: কবিতা : দুঃখ করো না মোটেকলমে : শক্তিপদ ঘোষতারিখ : ১৮ , ০৯ , ২০২০
সব জিনিসেই আগুন লেগেছে ,বাজার দুর্মূল্য ।মানিব্যাগটা ছিল ঠাসা ;বাজারশেষে মনে হলো--খুব সোজা ,ধুলোর ঝড়ে--হু হু রবে যেনশুকনো পাতা উড়লো ।বাজার যদিও--সে…
: কবিতা : দুঃখ করো না মোটে
কলমে : শক্তিপদ ঘোষ
তারিখ : ১৮ , ০৯ , ২০২০
সব জিনিসেই আগুন লেগেছে ,
বাজার দুর্মূল্য ।
মানিব্যাগটা ছিল ঠাসা ;
বাজারশেষে মনে হলো--খুব সোজা ,
ধুলোর ঝড়ে--হু হু রবে যেন
শুকনো পাতা উড়লো ।
বাজার যদিও--সেদিনও জ্বলতো অগ্নিতে ;
তবু রক্তহীনতায় ভুগলে ,
সাতভাই রক্ত দিতে তার ভগ্নীকে ।
সেদিনও আগুনে পুড়তো
বড়বাজার , মেছোপটি থেকে পোস্তা ;
তবু মনে হয়--সেদিন ,
শুধু রক্তটাই ছিল খুব সস্তা ।
খুব সস্তাই ছিল রক্ত ;
জলের দামেও রক্ত তাই ,
বিকানোও ছিল খুব শক্ত ।
হয়তো বা হবে--তারই জন্যে ,
সেই বুড়ীবালামের তীর থেকে
জালালাবাদের অরণ্যে
দশহাত মাটি--খুব সহজেই
ভিজেছিল লালবৃষ্টিতে ।
আজ , এ কি অনাসৃষ্টি এ ?
বিশ্বজুড়ে ব্লাডব্যাঙ্কগুলো--ঠায় ,
ফুটপাতে বসে-দাঁড়িয়ে ,
রক্ত ভিক্ষা চেয়ে কৌটো নাড়ছে ।
মানুষের শরীরে মেদ যত বাড়ছে ,
অনাবৃষ্টির বৈশাখী রোদে
শিরায় শিরায় লাগছে খরা ।
শোন--পৃথিবীর মুমূর্ষুরা ,
অপেক্ষায় থেকো না কারও জন্যে ।
দেখেছো না--সুন্দরবনে ,
আফ্রিকার বৃহদরণ্যে
কেঁদো কেঁদো বাঘ সব--নিজেরাই ,
ভুগছে কেমন রক্তহীনতায় ?
রক্তের আগ্রাসী পিপাসায়
ওরা আকণ্ঠ মরুভূমি ;
ভুলেও ওদের কাছে--রক্ত চেয়ো না তুমি ।
তাই বলছি তোমায় শোন ,
লক্ষ্মী পারুল বোন ,
দুঃখ করো না মোটে ;
তোমার মান বাঁচাবে ,
তেমন সাতটা ভাই--কবেই
হারিয়ে গেছে স্রোতে ।
-----------------------------------------------------------
কবিতা : নামের জঞ্জালে
কলমে : শক্তিপদ ঘোষ
তারিখ : ১৭ , ০৯ , ২০২০
এই আমরা--যারা খুব ভালো আছি ,
ভালো থাকি , ভালো বলতে পারি ,
ভালো ভাবতে পারি--সেই আমরা সব্বাই ,
মনে মনে খুব চাই :
দূরে পাহাড়ী সেই ঝর্ণার জলে--লীলাচ্ছলে ,
লীলার সুখে গা ধুতে ।
ভাবতে পারি ভাবার সুখে ,
এই আমাদেরই জন্যে--বনে বাগিচায়
নিত্য শতশত ফুল ফোটে ।
এই আমরা--খুব ভালো আছি যারা ,
ভাবতে পারি--আকাশের এত তারা ,
জ্যোৎস্নার এমন স্নিগ্ধ ধারা ,
এই সবই আমাদেরই জন্য ;
ভাবতে যারা পারে না--অবকাশও নাই
ভাববার ,তাদের কথা বাদ থাক ,
তারা দুনিয়ার যত--হাভাতে নগণ্য ।
ভাবতে পারি--আমাদেরই কথায়
সময়ও কথা বলে ,
ভাবতে পারি--আমাদের ইশারামতোই
সময়ও পথ চলে ।
আমরা তাই--দাঁড়াই যখন মঞ্চে উঠে ,
যখন নগণ্যদের পক্ষ থেকে
আমার জয়ের ধ্বনি ওঠে ,
মুহুর্মুহু হাততালি পাই--নগণ্য সেই জনতার ,
তখনই ভাবি--এমনি করে
ঝর্ণা আমার অঙ্গসুবাস ,
আমার রূপের সুধা , যশের সুধা ,
ছলছলিয়ে--খলখলিয়ে বিলাক ।
কুড়িয়ে নিয়ে মুঠি মুঠি ,
আমার কথার শুভ্র যূথী
লক্ষহাতে দিগ্বিদিকে ছড়াক :
আহ্লাদে সে--নাম আমার--যশ আমার ,
ছড়িয়ে চলুক দিকে দিকে ।
আমার নামের সুধা--নাচতে নাচতে ,
গাইতে গাইতে--শুধাক গিয়ে নদ-নদীকে ।
চাই , নাম আমার আঁধার-গায়ে
জোনাক হয়ে--থাক গাঁথা ;
আমার নামে ধ্বনি তুলুক ,
মর্মরিত গাছের পাতা ।
চাই--আমার নামে শ্রাবণধারা
প্লাবন আনুক ,
নাম আমার আকাশ জানুক ,
বাতাস জানুক ।
আমি শুনবো দু'কান পেতে ,
সাগর কেমন--হেঁকে হেঁকে ,
দিনেরাতে--আমার নাম বলছে ;
দেখবো আমি--এ নাম কেমন
ঢেউয়ের মাথায়--রোদের সোনায় জ্বলছে ।
সেই আমি এবং সেই আমরা সবাই ,
যারা ভালো আছি--ভালো থাকি ,
আসলে , কেউ কাজের কাজে নাই ।
কেবল নামের সুরা গলায় ঢেলে ,
অমরত্বের নেশায় বুঁদ হয়ে সব থাকি ;
বৃথা সময় যায় কেনার নেশায়
চাঁদের দেশে সোনার দামে মাটি ।
এবং কিনতে চেয়ে--বিবেকখানাই ,
হেলায়--দিই ছুঁড়ে নামের জঞ্জালে ;
একটুও বাজে না বুকে কারও ,
এমনি করে নিজেকে--নিজেই ঠকালে ।
-------------------------------------------------------
বিভাগ : কবিতা
শিরোনাম : চাবুকেই পদানত
কলমে : শক্তিপদ ঘোষ
তারিখ : ১৫ , ০৯ , ২০২০
দেখেছি অকারণ সে'গাঙুরের জলে ,
সপ্তডিঙাসহ চাঁদের ভরাডুবি ;
হঠাৎই ঝড় উঠে কানীর কৌশলে ,
না পেরে যুদ্ধে সম্মুখে সোজাসুজি ।
আত্মপ্রত্যয়ে দীপ্ত চাঁদ বেনে ,
প্রত্যয়ী চিত্তে সে বেঁচে আছে আজো ;
হে অন্তরীক্ষবাসিনী , রাখো তুমি জেনে ,
ব্যর্থ তুমি--নিন্দিত তব কার্য ।
ভিক্ষা চায়নি চাঁদ--চেয়েছিলে তুমি ,
প্রতিষ্ঠাভূমি চেয়ে পেতেছিলে হাত ;
সত্যের থেকে তাকে টলাতে পারোনি ,
পদে পদে ঘটালে কেবলই বিভ্রাট ।
পূজে যে তোমায়--পূজে না ভক্তিতে ,
তোমার রোষের চাবুকেই পদানত ;
হিতকাজে দেখাও তোমার শক্তিকে ,
শ্রদ্ধার শতদল পাবে শত শত ।
কায়ারূপে আসো যদি মায়ারূপ ছেড়ে ,
জাগবে চিত্তে তোমাতেও প্রত্যয় ;
মৃতবৎসে ক্রোড়ে পায় যদি মা ফিরে ,
ডানহাতে ফুল তুমি পাবে নিশ্চয় ।
তোমার কীর্তিমাঝে থাকো সুমহান ,
চাইতে হবে না কারও অনিচ্ছার দান ।
-------------------------------------------------------