Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

কবি সুপর্ণা দাসের কবিতা গুচ্ছ

#শিরোনাম_অভ্যেসে_নয়#কলমে_সুপর্ণা#তারিখ:০৭:০৯:২০২০
তুমি আমার অভ্যেস হয়ো না,বরং অপেক্ষা হয়ে থেকো।যাকে ছুঁতে পাওয়ার নেশায়, আমি হাঁটতে পারি এক পৃথিবী।হাঁটতে হাঁটতে যখন আমি ক্লান্ত,দূরের থেকেই হাত বাড়িও।বোলো 'আজও আছি'।এমন এক অপ…

 


#শিরোনাম_অভ্যেসে_নয়

#কলমে_সুপর্ণা

#তারিখ:০৭:০৯:২০২০


তুমি আমার অভ্যেস হয়ো না,

বরং অপেক্ষা হয়ে থেকো।

যাকে ছুঁতে পাওয়ার নেশায়, 

আমি হাঁটতে পারি এক পৃথিবী।

হাঁটতে হাঁটতে যখন আমি ক্লান্ত,

দূরের থেকেই হাত বাড়িও।

বোলো 'আজও আছি'।

এমন এক অপেক্ষা হয়ে থেকো।


তুমি আমার অভ্যেস হয়ো না,

বরং প্রতীক্ষা হয়ে থেকো।

যার আসার আশায়, 

আমি প্রহর গুনতে পারি এক শতাব্দী।

প্রহরের পর প্রহর যখন বয়ে চলবে,

একটি বার খালি স্মরণে এসো।

বোলো 'আমি আসবই'।

এমন এক প্রতীক্ষা হয়ে থেকো।


তুমি আমার অভ্যেস হয়ো না,

বরং অপ্রাপ্তি হয়ে থেকো।

যাকে লাভের আশায়, 

আমি ছিন্ন করতে পারি সব বন্ধনী।

যখন ভাঙতে ভাঙতে আমি,

শেষ সীমায় গিয়ে পৌঁছবো,

বোলো 'আজ থাক'।

এমন এক অপ্রাপ্তি হয়ে থেকো।


তুমি আমার অভ্যেস হয়ো না, 

বরং স্বপ্ন হয়ে থেকো।

যাকে পূরণের আশায়, 

আমি জেগে কাটাতে পারি গোটা রাত্রি।

প্রহরের টিক টিক যখন বেজেই চলবে,

চোখের নিচে কালি পড়বে,

বোলো 'চেষ্টা করো'।

এমন এক স্বপ্ন হয়ে থেকো।


তুমি আমার অভ্যেস হয়ো না,

বরং অশেষ হয়ে থেকো।

যাকে পড়ার নেশায়, 

আমি শেষ করতে পারি পৃথিবীর সব পংক্তি।

পড়তে পড়তে নিঝুম চোখ যখন ক্লান্ত,

তখন অদৃশ্য এক অবয়বে এসো,

বোলো 'এখনো অনেক বাকি'।

এমন এক অশেষ হয়ে থেকো।


তোমায় পূর্ণ পাওয়ার ইচ্ছে আমার নেই,

আংশিকেই ধরা দিও।

আমিও না হয় অপ্রাপ্তই রই,

তবু তোমার করে নিও।


                                  সুদা💕

******************************

 #শিরোনাম_মৌনতা

#কলমে_সুপর্ণা

#তারিখ:০৭/০৯/২০২০


আমার একটা মৌনতা চাই, 

গভীর মৌনতা।

রাস্তায় চলতে চলতে যখন পাশ দিয়ে শিস বেজে উঠবে,

চোখের কঠোর দৃষ্টি আর মুখে মৌনতা চাই।


একটা সময় পর নিজের অজান্তেই যখন কিছু কথা বুকে বিঁধবে,

মনে করিয়ে দেবে আমি বেকার।

তখনও আমার মৌনতা চাই।

চোখের জল বুকের ভিতর জমুক, 

কোনো একদিন আনন্দে ভাসাবো তাকে।

তবু মুখে মৌনতা চাই।


বয়স যখন কুড়ি ছুঁই,

পাড়ার মাসি-কাকী দের ফুসফুসানি,

তাদের প্রতিটা শব্দের উত্তরে,

আমার একটা মৌনতা চাই।


বাসে-ট্রেনে অসাবধান হাত যখন

শরীর ছুঁয়ে মুখে আনবে অস্বস্তির ভাব,

তখনও আমার তীক্ষ্ণ নজর আর 

মনের ভিতর মৌনতা চাই।


অফিসে কলিগদের টিটকিরি,

বসের অপ্রয়োজনীয় মিষ্টি আলাপ

আর আমার সব কিছু কুড়িয়ে নিয়েও,

নীরব হাসির মৌনতা চাই।


যার হাত ধরে গোটা জীবনের স্বপ্নে পাড়ি,

তার তীব্র শব্দ, 

পদে পদে আমার জায়গা বুঝিয়ে দেওয়া;

আমার 'আমি'কে খুন করেও,

আমার গোটা একটা মৌনতা চাই।


সন্তানকে জীবনের অ-আ শিখিয়ে,

সময় এলে তার শব্দ বাণে বিদ্ধ হয়ে;

নীরব থাকার প্রতিশ্রুতিতে,

আমার সেই পরিচিত মৌনতাই চাই।


চেনা মানুষ গুলোর,

মুখোশ খুলতে খুলতে

বীভৎস নগ্ন রূপ ক্ষত-বিক্ষত করলেও

আমার তীব্র একান্ত মৌনতাকেই চাই।


                                 সুদা💕

*****************************

#আমরা_ভেদাভেদ_মানি_না

#কলমে_সুপর্ণা

#তারিখ:০৭/০৯/২০২০


আমরা ভেদাভেদ মানি না।

বাড়ির নতুন সদস্য এলে - 

কখনও হাসি, 

কখনও বা মুখ যায় গোমড়া হয়ে,

সেটা বৌমার দোষে।

কি করি বলো - 

গোলাপি আর নীলের মধ্যে

নীল রঙ যে ভীষণ প্রিয়।

তা বলে কি আমরা ভেদাভেদ মানি?



আমরা শিক্ষিত সমাজ,

দেওয়ালে ডিগ্রির মালা ঝুলিয়ে রাখি।

বিজ্ঞানকে নমস্তুতে করে,

কুসংস্কারকে রাখি দূরে।

শুধু বাবানের জন্মবারে বেগুন পোড়াই না

- ওটা অশুভ।

মিনুর দিনে মানতে নেই

- তাতে তারই যে দুঃখ বাড়ে।

তার মানে তো আর এই নয় যে - 

আমরা ভেদাভেদ মানি।



আরে মাছের মুড়োটা না হয়

আলাদা করে তুলে রাখি,

টুবাই -এর জন্যে।

রানু তো পেটিতেই খুশি।

তা বলে কি আমরা ভেদাভেদ মানি?



নতুন প্রাণের জন্ম হলে আমরা গিয়ে নাচাই,

বাসে, ট্রেনে আমরা তালি বাজাই,

আমাদের দিন যাপনের উপায় এটাই।

স্বাভাবিক জীবন পাইনা আমরা,

আমাদের দেখে আমরাই মুখ চাপা দিয়ে হাসি।

আসলে এটাই সমাজ যে,

তার মানে কি আমরা ভেদাভেদ মানি?


হ্যাঁ রুবিনা পাশের বাড়ির

 সঙ্গীতার সঙ্গে খেললে - বকি।

কেমন সব ওদের কাপড়-চোপড়

একটুও লজ্জা নেই বাপু।

সংস্কার বলে কিছু আছে তো নাকি?

তা বলে আমরা ভেদাভেদ মানি কি?



কেবল বিকালে চায়ের আসরে

আব্দুল চাচার চায়ের কাপটা 

থাকে আলাদা - প্লাস্টিকের।

ওপাড়ার নাজমা ভাবি,

ঘরে এলে মোড়া দিই।

বসে, গল্প করে।

চলে গেলে গঙ্গাজল ছেটাই।

আরে মাঝে মাঝে করা ভালো যে

- ঘরের শুদ্ধিকরণ।

তাতে কি আমরা ভেদাভেদ মানি?



বাসে-ট্রেনে সংরক্ষিত জায়গা রাখি।

ঠিক যেমন প্রতিবন্ধীদের জন্য 

আলাদা করা থাকে।

আবার অনধিকার প্রবেশ ঘটলে,

তাকে টেনে ফেলে দেওয়া -

আমাদেরই কর্তব্য।

তাতে কারও কোল শূন্য হয় হোক।

অপরাধীর শাস্তিই প্রাপ্য।

এতেও কি বলবে আমরা ভেদাভেদ মানি।



আমরা এখন মর্ডান সমাজ।

জানি নিজের অধিকার ছিনিয়ে নিতে।

দীর্ঘ লাইনের প্রথম স্থান আমাদেরই প্রাপ্য,

লোকে তারে বলে 'লেডিস ফার্স্ট'

ওটা আমাদেরই অধিকার,

লজ্জা কিসের তা মেনে নিতে?

তা বলে কি আমরা ভেদাভেদ মানি?



সংরক্ষিত আসনকে মাথায় রাখি তুলে,

ওটা সংবিধান যে।

আমরা আইন-কানুন মেনেই চলি।

তার মানে তো এই নয় যে-

আমরা ভেদাভেদ মানি।



জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ

মিশে থাকি সব একাকারে।

ভেদাভেদের প্রাচীর ভেঙে,

থাকি কেবল কিছু 'সমাজ-সংস্কার' মেনে।


ও মা - - - 

তবে কি ওসব 'সংস্কার'- কে 

তোমরা ভেদাভেদের নাম দিচ্ছ নাকি???


                                 সুদা💕