Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া সাহিত্য পত্রিকা দৈনিক সেরা সম্মাননা

আমার লেখা খুব প্রিয় একটি গল্প 
প্রাক্তণ নবনীতা সই বড় গল্প 11.9.20
পাড়ার সবচেয়ে টম বয় মেয়েটার আমার বন্ধু ছিলো৷ বব কাট চুলের বাবি কে ছোটোবেলা থেকেই বন্ধু ভাবতাম, বান্ধবী না৷ আমাদের বাড়ি দুটো ছিলো পাশাপাশি৷ বাবির মা আর আমার মা যখন টিভ…

 


আমার লেখা খুব প্রিয় একটি গল্প 


প্রাক্তণ 

নবনীতা সই 

বড় গল্প 

11.9.20


পাড়ার সবচেয়ে টম বয় মেয়েটার আমার বন্ধু ছিলো৷ বব কাট চুলের বাবি কে ছোটোবেলা থেকেই বন্ধু ভাবতাম, বান্ধবী না৷ আমাদের বাড়ি দুটো ছিলো পাশাপাশি৷ বাবির মা আর আমার মা যখন টিভির সিরিয়াল বা পাড়ার সকল বৌয়ের কার কি গুন নাই এসব নিয়ে গল্প করতো তখন আমি বাবি দোতলার ছাদে বসে ঘুড়ির সুতোয় মাঞ্জা দিতাম৷ নারকেলের ডেগো দিয়ে ব্যাট বানাতাম৷ 

বাবির ছোটো বোনটা লেজুড় হয়ে থাকতো৷ কিন্ত সব খেলায় সবসময় সে দুধেভাতে৷ আধো আধো স্বরে কথা বলতো বুলি৷ আমরা গুলু ডাকতাম ওকে৷ দুজনে একসাথে স্কুলে গেছি, ক্রিকেট খেলেছি৷ আমার মা বাবিকে দেখতে পারতো না৷ মেয়েদের অত ছটফটানি তার কাছে ভালো না৷ এক তো তিনি পুত্র সন্তানের মা৷

 তাতে তিনি  গর্বিতা৷ 

আর দু দুটো মেয়ে নিয়েও সুরমা কাকি তার কাছে হেয় হবেনা সেটা তো চরম অন্যায় মনে হতো মায়ের৷ 

কিন্তু সুরমা কাকি ছিলো সরল সোজা৷ খুব মিশুকে৷ মেয়েদের ভালোবাসতেন,  শাসন কম করতেন৷ বাবির বাবার বাজারে বড় দোকান ছিলো জমাকাপড়ের৷ আর আমার মায়ের দ্বিতীয় গর্ব আমার বাবা সরকারী চাকুরে৷ 

হোকনা বাবির বাবার থেকে আয় কম, সামান্য চাকরী৷  কিন্তু চাকুরে তো? যেন চাকরীটা মা করতেন তেমন ভাবেই বলতেন৷ 

মেয়েদের নিয়ে সুরমা কাকি কোনদিন গর্ব করেননি৷ কিন্তু হেয় করেননি৷ তাই বাবি ছিলো পাড়ার মস্তান আবার সব ব্যাপারে এগিয়ে৷ আমি পড়াশুনায় খুব ভালো ছিলাম৷ বাবি ফাস্ট হলে আমি সেকেন্ড৷ আর আমি ফাস্ট হলে বাবি সেকেন্ড৷ খেলাধুলায় বাবি দুহাত এগিয়ে ছিলো৷ সাঁতার কাটা হোক বা গাছে ওঠা সব সময় বাবি আগে৷ স্বরসতী পুজোর সময় ফুল চুরি হোক বা পাশের বাগানের আম চুরি বাবি প্রথম৷ 

আমি সত্যি বলতে বাবির লেজুড় ছিলাম৷ পাড়ার বাকি ছেলেরা আমায় হিংসা করতো৷ বাবিকে ভয় পেতো৷ মারধোর করা লাগতো না বড় বড় চোখে তাকালেই অনেকের পিলে চমকে যেতো৷  

আমি আর বাবি কোনদিন পুতুল খেলা বা রান্নাবাটি খেলিনি কিন্তু অফিস অফিস, স্কুল খেলায় সবসময় বাবি হেড৷ বাবির বোনটাকে নিয়ে আমরা খুব মজা করতাম৷ তুলতুলে গাল আর ফর্সা মুখের হাসি খুব ভালো লাগতো৷ 

স্কুলে সেবার খেলায় বাবি জেলায় চান্স পেলো৷ আবার কাপ জিতেও আসলো৷ সবাই মিলে পিকনিক করেছিলাম বাবিদের বাড়ির পিছনের বাগানে৷ হইহই ব্যাপার৷ বাবি কাঠ কুড়িয়ে আনছে৷ সবজি চুরি করতে গেলাম হেদোর মাঠে ভোরবেলা৷ বেগুন আর লঙ্কা৷ মনে আছে লঙ্কা গাছে পিঁপড়ে থাকে বলে বাবি আমায় ঢুকতে দেয়নি৷ নিজে কামড় খেয়ে তুলেছিলো বড় বড় বুলেট লংকা৷


আমি বাবির এ্যাসিট্যান্ট হয়েই খুশি হতাম৷ সবথেকে ভালো লাগতো পুজোর সময়৷ মহালয়ার দিন ভোরবেলা বাবি চুপি চুপি আমাদের ঘরের জানালায় টোকা মারতো৷ আমি বেরিয়ে আসতাম৷ মা যাতে জানতে না পারে পা টিপে টিপে গেট পার হয়েই ছুট৷ দুজনে যেতাম মণ্ডপে৷ পাড়ার একমাত্র পুজোর মণ্ডপ৷ 

বাঁশে দোল খাওয়া আর বসে বসে প্ল্যান আজ কি কি ফুল কোথা থেকে চুরি হবে৷ 

মনে আছে একবার  নারকেল গাছে উঠতে গিয়ে পা কেটেছিলো বাবির৷ বাড়িতে ওর থেকে বেশী বকা আমি খেয়েছিলাম৷ পুজোর কটা দিন হাতে কালো পিস্তল নিয়ে সারাদিন ক্যাপ ফুটাতাম৷ বাবি ছিলো সবকিছুতে ওস্তাদ৷ 

পরে আমরা হাইস্কুল চলে গেলাম৷ ক্লাস ফাইভ থেকে পড়ার চাপ বাড়লো৷ আস্তে আস্তে ছোটোবেলাটা ছোটো হয়ে গেলো৷ ঘরে ঘরে টিভি পরে ফোন৷ সবাই নিজেকে কেমন গুটিয়ে নিলো৷  বাবি কিন্তু পাল্টায়নি তখনও৷ আমি পাল্টে ছিলাম৷ মেয়েদের সাথে খেলবো? ছেলে বন্ধুরা হাসবে৷ আস্তে আস্তে রুচি পাল্টালো৷ আমরা পাল্টালাম৷ বাবি রয়ে গেলো একরকম৷ 


তখন ক্লাস নাইন৷ যদিও রোজ বাবির সাথে দেখা হতো কিন্তু বন্ধুত্ব টা পাল্টে গিয়েছিলো৷ বাবির গায়ে ওড়না উঠলো ওর ছটপটে মনটাকে আটকাতে না পারলেও খেলাগুলো বদলে গেলো৷ তখনও বাবি আমাদের সাথে আড্ডা দিতো৷ গুলু বড় হয়েছে আর হয়েছে একদম সরলা কাকির মতন৷ আমার সাথে কথা বলতে লজ্জা পেতো৷ আমার মায়ের গুলুকে খুব ভালো লাগতো৷ 

যখন কলেজে গেলাম দুজনে,  তখন বাবি পূর্ণ যুবতী৷রোদ পোড় খাওয়া রঙ , চেহারায় কাঠিন্য বাবিকে আর সবার থেকে আলাদা করে রাখতো৷ কলেজের ডিবেট হোক বা কোনো ফাংশান বাবি সবার আগে৷ কিন্তু রেজাল্ট ভালো৷ 

আর গুলু তখন হাইস্কুলে পড়ে৷ রূপসী বলে তখনই গুলুকে শুধু দেখার জন্য স্কুলে ছেলেদের লাইন পড়তো৷ টানা টানা হরিণের মতন চোখদুটি মায়া ভরা৷ আমাদের বাড়িতে আসলে সবসময় মায়ের পায়ে পায়ে ঘুরতো , কাজ করতো৷ আমার ঘর গুছাতো৷ মা তো গুলুর প্রশংসায় পঞ্চমুখ সবসময়৷ গুলু ছাড়া বাড়িতে পুজো হোক বা কোনো অনুষ্ঠান অসম্ভব৷ গুলু মায়ের সহচর ছিলো৷ লাজুক মিষ্টি গুলু৷গুলু  আমার দিকে তাকাতেও লজ্জা পেতো৷ আমি কি পছন্দ করি না করি সব ছিলো গুলুর নখদর্পণে৷ বাবি যখন কলেজে নবীনবরণ নিয়ে মেতে তখন গুলু মায়ের কাছে সেলাই শিখছে৷ পড়াশুনায় খুব ভালো ছিলোনা কিন্তু ফেল করতো না৷ মা আর সরলা কাকি আমাকে  গুলুকে পড়াতে বলতেন৷ আমি সকালে গুলুকে পড়াতাম৷ বাবি আমাকে ফুল চুরি করাতে নিয়ে যেতো আর গুলু রোজ ফুল এনে পড়ার টেবিলে রেখে দিতো৷ আমিও প্রথম কতৃত্ব করার মতন কাউকে পেয়েছিলাম৷ আচ্ছা করে গুলুকে বকতাম৷ মাঝে মাঝে গাধা গরু বলে কাঁদাতাম৷ গাট্টা ও দিয়েছি৷ মা আমাকে বকতেন, বলতেন থাক অত জজ ব্যরিস্টার বানাতে হবেনা ওকে৷ যাতে আমি বকা না খাই গুলু সবসময় মুখ বন্ধ করে কাঁদতো৷ ওর দীঘল চোখের থেকে বড় বড় জলের ফোঁটা গালে গড়িয়ে পড়তো৷ গুলুকে কাঁদিয়ে আমি কেন মজা পেতাম জানিনা৷ কিন্তু গুলুও মনেহয় কেঁদে সুখ পেতো৷


কলেজ শেষ করতেই চাকরীর খোঁজ শুরু৷ চাকরীর পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন জায়গায় যেতে হতো৷ তাই বাবির সাথে দেখা হতো কম৷ ছোটোবেলার মতন হইহই না হোক বাড়িতে থাকলেই আমি বাবির সাথে আড্ডা দিতাম৷ সৌভাগ্য ক্রমে আমি চাকরী পেয়ে যাই৷ সরকারী নয়৷ সরকারী চাকরী তো এখন সোনার পাথরের বাটি৷ বেসরকারী কিন্তু কাজটা ভালো৷ চাকরীতে সব আছে৷ প্রমোশনের সুবিধা, প্রভিডেন্ড ফান্ড, চিকিৎসার জন্য সুযোগ সুবিধা সব৷ যদিও আমার মায়ের সরকারী চাকরী একান্ত পছন্দ তবুও ভালো চাকরী তো৷ আর ছেলেদের তো সব ভালো৷ মায়ের বুক গর্বে আরও ফুলে ওঠে৷ আমার চলে যেতে হয় কোলকাতা৷ আমার অফিস ছিলো সেক্টর ফাইভে৷ আমি নিউটাউনে একটা ফ্ল্যাট ভাড়া করে থাকতে শুরু করি৷ প্রথম একমাস মা সাথে ছিলো৷ সবগুছিয়ে দিয়ে পরে চলে গেছেন৷ ওখানে আবার বাবা একা৷ বাবার ও অফিস আছে৷ রান্নাবান্নার পাট নাই ক্যান্টিন আর কেনা খাবারে কদিনেই অভ্যস্থ হয়ে গেলাম৷ শুক্রবার বিকালে সোজা বাড়ি চলে যেতাম আবার সোমবার সোজা অফিসে ঢুকতাম৷ ঐ দিন দুটোয় পেট ভরে খেতাম৷ বাকি দিনে খেতাম না গিলতাম৷ যেহেতু দুদিকেই থাকতাম তাই কিছু জামাকাপড় গ্রামের বাড়িতেও থাকতো৷ যখনই যেতাম সেগুলো ধোয়া আর সুন্দর করে গুছানো পেতাম৷ হাতের স্পর্শ বলে দিতো গুলুর কাজ৷ মা যখন ছিলোনা বাড়ি গুলু বাবার খুব দেখাশুনা করেছে৷ গুলুর জন্য একটা গিফট কিনেছিলাম কিন্তু দেওয়া হয়নি৷ 

 মায়ের আদরের সোনাবাবু শহরে এসে বেশ কমাস লাগলো সামলাতে৷ কিন্তু সব জায়গার নিজস্ব আবেদন থাকে৷ অফিস, কলিগ, আড্ডা , তিলোত্তমা কোলকাতা অচিরেই আমাকে নিজের করে নিলো৷ আমিও গ্রামে মাঝে মাঝেই যেতাম না উইক এন্ডে ৷


সেই সময়টা বাবির সাথে আমার যোগাযোগ কমে গেলেও মায়ের কাছে খবর পেতাম৷ ঐ সমালোচনার আড়ালে৷ গুলুর গুনগান আর বাবির নিন্দা৷ মায়ের বেশী লেগেছিলো বাবি যেহেতু সরকারী চাকরী পেয়েছিলো৷ রেলের চাকরী৷ মেয়েরা চাকরী করবে তাও আবার নিজের ছেলে যখন পায়নি , মায়ের সহ্য হয়নি৷ তাও যদি স্কুল মাষ্টারি হতো৷ অনেকের মতন আমার মায়ের ও ধারণা মেয়েদের চাকরী করা ভালো না আর একান্ত করলে স্কুল টিচার৷ সেইখানে রেলে চাকরী?? 


অফিস কামাই করে আমাকে গ্রামে যেতে হয়েছিলো বাবার শরীর হঠাৎ খারাপ হওয়াতে৷ হার্টের সমস্যা ধরা পড়লো৷ মা তো কেঁদেকেটে অস্থির৷ সম্পর্কের অদ্ভূত এক শিকল৷ সারাদিন দুজনে খিটিমিটি লেগে থাকে৷ কিন্তু যেই একজনের শরীর খারাপ হয় তখন বোঝা যায় কতটা টান আছে দুজনের৷ বাবাকে বললাম স্বেচ্ছা অবসর নিতে৷ তখনও চারবছর চাকরী৷ ডেলি প্যাসেঞ্জারী করে যাতায়াত করা খুব কষ্টের৷ মা সায় দিলো৷ বাবার সব সঞ্চয় আর পি এফ দিয়ে আমি নিউটাউনে ফ্ল্যাট কিনে নিলাম৷ মানে বাবা ই কিনে দিলো৷ পৈতৃক বাড়ি আমাদের, সাথে বাবার পেনশান৷ আমিও টাকা পাঠাতাম৷ ভালো ভাবেই চলে যতো৷

 বাবা কিছুতেই আমার ফ্ল্যাটে থাকতে চাইতোনা৷ শহরের কোলাহল বাবা ভালোবাসতো না৷ প্রতিমাসে বাবাকে ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ কিনে আবার গ্রামে দিয়ে আসতাম৷ মা ব্যস্ত হয়ে গেলো আমার বিয়ের জন্য৷ আমি পুজোর ছুটিতে গেলাম বাড়ি৷ ইচ্ছা মনের কথা এবার বলে দেবো৷ 

গ্রামে পৌছে পরেরদিন ই গেলাম বাবিদের বাড়িতে৷ বাবি একটুও পাল্টায়নি৷ সেই চঞ্চলতা আজও আছে৷ হ্যাঁ বড় হয়েছে বলে কিছুটা মার্জিত হয়েছে৷

 শুনলাম বাবি চাকরী ছেড়ে দিয়েছে৷ আকাশ থেকে পড়লাম৷ সরকারী চাকরী কেউ ছাড়ে? বাবি পড়ছে wbcs দেবে৷ মেয়েটাকে যত দেখি অবাক হয়ে যাই ৷ খুব আড্ডা হলো৷ অনেকদিন পর৷ সুরমা কাকি বেশ যত্ন করে খাওয়ালেন৷ গুলু তো সামনে আসতে লজ্জা পায়৷ আরও লজ্জা পাচ্ছে৷ আমি সুযোগ খুঁজছিলাম একান্তে কথা বলার৷ 

খাওয়ার পর রাতে ছাদে গিয়ে দাঁড়ালাম৷ আজ ঝকঝকে আকাশ৷ বাবিকে বললাম চল চেয়ার নিয়ে বসি৷ গুলুকে বললাম দুটো চা দিয়ে যা তো ৷ গুলু নীচে নেমে গেলে বাবিকে বললাম তোর প্ল্যান কি?

কিসের প্ল্যান? 

আরে কি করতে চাস?

এ ওয়ান গেজেটেড অফিসার হতে চাই৷ 

তারপর?

তারপর কি যেখানে পাঠাবে চলে যাবো তল্পিতল্পা গুটিয়ে৷ ভাবছি গুলুর বিয়ে হয়ে গেলে ,  বাবা মা কে  নিয়ে যাবো৷ বুড়ো  না হতে যেতে চাইবে না৷  দেখিস না তোর বাবা৷ কিছুতেই গ্রাম ছেড়ে নড়তে চায়না৷ আসলে কি জানিস এরা অস্তিত্ব হীনতায় ভোগে ৷ এ বয়সে এসে নতুন জায়গায় মানিয়ে নেওয়া কষ্ট৷ 

জানি৷ আমি সেজন্য জোর করিনা৷

তারপর?

তখন থেকে তারপর তারপর করছিস কেনো?

না বিয়ে থা?

বিয়ে? তোর মনে হয় আমি বিয়ে সংসার করার জন্য ? ধুর শালা পুরুষের শরীরের নীচে না পিষলে কি জীবন চলবে না?

তা নয় কিন্তু?

কিন্তু কি? আরে আমার মতন মেয়েকে কে ভালোবাসবে? 

ভুল৷

আরে না৷ বাবা মা কে দেখতে হবে৷ 

সে তো বিয়ের পর দেখা যায়৷ 

পরের বড়িতে রেখে? তুই পারবি? তোর বাবা মা কে অন্যের বাড়িতে রাখতে? আমাকে পারতে হবে? কেন? মেয়ে তাই? আমাদের অদ্ভূত সমাজ৷ মেয়েরা সম্পত্তির ভাগ নেবে তখন শশুর বাড়ির লোকেরা চুপ৷ বাবা মায়ের দ্বায়িত্ব নিতে গেলে , মেয়ের বাড়িতে থাকলে অপমান৷ সেই মেয়ের বাড়ির টাকায় ছেলের পোদে বাইক , গলায় চেন ঝুলছে তাতে অপমান নেই৷

বাবা মা জন্ম দেবে, পড়াবে, মানুষ করবে কিন্তু বিয়ের পর তাদের টাকা আপন তারা পর৷ 

সব ছেলে সমান হয়না৷ 

আরে না হোক৷ হয়ত মা বাবাকে তার সাথে রাখবে কিন্তু আমার মা বাবা তাদের বাড়ি থাকবে কেন? 

তার মা বাবা তাহলে থাকবে কেন?

সেটাই রে৷ আমি জানি এ সমস্যার সমাধান নেই৷ আমি চাইনা বিয়ে করতে ৷ 

পুরো জীবন একা থাকবি?

আমার মতন মেয়েকে নিয়ে কে সংসার করবে? না আছে রূপ না ..

বাজে বকিস না৷ তোর অনেক গুন৷

সেটাও সমস্যা ইগোর সমস্যা৷ বৌদের বেশী প্রতিভা ছেলেরা জাস্ট নিতে পরেনা৷

যে ভালোবাসে সে সব পারে৷ 

আর চাকরী? আমার তো বিভিন্ন জায়গায় পোষ্টিং হবে৷ তখন? 

ওমন চাকরী করার দরকার কি?

দেখেছিস? এটা যদি তুই পেতিস তাহলে তোর মা বলতো? বৌ কে তোর সাথে যেতে হতো৷

কথাটা খুব গায়ে লেগেছিলো, পরে অনেক ভেবেও এর উত্তর পাইনি৷ কিন্তু তখন মনে হয়েছিলো আমি সরকারী চাকরী পাইনি বলেই হয়ত বাবি আমাকে ব্যঙ্গ করলো৷ হায়রে মন৷  মুখটা অন্ধকারে তখন বাবি দেখতে পায়নি, আমি বললাম হুম ঠিক৷ 

বাদ দে৷ আমি তোর জন্য খুব হ্যাপি৷ 

কিসের জন্য?

আজ তোর মা এসে বিয়ের কথা বলে গেলো৷

মানে?

জানিস না যেনো? গুলুর সাথে ৷ শালা তোরা তলে তলে কবে জল খেলি বলতো?

তুই জানবি কি করে? তুই কোনদিন আমার খোঁজ নিয়েছিস৷

গুলু খুব ভালো মেয়ে৷

আমি জানি৷ কবে বললো মা?

আজই আসলো৷ দেখিস না গুলু লজ্জায় লাল হয়ে গেছে৷ আমার আদরের বোনটাকে ভালো রাখিস জয়৷

তোর বোন আমাকে ভালোরাখবে৷


বাড়ি ফিরে ঘরে গিয়ে টানা শুয়ে পড়লাম৷ ভেবে পাচ্ছিলাম না৷ কি বলতে গিয়েছিলাম কি হলো? গুলু কে বিয়ে করা যে কোনো ছেলের জন্য সৌভাগ্য৷ কিন্তু আজীবন মনের মধ্যে বাবির প্রতি ভলোবাসাকে সযত্নে লালন করে আজ..

মা ডাকতে বাইরে গিয়ে দেখি বাবা মা দুজনেই বসে আছে৷ 

শুনেছিস তোর বিয়ের কথা বলেছি?

আমাকে তো জানাও নি? 

এতে জানানোর কি আছে? মেয়েটার জন্য হাজার সমন্ধ ঘুরঘুর করছে৷ আমিই তো বলে কয়ে আটকে রেখেছিলাম এতদিন৷ গুলু না না আর গুলু বলা যাবেনা ওর ভালো নামটা যেন কি গো?

বুলু৷ 

হ্যাঁ গা বুলু নামটা ভালোনা ৷ বিয়ের পর বেশ সুন্দর নাম দেবো৷ যাই হোক বড় গুনি মেয়ে৷ ঘোষ বাড়ির বড় মা বললো গীতা কপাল করে বৌমা পেলি৷ সুরমার মেয়েটা যা লক্ষী৷ আমিও বললাম বড়োমা অনেক কাঠখড় পুড়িয়েছি৷ আমার একটাই ছেলে৷ সেরা না হলে হবে? সেই ছোটো থেকে গড়েপিঠে আমিই তো মানুষ করলাম৷ কোনো কেচ্ছা নেই ৷ বাবিটা অলক্ষী৷ সে হোক, আমরা তো দিনেকালে থাকছিনা এখানে আর বাবি তো বাবা মায়ের দায় নেবে সেদিক দিয়েও নিশ্চিন্ত৷ 

অনেক প্ল্যান করেছো৷

সে আর বলতে? তোর বাবার দারা হতো? ঐ মেয়ে সরকারী চাকরী ছাড়া কেউ দেয়? কিন্তু ধরে পড়লাম , সুরমা দি মেয়েকে দাও৷ আর আমি জানি তো ছোটো থেকেই গুলু তোকে খুব ভালোবাসে সম্মান করে৷ 

হট করে যে কথা বলে এলে আমি যদি না বলতাম? 

অসম্ভব! দশমাস পেটে ধরেছি তোর মন জানিনা?

মনে মনে বললাম হায়রে মা৷ মুখে বললাম যা খুশি করো৷

কি গো খোকা রাজি মনে হলোনা৷

চুপ করোতো৷ ঐ রকম বলে৷ মনে লাড্ডু ফুটছে৷ তুমি কি বোঝো?

আমি শুধু বুঝি বেতন এনে তোমার হাতে দাও বাকি কিছু বোঝার মতন তো উপায় রাখোনি৷

চুপ করো৷ চলো ওষুধ খেয়ে ঘুমাবে৷


পরদিন সপ্তমী ৷ পাড়ায় এখন চারটে পুজো হয়৷ বাড়িঘর বেড়েছে৷ সকাল হতেই ডিজে বাজে৷ এক বিশ্রী কান ফাটানো ডিনচ্যাক৷ ঠাকুর আনতে যাবে ডিজে বক্স , বৌ আনতে যাবে ডিজে বক্স৷ স্নান করে বেড়িয়ে পড়লাম৷ সপ্তমীর অঞ্জলী চলছে৷ ঢাক বাজছে ৷ ডিপ সবুজ রঙের জামদানী পড়ে গুলু বসে আছে৷ মনে হচ্ছে যেন সবুজ কচি কলাপাতা৷ পবিত্র , সুন্দর৷ পাশে সুরমা কাকি ৷ বাবি কে পেলাম না৷ সরে গিয়ে কিছু খেঁজুরে আলাপ সেরে পিছন ফিরতেই দেখি আধ ময়লা জিন্স আর সাদা টপ পড়ে বাবি বাচ্ছাদের সাথে তুবড়ি বাঁধছে৷ মাথার চুলগুলো ছড়িয়ে পড়েছে পিঠে৷ দুই বোন কিন্তু কত আলাদা৷ আমি গিয়ে আগে অঞ্জলি দিলাম৷ গুলু সরে গেলো লজ্জায়৷ বন্ধু বান্ধব সব অভিনন্দন জানাচ্ছে৷ তারমানে আমার মা বিবিসি হয়ে সবাই কে জানিয়ে দিয়েছে ৷ কারোর কারোর চোখে স্পষ্ট হিংসা৷ বেশ নিজেকে ভাগ্যবান মনে হচ্ছে ৷ কিন্তু প্রতিটি মানুষের একটা বেয়াড়া মন থাকে ঐ যাকে বলে সুখে থাকতে ভূতে কিলায়৷ মনটা কেন যে আকৃষ্ট তাতেই হয় যাতে সুখ থাকেনা সুখের যন্ত্রনা থাকে৷ 


অগ্রহায়ন মাসের তিন তারিখ বিয়ে ঠিক হয়ে গেলো৷ দুই বাড়িতে সাজ সাজ রব৷ অনেকে বলেছিলো বড় মেয়ের বিয়ে না দিয়ে ছোটো মেয়ের বিয়ে দিলে পরে আর বড় মেয়ের বিয়ে হবেনা৷ কিন্তু সুরমা কাকি কারোর কথায় কান দেননি৷ সুরমা কাকি সরল হলেও চরিত্রে অদ্ভূত দৃঢ়তা ছিলো৷ বাবি চাকরী করবে বিয়ে পরে করবে বলে ব্যাপারটা এড়িয়ে গেছে৷ বাবি খুব খুশি৷ আর সেটাই আমার মনে জ্বালা ধরালো৷ বাবির মধ্যে আমি নিজেকে কোথাও পেলাম না৷ কেনাকাটা হোক বা আয়োজন বাবি সব কিছু নিজেই সামলালো৷ বাবির বাবাও খুব খুশি৷ শান্ত নিরীহ মানুষ ৷ কোনদিন কোনো বিরোধে যাননা৷আর আমার মায়ের তো গর্বে পা পড়ছে না৷ সুন্দরী বৌমা তার উপর গুলুর বাবার যা কিছু সবই তো দুবোনের৷ বিয়ের দিন কাছে আসতে লাগলো৷ আমি কোলকাতা চলে গেলাম৷


আমার বিয়ে হয়ে গেছে আজ দশবছর৷ বাবা আজ আর নেই কিন্তু আমার ছেলে ডাব্বু সেই অভাব পূরণ করে দিয়েছে আমাদের আর মায়ের জীবনে৷ মা সারাদিন ডাব্বু কে নিয়েই ব্যস্ত৷ সত্যি বলতে আমি খুব সুখী৷ আপেক্ষিক সুখ বলতে যা যা বোঝায় আমার সব আছে৷ নিজের ফ্ল্যাট ৷ গাড়ি কিনেছি৷ দু দুটো প্রমোশন পেয়েছি৷ দীপা আমার স্ত্রী, মা গুলুর নাম বিয়ের পর দীপা দিয়েছে৷ ওর মতন স্ত্রী পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার৷ সবসময় আমার আর মায়ের খুব খেয়াল রাখে৷ আমিও দীপাকে ভালো রাখার চেষ্টা করে যাই৷ আমাদের সুখের জীবনের আলো ডাব্বু৷ আর আজ হাসপাতালে বসে আছি কারন দীপার ডেলিভারী হবে৷ আমি বারন করেছিলাম কিন্তু দীপার খু্ব মেয়ের সখ৷ ইসু নিতে দেরী হয়েছে বলে আজ সিজার করতে ওকে ওটিতে নিয়ে গেছে৷ দীপার বাবা দোকান বিক্রি করে পুরোপুরি বাড়িতে থাকেন৷ 

সুরমা কাকি আর বিমল কাকু দুজনেই বসে আছেন৷ সবার মুখে চিন্তার ছাপ৷ আর আমি ভাবছি অন্য কথা৷ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় চাকরী করার পর আজ বাবি গ্রামে৷ পায়ের তলায় সরষে আছে মেয়েটার৷ সেই সময় কোলকাতা ফিরে অনেক ভেবেছি৷ প্রথমে ভেবেছি মা কে ফোন করে বলে দি বিয়ে করবো না৷ কিন্তু মায়ের মনে কষ্ট হবে আবার গুলু? মেয়েটা ছোটোবেলা থেকে আমাকেই ভালোবেসেছে৷ তার কি কোনো দাম নেই? তোলপাড় করেছি নিজেকে , তারপর ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়েছি৷ বিয়ের পর আমি বুঝেছি মায়ের আর আমার সিধান্ত সঠিক ছিলো৷ বিয়ে তাকেই করা উচিত যে আপনাকে ভালোবাসে৷ আর ভালোবাসা? কে বলেছে ভালোবাসলে তাকে পেতেই হবে? আমি বাবিকে ভালোবেসেছি, কিন্তু সংসারের মধ্যে আটকে ওকে মলিন করিনি৷ বাবি উড়ন্ত পাখি৷ ওকে খাঁচায় রাখলে আমরা দুজনেই হয়ত সুখি হতাম না৷ বাবির সব গুনকে আমি যেমন ভালোবাসতাম সেটা স্বামী হয়ে কতটা সম্মান করতে পারতাম৷ মধ্যবিত্ত মানসিকতা যদি সম্পর্কের মাঝে আসতো? নিজের চেয়ে গুনী বৌ পুরুষত্ব কে যদি আঘাত করতো? আর আমার মনে হয়না বোনের ভালোবাসা কে বাবি কোনদিন গ্রহন করতো৷ আমার কল্পনায় বাবি প্রেমিকা হয়ে থাক৷ আমার আকাশে সবসময় বাবির বিচরন৷ সামান্য সংসারের স্বার্থ সেখানে নেই৷

বাবির সাথে যখন দেখা হয় আজও আমি মুখ তুলে কথা বলতে পারি৷ আর আমাদের সাথে বাবি খুব স্বাভাবিক ভাবে মিশতে পারে৷ আজ আসার কথা৷ এখনও পৌছায় নি৷ ক্ষেপিটা চাকরী ছেড়ে এখন সমাজ সেবা নিয়ে মেতেছে৷ নিজেদের বাড়িতে বানিয়েছে অফিস৷ ছোটো কারখানা৷ অসহায় মেয়েদের কাজ শেখায় আরও কতকিছু ৷ আমি গর্বিত বাবি আমার বন্ধু৷  আমার না বলা প্রাক্তন৷


আমি বাবি৷ ছোটোবেলা থেকে ডানপিটে আর টমবয় টাইপ৷ জীবনটাকে সবসময় চ্যালেঞ্জের মতন করে কাটাতে ভালোলাগে৷ অল্প বয়সে থেকেই ব্যাটাছেলে, গেছো, বাঁদর আর নিমাই কতকিছু শুনতে শুনতে মানুষ হয়েছি৷ কাঠখোট্টা চেহারা আর ছেলেদের মতন স্বভাবের জন্য আমি বহু কথা শুনেছি কিন্তু নিজেকে পাল্টাই নি৷ একটাই তো জীবন সেটাও লোকে কি বললো ভেবে কাটালে নিজের জন্য ভাববো কবে? আর পাল্টাই নি মায়ের জন্য৷ আমার মা সারাজীবন আমার জন্য কথা শুনলেও আমাকে থামতে বলেনি৷ মা বাবা গুলু আমার সবকিছু ৷ আর নতুন যোগ হয়েছে ডাব্বু৷ গুলুর ছেলে৷ জীবনে যা চেয়েছি সব করেছি৷ সে নিজের মনের মতন চাকরী হোক বা এন জিও৷ সমাজ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছি নিজের প্রাপ্ত সম্মান৷ আজ পিছিয়ে পড়া মেয়েদের সাহস দি৷ কাজের প্রেরণা দি৷ সরকার থেকে পুরস্কার পেয়েছি৷ আজ সব পেয়েছির ভিড়ে আমি সবার চোখে সফল৷ কেউ আর বলেনা মেয়েটা আপদ৷ আর কেউ বলেনা সুরমা তোর কি হবে? সবাই মা কে বলে ছেলে হলেও এতটা করতো না৷ কিন্তু আমি জানি জীবনে আমি শুধু একটা জিনিস পাইনি, সে হলো আমার ভালোবাসা আমার একমাত্র বন্ধু জয়৷ নিজে যখন ভালোবাসার মানে বুঝিনা তখন থেকে ভালোবাসি জয়কে৷ ছোটোবেলা থেকে নিজের সম্পত্তি ভাবতাম ৷ কোনদিন আলাদা করে বলতে হবে ভাবিনি৷ কিন্তু সময় আমাকে সময় দেয়নি৷ বছর দশেক আগে যখন চাকরী ছেড়ে বসে আছি বাড়িতে৷ চলে এসেছিলাম জয়ের জন্য৷ কারন দুরে গিয়ে বুঝেছিলাম কতটা ভালোবাসি৷ জীবনটা কেমন ছন্নছাড়া লাগতো আজ বড় রোদ আজ সুন্দর বৃষ্টি জীবনের সব ঋতু কে ভাগ করে নেবার জন্য কাউকে দরকার৷ জয় ছিলো আমার তেমন বন্ধু৷ যার হাত ধরে আমি জীবনের কত বসন্ত কাটিয়েছি৷ আমার সব ভালোমন্দের সাথে জরিয়ে ছিলো জয়৷ জানতাম পুজোয় বাড়ি আসবে৷ অপেক্ষায় ছিলাম৷ লজ্জা আর দুরুদুরু বুকে অপেক্ষা৷ যেদিন জয় আসবে আমি সকাল থেকে রেডি হচ্ছি আজ সেই দিন৷ সব বলবো৷সব৷ কেন থাকতে পরলাম না কেন চলে আসলাম৷ গুলুর  ঘরে ঢুকে জীবনে প্রথম শাড়ি পড়ে ম্যাচিং কানের খুঁজছিলাম৷ কোনদিন তো ব্যঙ সাজিনি৷ গুলুর ঘরে কানের দুল পাওয়া যাবে অবশ্যই৷ কিন্তু পেয়েছিলাম জীবনের বড় সারপ্রাইজ৷ আমাদের দুজনের খেলার দুধুভাতের সাথী কবে যে আমাকে খেলা থেকে বের করে নিজে সাথী হয়েছে আমি জানতে পারিনি৷ গুলুর ডাইরিতে তার ভালোবাসা তার কত কবিতা৷ সব জয়কে নিয়ে৷ বোনটা কবে বড় হয়ে গেলো, কবে যে ভালোবাসে ফেললো জানতে পরিনি৷ নিঃশব্দে শাড়িটা খুলে লজ্জার কাজল টা মুছে বেড়িয়ে এসেছিলাম৷ মনে তোলপাড় করা অনুভূতিটা থামাতেই পারছিলাম না৷ মনে হচ্ছিলো কোথাও ভুল হচ্ছিলো ৷ গুলুকে থামানো দরকার৷ জয় কে বলা দরকার৷ মনের সব দ্বিধা মুছে যাচ্ছিলো যখন জয়ের মা সমন্ধ এনেছিলো৷ আমি ভাবলাম জয় এসেই তো বলেছে মা কে৷ জয়ের মা যদি বিয়ে ঠিক করে আমার আর জয়ের তখন গুলু ঠিক সরে যাবে৷ নীচে প্রায় লাফতে লাফাতে গেলাম৷ কিন্তু জয়ের মা যখন গুলুর জন্য কথা বলে গেলো আমার মনের সব ভুল ভেঙে গেলো৷ সন্ধ্যে বেলা জয় এসেছিলো৷ কেন জানিনা মনে হয়েছিলো কিছু বলতে চায়৷ ওর চোখের ভাষা গুলো বড় ছটপট করছিলো৷ কিন্তু ও কিছু বলার আগেই আমি ওকে শুনিয়ে দি আমার সব ইচ্ছা গুলো৷ যাতে ও মন থেকে গুলুকে মেনে নেয়৷ মনের ভিতরটা পুড়ে যাচ্ছিলো কিন্তু আজ আর পোড়ে না৷ 

আজ কতদিন হয়ে গেছে৷ গুলু ভালো আছে৷ জয় সুখী৷ মনে আর কোনো ক্ষোভ নেই৷ 

তাড়াতাড়ি পৌছাতে হবে আজ গুলুর দ্বিতীয় সন্তান পৃথিবীর আলো দেখবে৷

আমার জীবনে আর কোনো চাহিদা নেই৷ বাবা মা ভালো থাক৷ আর গুলু আরও সুখী হোক৷ ভালোবাসা? অনেক পেয়েছি৷ আমি জীবনের অনেকটা সময় আমার ভালোবাসার সাথে কাটিয়েছি যেখানে না গুলু ছিলো না অন্য কেউ ৷ সেটুকু কজন পায়৷ জয় আজ আমার না বলা প্রাক্তন৷


আজও ওদের সংসার আর সুখ আমাকে শান্তি দেয় ৷ ভালোবাসা ভালো আছে এটার মধ্যেও অনেক তৃপ্তি থাকে৷ চাকরী আমার পোষায় নি৷ আর মনের সব গোপন কষ্টে মায়ের কোলটা খুব মনে পড়তো৷ আমার মা আমার সব যন্ত্রনার প্রলেপ৷ তাই চাকরী ছেড়ে চলে এলাম বাড়ি৷ মা বাবা যতদিন আছে কি দরকার দুরে থাকার৷ কাজ জীবনে অনেক করতে পারবো৷ বাবা মা কে তো সারাজীবন চাইলেও পাবোনা৷

কই দিদি রেডি হলে? মা দুবার ফোন করেছে৷

যাচ্ছি৷ তুই বাড়ির খেয়াল রাখিস কুন্দ৷

দূগ্গা দূগ্গা৷ ভালো খবর ফোনে বলে দিও৷

দেবো৷

অনেক সময় ধরে ওটি চলছে৷ বাইরে ছটপট করছি আমরা৷ ডাব্বু কে নিয়ে মা কে বাড়িতে যেতে বললাম৷ আজ দুবছর ধরে দ্বিতীয় ইস্যুর চেষ্টা করছিলো দীপা কিন্তু অনেক কমপ্লিকেটেড কেস৷ আমি বলেছিলাম দরকার নেই থাকনা একটা ছেলে৷ গুলু রাজী না৷ কিন্তু আজ ভয় লাগছে৷ সত্যিই ভয় লাগছে ৷ কি হবে, কে জানে৷ ডাক্তার রা ছুটোছুটি করছে৷ সবাই ব্যস্ত ৷ কেউ কথা বলছে না৷ রক্ত লাগবে৷ ব্লাড রেডি ছিলো৷ তবুও টেনশান কমছে না৷ কান্নার আওয়াজ হতেই মনটা ভরে গেলো৷ বাবি ঢুকলো তখনই৷ 

কি হয়েছে ?

জানিনা৷ বয়৷ 

গুলু কেমন আছে?

ডাক্তার বেরোয়নি৷

কিছুক্ষন পর ডাক্তার বেরিয়ে বললো , জয় ঘোষাল?

আমি৷

মেয়ে হয়েছে৷ 

দীপা কেমন আছে? দেখা যাবে?

আপনার স্ত্রী অবস্থা ক্রিটিকাল৷ আপনি আপাতত বেবীকে শিফট করলে দেখতে পারেন৷ খুব ব্লিডিং হচ্ছে৷ আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি৷ চব্বিশ ঘন্টা না গেলে বলা মুশকিল৷ 

আমি ধপ করে বসে পড়ি৷ কাকু কাকিমা দুজনে আমাকে ধরেন৷বাবি ডাক্তারের সাথে চলে যায় কথা বলতে৷ 

আমি ভাবতেই পারছিনা৷ দীপা৷ ঠাকুর আমার দীপাকে ভালো করে দাও ৷

কিছুক্ষন পর বেবী কে রুমে দিলে আমরা কাঁচের বাইরে থেকে দেখি৷ একতাল ফুঁটফুঁটে দীপা শুয়ে আছে৷ মাথায় ঘন চুল৷ খুব সুন্দর ৷

মনটা কেঁদে ওঠে আমার৷ দীপা চেয়েছিলো মেয়ে৷


চব্বিশ ঘন্টা নয়৷ মাত্র তিনঘন্টায় দীপা আমাদের ছেড়ে চলে যায়৷ রক্ত বন্ধ করতে পারেনি ডাক্তাররা৷ নিজেকে ভীষন অপরাধী মনে হতে থাকে ৷ সুরমা কাকি তো অজ্ঞান হয়ে যান৷ বাবি সব সামলায়৷ কারন আমার নিজেকে সামলানোর মতন অবস্থা ছিলোনা৷ আমার মা খুব কষ্ট পেয়েছিলো  মেয়ের মতন দীপাকে ভালোবাসতো৷ আমি এক অথৈ সমুদ্রে পড়ে গেছি মনে হচ্ছিলো৷ কি করবো? আমাকে দীপা এভাবে ছেড়ে চলে যাবে স্বপ্নেও ভাবিনি৷ ডাব্বুকে মা তাও সামলাতে পারে কিন্তু গুড়িয়া কে? মেয়ে হবার আগেই দীপা মেয়ের নাম রেখেছিলো গুড়িয়া৷ কিন্তু সেই মেয়েকে ভালো করে দেখেই যেতে পারলো না৷ জীবনটা মুহুর্তে ছাড়কার হয়ে গেলো আমার ৷ গুড়িয়াকে হাসপাতাল থেকে বাবি নিয়ে গিয়েছিলো৷ আমি সব কাজ সেরে মাস তিনেক পর  গ্রামে গেলাম৷ বাড়িটা পড়ে আছে৷ যাবো জেনে বাবি পরিস্কার করিয়ে রাখিয়েছে৷ কারোর মুখে কোনো কথা নেই৷দীপার আকস্মিক চলে যাওয়া কেউ মেনে নিতে পারেনি৷ সুরমা কাকি তো কিছুক্ষন পরপর চোখের জল মুছছেন৷ কাকা কেমন হয়ে গেছেন৷ দুদিন থাকার পর মেয়েকে আনতে গেছি৷ বাবি গুড়িয়াকে ঘুম পাড়াচ্ছিলো৷ ইশারা করতে গুড়িয়াকে মায়ের কোলে দিয়ে উঠে আসলো৷

দুজনে বহু বছর বাদে ছাদে মুখোমুখি বসলাম৷ সেই দিনটার কথা মনে পড়ে যাচ্ছিলো৷  দুজনেই চুপ৷ আগে দীপা থাকতো মাঝখানে আমরা খেলতাম৷ আজও দীপা আছে৷ তবে অদৃর্শ্য৷ 

আমরা কাল চলে যাবো৷

কটার ট্রেন?

সকালের৷

গুড়িয়া কে নিতে এলাম৷ 

বাবি কিছুটা চমকে গেলো৷ উঠে ছাদের কার্ণিশের কাছে গিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে৷

কি হলো?

তোর কাছে কিছু চাইবো? 

বল৷ 

আমার একটা প্রশ্ন আছে, উত্তর দিবি? 

বল কি প্রশ্ন?

কোনদিন তুই আমাকে ভালোবেসেছিস?

মানে?

প্রশ্নটা কি খুব কঠিন ?

না তা নয়৷

তাহলে?

প্রশ্নটা যদি আমিও করি?

করতে পারিস৷ উত্তর তো জানিস৷ 

হুম৷ হয়ত৷ 

জয়৷ জীবনে আমি কিছু চাইনি কারোর কাছে৷ আজ তোর কাছে চাইবো?

কি? 

গুড়িয়া কে আমাকে দিবি?  আমি গুলুকে মানুষ করিনি মা করেছে৷ আজ আমি গুড়িয়া কে মানুষ করতে চাই৷

আমি কিছুক্ষন ভেবে বললাম , কিন্তু আমার শর্ত আছে আর একটা প্রশ্ন৷

আগে শর্তটা বল৷

আমি চাই গুড়িয়াকে তুই তোর মতন তৈরী করবি৷

আর প্রশ্ন?

তুই চাইলে আমাকেও পেতে পারতিস, চাইলিনা কেন?

তোকে পাইনি কে বললো? আমার ভালোবাসায় আমার মনে সব জায়গায় তো তুই ৷ তোকে বিয়ে করলেই কি পাওয়া হবে?

সারাজীবন তাহলে এভাবেই থাকবি?

হুম৷ আমরা সারাজীবন একটাই সম্পর্কে থাকবো রে৷ দুজনে দুজনের প্রাক্তন৷ 


সমাপ্ত৷