রঙের ডেড়- তে ঘুড়িতে মাকে চিঠি লিখল----------

বিশ্বকর্মা পূজা অবধি এতদিনে সে কয় জনের ঘুড়ি কেটেছে আর তার কটি ভো–- কাট্টা  শুনতে হয়েছে দিদিটার জন্যে।

 সব কথা, আরও অনেক নালিশ, তার পোষা কুকুর বাচ্চাটার নামে, টিয়াটা খুব দুস্টু হয়েছে তুয়াকে দেখলেই বলে পড়তে বোস। চিঠির নিচে আমারও নাম সই করতে হলো।

মামা মামী নিচেই ছিল স্পেশাল নাড়ু বানাচ্ছিল ভাইয়ের জন্যে একটু পরে আসবে।আমার হাতে গুছিয়ে লাটাই ধরিয়ে ভাই সেই ঘুড়ি ছাড়ল বাতাসে। 

আস্তে-আস্তে আকাশে উঠতে শুরু করল, সবুজ রঙ ছোট হতে লাগল ভাই ঘেমে নেয়ে সুতো ছাড়ছে, উত্তেজনায় মুখ লাল,দিদি, দিদি লাটাই সামাল বলে চলেছে। ওর আনন্দ চিৎকারে পাড়া সচকিত। 

ভাইটি তুয়ার বিশ্বাস এই ঘুড়ি মায়ের কাছে পৌঁছবেই কেউ কাটতে পারবে না।


হঠাৎ যেন বজ্রপাত হল ভো---কাট্টাআআ--- তুয়া আআআ  ভেসে এলো কারোর গলার স্বর। দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ভাই আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দ্রুত গতিতে সিঁড়ি বেয়ে নামতে লাগল। আমিও মামা- মামী--তাড়াতাড়ি রাস্তায়--তুয়া--ঘুড়ি কাটা-- বলতে -বলতে রাস্তায় ছুটছি, পিছনে মামা-মামী কিন্ত------------–---

তুয়া শুধু আকাশের দিকে তাকিয়ে ছুটছে, সামনে ছিল পাড় ছাড়া পাথুরে এক কুয়া।


শব্দ হল ঝপাং, আর্তনাদ মাআআআআআ-------- তারপর সব নিস্তব্ধ।

শুধু নারকেল পোড়ার গন্ধ উঠছে চারিদিকে।


                       সেনগুপ্ত কথামালা।